alt

রাজনীতি

রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি, নতুন সংবিধান ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আলোচনা

রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ও সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশেষ গোলটেবিল বৈঠক

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া নেতারা বলেছেন, দেশের জন্য একটি জাতীয় পর্যায়ের শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন করতে হলে সেখানে সব ধর্ম, জাতি ও লিঙ্গের ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। না হলে, জনগণের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির সঠিক বিকাশ সম্ভব হবে না। এ ধরনের মন্তব্য উঠে এসেছে একটি গোলটেবিল বৈঠকে, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং অন্যান্য ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, "নির্বাচনের দিকে দ্রুত এগিয়ে না গেলে সংকট আরও বাড়বে।" তিনি আরও জানান, জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম পর্বে বামপন্থীরা সক্রিয় হতে পারেনি, যার কারণে ডানপন্থীরা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনের আগে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গঠনের ওপর তিনি জোর দেন।

আনু মুহাম্মদ, এক খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বুদ্ধিজীবী, বলেন, "যে কোনো রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রয়োজন, তবে সেই সংস্কার অবশ্যই জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।" তিনি আরো বলেন, "এখনকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নেই, যা সঠিকভাবে কার্যকর একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশ নেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। তিনি বলেন, "অতীতের সামরিক সরকারগুলো সংবিধান নতুন করে তৈরির চেষ্টা করেনি। তারা সংবিধান বাতিল রেখে শাসন চালিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে সংবিধানটি আছে, তার চারটি মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য নয়।" তাঁর মতে, বর্তমান সংবিধানেই বেশ কিছু ভাল দিক রয়েছে, যা আগামীতে কাজে লাগানো উচিত।

এছাড়া সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের দ্বার খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, "নির্বাচন ছাড়া কোনওভাবেই দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।"

অধ্যাপক তাজুল ইসলাম মন্তব্য করেন, "বিগত সরকারের আমলে গণতন্ত্রহীনতা সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে তারা নিজেদের স্বার্থে লুটপাটের সুযোগ তৈরি করতে পারে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।"

সংবিধান সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ। তিনি বলেন, "সংবিধানে অনেক ভাল দিক লেখা রয়েছে, তবে এখন আর কেউ তা মানছে না। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের সংস্কারের পথে এগিয়ে আসতে হবে।"

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দলসহ যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলোই সংস্কার করা হবে। দ্বিমত হলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটাই যে কোনো সংস্কারের জন্য প্রযোজ্য।" তিনি আরও বলেন, "এখন দ্রুত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা উচিত।"

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক এবং সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আফরোজান নাহার রাশেদা। তিনি তাঁর সমাপনী বক্তৃতায় বলেন, "এ আলোচনায় নারীর অংশগ্রহণ কম ছিল, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।"

বৈঠকে আরও বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ জাসদের নেতা মুশতাক হোসেন এবং গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। আলোচনার মূল বিষয় ছিল, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং সংবিধান সংশোধন করা কি না।

গোলটেবিল বৈঠকে জাতিসংঘের সাবেক উন্নয়ন গবেষণাপ্রধান এবং ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান গ্রোথের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "সংবিধান নতুন করে লেখার প্রয়োজন কি আসলেই আছে?" তিনি আরও মন্তব্য করেন, "যদিও সংবিধান পরিবর্তন করা হচ্ছে, তবে জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কার হতে পারে।" তিনি বিশিষ্ট আইনসভা নিয়ে বলেন, "বাংলাদেশে কেন এ ধরনের আইনসভা প্রয়োজন, তার কারণ এখনও পরিষ্কার হয়নি।"

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, "আনুপাতিক নির্বাচন একটি ভাল পদ্ধতি, তবে সবচেয়ে জরুরি হল, নিম্নকক্ষে আনুপাতিক সদস্য নির্বাচন করা।" তিনি স্থানীয় সরকারব্যবস্থার সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করেন, তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ গঠনের প্রস্তাবটি ক্ষমতার আরেকটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

অধ্যাপক এম এম আকাশ তাঁর প্রবন্ধে বলেন, "আর্থিক খাত, জ্বালানিব্যবস্থা ও বাজারব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি, অন্যথায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।" তিনি আরও বলেন, "যে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে, তা উদ্ধার করতে হবে, এবং পুলিশ, শিক্ষা কর্মকর্তা, আমলা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা অন্যায়ভাবে সরকারের সহায়তা করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে।"

অর্থনৈতিক সংস্কার ও সামাজিক অস্থিরতা : অধ্যাপক এম এম আকাশ তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, "যদি অর্থনৈতিক সংস্কার না করা হয়, তবে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।" তিনি আরও বলেন, "পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত চালাতে হবে, এবং এটি দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।"

তিনি বিশেষ করে কর ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেন। "দেশে যে কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে চাপে আসা উচিত, কারণ তা সরকারের আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে," তিনি মন্তব্য করেন।

সিপিডির অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,"শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। এই অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যদিও এর বিরোধিতা আসবে। সরকারকে অবশ্যই এই বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।"

এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন,বর্তমান সরকারের ওপর আয় বাড়ানোর চাপ রয়েছে, কিন্তু ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক দিয়ে আয় বৃদ্ধি সম্ভব নয়। দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কর ব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার, সংবিধান পরিবর্তন, নির্বাচনী পদ্ধতি এবং আর্থিক খাতের সংস্কার। বক্তারা একমত হয়েছেন যে, দেশের জন্য একটি শক্তিশালী, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠন করা জরুরি, যা দেশের সব জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

রিট খারিজ: কাকরাইলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস

ছবি

বিএনপির মুখপাত্র আখ্যা দিয়ে উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি এনসিপির

ছবি

‘ফ্যাসিবাদের কমিশন মানি না’—ইসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে এনসিপি

ছবি

এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্তে রাজস্ব প্রশাসনে তীব্র প্রতিক্রিয়া, লাগাতার অসহযোগের ঘোষণা

ছবি

নির্বাচন ভবনের সামনে এনসিপি, ইসি পুনর্গঠন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি

একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল ম্যাচিউরিটি দেখাচ্ছে না: নাহিদ

ছবি

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমকে পদত্যাগ করতে বললেন ইশরাক

ছবি

তিনজনকে ছাড়িয়ে আনার ঘটনায় এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

ছবি

থানা হেফাজতে নেওয়ার ঘটনায় এনসিপি নেতার মধ্যস্থতা, ফেসবুকে হান্নান মাসউদের ব্যাখ্যা

ছবি

সারজিস আলমের পোস্টে মন্তব্য করে চাকরি হারানোর মুখে নাজমুল

ছবি

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি

ছবি

ইশরাককে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনে অবস্থান কর্মসূচি

ছবি

দেশকে অস্থিতিশীল করতে সরকারের ভেতর অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে: বিএনপি মহাসচিব

ছবি

তাপসের নির্বাচনী বৈধতা বাতিল, গেজেট নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি শেষ

ছবি

একদিন পর কারাগার থেকে বেরিয়ে এলেন অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া

ছবি

‘সাম্য হত্যার বিচার চাই’—শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা মুচলেকায় মুক্ত

ছবি

গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের যাত্রা যেন ‘সাপলুডু খেলার মতো’: নজরুল ইসলাম খান

ছবি

ঝটিকা মিছিলের ঘটনায় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ ১৪ জনের রিমান্ড মঞ্জুর

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি সারজিস আলমের

ছবি

নুসরাত ফারিয়াকে পাঠানো হলো কাশিমপুর কারাগারে, জামিন শুনানি ২২ মে

ছবি

ইশরাকের শপথ দাবিতে হুঁশিয়ারি, জাতীয় নির্বাচনের তাগিদ দিলেন সালাহউদ্দিন

ছবি

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করছে: এনসিপি

আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, আরও ১৬ জন গ্রেপ্তার

ছবি

নির্বাচন নিয়ে জনগণের উদ্বেগ বৈধ: সিপিবি

ছবি

‘এই মেয়েটার কিছুই করার ছিল না’: ফারিয়ার পক্ষে মুখ খুললেন শিল্পীরা, প্রশ্ন তুললেন এনসিপির হাসনাত

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য গঠনে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন: আলী রীয়াজ

ছবি

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: নির্বাচন কমিশনার মাছউদ

ছবি

নুসরাত গ্রেপ্তার: ‘হাসিনা স্টাইলে ডাইভারশন’ বললেন হাসনাত আবদুল্লাহ, প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অভিনয়শিল্পীরাও

ছবি

লড়াই গড়ালো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে: আসিফের পর এবার ইশরাকের ফেইসবুক পোস্ট

ছবি

নিরপেক্ষতা বিসর্জন দেওয়া ব্যক্তিদের পদত্যাগ দাবি ইশরাকের

ছবি

“নির্বাচন কবে হবে, সরকার কতদিন থাকবে—এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই দেশ চলছে” : আমীর খসরু

ছবি

শপথ না নেওয়ায় সড়ক অবরোধ, ছয় দিন ধরে নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ

ছবি

নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে করার বাধাটা কোথায়, প্রশ্ন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলামের

ছবি

দলের দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনা জানালেন নাহিদ ইসলাম

ছবি

এবার পাল্টা অভিযোগ আসিফের বললেন, গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ রেখে আন্দোলন করছে বিএনপি

tab

রাজনীতি

রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি, নতুন সংবিধান ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আলোচনা

রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ও সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশেষ গোলটেবিল বৈঠক

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া নেতারা বলেছেন, দেশের জন্য একটি জাতীয় পর্যায়ের শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন করতে হলে সেখানে সব ধর্ম, জাতি ও লিঙ্গের ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। না হলে, জনগণের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির সঠিক বিকাশ সম্ভব হবে না। এ ধরনের মন্তব্য উঠে এসেছে একটি গোলটেবিল বৈঠকে, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং অন্যান্য ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, "নির্বাচনের দিকে দ্রুত এগিয়ে না গেলে সংকট আরও বাড়বে।" তিনি আরও জানান, জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম পর্বে বামপন্থীরা সক্রিয় হতে পারেনি, যার কারণে ডানপন্থীরা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনের আগে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গঠনের ওপর তিনি জোর দেন।

আনু মুহাম্মদ, এক খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বুদ্ধিজীবী, বলেন, "যে কোনো রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রয়োজন, তবে সেই সংস্কার অবশ্যই জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।" তিনি আরো বলেন, "এখনকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নেই, যা সঠিকভাবে কার্যকর একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশ নেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। তিনি বলেন, "অতীতের সামরিক সরকারগুলো সংবিধান নতুন করে তৈরির চেষ্টা করেনি। তারা সংবিধান বাতিল রেখে শাসন চালিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে সংবিধানটি আছে, তার চারটি মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য নয়।" তাঁর মতে, বর্তমান সংবিধানেই বেশ কিছু ভাল দিক রয়েছে, যা আগামীতে কাজে লাগানো উচিত।

এছাড়া সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের দ্বার খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, "নির্বাচন ছাড়া কোনওভাবেই দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।"

অধ্যাপক তাজুল ইসলাম মন্তব্য করেন, "বিগত সরকারের আমলে গণতন্ত্রহীনতা সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে তারা নিজেদের স্বার্থে লুটপাটের সুযোগ তৈরি করতে পারে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।"

সংবিধান সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ। তিনি বলেন, "সংবিধানে অনেক ভাল দিক লেখা রয়েছে, তবে এখন আর কেউ তা মানছে না। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের সংস্কারের পথে এগিয়ে আসতে হবে।"

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দলসহ যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলোই সংস্কার করা হবে। দ্বিমত হলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটাই যে কোনো সংস্কারের জন্য প্রযোজ্য।" তিনি আরও বলেন, "এখন দ্রুত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা উচিত।"

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক এবং সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আফরোজান নাহার রাশেদা। তিনি তাঁর সমাপনী বক্তৃতায় বলেন, "এ আলোচনায় নারীর অংশগ্রহণ কম ছিল, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।"

বৈঠকে আরও বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ জাসদের নেতা মুশতাক হোসেন এবং গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। আলোচনার মূল বিষয় ছিল, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং সংবিধান সংশোধন করা কি না।

গোলটেবিল বৈঠকে জাতিসংঘের সাবেক উন্নয়ন গবেষণাপ্রধান এবং ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান গ্রোথের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "সংবিধান নতুন করে লেখার প্রয়োজন কি আসলেই আছে?" তিনি আরও মন্তব্য করেন, "যদিও সংবিধান পরিবর্তন করা হচ্ছে, তবে জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কার হতে পারে।" তিনি বিশিষ্ট আইনসভা নিয়ে বলেন, "বাংলাদেশে কেন এ ধরনের আইনসভা প্রয়োজন, তার কারণ এখনও পরিষ্কার হয়নি।"

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, "আনুপাতিক নির্বাচন একটি ভাল পদ্ধতি, তবে সবচেয়ে জরুরি হল, নিম্নকক্ষে আনুপাতিক সদস্য নির্বাচন করা।" তিনি স্থানীয় সরকারব্যবস্থার সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করেন, তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ গঠনের প্রস্তাবটি ক্ষমতার আরেকটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

অধ্যাপক এম এম আকাশ তাঁর প্রবন্ধে বলেন, "আর্থিক খাত, জ্বালানিব্যবস্থা ও বাজারব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি, অন্যথায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।" তিনি আরও বলেন, "যে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে, তা উদ্ধার করতে হবে, এবং পুলিশ, শিক্ষা কর্মকর্তা, আমলা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা অন্যায়ভাবে সরকারের সহায়তা করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে।"

অর্থনৈতিক সংস্কার ও সামাজিক অস্থিরতা : অধ্যাপক এম এম আকাশ তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, "যদি অর্থনৈতিক সংস্কার না করা হয়, তবে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।" তিনি আরও বলেন, "পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত চালাতে হবে, এবং এটি দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।"

তিনি বিশেষ করে কর ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেন। "দেশে যে কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে চাপে আসা উচিত, কারণ তা সরকারের আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে," তিনি মন্তব্য করেন।

সিপিডির অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,"শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। এই অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যদিও এর বিরোধিতা আসবে। সরকারকে অবশ্যই এই বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।"

এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন,বর্তমান সরকারের ওপর আয় বাড়ানোর চাপ রয়েছে, কিন্তু ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক দিয়ে আয় বৃদ্ধি সম্ভব নয়। দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কর ব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার, সংবিধান পরিবর্তন, নির্বাচনী পদ্ধতি এবং আর্থিক খাতের সংস্কার। বক্তারা একমত হয়েছেন যে, দেশের জন্য একটি শক্তিশালী, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠন করা জরুরি, যা দেশের সব জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

back to top