অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমর্থন থাকার কারণেই বিএনপি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, এটি বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলের অংশ এবং তাদের মূল লক্ষ্য হলো দেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনা।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’ আয়োজিত এক আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সংস্কারে আমাদের সমর্থন আছে, এজন্যই আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই। আমরা জনগণের মতামত নিয়ে আলোচনা করে এই সংস্কার বাস্তবায়ন করব।”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের সমাপনী অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি বেশ কিছুদিন ধরেই দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে। গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটি চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানায়। আলোচনায় এক শিক্ষার্থী জানতে চান, এত স্বল্প সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা আদৌ সম্ভব কি না। জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা আমাদের রাজনৈতিক কৌশল, এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত কিছু বলব না।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন ছাড়া সংস্কার চাওয়াটা কঠিন। নির্বাচিত সরকারই এ সংস্কার করতে পারবে, কারণ তাদের জনগণের ম্যান্ডেট থাকবে।”
মির্জা ফখরুল মনে করেন, বাংলাদেশের জনগণ রাজনৈতিক পরিবর্তন চায় এবং শুধু অর্থনৈতিক সংস্কার যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, “আমরা সংস্কার দুইভাবে দেখি—রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। তবে রাজনৈতিক সংস্কারকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। এজন্য রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনার কথা বলেছি।”
বিএনপি ইতোমধ্যে ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ জন্য ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেখানে বিস্তারিত বলা আছে, আমরা কীভাবে সংস্কার করতে চাই।”
জাতীয় সংসদ ব্যবস্থায় পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা দুই কক্ষের পার্লামেন্ট করতে চাই। যারা নির্বাচন করেন না, কিন্তু দেশ গঠনে অবদান রাখতে পারেন, তাদের আপার হাউসে নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, জনগণের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়েও বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “কেউ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এটি আমরা নিশ্চিত করতে চাই।”
নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যারা ছিলেন, তাদের নিয়ে আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেছি,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
অনুষ্ঠানে টেকনাফ থেকে আসা এক শিক্ষার্থী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার এই ইস্যুকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। তিনি বলেন, “চীন ও ভারতের সঙ্গে যেভাবে আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল, সরকার তা করেনি।”
তিনি অতীতের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান এবং ২০০৪ সালে খালেদা জিয়া আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় গেলে একইভাবে আলাপ-আলোচনা করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেব।”
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা চাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা রাজনৈতিক সরকার সবসময় প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে পারে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই চাপ কিছুটা কমেছে।”
এই আলোচনার মধ্য দিয়ে বিএনপি স্পষ্ট করেছে যে, তারা শুধু তড়িঘড়ি করে নির্বাচন চায় না, বরং রাজনৈতিক কাঠামোতেই বড় ধরনের পরিবর্তন চায়। দলটির এই পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সমর্থন কতটুকু পাওয়া যাবে, তা সময়ই বলে দেবে।
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমর্থন থাকার কারণেই বিএনপি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, এটি বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলের অংশ এবং তাদের মূল লক্ষ্য হলো দেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনা।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’ আয়োজিত এক আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সংস্কারে আমাদের সমর্থন আছে, এজন্যই আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই। আমরা জনগণের মতামত নিয়ে আলোচনা করে এই সংস্কার বাস্তবায়ন করব।”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের সমাপনী অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি বেশ কিছুদিন ধরেই দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে। গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটি চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানায়। আলোচনায় এক শিক্ষার্থী জানতে চান, এত স্বল্প সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা আদৌ সম্ভব কি না। জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা আমাদের রাজনৈতিক কৌশল, এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত কিছু বলব না।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন ছাড়া সংস্কার চাওয়াটা কঠিন। নির্বাচিত সরকারই এ সংস্কার করতে পারবে, কারণ তাদের জনগণের ম্যান্ডেট থাকবে।”
মির্জা ফখরুল মনে করেন, বাংলাদেশের জনগণ রাজনৈতিক পরিবর্তন চায় এবং শুধু অর্থনৈতিক সংস্কার যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, “আমরা সংস্কার দুইভাবে দেখি—রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। তবে রাজনৈতিক সংস্কারকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। এজন্য রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনার কথা বলেছি।”
বিএনপি ইতোমধ্যে ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ জন্য ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেখানে বিস্তারিত বলা আছে, আমরা কীভাবে সংস্কার করতে চাই।”
জাতীয় সংসদ ব্যবস্থায় পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা দুই কক্ষের পার্লামেন্ট করতে চাই। যারা নির্বাচন করেন না, কিন্তু দেশ গঠনে অবদান রাখতে পারেন, তাদের আপার হাউসে নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, জনগণের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়েও বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “কেউ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এটি আমরা নিশ্চিত করতে চাই।”
নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যারা ছিলেন, তাদের নিয়ে আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেছি,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
অনুষ্ঠানে টেকনাফ থেকে আসা এক শিক্ষার্থী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার এই ইস্যুকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। তিনি বলেন, “চীন ও ভারতের সঙ্গে যেভাবে আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল, সরকার তা করেনি।”
তিনি অতীতের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান এবং ২০০৪ সালে খালেদা জিয়া আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় গেলে একইভাবে আলাপ-আলোচনা করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেব।”
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা চাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা রাজনৈতিক সরকার সবসময় প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে পারে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই চাপ কিছুটা কমেছে।”
এই আলোচনার মধ্য দিয়ে বিএনপি স্পষ্ট করেছে যে, তারা শুধু তড়িঘড়ি করে নির্বাচন চায় না, বরং রাজনৈতিক কাঠামোতেই বড় ধরনের পরিবর্তন চায়। দলটির এই পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সমর্থন কতটুকু পাওয়া যাবে, তা সময়ই বলে দেবে।