alt

দুর্নীতি কমাতে রাজনৈতিক অঙ্গনে দরকার বৈপ্লবিক পরিবর্তন : টিআইবি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩

রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন লাগবে। সরকারে থেকে বা সরকারি অবস্থানের বাইরে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারি অবস্থানকে ক্ষমতার লাইসেন্স বা রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে দেখার সুযোগ বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির বৈশ্বিক সূচকের তথ্য উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন তিনি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, ব্যাংক খাত, অর্থনৈতিক সব খাতসহ আমাদের মৌলিক যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব বেড়ে চলেছে। দুর্নীতি কমাতে হলে, বৈশ্বিক সূচকে উন্নতি করতে হলে এসব প্রভাব থেকে বের করতে হবে। একইসঙ্গে তাদের দক্ষতা, উৎকর্ষতা, শুদ্ধাচারের মাধ্যমে সফল হওয়ার প্রত্যাশা করতে পারি।

টিআইবি নির্বাহী বলেন, একটা সিদ্ধান্তে কীভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও বেশি আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা হয়েছে। দুদক সরকার কর্তৃক পরিচালিত তা আমরা বলতে চাই না। দুদকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে আমলাতান্ত্রিকতা থেকে বের হতে হবে। দুর্নীতির রাঘব-বোয়ালদের ধরার মতো বড় কোনো উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি দুদকসহ অন্যান্য সংস্থা।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপর ক্রমাগতভাবে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব বেড়েছে। ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ব্যাংক খাতকে রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রথমত হচ্ছে স্বচ্ছতা। বিশেষ করে অর্থনৈতিক স্বয়ংক্রিয় তথ্য লেনদেনের মাধ্যমে ব্যাংক সেক্টরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বচ্ছতা অর্জন করা সম্ভব। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশও এক্ষেত্রে ব্যাংক খাতে স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে এসেছে। আমরাই শুধু পারিনি। আমরা জবাবদিহিতা কেন নিশ্চিত করতে পারছি না? ব্যাংক খাতে স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন না করার পেছনে ঋণ খেলাপি, অর্থ পাচারকারীদের চাপ আছে বলে মনে করি।

তিনি বলেন, একইসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত করতে হবে। ইসলামি ব্যাংকের মূল মালিকানা গোপন রেখে কীভাবে অর্থ পাচার করা হয়েছে তা বের করতে হবে। মূল মালিকানায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এক্ষেত্রে সহজতর হবে। সরকারি, বেসরকারি তথ্য সেবা আরও অবারিত করতে হবে। পাবলিক সেক্টরের কিছু সুফল আমরা পাচ্ছি। কিন্তু পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশন হয়নি, সেটা করতে হবে।

গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, যাদের লেখনী ও কণ্ঠে দুর্নীতিবিরোধী বিষয় উঠে আসে তাদের সুন্দর পরিবেশ সংকুচিত করা হয়েছে দাবি করে টিআইবি নির্বাহী বলেন, ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। তথ্য প্রকাশ, তথ্য প্রাপ্তির পরিবেশ অবারিত করতে হবে। পরিপন্থি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সব আইন বাতিল করতে হবে বা বিশ্লেষণপূর্বক সংশোধন করে তথ্য প্রবাহের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

যারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কিংবা দায়ী তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের মতো দেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়, অর্থ বিদেশে চলে যায় তা কাম্য নয়। এটা হয় কারণ ন্যায়বিচার হয় না বা বিচারহীনতার কারণে। এই মেয়াদে মানি লন্ডারিংয়ের দুর্নীতির তথ্য ভয়ংকরভাবে উঠে এসেছে। কিন্তু কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ আমরা দেখিনি।

তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করার কথা। কিন্তু আমরা বাস্তব কোনো উদ্যোগ দেখছি না। দেশে চলমান যে অবস্থা, তাতে দুর্নীতি আরও ঘনীভূত হয়েছে। বিশেষ করে কোভিড পরিস্থিতিতে ক্রয়-বিক্রয় খাতে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি হয়েছে। যারা ক্রয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন তারা ব্যাপকভাবে সুযোগ নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিষয়ে গত ১০ বছর ধরে আলোচনা বেশি হচ্ছে। কিন্তু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেই। যারা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাবান বা ক্ষমতার অংশীদার তাদের দুর্নীতির কারণে জবাবদিহিতা মুখোমুখি করা হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে দেখেছি, দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করা কিংবা দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে উল্টো হয়রানি করা হয়েছে।

টিআইবির এই পরিচালক বলেন, সরকারি কর্মকর্তা হয়েও যারা দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নেন তাদের নানাভাবে হয়রানি, ব্যাকবেঞ্চ করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতির কারণে অভিযুক্ত কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের পুরস্কৃত করতে আমরা দেখেছি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি আরও ঘনীভূত হয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালে করোনা সংক্রান্ত খাতে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। কোভিড সংক্রান্ত ক্রয়-বিক্রয় খাতে বেশি দুর্নীতি হয়েছে।

তিনি বলেন, সিপিআই ২০২২ অনুযায়ী ১০০ এর মধ্যে বৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩; আর বাংলাদেশের স্কোর ২৫, যা ২০২১ এর তুলনায় এক পয়েন্ট কম। তাই দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। তবে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতার কারণে ‘বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত বা বাংলাদেশের অধিবাসীরা সবাই দুর্নীতি করে’ এ ধরনের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। যদিও দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায়, তথাপি দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র।

সিপিআইয়ের বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য:

এ বছর সিপিআইয়ের বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য হলো— সংঘাত, শান্তি ও নিরাপত্তা। দুর্নীতি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সামগ্রিকভাবে শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। দুর্নীতি সংঘবদ্ধ অপরাধমূলক কর্মকা-— এমনকি সন্ত্রাসবাদের জন্যও উর্বর ভূমি তৈরি করে। কারণ দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অপরাধীরা তাদের অবৈধ কর্মকা-ের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী করে।

ছবি

সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

টিআইবির প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনায় অতি আগ্রহ কেন?

ছবি

নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি: ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যায়িত করে অপমানিত করা হয়েছে

ছবি

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

ছবি

আমি যে কাজ করেছি তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনদিন হয় নি: সিলেটে আসিফ নজরুল

ছবি

অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার দুটি লকার জব্দ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৬২২

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘে যাচ্ছেন ফখরুল-তাহের-আখতার

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চারটি পদ্ধতির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছবি

ডেমু ট্রেন কেনায় রাষ্ট্রের ক্ষতি, দুদকের মামলা

ছবি

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: নাহিদের সাক্ষ্য বুধবার, মাহমুদুর রহমানের জেরা শুরু

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা: বাংলাদেশ-ভারতের ভৌগোলিক নৈকট্য ও আন্তঃনির্ভতা নতুন সুযোগে রূপান্তরের সম্ভাবনা

ছবি

ধর্মীয় উৎসবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নয়, সমান নাগরিক অধিকারের বাংলাদেশ চান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

ছবি

ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য বুধবার

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ইনু-নূরসহ ৯ আসামির ভার্চুয়াল হাজিরা

ছবি

বাংলাদেশে উষ্ণায়নের প্রভাব: কর্মদিবস নষ্ট, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যে বড় ক্ষতি

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য সচিব

ছবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা

ছবি

দুর্গাপূজা প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালকদের দপ্তর বদল, একজনকে ওএসডি

ছবি

ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাল বাংলাদেশ

ছবি

আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৮ হাজার

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে অঙ্গীকার ইউনূসের

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি : মাইকেল মিলার

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার হাতে ১২ তরুণ পেলেন ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’

ছবি

ইসিতে নিবন্ধন: নতুন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ চলছে

ছবি

সেপ্টেম্বরের শেষে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি

ছবি

দ্বিমতের কোনো জায়গা নাই, এই সুযোগ আর আসবে না: ইউনূস

ছবি

নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারিত সময়ের আগেই

ছবি

মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোতে ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাত: ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা সিদ্ধান্ত

ছবি

টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি: দেড় মাসে নিবন্ধন প্রায় ৮৯ লাখ শিশু

tab

দুর্নীতি কমাতে রাজনৈতিক অঙ্গনে দরকার বৈপ্লবিক পরিবর্তন : টিআইবি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩

রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন লাগবে। সরকারে থেকে বা সরকারি অবস্থানের বাইরে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারি অবস্থানকে ক্ষমতার লাইসেন্স বা রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে দেখার সুযোগ বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির বৈশ্বিক সূচকের তথ্য উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন তিনি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, ব্যাংক খাত, অর্থনৈতিক সব খাতসহ আমাদের মৌলিক যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব বেড়ে চলেছে। দুর্নীতি কমাতে হলে, বৈশ্বিক সূচকে উন্নতি করতে হলে এসব প্রভাব থেকে বের করতে হবে। একইসঙ্গে তাদের দক্ষতা, উৎকর্ষতা, শুদ্ধাচারের মাধ্যমে সফল হওয়ার প্রত্যাশা করতে পারি।

টিআইবি নির্বাহী বলেন, একটা সিদ্ধান্তে কীভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও বেশি আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা হয়েছে। দুদক সরকার কর্তৃক পরিচালিত তা আমরা বলতে চাই না। দুদকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে আমলাতান্ত্রিকতা থেকে বের হতে হবে। দুর্নীতির রাঘব-বোয়ালদের ধরার মতো বড় কোনো উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি দুদকসহ অন্যান্য সংস্থা।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপর ক্রমাগতভাবে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব বেড়েছে। ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ব্যাংক খাতকে রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রথমত হচ্ছে স্বচ্ছতা। বিশেষ করে অর্থনৈতিক স্বয়ংক্রিয় তথ্য লেনদেনের মাধ্যমে ব্যাংক সেক্টরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বচ্ছতা অর্জন করা সম্ভব। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশও এক্ষেত্রে ব্যাংক খাতে স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে এসেছে। আমরাই শুধু পারিনি। আমরা জবাবদিহিতা কেন নিশ্চিত করতে পারছি না? ব্যাংক খাতে স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন না করার পেছনে ঋণ খেলাপি, অর্থ পাচারকারীদের চাপ আছে বলে মনে করি।

তিনি বলেন, একইসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত করতে হবে। ইসলামি ব্যাংকের মূল মালিকানা গোপন রেখে কীভাবে অর্থ পাচার করা হয়েছে তা বের করতে হবে। মূল মালিকানায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এক্ষেত্রে সহজতর হবে। সরকারি, বেসরকারি তথ্য সেবা আরও অবারিত করতে হবে। পাবলিক সেক্টরের কিছু সুফল আমরা পাচ্ছি। কিন্তু পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশন হয়নি, সেটা করতে হবে।

গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, যাদের লেখনী ও কণ্ঠে দুর্নীতিবিরোধী বিষয় উঠে আসে তাদের সুন্দর পরিবেশ সংকুচিত করা হয়েছে দাবি করে টিআইবি নির্বাহী বলেন, ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। তথ্য প্রকাশ, তথ্য প্রাপ্তির পরিবেশ অবারিত করতে হবে। পরিপন্থি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সব আইন বাতিল করতে হবে বা বিশ্লেষণপূর্বক সংশোধন করে তথ্য প্রবাহের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

যারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কিংবা দায়ী তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের মতো দেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়, অর্থ বিদেশে চলে যায় তা কাম্য নয়। এটা হয় কারণ ন্যায়বিচার হয় না বা বিচারহীনতার কারণে। এই মেয়াদে মানি লন্ডারিংয়ের দুর্নীতির তথ্য ভয়ংকরভাবে উঠে এসেছে। কিন্তু কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ আমরা দেখিনি।

তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করার কথা। কিন্তু আমরা বাস্তব কোনো উদ্যোগ দেখছি না। দেশে চলমান যে অবস্থা, তাতে দুর্নীতি আরও ঘনীভূত হয়েছে। বিশেষ করে কোভিড পরিস্থিতিতে ক্রয়-বিক্রয় খাতে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি হয়েছে। যারা ক্রয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন তারা ব্যাপকভাবে সুযোগ নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিষয়ে গত ১০ বছর ধরে আলোচনা বেশি হচ্ছে। কিন্তু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেই। যারা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাবান বা ক্ষমতার অংশীদার তাদের দুর্নীতির কারণে জবাবদিহিতা মুখোমুখি করা হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে দেখেছি, দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করা কিংবা দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে উল্টো হয়রানি করা হয়েছে।

টিআইবির এই পরিচালক বলেন, সরকারি কর্মকর্তা হয়েও যারা দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নেন তাদের নানাভাবে হয়রানি, ব্যাকবেঞ্চ করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতির কারণে অভিযুক্ত কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের পুরস্কৃত করতে আমরা দেখেছি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি আরও ঘনীভূত হয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালে করোনা সংক্রান্ত খাতে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। কোভিড সংক্রান্ত ক্রয়-বিক্রয় খাতে বেশি দুর্নীতি হয়েছে।

তিনি বলেন, সিপিআই ২০২২ অনুযায়ী ১০০ এর মধ্যে বৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩; আর বাংলাদেশের স্কোর ২৫, যা ২০২১ এর তুলনায় এক পয়েন্ট কম। তাই দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। তবে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতার কারণে ‘বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত বা বাংলাদেশের অধিবাসীরা সবাই দুর্নীতি করে’ এ ধরনের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। যদিও দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায়, তথাপি দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র।

সিপিআইয়ের বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য:

এ বছর সিপিআইয়ের বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য হলো— সংঘাত, শান্তি ও নিরাপত্তা। দুর্নীতি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সামগ্রিকভাবে শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। দুর্নীতি সংঘবদ্ধ অপরাধমূলক কর্মকা-— এমনকি সন্ত্রাসবাদের জন্যও উর্বর ভূমি তৈরি করে। কারণ দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অপরাধীরা তাদের অবৈধ কর্মকা-ের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী করে।

back to top