alt

শেখ হাসিনাকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন

‘এই নারী প্রকৃতই একজন শক্তি’

পেটুলা ভোরাক, ওয়াশিংটন পোস্ট : মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/October/05Oct22/news/%E0%A7%A9.jpg

ছয় বছরের মেয়েকে রিজ কার্লটনের ভিড়ের মধ্যে উচিয়ে ধরলেন বাবা।কালো স্যুট পরা মানুষের ভিড়ে কন্যার গোলাপি জামা ফুলের মতো ফুটেউঠেছে।

মেয়েটির বাবা আব্দুল্লাহ নিয়ামি জানান, তিনি তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রীকে দেখাতে। মেয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী আবার কবে না কবে আসবেন এখানে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন নর্থ ভার্জিনিয়ার এই রিজহোটেলে। সফরের এই অংশটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। এ সফরেই তিনি যোগ দিয়েছেন রাণী এলিজাবেথের শেষকৃত্যে এবং জাতিসংঘের সাধারণসভায় - যেখানে তিনি ”শান্তি রক্ষা”র জন্য বিশ্ববিবেকের কাছে আহবান রাখেন। এই নারী প্রকৃতই একজন শক্তি।

বিশ্বে সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে থাকা নারী সরকার প্রধান তিনি। রাশিয়ার চেয়ে বেশি জনসংখ্যার একটি দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত অন্তত ২০টি হত্যা প্রচেষ্টার পরও তিনি টিকে রয়েছেন। এর মধ্যে একটিতে (২১ আগস্ট) তাকে ঘিরে থাকা মানুষের ভিড়ে হাত বোমা (গ্রেনেড) ছুঁড়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল।

একই সঙ্গে তিনি একজন দাদিমা। ৭৬তম জন্মদিনে তিনি তার ছেলে ও ১৬বছরের নাতির সঙ্গে কাটিয়েছেন।

আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলে এই দুনিয়ায় কীভাবে একজন দাদিমার দায়িত্বগুলো পালন করা সম্ভব, উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তাদের জন্য রান্না করি। চিকেন বিরিয়ানি,.....আমার ছেলের বাড়িতে। আমার একটা নিজের রান্নাঘর আছে, যেটি শুধু আমার জন্য।

তার সঙ্গে একান্ত বৈঠকের সুবাদেই এসব কথা জানতে পেরেছি।

আমরা যেখানে তার সঙ্গে বসেছিলাম সেখানে একজন অনুবাদক ও তার চীফ অব স্টাফ ছিলেন। তার বাবা, শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বড় ছবি ছিল সেখানে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যাকে তাদের পরিবারের আরো ১৭ সদস্যের সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট হত্যা করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা তার ১৮ বছরের প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদে তার পিতার আদর্শগুলোই সমুন্নত রেখেছেন। তিনি একটি জটিল ও পরিবর্তনশীল জনগোষ্ঠীর দেশকেনেতৃত্ব দিচ্ছেন। নেতা হিসেবে তাকেও পালন করতে হয় জটিল দায়িত্ব।

জাতিসংঘে শেখ হাসিনা তার দেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙার জন্য সাহায্য চেয়েছেন। এই রোহিঙ্গারা সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশের আশ্রয় নিয়েছে। এখন তারা সেখানকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্যাম্পের জীবন ভালো না। তারা তাদের দেশে ফিরতে চায়।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার দেশে রোহিঙ্গাদের এই আশ্রয় গ্রহণের সঙ্গে আমেরিকার অভিবাসীর বিষয়গুলো মেলানো চলে না।

উত্তর থেকে দক্ষিণে দেখিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকা ..বিরাট দেশ। অনেক জমি। কত জায়গা। এখানে কাজ করার সুযোগ আছে। এখানকার অভিবাসীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বিগ্ন হওয়ার কী আছে?

অথচ বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। এখানে ১৭ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। “কিন্তু আমরা ছোট দেশ”, তিনি মনে করিয়ে দিলেন আমাকে। তার চীফ অব স্টাফ ত্বরিত যোগ করলেন, আমাদের গোটা দেশটা আমেরিকান উহসকনসিনের মতো।

রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের ওপর নজর রাখে বিশ্ব সম্প্রদায়।এছাড়াও আলোচনা আছে তার সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশ ব্যবহারের বিষয়ে।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তিনি যে কঠোর, জিরো-টলারেন্স বা একদম বরদাশতনা করার নীতি নিয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদি তাকে অভিনন্দিত করেছিলেন। তবে, ডেসপাইট বিয়িং এ ওম্যান, অর্থাৎ নারী হয়েও।

তা নিয়ে একটি ভাইরাল মিমও হয়েছিল। তাতে কিছু আসে যায় না, শেষপর্যন্ত তা শেখ হাসিনার জয়গাথার প্রতীক হয়ে উঠেছিল সেটি।

https://sangbad.net.bd/images/2022/October/05Oct22/news/%E0%A7%AA.jpg

যখন তাকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কিছুটা ঝুঁকে ফিশফিশ করারভঙ্গিতে বললেন, “নারীরা পুরুষের চেয়ে ভালো।” তারপর হাসলেন।

তারপর তিনি কাজের কথাগুলো বললেন। নারী হিসেবেই, তিনি বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও শিক্ষার সমস্যাগুলো আরো গভীরভাবে বোঝেন, কেননা এই প্রতিবন্ধকতাগুলোর মুখোমুখি নারীরাই বেশি হয়। এগুলোরকারণে দেশের অগ্রগতি কীভাবে ব্যহত হয় তা আলোচনা করলেন।

গত দশকে তিনি তার দেশের দারিদ্র্য লক্ষণীয় মাত্রায় কমিয়েছেন। শিক্ষার সুযোগের প্রসার ঘটিয়েছেন, আবাসনের সমস্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায়কমিয়েছেন। ইটের দেওয়ালের ওপর সাধারণ ঢেউটিনের কাঠামো, সাধারণহলেও বাংলাদেশ আবাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে।

এবং পুরুষ ও নারী উভয়ই এই ঘর পাবে। তিনি বলেন, কোনো সংসার ভেঙে গেলে নারীরাই ঘর আগলে রাখেন। পুরুষরা নন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের উচ্চমূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংক। রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের সময় ১৯৭১ সালে এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্রদেশ। সেখান থেকে এটি ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।

শেখ হাসিনা জানান স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে নারীদের উন্নয়নেবিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই উন্নতি করেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে জাতিসংঘে কথা বলার পর তিনি ভেবেছিলেন সফরেরবাকি অংশগুলো অপেক্ষাকৃত নীরবেই কাটবে।

কিন্তু কথা খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়। আমার সঙ্গে যখন সাক্ষাৎকার শেষ হলো দেখলাম রিজ হোটেলের লবি মানুষে ভরে গেছে। সেই ভিড়ে যারা ছিলেনতাদের এক জন ইউসুফ চৌধুরী। ৬৬ বছর বয়স।

নিজের মুক্তিযোদ্ধা সনদটি দেখাতে দেখাতে তিনি বলেন আমি ভোর ছ’টার সময় বোস্টন থেকে বিমানে চড়েছি এখানে আসার জন্য। তিনি দেখতে এসেছেন তিনি আবার দেশের কাজে লাগতে পারেন কিনা।

হোটেল কর্মীরা ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবহরের সদস্যের অবস্থা তো বুঝতেই পারছেন। যেহেতু ইতোমধ্যেই শেখহাসিনাকে লক্ষ করে ২০ বারের মতো হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। ফলেনিরাপত্তায় নিয়োজিতরা স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজিত। ১৯৬৬ সালেবীটলসকে ঘিরে যেমন ভিড় হতো, উচ্ছ্বাস দেখা যেতো, শেখ হাসিনাকে ঘিরেভিড় ও উচ্ছ্বাস সেরকমই।

কিন্তু এক ঘন্টার মধ্যেই পরিকল্পনা বদলালো। শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিলেনতিনি বক্তৃতা করবেন। রিজ হোটেলের কর্মীরা ডমিনিয়ন রুমের টেবিল চেয়ারএক পাশে সরিয়ে জায়গা বের করলো। তারপর নিরাপত্তা নিয়োজিত বেষ্টনীতৈরি করে, দেখে শুনে ২০০ জনকে সভাস্থলে ঢোকালেন।

তার সমর্থকদের অধিকাংশই পুরুষ। আর গোলাপি জামা আর ম্যাচিং সুপরা জয়া অবশ্যই এদের মধ্যে ব্যতিক্রম। আর ২৪ বছর বয়সী মালিহাজামানের মতো মেয়েরাও ছিল, যে ছুটির দিনে এসেছেন শেখ হাসিনাকে একনজর দেখতে।

মালিহা বলেন, অবশ্যই আমি এসেছি এ ধরনের একজন নারীকে দেখতে।তিনি সবসময়ই আমার অনুপ্রেরণা।

মালিহা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন দুই বছর আগে। তার মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর, তাও শেখ হাসিনা প্রবর্তিত শিক্ষা সুযোগের সুবাদে। এখন মালিহাভার্জিনিয়ায় বসবাসরত, একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার।

কেন যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার গুরুত্ব নিয়েও মালিহা আলাপ করলো কৌশলে। রিজে নারী সরকার প্রধানের সভা দেখারও অভিজ্ঞতাও তাই বিরল।

যখন পুরুষ সমর্থকেরা আরো কাছ থেকে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শোনার জন্য নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করছিল তখন সভায় আসা আরেকজননারী সাহেদা পারভিন ব্যাখ্যা করছিলেন শেখ হাসিনা কেন আলাদা “তিনি বয়স্ক মানুষদের জন্য ভাবেন। তিনি যোগাযোগের উন্নতির জন্য কাজ করেন।একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু তৈরি করেছেন। তিনি শিশুদের নিয়ে ভাবেন। তিনি গর্ভধারিনীদের কথা বিশেষভাবে ভাবেন। এগুলো নিয়ে আমরা ভাবিত থাকি।”

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, অনিবন্ধিত মুঠোফোনের ব্যবহার বন্ধে ১৬ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে এনইআইআর

দুর্ঘটনার সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর সিলেট ছাড়লো লন্ডনগামী বিমান

‘তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’ মুখে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ: কর্মশালায় বিশ্লেষণ

ছবি

দুদক সংস্কার কমিশনের ‘কৌশলগত সুপারিশ বাদ দিয়ে’ খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদন, টিআইবির উদ্বেগ

ছবি

ভিন্ন কোনো দেশের কারণে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না: চীনের রাষ্ট্রদূত

ছবি

ভোট কবে, জানা যাবে ‘ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে’

টিভি সূচি

ছবি

পরিবেশ ধ্বংসের বিনিময়ে উন্নয়ন ‘টেকসই হতে পারে না’: সৈয়দা রিজওয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

হালদা নদী রক্ষায় গেজেট পরিবর্তন করা হবে : প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ছবি

‘সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিতে থাকা’ নিয়ে মন্তব্যের ব্যাখ্যা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের

ছবি

নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তা বাড়াতে ডিএমপিকে ইসির চিঠি

ছবি

সংবিধান সংস্কার ‘জুলাই সনদ অনুসারে’: ২৭০ পঞ্জিকা দিবসে না হলে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিল পাস’

আইনি প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বেসরকারি স্কুল ও কলেজে এমপিও নীতিমালায় বড় পরিবর্তন: জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ বিলুপ্ত, অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ যোগ্যতায় পরিবর্তন

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অতীত থেকে মুক্তির পথ দেখাবে: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কারে সরকারের জন্য দুটি বিকল্প পথ প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের

ছবি

নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বডি-ওর্ন-ক্যামেরা কেনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

শীতের কম্বল ফেব্রুয়ারিতে দিয়ে লাভ নেই বিভাগীয় কমিশনার

ছবি

দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষকরা সম্মুখসারির যোদ্ধা খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের সুপারিশ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-চীন উভয়ের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক গভীর: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোনথা’, ভারতের অন্ধ্র উপকূলে আঘাতের শঙ্কা

ছবি

ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’

ছবি

আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৬ জনের মৃত্যু: হাসপাতালে ভর্তি ৯৮৩ জন

ছবি

জেইসির মাধ্যমে বাংলাদেশ-পাকিস্তান দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত, আজ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর

চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন

ছবি

এক লাখ কর্মী নিয়োগ, প্রধান উপদেষ্টাকে অগ্রগতি জানালো জাপানি প্রতিনিধিদল

ছবি

মঙ্গলবার সরকারের হাতে যাবে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা

ছবি

নভেম্বরের পরও চলবে উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রম: অন্তর্বর্তী সরকারের স্পষ্টীকরণ

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১

ছবি

অর্থ পাচারের মামলায় সম্রাট ও আরমানের জামিন বাতিল, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হওয়া ও নৈতিক নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হওয়ার আহ্বান শিক্ষা উপদেষ্টার

tab

শেখ হাসিনাকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন

‘এই নারী প্রকৃতই একজন শক্তি’

পেটুলা ভোরাক, ওয়াশিংটন পোস্ট

মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/October/05Oct22/news/%E0%A7%A9.jpg

ছয় বছরের মেয়েকে রিজ কার্লটনের ভিড়ের মধ্যে উচিয়ে ধরলেন বাবা।কালো স্যুট পরা মানুষের ভিড়ে কন্যার গোলাপি জামা ফুলের মতো ফুটেউঠেছে।

মেয়েটির বাবা আব্দুল্লাহ নিয়ামি জানান, তিনি তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রীকে দেখাতে। মেয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী আবার কবে না কবে আসবেন এখানে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন নর্থ ভার্জিনিয়ার এই রিজহোটেলে। সফরের এই অংশটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। এ সফরেই তিনি যোগ দিয়েছেন রাণী এলিজাবেথের শেষকৃত্যে এবং জাতিসংঘের সাধারণসভায় - যেখানে তিনি ”শান্তি রক্ষা”র জন্য বিশ্ববিবেকের কাছে আহবান রাখেন। এই নারী প্রকৃতই একজন শক্তি।

বিশ্বে সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে থাকা নারী সরকার প্রধান তিনি। রাশিয়ার চেয়ে বেশি জনসংখ্যার একটি দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত অন্তত ২০টি হত্যা প্রচেষ্টার পরও তিনি টিকে রয়েছেন। এর মধ্যে একটিতে (২১ আগস্ট) তাকে ঘিরে থাকা মানুষের ভিড়ে হাত বোমা (গ্রেনেড) ছুঁড়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল।

একই সঙ্গে তিনি একজন দাদিমা। ৭৬তম জন্মদিনে তিনি তার ছেলে ও ১৬বছরের নাতির সঙ্গে কাটিয়েছেন।

আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলে এই দুনিয়ায় কীভাবে একজন দাদিমার দায়িত্বগুলো পালন করা সম্ভব, উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তাদের জন্য রান্না করি। চিকেন বিরিয়ানি,.....আমার ছেলের বাড়িতে। আমার একটা নিজের রান্নাঘর আছে, যেটি শুধু আমার জন্য।

তার সঙ্গে একান্ত বৈঠকের সুবাদেই এসব কথা জানতে পেরেছি।

আমরা যেখানে তার সঙ্গে বসেছিলাম সেখানে একজন অনুবাদক ও তার চীফ অব স্টাফ ছিলেন। তার বাবা, শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বড় ছবি ছিল সেখানে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যাকে তাদের পরিবারের আরো ১৭ সদস্যের সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট হত্যা করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা তার ১৮ বছরের প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদে তার পিতার আদর্শগুলোই সমুন্নত রেখেছেন। তিনি একটি জটিল ও পরিবর্তনশীল জনগোষ্ঠীর দেশকেনেতৃত্ব দিচ্ছেন। নেতা হিসেবে তাকেও পালন করতে হয় জটিল দায়িত্ব।

জাতিসংঘে শেখ হাসিনা তার দেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙার জন্য সাহায্য চেয়েছেন। এই রোহিঙ্গারা সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশের আশ্রয় নিয়েছে। এখন তারা সেখানকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্যাম্পের জীবন ভালো না। তারা তাদের দেশে ফিরতে চায়।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার দেশে রোহিঙ্গাদের এই আশ্রয় গ্রহণের সঙ্গে আমেরিকার অভিবাসীর বিষয়গুলো মেলানো চলে না।

উত্তর থেকে দক্ষিণে দেখিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকা ..বিরাট দেশ। অনেক জমি। কত জায়গা। এখানে কাজ করার সুযোগ আছে। এখানকার অভিবাসীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বিগ্ন হওয়ার কী আছে?

অথচ বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। এখানে ১৭ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। “কিন্তু আমরা ছোট দেশ”, তিনি মনে করিয়ে দিলেন আমাকে। তার চীফ অব স্টাফ ত্বরিত যোগ করলেন, আমাদের গোটা দেশটা আমেরিকান উহসকনসিনের মতো।

রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের ওপর নজর রাখে বিশ্ব সম্প্রদায়।এছাড়াও আলোচনা আছে তার সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশ ব্যবহারের বিষয়ে।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তিনি যে কঠোর, জিরো-টলারেন্স বা একদম বরদাশতনা করার নীতি নিয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদি তাকে অভিনন্দিত করেছিলেন। তবে, ডেসপাইট বিয়িং এ ওম্যান, অর্থাৎ নারী হয়েও।

তা নিয়ে একটি ভাইরাল মিমও হয়েছিল। তাতে কিছু আসে যায় না, শেষপর্যন্ত তা শেখ হাসিনার জয়গাথার প্রতীক হয়ে উঠেছিল সেটি।

https://sangbad.net.bd/images/2022/October/05Oct22/news/%E0%A7%AA.jpg

যখন তাকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কিছুটা ঝুঁকে ফিশফিশ করারভঙ্গিতে বললেন, “নারীরা পুরুষের চেয়ে ভালো।” তারপর হাসলেন।

তারপর তিনি কাজের কথাগুলো বললেন। নারী হিসেবেই, তিনি বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও শিক্ষার সমস্যাগুলো আরো গভীরভাবে বোঝেন, কেননা এই প্রতিবন্ধকতাগুলোর মুখোমুখি নারীরাই বেশি হয়। এগুলোরকারণে দেশের অগ্রগতি কীভাবে ব্যহত হয় তা আলোচনা করলেন।

গত দশকে তিনি তার দেশের দারিদ্র্য লক্ষণীয় মাত্রায় কমিয়েছেন। শিক্ষার সুযোগের প্রসার ঘটিয়েছেন, আবাসনের সমস্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায়কমিয়েছেন। ইটের দেওয়ালের ওপর সাধারণ ঢেউটিনের কাঠামো, সাধারণহলেও বাংলাদেশ আবাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে।

এবং পুরুষ ও নারী উভয়ই এই ঘর পাবে। তিনি বলেন, কোনো সংসার ভেঙে গেলে নারীরাই ঘর আগলে রাখেন। পুরুষরা নন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের উচ্চমূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংক। রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের সময় ১৯৭১ সালে এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্রদেশ। সেখান থেকে এটি ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।

শেখ হাসিনা জানান স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে নারীদের উন্নয়নেবিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই উন্নতি করেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে জাতিসংঘে কথা বলার পর তিনি ভেবেছিলেন সফরেরবাকি অংশগুলো অপেক্ষাকৃত নীরবেই কাটবে।

কিন্তু কথা খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়। আমার সঙ্গে যখন সাক্ষাৎকার শেষ হলো দেখলাম রিজ হোটেলের লবি মানুষে ভরে গেছে। সেই ভিড়ে যারা ছিলেনতাদের এক জন ইউসুফ চৌধুরী। ৬৬ বছর বয়স।

নিজের মুক্তিযোদ্ধা সনদটি দেখাতে দেখাতে তিনি বলেন আমি ভোর ছ’টার সময় বোস্টন থেকে বিমানে চড়েছি এখানে আসার জন্য। তিনি দেখতে এসেছেন তিনি আবার দেশের কাজে লাগতে পারেন কিনা।

হোটেল কর্মীরা ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবহরের সদস্যের অবস্থা তো বুঝতেই পারছেন। যেহেতু ইতোমধ্যেই শেখহাসিনাকে লক্ষ করে ২০ বারের মতো হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। ফলেনিরাপত্তায় নিয়োজিতরা স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজিত। ১৯৬৬ সালেবীটলসকে ঘিরে যেমন ভিড় হতো, উচ্ছ্বাস দেখা যেতো, শেখ হাসিনাকে ঘিরেভিড় ও উচ্ছ্বাস সেরকমই।

কিন্তু এক ঘন্টার মধ্যেই পরিকল্পনা বদলালো। শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিলেনতিনি বক্তৃতা করবেন। রিজ হোটেলের কর্মীরা ডমিনিয়ন রুমের টেবিল চেয়ারএক পাশে সরিয়ে জায়গা বের করলো। তারপর নিরাপত্তা নিয়োজিত বেষ্টনীতৈরি করে, দেখে শুনে ২০০ জনকে সভাস্থলে ঢোকালেন।

তার সমর্থকদের অধিকাংশই পুরুষ। আর গোলাপি জামা আর ম্যাচিং সুপরা জয়া অবশ্যই এদের মধ্যে ব্যতিক্রম। আর ২৪ বছর বয়সী মালিহাজামানের মতো মেয়েরাও ছিল, যে ছুটির দিনে এসেছেন শেখ হাসিনাকে একনজর দেখতে।

মালিহা বলেন, অবশ্যই আমি এসেছি এ ধরনের একজন নারীকে দেখতে।তিনি সবসময়ই আমার অনুপ্রেরণা।

মালিহা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন দুই বছর আগে। তার মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর, তাও শেখ হাসিনা প্রবর্তিত শিক্ষা সুযোগের সুবাদে। এখন মালিহাভার্জিনিয়ায় বসবাসরত, একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার।

কেন যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার গুরুত্ব নিয়েও মালিহা আলাপ করলো কৌশলে। রিজে নারী সরকার প্রধানের সভা দেখারও অভিজ্ঞতাও তাই বিরল।

যখন পুরুষ সমর্থকেরা আরো কাছ থেকে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শোনার জন্য নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করছিল তখন সভায় আসা আরেকজননারী সাহেদা পারভিন ব্যাখ্যা করছিলেন শেখ হাসিনা কেন আলাদা “তিনি বয়স্ক মানুষদের জন্য ভাবেন। তিনি যোগাযোগের উন্নতির জন্য কাজ করেন।একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু তৈরি করেছেন। তিনি শিশুদের নিয়ে ভাবেন। তিনি গর্ভধারিনীদের কথা বিশেষভাবে ভাবেন। এগুলো নিয়ে আমরা ভাবিত থাকি।”

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক

back to top