ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে রোডম্যাপ ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সক্রিয়তায় সন্দেহ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
ভোটের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ, দল নিবন্ধন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ভোট কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরির মতো কর্মকাণ্ড নিয়ে ইসিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানায় দলটি।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “সাংবাধিানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা অনেকগুলো কথা ইসি থেকে শুনতে পাই। যেগুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টার থেকে শুনিনি। রোডম্যাপের কথা শুনিনি, ইসি থেকে এসেছে। এজন্য আমরা বলব, কোনো জায়গায় কথা বলার জন্য ইসি নিজেদের জায়গায় সতর্ক থাকবেন।”
তিনি আরও বলেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের যে সময়সীমা প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সে অনুযায়ী ইসি কাজ শুরু করতে পারে।
রোববার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এনসিপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন।
নির্বাচনের পথচলায় ডিসেম্বরকে সামনে রেখে অগ্রাধিকারমূলক প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেজন্য ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরির কাজ চলছে। ৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, জুন-জুলাইয়ে ‘কর্মপরিকল্পনা’ ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “কিন্তু রোডম্যাপ বা সরকার থেকে কোনো দিক নির্দেশনা আসার আগেই যখন নির্বাচন কমিশন নিজেদের থেকে কথা বলে থাকেন, সেজন্য আমরা সন্দেহ পোষণ করি।”
বৈঠকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া, দল নিবন্ধন নবায়ন, ঋণখেলাপি ও হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে সদস্যপদ বাতিলসহ প্রায় দশটি দাবি কমিশনের সামনে তুলে ধরেছে এনসিপি। তারা ইসির আইনি সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা করে।
ইসি পুনর্গঠনে নির্ভরশীল ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে যেন নতুন নির্বাচন হয়, ইসি যেন জনগণের দাবি অনুযায়ী কাজ করে। তিনি জানান, ২০২২ সালের আইন অনুযায়ী কমিশন গঠনের বিরোধিতা করেছেন তারা। তবে বর্তমান কমিশনারদের প্রতি সরাসরি আপত্তি না জানিয়ে বলেছেন, “ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে তারা থাকবেন কি না।”
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে জোর দাবি এনসিপির
পাটওয়ারী বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট যখন ফাইনাল হবে, তখন সরকার প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পাঠাবে। সেই সিদ্ধান্ত যেন বাস্তবায়িত হয়।” তিনি জানান, কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ করতে পারে, তবে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত মতামতের ভিত্তিতে এগোনো উচিত।
তিনি বলেন, “বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক সংস্কার জরুরি। সিইসি একমত হয়েছেন যে, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে আস্থা রাখা সম্ভব নয়।”
এনসিপির নির্বাচনি দাবিসমূহ
দলটির দাবির মধ্যে রয়েছে মনোনয়নপত্র জমায় সশরীরে উপস্থিতির বিধান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের সার্টিফিকেশন দেওয়া, হলফনামার সত্যতা যাচাই, নির্বাচনী সহিংসতা রোধে আচরণ বিধি ও ব্যয়ের বিধান পরিবর্তন, ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বন্ধ, হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।
তাদের মতে, এসব দাবির বাস্তবায়ন ছাড়া ‘ভোটে যাওয়া ও ভোটাধিকার প্রয়োগ সম্ভব নয়’।
তিন নির্বাচনের দায়ীদের বিচারের দাবি এনসিপির
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে জড়িত প্রার্থী এবং ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেছে এনসিপি।
পাটওয়ারী বলেন, “ভবিষ্যতের বাংলাদেশে কেউ যেন রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অধিকারকে উপেক্ষা করতে না পারে। এজন্য অতীতের দায়ীদের আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আহত, নিহত ও গুমের শিকারদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট কাঠামোর অংশ হিসেবে ইসি ভূমিকা রেখেছে। নির্বাচন সংস্কারের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনে ইসিকেও সেই পথে নিতে হবে।
রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে রোডম্যাপ ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সক্রিয়তায় সন্দেহ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
ভোটের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ, দল নিবন্ধন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ভোট কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরির মতো কর্মকাণ্ড নিয়ে ইসিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানায় দলটি।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “সাংবাধিানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা অনেকগুলো কথা ইসি থেকে শুনতে পাই। যেগুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টার থেকে শুনিনি। রোডম্যাপের কথা শুনিনি, ইসি থেকে এসেছে। এজন্য আমরা বলব, কোনো জায়গায় কথা বলার জন্য ইসি নিজেদের জায়গায় সতর্ক থাকবেন।”
তিনি আরও বলেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের যে সময়সীমা প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সে অনুযায়ী ইসি কাজ শুরু করতে পারে।
রোববার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এনসিপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন।
নির্বাচনের পথচলায় ডিসেম্বরকে সামনে রেখে অগ্রাধিকারমূলক প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেজন্য ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরির কাজ চলছে। ৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, জুন-জুলাইয়ে ‘কর্মপরিকল্পনা’ ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “কিন্তু রোডম্যাপ বা সরকার থেকে কোনো দিক নির্দেশনা আসার আগেই যখন নির্বাচন কমিশন নিজেদের থেকে কথা বলে থাকেন, সেজন্য আমরা সন্দেহ পোষণ করি।”
বৈঠকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া, দল নিবন্ধন নবায়ন, ঋণখেলাপি ও হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে সদস্যপদ বাতিলসহ প্রায় দশটি দাবি কমিশনের সামনে তুলে ধরেছে এনসিপি। তারা ইসির আইনি সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা করে।
ইসি পুনর্গঠনে নির্ভরশীল ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে যেন নতুন নির্বাচন হয়, ইসি যেন জনগণের দাবি অনুযায়ী কাজ করে। তিনি জানান, ২০২২ সালের আইন অনুযায়ী কমিশন গঠনের বিরোধিতা করেছেন তারা। তবে বর্তমান কমিশনারদের প্রতি সরাসরি আপত্তি না জানিয়ে বলেছেন, “ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে তারা থাকবেন কি না।”
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে জোর দাবি এনসিপির
পাটওয়ারী বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট যখন ফাইনাল হবে, তখন সরকার প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পাঠাবে। সেই সিদ্ধান্ত যেন বাস্তবায়িত হয়।” তিনি জানান, কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ করতে পারে, তবে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত মতামতের ভিত্তিতে এগোনো উচিত।
তিনি বলেন, “বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক সংস্কার জরুরি। সিইসি একমত হয়েছেন যে, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে আস্থা রাখা সম্ভব নয়।”
এনসিপির নির্বাচনি দাবিসমূহ
দলটির দাবির মধ্যে রয়েছে মনোনয়নপত্র জমায় সশরীরে উপস্থিতির বিধান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের সার্টিফিকেশন দেওয়া, হলফনামার সত্যতা যাচাই, নির্বাচনী সহিংসতা রোধে আচরণ বিধি ও ব্যয়ের বিধান পরিবর্তন, ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বন্ধ, হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।
তাদের মতে, এসব দাবির বাস্তবায়ন ছাড়া ‘ভোটে যাওয়া ও ভোটাধিকার প্রয়োগ সম্ভব নয়’।
তিন নির্বাচনের দায়ীদের বিচারের দাবি এনসিপির
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে জড়িত প্রার্থী এবং ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেছে এনসিপি।
পাটওয়ারী বলেন, “ভবিষ্যতের বাংলাদেশে কেউ যেন রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অধিকারকে উপেক্ষা করতে না পারে। এজন্য অতীতের দায়ীদের আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আহত, নিহত ও গুমের শিকারদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট কাঠামোর অংশ হিসেবে ইসি ভূমিকা রেখেছে। নির্বাচন সংস্কারের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনে ইসিকেও সেই পথে নিতে হবে।