পিআর বা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে ভোটের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর সরব হওয়াকে বিএনপির ওপর ‘চাপ সৃষ্টির কৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই ভাষ্যকে কেন্দ্র করে ইসলামি দলটি প্রতিবাদ জানিয়েছে।
কলকাতার দৈনিকের সাক্ষাৎকারে ফখরুল বলেন, তাদের কাছে ‘৩০টি আসন’ চেয়েছিল জামায়াত। এর জবাবে বিএনপি ‘অনেক কম’ সংখ্যা উল্লেখ করলে জামায়াত তা ‘মনঃপূত হয়নি’ বলে মনে করেছে। তিনি বলেন, “জামায়াতকে আর আমরা মাথায় উঠতে দেব না। তারা যত বড় না শক্তি, আমরা অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।”
এর প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, “এ ধরনের সম্পূর্ণ অসত্য, অমর্যাদাকর ও প্রতিহিংসাপরায়ণ বক্তব্য যে প্রবীণ রাজনীতিবিদ দিয়েছেন তা বিশ্বাস করতে আমাদের কষ্ট হয়। এই বক্তব্যের সাথে সত্য ও শিষ্টাচারের কোনো মিল নেই। যদি এ বক্তব্য তার হয়ে থাকে, তবে বাধ্য হয়ে আমরা তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি অনুরোধ করছি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কার কাছে এই আসনগুলো দাবি করেছে–তার প্রমাণ জাতির কাছে উপস্থাপন করুন।”
গোলাম পরওয়ার বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী স্বাভাবিকভাবে তার মূল নেতৃত্বের অধীনে পরিচালিত হয়। কারো কাছে আসন চাওয়ার রাজনীতির সাথে জামায়াতের বর্তমান কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি যদি তার বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন, তবে আশা করছি তিনি জনগণের সামনে ন্যূনতম পক্ষে দুঃখ প্রকাশ করবেন।”
ফখরুল সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, “পিআর-টিআর সবই বিএনপির উপরে চাপ সৃষ্টির কৌশল। জামায়াত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে।”
প্রশ্ন ছিল, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রভাব ছাড়া নির্বাচন ও সরকার গঠন হবে। ফখরুল বলেন, “ভারত মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী। সেই সময়ে এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। ভৌগোলিকভাবেও বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত, একদিকে সাগর। ভারতের প্রভাব বাংলাদেশে থাকবেই। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ বলতে শুধু আওয়ামী লীগকে বুঝেছে ভারতের শাসকেরা। আওয়ামী লীগের ভাষ্য মেনে বিএনপি ও জামায়াতকে একই বন্ধনীতে ফেলেছে। জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতি এক নয়। আমরা অসাম্প্রদায়িক, মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সংবিধান রক্ষায় আজও স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করছি। বামেরা আমাদের সঙ্গে রয়েছে।”
জামায়াতের বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি এবং সংগঠনের মর্যাদা সম্পর্কে যে তাচ্ছিল্যের ভাষায় কথা বলেছেন, তার বিচারের ভার জনগণের আদালতের উপর ছেড়ে দিলাম। প্রিয় জনগণের উপর আমাদের ভরসা রয়েছে। আমাদের কার্যক্রম দেশ ও জনগণের জন্য। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই চূড়ান্ত লক্ষ্য। ভবিষ্যতে এ ধরনের অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ভোটের সমীকরণ
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের হলেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দল দুটির দূরত্ব স্পষ্ট হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতায় ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব প্রথম ফুটে ওঠে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে।
ওই নির্বাচনে জামায়াতকে অঘোষিতভাবে ৩৫ আসনে সমর্থন দেয় বিএনপি। বিএনপিকে শতাধিক আসনে ভোট দেয় দলটি। নির্বাচনে বিএনপি পায় ১৪০টি আসন, জামায়াত ১৮টি এবং আওয়ামী লীগ ৮৮টি। ভোট ছিল কাছাকাছি।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ফের জোট বাঁধে বিএনপি ও জামায়াত। জাতীয় পার্টি বের হয়ে গেলে তার দলের অংশ এবং কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোর মোর্চা ইসলামী ঐক্যজোট মিলিতভাবে লড়াই করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। ওই নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩টি আসন, জামায়াত ১৭টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, ইসলামী ঐক্যজোট ২টি পায়। আওয়ামী লীগ ৬২টি আসন পায়। পরে উপনির্বাচনে আরও ৪টি আসন হারায়।
সেই নির্বাচনে বিএনপি ভোট পায় ৪১.৪০%, আওয়ামী লীগ ৪০.০২%, জামায়াত ৪.২৮%।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তৈরি হয় নতুন সমীকরণ। জাতীয় পার্টির ভোট যোগ হওয়ার পর বিএনপির জোট পাত্তা পায়নি। নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪% ভোটে ২৩০টি আসন পায়। বিএনপির ধানের শীষে ভোট পড়ে ৩২.৫০%, আসন ৩০টি। জামায়াতের ভোট ৪.৭০%, আসন ২টি।
২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর জামায়াত দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় পিআর পদ্ধতির ভোটে সরব হয়েছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল, অন্যদিকে বিএনপি প্রবল বিরোধিতা করছে।
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পিআর বা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে ভোটের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর সরব হওয়াকে বিএনপির ওপর ‘চাপ সৃষ্টির কৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই ভাষ্যকে কেন্দ্র করে ইসলামি দলটি প্রতিবাদ জানিয়েছে।
কলকাতার দৈনিকের সাক্ষাৎকারে ফখরুল বলেন, তাদের কাছে ‘৩০টি আসন’ চেয়েছিল জামায়াত। এর জবাবে বিএনপি ‘অনেক কম’ সংখ্যা উল্লেখ করলে জামায়াত তা ‘মনঃপূত হয়নি’ বলে মনে করেছে। তিনি বলেন, “জামায়াতকে আর আমরা মাথায় উঠতে দেব না। তারা যত বড় না শক্তি, আমরা অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।”
এর প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, “এ ধরনের সম্পূর্ণ অসত্য, অমর্যাদাকর ও প্রতিহিংসাপরায়ণ বক্তব্য যে প্রবীণ রাজনীতিবিদ দিয়েছেন তা বিশ্বাস করতে আমাদের কষ্ট হয়। এই বক্তব্যের সাথে সত্য ও শিষ্টাচারের কোনো মিল নেই। যদি এ বক্তব্য তার হয়ে থাকে, তবে বাধ্য হয়ে আমরা তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি অনুরোধ করছি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কার কাছে এই আসনগুলো দাবি করেছে–তার প্রমাণ জাতির কাছে উপস্থাপন করুন।”
গোলাম পরওয়ার বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী স্বাভাবিকভাবে তার মূল নেতৃত্বের অধীনে পরিচালিত হয়। কারো কাছে আসন চাওয়ার রাজনীতির সাথে জামায়াতের বর্তমান কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি যদি তার বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন, তবে আশা করছি তিনি জনগণের সামনে ন্যূনতম পক্ষে দুঃখ প্রকাশ করবেন।”
ফখরুল সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, “পিআর-টিআর সবই বিএনপির উপরে চাপ সৃষ্টির কৌশল। জামায়াত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে।”
প্রশ্ন ছিল, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রভাব ছাড়া নির্বাচন ও সরকার গঠন হবে। ফখরুল বলেন, “ভারত মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী। সেই সময়ে এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। ভৌগোলিকভাবেও বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত, একদিকে সাগর। ভারতের প্রভাব বাংলাদেশে থাকবেই। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ বলতে শুধু আওয়ামী লীগকে বুঝেছে ভারতের শাসকেরা। আওয়ামী লীগের ভাষ্য মেনে বিএনপি ও জামায়াতকে একই বন্ধনীতে ফেলেছে। জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতি এক নয়। আমরা অসাম্প্রদায়িক, মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সংবিধান রক্ষায় আজও স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করছি। বামেরা আমাদের সঙ্গে রয়েছে।”
জামায়াতের বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি এবং সংগঠনের মর্যাদা সম্পর্কে যে তাচ্ছিল্যের ভাষায় কথা বলেছেন, তার বিচারের ভার জনগণের আদালতের উপর ছেড়ে দিলাম। প্রিয় জনগণের উপর আমাদের ভরসা রয়েছে। আমাদের কার্যক্রম দেশ ও জনগণের জন্য। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই চূড়ান্ত লক্ষ্য। ভবিষ্যতে এ ধরনের অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ভোটের সমীকরণ
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের হলেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দল দুটির দূরত্ব স্পষ্ট হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতায় ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব প্রথম ফুটে ওঠে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে।
ওই নির্বাচনে জামায়াতকে অঘোষিতভাবে ৩৫ আসনে সমর্থন দেয় বিএনপি। বিএনপিকে শতাধিক আসনে ভোট দেয় দলটি। নির্বাচনে বিএনপি পায় ১৪০টি আসন, জামায়াত ১৮টি এবং আওয়ামী লীগ ৮৮টি। ভোট ছিল কাছাকাছি।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ফের জোট বাঁধে বিএনপি ও জামায়াত। জাতীয় পার্টি বের হয়ে গেলে তার দলের অংশ এবং কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোর মোর্চা ইসলামী ঐক্যজোট মিলিতভাবে লড়াই করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। ওই নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩টি আসন, জামায়াত ১৭টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, ইসলামী ঐক্যজোট ২টি পায়। আওয়ামী লীগ ৬২টি আসন পায়। পরে উপনির্বাচনে আরও ৪টি আসন হারায়।
সেই নির্বাচনে বিএনপি ভোট পায় ৪১.৪০%, আওয়ামী লীগ ৪০.০২%, জামায়াত ৪.২৮%।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তৈরি হয় নতুন সমীকরণ। জাতীয় পার্টির ভোট যোগ হওয়ার পর বিএনপির জোট পাত্তা পায়নি। নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪% ভোটে ২৩০টি আসন পায়। বিএনপির ধানের শীষে ভোট পড়ে ৩২.৫০%, আসন ৩০টি। জামায়াতের ভোট ৪.৭০%, আসন ২টি।
২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর জামায়াত দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় পিআর পদ্ধতির ভোটে সরব হয়েছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল, অন্যদিকে বিএনপি প্রবল বিরোধিতা করছে।