গুলিস্তান-ফার্মগেটে যৌথবাহিনীর অভিযান
যান চলাচলে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুলিস্তান এলাকা হকারদের দখলেই থাকে বললে চলে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা ও রেড জোন ঘোষণা করে হকারদের নিষিদ্ধ করা হলেও ফলাফল শূণ্য। পুলিশ কিছুদিন পর পর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায় হকাররা। কয়েকঘণ্টা পর আবার যা-তাই অবস্থা। ভ্যানভর্তি বিভিন্ন ধরণের পণ্য নিয়ে হাজির হয়ে যান তারা।
অভিযানের সময় এসব ভ্যানগুলো লুকিয়ে রাখায়, এবার পুলিশও হেটেছে ভিন্ন পথে। লুকায়িত স্থান গুলিস্তানের শহীদ মতিউর পার্কে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
অভিযানে সহযোগিতা করেছে ডিএমপির ক্রাইম বিভাগ ও সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে গুলিস্তানের রাস্তা দখল করে বসা হকারদের গাড়ির বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অন্তত ৫ শতাধিক ভ্যানগাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
একইদিন ফার্মগেট এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ফুটপাতের শতাধিক দোকান গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করছে ওই এলাকার হকাররা। পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও সিটি করপোরেশনের যৌথ অভিযানে ফার্মগেট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। ফার্মগেটের গ্রিনরোড থেকে শুরু করে খামারবাড়ি পর্যন্ত এ অভিযানের চালানো হয়।
গুলিস্তানে উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, গুলিস্তানে আমরা দিনে চারবার অভিযান চালায়। কিন্তু অভিযানে এসে কোনো গাড়ি পাওয়া যায় না। পরে তথ্য পেলাম আমরা অভিযানে আসার পর হকাররা গাড়িগুলো শহীদ মতিউর পার্কে এনে রাখে। অভিযানের দল চলে গেলে তারা আবারও রাস্তায় চলে আসতো। পরে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় গাড়ি রাখার স্থানেই অভিযান চালিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, যখন রাস্তায় অভিযান চালানো হয় তখন তারা মুহূর্তের মধ্যেই চলে যায়। এই গাড়িগুলো আসলে যায় কোথায়? তখন তদন্ত করতে এসে এখানে পেয়েছি। আর তারা পার্কে টাকা দিয়ে থাকে নাকি ইজারাদার তাদের রাখে সে বিষয় আমরা জানি না। পার্কের ইজারা দিয়েছে ডিএসসিসি। তাই এখানে গাড়ি রাখা বৈধ না অবৈধ সেটা পুলিশের বলা সম্ভব না।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লক্কর-ঝক্কর গাড়ি, অবৈধগাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। গত ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ট্রাফিক পক্ষ ছিল। এই ১৫ দিনে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সাড়ে ২৪ হাজার গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফিটনেসবিহীন গাড়ি আছে, রুট পার্মিট ছাড়া গাড়িসহ বিভিন্ন গাড়ি ছিলো। এই রাস্তায় হকারের কারণে গাড়ি চলতে পারে না। প্রতিদিনই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। হকারদের সঙ্গে চোর পুলিশ খেলা কবে শেষ হবে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রধান বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে বিশেষ অভিযান চালিয়েছি রাস্তা দখলে ব্যবহৃত গাড়িগুলো জব্দ করে বাজেয়াপ্ত করেছে ডিএসসিসি।
এদিকে ফার্মগেট এলাকায় দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্য দুপুর ১২টার দিকে ফার্মগেটের গ্রিন সুপার মার্কেটের সামনে থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। প্রায় চারঘণ্টা চলা এ অভিযানে আনন্দ সিনেমা হল, ফার্মগেট সুপার মার্কেট, তেজগাঁও কলেজের সামনে ও খামারবাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে সড়ক-ফুটপাতে গড়ে তোলা কয়েক’শ দোকানপাট সরিয়ে দেয়া হয়। পরে বিকেল ৩টার দিকে হকাররা ফার্মগেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ৩টার দিকে খামারবাড়ি মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে তারা সেখান থেকে আবার তেজগাঁও কলেজের সামনে মিছিল নিয়ে প্রায় আঁধাঘণ্টা বিক্ষোভ করে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে চলে যায়।
এ সময় মহিদুল নামে এক হকার বলেন, আমরা পেটের দায়ে রাস্তায় দোকান করি। আমাদের সরিয়ে দিলে কোথায় যাবো। কী করে খাবো, কীভাবে সংসার চালাবো। চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে মো. শফিক নামে আরেকজন জানান, আগে ফার্মগেটের প্রতিটা দোকান থেকে পুলিশসহ বিভিন্নজন চাঁদা নিতো। তখন কোনো সমস্যা হতো না। এখন কেউ চাঁদা নিচ্ছে না, এখন আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাহলে কী তারা আবার চাঁদা নিতে চায়! এটা হতে দেয়া হবে না। আমাদের পেটে লাঠি দিলে, আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
ফুটপাত উচ্ছেদের বিষয়ে ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান বলেন, শহরের মধ্যে ফার্মগেট অতি ব্যস্ততম একটি এলাকায়। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। ফুটপাত ও সড়ক দখলে থাকায় জনসাধারণের চলাচলের ভোগান্তির পাশাপাশি অপরাধ তৎপরতা বাড়ছে। তাই ফার্মগেট এলাকার ফুটপাত উচ্ছেদ করা হয়েছে।
ডিসি আরও বলেন, ১১ নভেম্বর সোমবার ফুটপাত উচ্ছেদের বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছিল। তাদের চলে যেতে ঘোষণা দেয়া হয়। অথচ তারা দোকানপাট সরিয়ে নেয়নি। তাই পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়। যৌথ অভিযানে সেনাবাহিনী তেজগাঁও অস্থায়ী সোনা ক্যাম্পের একটি দল অংশ নেন। ক্যাপ্টেন আবরার বলেন, যৌথ অভিযানের অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের বিষয়ে আগে থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। জননিরাপত্তার স্বার্থে এ অভিযান অব্যহত থাকবে।
গুলিস্তান-ফার্মগেটে যৌথবাহিনীর অভিযান
বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
যান চলাচলে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুলিস্তান এলাকা হকারদের দখলেই থাকে বললে চলে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা ও রেড জোন ঘোষণা করে হকারদের নিষিদ্ধ করা হলেও ফলাফল শূণ্য। পুলিশ কিছুদিন পর পর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায় হকাররা। কয়েকঘণ্টা পর আবার যা-তাই অবস্থা। ভ্যানভর্তি বিভিন্ন ধরণের পণ্য নিয়ে হাজির হয়ে যান তারা।
অভিযানের সময় এসব ভ্যানগুলো লুকিয়ে রাখায়, এবার পুলিশও হেটেছে ভিন্ন পথে। লুকায়িত স্থান গুলিস্তানের শহীদ মতিউর পার্কে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
অভিযানে সহযোগিতা করেছে ডিএমপির ক্রাইম বিভাগ ও সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে গুলিস্তানের রাস্তা দখল করে বসা হকারদের গাড়ির বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অন্তত ৫ শতাধিক ভ্যানগাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
একইদিন ফার্মগেট এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ফুটপাতের শতাধিক দোকান গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করছে ওই এলাকার হকাররা। পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও সিটি করপোরেশনের যৌথ অভিযানে ফার্মগেট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। ফার্মগেটের গ্রিনরোড থেকে শুরু করে খামারবাড়ি পর্যন্ত এ অভিযানের চালানো হয়।
গুলিস্তানে উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, গুলিস্তানে আমরা দিনে চারবার অভিযান চালায়। কিন্তু অভিযানে এসে কোনো গাড়ি পাওয়া যায় না। পরে তথ্য পেলাম আমরা অভিযানে আসার পর হকাররা গাড়িগুলো শহীদ মতিউর পার্কে এনে রাখে। অভিযানের দল চলে গেলে তারা আবারও রাস্তায় চলে আসতো। পরে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় গাড়ি রাখার স্থানেই অভিযান চালিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, যখন রাস্তায় অভিযান চালানো হয় তখন তারা মুহূর্তের মধ্যেই চলে যায়। এই গাড়িগুলো আসলে যায় কোথায়? তখন তদন্ত করতে এসে এখানে পেয়েছি। আর তারা পার্কে টাকা দিয়ে থাকে নাকি ইজারাদার তাদের রাখে সে বিষয় আমরা জানি না। পার্কের ইজারা দিয়েছে ডিএসসিসি। তাই এখানে গাড়ি রাখা বৈধ না অবৈধ সেটা পুলিশের বলা সম্ভব না।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লক্কর-ঝক্কর গাড়ি, অবৈধগাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। গত ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ট্রাফিক পক্ষ ছিল। এই ১৫ দিনে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সাড়ে ২৪ হাজার গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফিটনেসবিহীন গাড়ি আছে, রুট পার্মিট ছাড়া গাড়িসহ বিভিন্ন গাড়ি ছিলো। এই রাস্তায় হকারের কারণে গাড়ি চলতে পারে না। প্রতিদিনই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। হকারদের সঙ্গে চোর পুলিশ খেলা কবে শেষ হবে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রধান বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে বিশেষ অভিযান চালিয়েছি রাস্তা দখলে ব্যবহৃত গাড়িগুলো জব্দ করে বাজেয়াপ্ত করেছে ডিএসসিসি।
এদিকে ফার্মগেট এলাকায় দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্য দুপুর ১২টার দিকে ফার্মগেটের গ্রিন সুপার মার্কেটের সামনে থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। প্রায় চারঘণ্টা চলা এ অভিযানে আনন্দ সিনেমা হল, ফার্মগেট সুপার মার্কেট, তেজগাঁও কলেজের সামনে ও খামারবাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে সড়ক-ফুটপাতে গড়ে তোলা কয়েক’শ দোকানপাট সরিয়ে দেয়া হয়। পরে বিকেল ৩টার দিকে হকাররা ফার্মগেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ৩টার দিকে খামারবাড়ি মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে তারা সেখান থেকে আবার তেজগাঁও কলেজের সামনে মিছিল নিয়ে প্রায় আঁধাঘণ্টা বিক্ষোভ করে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে চলে যায়।
এ সময় মহিদুল নামে এক হকার বলেন, আমরা পেটের দায়ে রাস্তায় দোকান করি। আমাদের সরিয়ে দিলে কোথায় যাবো। কী করে খাবো, কীভাবে সংসার চালাবো। চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে মো. শফিক নামে আরেকজন জানান, আগে ফার্মগেটের প্রতিটা দোকান থেকে পুলিশসহ বিভিন্নজন চাঁদা নিতো। তখন কোনো সমস্যা হতো না। এখন কেউ চাঁদা নিচ্ছে না, এখন আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাহলে কী তারা আবার চাঁদা নিতে চায়! এটা হতে দেয়া হবে না। আমাদের পেটে লাঠি দিলে, আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
ফুটপাত উচ্ছেদের বিষয়ে ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান বলেন, শহরের মধ্যে ফার্মগেট অতি ব্যস্ততম একটি এলাকায়। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। ফুটপাত ও সড়ক দখলে থাকায় জনসাধারণের চলাচলের ভোগান্তির পাশাপাশি অপরাধ তৎপরতা বাড়ছে। তাই ফার্মগেট এলাকার ফুটপাত উচ্ছেদ করা হয়েছে।
ডিসি আরও বলেন, ১১ নভেম্বর সোমবার ফুটপাত উচ্ছেদের বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছিল। তাদের চলে যেতে ঘোষণা দেয়া হয়। অথচ তারা দোকানপাট সরিয়ে নেয়নি। তাই পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়। যৌথ অভিযানে সেনাবাহিনী তেজগাঁও অস্থায়ী সোনা ক্যাম্পের একটি দল অংশ নেন। ক্যাপ্টেন আবরার বলেন, যৌথ অভিযানের অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের বিষয়ে আগে থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। জননিরাপত্তার স্বার্থে এ অভিযান অব্যহত থাকবে।