বরেণ্য কলামিস্ট, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রথম জানাজা শুক্রবার (২০ মে) বাদ জুম্ম পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় কমিউনিটির নানা শ্রেণি-পেশার কয়েকশ মানুষ শরিক হন।
জানাজা শেষে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের ‘বাতিঘর’ গাফফার চৌধুরীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ লন্ডনের শহীদ আলতাব আলী পার্কে নেয়া হয়। পার্কের শহীদ মিনারের সামনে মরদেহ রাখা হয় সর্বস্তরের বাংলাদেশীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
ব্রিটেনে বসবাস শুরুর পর গত ৪৮ বছরে বহুবার ব্রিকলেনে এসেছেন গাফ্ফার চৌধুরী, এসেছেন আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারেও। কখনো ঋজু পায়ে, নয়তো হুইলচেয়ারে চেপে, কিন্তু প্রিয় পূর্ব লন্ডনে আর এভাবে আসবেন না তিনি।
লন্ডনের শহীদ আলতাব আলী পার্কে মরদেহ রাখার পর সেখানে জড়ো হতে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। গাফ্ফার চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ওয়েলস, ম্যানচেস্টার, রোটন, বামিংহামসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে বাংলাদেশীরা ছুটে আসেন। এসময় অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বলে সংবাদকে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক লুৎফুর রহমান ছায়াদ।
তিনি সংবাদকে জানান, গাফফার চৌধুরীর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। এছাড়াও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, সুলতান মাহমুদ শরিফ, আনোয়ার চৌধুরী, লুৎফুর রহমান ছায়াদ, মাহবুব আহমেদ, শফিক আহমেদ, আমিনুল হক জিলু, ফখরুল ইসলাম মধু, মোহাম্মদ আলী জিলু।
লন্ডনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এবং বিশিষ্টজনও শোক প্রকাশ করেছেন।
১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরীবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তার বাবা হাজী ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। ১৯৫০ সালে ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন ‘দৈনিক ইনসাফ’ পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন।
মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন বরেণ্য এই সাংবাদিক লেখক।
শুক্রবার, ২০ মে ২০২২
বরেণ্য কলামিস্ট, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রথম জানাজা শুক্রবার (২০ মে) বাদ জুম্ম পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় কমিউনিটির নানা শ্রেণি-পেশার কয়েকশ মানুষ শরিক হন।
জানাজা শেষে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের ‘বাতিঘর’ গাফফার চৌধুরীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ লন্ডনের শহীদ আলতাব আলী পার্কে নেয়া হয়। পার্কের শহীদ মিনারের সামনে মরদেহ রাখা হয় সর্বস্তরের বাংলাদেশীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
ব্রিটেনে বসবাস শুরুর পর গত ৪৮ বছরে বহুবার ব্রিকলেনে এসেছেন গাফ্ফার চৌধুরী, এসেছেন আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারেও। কখনো ঋজু পায়ে, নয়তো হুইলচেয়ারে চেপে, কিন্তু প্রিয় পূর্ব লন্ডনে আর এভাবে আসবেন না তিনি।
লন্ডনের শহীদ আলতাব আলী পার্কে মরদেহ রাখার পর সেখানে জড়ো হতে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। গাফ্ফার চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ওয়েলস, ম্যানচেস্টার, রোটন, বামিংহামসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে বাংলাদেশীরা ছুটে আসেন। এসময় অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বলে সংবাদকে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক লুৎফুর রহমান ছায়াদ।
তিনি সংবাদকে জানান, গাফফার চৌধুরীর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। এছাড়াও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, সুলতান মাহমুদ শরিফ, আনোয়ার চৌধুরী, লুৎফুর রহমান ছায়াদ, মাহবুব আহমেদ, শফিক আহমেদ, আমিনুল হক জিলু, ফখরুল ইসলাম মধু, মোহাম্মদ আলী জিলু।
লন্ডনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এবং বিশিষ্টজনও শোক প্রকাশ করেছেন।
১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরীবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তার বাবা হাজী ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। ১৯৫০ সালে ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন ‘দৈনিক ইনসাফ’ পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন।
মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন বরেণ্য এই সাংবাদিক লেখক।