আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সবার জন্য সমান সুযোগের প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ দ্রুত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে এক বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন সাবেক কর্মকর্তারা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন চার নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
‘দলনিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে রদবদল দরকার’
সাবেক কর্মকর্তারা বলেন, দলনিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রাখার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধারে প্রশাসনে দৃশ্যমান রদবদল আনা জরুরি। পাশাপাশি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে মাঠ প্রশাসন, বেসামরিক প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার আহ্বান জানান তারা।
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “সাবেক কর্মীদের পরামর্শ আমাদের চিন্তার খোরাক যোগাবে। ব্যাংক থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নেওয়ার কথাও ভাবছি, যাতে সরকারি কাঠামোর বাইরের লোকবল নিয়োগ দেওয়া যায়। তবে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্যামী হলেন একমাত্র আল্লাহ। কারও মনে দলীয় মনোভাব আছে কিনা জানা কঠিন। তবে কেউ যেন দলদাসের মতো আচরণ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।”
‘ন্যাশনাল ইলেকশন হলো ন্যাশনাল ডিউটি’
সিইসি বলেন, “সুষ্ঠু ভোট আয়োজন শুধু ইসির দায়িত্ব নয়, এটি জাতীয় দায়িত্ব। ন্যাশনাল ইলেকশন মানে ন্যাশনাল ডিউটি। কেউ যেন দলীয় আচরণ করতে না পারে, সে জন্য যা যা ব্যবস্থা দরকার, তা নেওয়া হবে।”
সাবেক কর্মকর্তাদের পরামর্শ
সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. জকরিয়া বলেন, নির্বাচনের সময় ইসির প্রয়োজন প্রায় ১০ লাখ লোকবল, অথচ কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা আছে মাত্র আড়াই হাজার।
“দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে লোক নিয়োগ করতে হবে। ইসলামী ব্যাংক বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তাদের নেওয়া ঠিক হবে না,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সচিব থেকে ওসি পর্যন্ত অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছিল। এবারও এমন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”
জকরিয়া সীমান্ত পথে অস্ত্র প্রবেশ, নকল টাকা ছড়ানো, কালো টাকা ব্যবহার রোধ এবং সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে ইসিকে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন।
সাবেক যুগ্মসচিব খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, এ নির্বাচন ‘সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং’ হবে। তিনি এক জেলায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, তফসিলের সময় বাড়ানো এবং পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থাপনা উন্নত করার প্রস্তাব দেন।
সাবেক ইসি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, “ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিলে কমিশনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন পরিচালনা করা সহজ হবে।”
মিহির সারওয়ার মোর্শেদ, সাবেক উপ-সচিব, বলেন, “ইসলামী ব্যাংক, সোশাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভোটগ্রহণ দায়িত্বে না রাখা উচিত। গণমাধ্যম যেন ভোট গণনার সময় কেন্দ্রে প্রবেশ না করে।”
তিনি ভোটের দিন নির্বাচন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ারও দাবি জানান।
সাবেক আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, “আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তফসিল ঘোষণার এক মাস আগে থেকেই আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।”
সাবেক কর্মকর্তা মিছবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “গত তিন নির্বাচনের কারণে জনগণ ইসির প্রতি আস্থা হারিয়েছে। বর্তমান কমিশনকে সেই আস্থা ফেরাতে কাজ করতে হবে।”
‘লোম বাছতে কম্বল উজাড়’
বিতর্কিত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, “১০ লাখ লোকের মধ্যে বাদ দিতে গেলে কম্বলই উজাড়। লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড়—আমার অবস্থা সেই রকম। তবে নজরদারি থাকবে।”
তিনি যোগ করেন, “নির্বাচন শুধু কমিশনের দায়িত্ব নয়; এটা জাতীয় দায়িত্ব। সবাই নিজের ভূমিকা বুঝে কাজ করলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব।”
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সবার জন্য সমান সুযোগের প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ দ্রুত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে এক বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন সাবেক কর্মকর্তারা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন চার নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
‘দলনিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে রদবদল দরকার’
সাবেক কর্মকর্তারা বলেন, দলনিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রাখার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধারে প্রশাসনে দৃশ্যমান রদবদল আনা জরুরি। পাশাপাশি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে মাঠ প্রশাসন, বেসামরিক প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার আহ্বান জানান তারা।
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “সাবেক কর্মীদের পরামর্শ আমাদের চিন্তার খোরাক যোগাবে। ব্যাংক থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নেওয়ার কথাও ভাবছি, যাতে সরকারি কাঠামোর বাইরের লোকবল নিয়োগ দেওয়া যায়। তবে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্যামী হলেন একমাত্র আল্লাহ। কারও মনে দলীয় মনোভাব আছে কিনা জানা কঠিন। তবে কেউ যেন দলদাসের মতো আচরণ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।”
‘ন্যাশনাল ইলেকশন হলো ন্যাশনাল ডিউটি’
সিইসি বলেন, “সুষ্ঠু ভোট আয়োজন শুধু ইসির দায়িত্ব নয়, এটি জাতীয় দায়িত্ব। ন্যাশনাল ইলেকশন মানে ন্যাশনাল ডিউটি। কেউ যেন দলীয় আচরণ করতে না পারে, সে জন্য যা যা ব্যবস্থা দরকার, তা নেওয়া হবে।”
সাবেক কর্মকর্তাদের পরামর্শ
সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. জকরিয়া বলেন, নির্বাচনের সময় ইসির প্রয়োজন প্রায় ১০ লাখ লোকবল, অথচ কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা আছে মাত্র আড়াই হাজার।
“দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে লোক নিয়োগ করতে হবে। ইসলামী ব্যাংক বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তাদের নেওয়া ঠিক হবে না,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সচিব থেকে ওসি পর্যন্ত অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছিল। এবারও এমন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”
জকরিয়া সীমান্ত পথে অস্ত্র প্রবেশ, নকল টাকা ছড়ানো, কালো টাকা ব্যবহার রোধ এবং সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে ইসিকে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন।
সাবেক যুগ্মসচিব খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, এ নির্বাচন ‘সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং’ হবে। তিনি এক জেলায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, তফসিলের সময় বাড়ানো এবং পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থাপনা উন্নত করার প্রস্তাব দেন।
সাবেক ইসি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, “ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিলে কমিশনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন পরিচালনা করা সহজ হবে।”
মিহির সারওয়ার মোর্শেদ, সাবেক উপ-সচিব, বলেন, “ইসলামী ব্যাংক, সোশাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভোটগ্রহণ দায়িত্বে না রাখা উচিত। গণমাধ্যম যেন ভোট গণনার সময় কেন্দ্রে প্রবেশ না করে।”
তিনি ভোটের দিন নির্বাচন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ারও দাবি জানান।
সাবেক আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, “আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তফসিল ঘোষণার এক মাস আগে থেকেই আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।”
সাবেক কর্মকর্তা মিছবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “গত তিন নির্বাচনের কারণে জনগণ ইসির প্রতি আস্থা হারিয়েছে। বর্তমান কমিশনকে সেই আস্থা ফেরাতে কাজ করতে হবে।”
‘লোম বাছতে কম্বল উজাড়’
বিতর্কিত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, “১০ লাখ লোকের মধ্যে বাদ দিতে গেলে কম্বলই উজাড়। লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড়—আমার অবস্থা সেই রকম। তবে নজরদারি থাকবে।”
তিনি যোগ করেন, “নির্বাচন শুধু কমিশনের দায়িত্ব নয়; এটা জাতীয় দায়িত্ব। সবাই নিজের ভূমিকা বুঝে কাজ করলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব।”