বিবিসির সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার
সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক জোটগুলোর মধ্যে মতবিরোধ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি “নোট অব ডিসেন্ট” দিলে সেটি সমস্যা, অর্থাৎ বিএনপিকে অ্যাগ্রি করতে হবে সবার সঙ্গে, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু বিএনপি যদি কোনোটার সঙ্গে একমত না হয়, তাহলে বেঠিক। এটি তো গণতন্ত্র হলো না।’
ভারত যদি স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে দেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, আমাদের কিছু করার নাই’
বিএনপি কোনোটার সাথে একমত না হলে বেঠিক, এটি তো গণতন্ত্র হলো না
১৭ বছর পর বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন। গতকাল সোমবার সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে বিবিসি। গতকাল দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব প্রকাশ করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল।
সেই সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারসহ বিএনপির অবস্থান নিয়ে কথা হয়। সেই সাথে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি।
বিবিসি বাংলার সংস্কারের প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, একজন ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, থাকবেন না। এরকম আরো যে বিষয়গুলো আছে, এগুলো বাংলাদেশে যখন স্বৈরাচার ছিল তাদের মুখের উপরে বিএনপিই বলেছিলাম।
এখন হয়তো অনেকে সংস্কারের কথা বলছেন। সেদিন কিন্তু সংস্কারের ‘স’-ও তারা বলেননি। সকল ব্যাপারে একমত হবো না, কিছু ব্যাপারে হয়তো দ্বিমত থাকতেই পারে, এটাই তো গণতন্ত্র, এটাই তো এসেন্স অব গণতন্ত্র।
সংস্কার ও জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান
অন্তর্বর্তী সরকার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন- বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নে তারেক রহমানের সরাসরি জবাব, বিষয়টি তো রাজনৈতিক। এটি তো কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়। আমরা প্রথম থেকে বলেছি, আমরা চাই, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক।
মূলত যেই সংস্কারগুলো না করলেই নয়, এরকম সংস্কারসহ একটি স্বাভাবিক সুষ্ঠু, স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা প্রত্যাশা করি, উনাদের উপরে যে মূল দায়িত্ব, সেটি উনারা সঠিকভাবে সম্পাদন করবেন।
বিবিসি বাংলার আরেকটি প্রশ্ন ছিলো- ‘আপনি কয়েক মাস আগে একটি মন্তব্য করেছিলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আপনার এই মন্তব্যটি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া কি? তিনি তখন বলেছিলেন যে সন্দেহটা উনার মনে। আপনার মনে কি সেই সন্দেহ আছে?
এর উত্তরে তারেক রহমান বলেন, আমি যখন এই কথাটি বলেছিলাম, সেই সময় পর্যন্ত ওনারা কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে সঠিক কোনো টাইম ফ্রেম বা কোনো কিছু বলেননি। এবং সে কারণেই শুধু আমার মনের মধ্যেই নয়, বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ প্রায় সকলের মনের মধ্যেই সন্দেহ ছিল।
আমি মনে করি, উনারা যা বলেছেন উনারা যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় থাকবেন, ততই সন্দেহ চলে যাবে আস্তে আস্তে।
বিবিসি বাংলা লন্ডনে অন্তবর্তী সরকার প্রধান ও তাকে রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গ তুলে আবার প্রশ্ন করে, নির্বাচনের বাইরে কি আপনাদের মধ্যে আর কোনো কথা হয়েছে? বা কোনো সমঝোতা কিছু হয়েছে?
তারেক রহমান জানান, এর বাইরে উনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, জনগণ যদি আপনাদেরকে সুযোগ দেয়, তাহলে আপনারা কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য? এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিবিসি বাংলার আরেক প্রশ্ন ছিলো- সরকার, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন? জবাবে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানে ইন্টেরিম। খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশ পরিচালনা তো একটি বিশাল বিষয়।
নির্বাচনের বাইরে সকল কিছু বিবেচনা করলে মনে হয়েছে যে, হয়তো উনারা চেষ্টা করেছেন অনেক বিষয়ে। স্বাভাবিকভাবে ওনাদের লিমিটেশনস আছে।
## এক এগারোর সরকার নিয়ে মূল্যায়ন কী?
এক এগারোর সরকার বা সেনা সমর্থিত সরকারের সেই সময়টাকে ঘিরে তারেক রহমানের মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক বাক্যে যদি বলতে হয়, এক এগারোর সরকার অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি সরকার ছিল।
### বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তন হয়েছে কতটা
ঢাকায় নেয়া ২০০৪ সালের একটি সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদক জানতে চান, বিএনপির রাজনীতিতে আসলে কতটা পরিবর্তন হয়েছে; ভবিষ্যৎ বিএনপিই বা কেমন হবে?
উত্তরে তারেক রহমান জানান, আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণ, দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব। তাঁর ভাষায়, ‘আপনি বললেন অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ইয়েস, আমরা অতীতে এই ভালো কাজগুলো করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে, ভবিষ্যৎ বিএনপির গণতন্ত্রের যে বুনিয়াদ, একটি শক্তিশালী বুনিয়াদ তৈরি করা। জবাবদিহিতা তৈরি করা।’
## কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির মূলনীতি কী হবে?
বিএনপি যদি সরকার গঠন করে তবে কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির মূলনীতি কী হবে? তারেক রহমানের জবাব, বিএনপির মূলনীতি একটাই- সবার আগে বাংলাদেশ। কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির নীতি সবার আগে বাংলাদেশ।
## ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অবস্থান কী?
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপির নীতি কী হবে? এরকম প্রশ্নে তারেক বলেন, এখানে তো আপনি পার্টিকুলার (সুনির্দিষ্ট) একটি দেশের কথা বলেছেন। এখানে ওই দেশ বা অন্য দেশ তো বিষয় না। আমি আগে আমার দেশের মানুষের স্বার্থ দেখব।
তারেক রহমান আরো বলেন, অবশ্যই আমি আমার পানির হিস্যা চাই। অবশ্যই আমি দেখতে চাই না যে, আরেক ফেলানী ঝুলে আছে। অবশ্যই আমরা এটা মেনে নিব না।
শেখ হাসিনার দিল্লিতে থাকা এবং ভারতের সাথে সম্পর্কের শীতলতা প্রশ্নে বিএনপির উদ্যোগ কী হবে জানতে চায় বিবিসি বাংলা।
তারেক রহমান জানান, এখন তারা যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। আমাকে আমার দেশের মানুষের সাথে থাকতে হবে।
## ৩১ দফা না কি জুলাই সনদ, অগ্রাধিকার কী হবে
৩১ দফা না কি জুলাই সনদ, অগ্রাধিকার কী হবে- এ প্রশ্নে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সবকিছু বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলো বসেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আহ্বান করেছে। এখানে যতটুকু হয়েছে, যেগুলো শুধুমাত্র আইন দিয়ে করলে হয়ে যায়, সেগুলো হয়ে যাক। যেগুলোর সাংবিধানিক এনডোর্সমেন্ট লাগবে, সেগুলো আমরা মনে করি যে, নির্বাচিত সংসদ হওয়ার পরে সেখানে গ্রহণ করাটাই ভালো হবে।
এ ক্ষেত্রে বিবিসি বাংলা জানতে চায়, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা নাকি জুলাই সনদ, কোনটা অগ্রাধিকার পাবে?
তারেক রহমান জানান, স্বাভাবিকভাবে আমরা ঐকমত্য কমিশনে যেগুলোতে সকলে মিলে একমত হয়েছি, ইনশাআল্লাহ সরকার গঠনের সুযোগ পেলে প্রথমে সেগুলোতেই অবশ্যই জোর দিব। আর, তারপরে অবশ্যই ৩১ দফা আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জনগণের প্রতি। আমরা সেগুলো তো করবই।
## সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান
শেষ প্রশ্নটি ছিলো এরকম- আপনারা যদি ক্ষমতায় আসেন সেক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদ বা সংবাদ মাধ্যমের উপর দমন-পীড়নের বিষয়গুলো যে আর হবে না, সেই নিশ্চয়তা কি আপনি দিতে পারেন?
তারেক রহমান সাফ জানান, জ্বি একদম দিতে পারি। আপনি ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পত্রপত্রিকা খুলুন। দেখুন কিভাবে অনেক খবর ছাপা হয়েছিল। যার সত্যতা কিন্তু ছিল না, অপপ্রচার ছিল। কিন্তু অপপ্রচারটা সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনেক সাংবাদিক যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্বৈরাচারের সময় এবং পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। স্বৈরাচারের সময় বহু সাংবাদিককে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন-ধমক দেওয়া হতো। বিএনপির সময় এগুলো করা হয়নি।
বিবিসির সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক জোটগুলোর মধ্যে মতবিরোধ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি “নোট অব ডিসেন্ট” দিলে সেটি সমস্যা, অর্থাৎ বিএনপিকে অ্যাগ্রি করতে হবে সবার সঙ্গে, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু বিএনপি যদি কোনোটার সঙ্গে একমত না হয়, তাহলে বেঠিক। এটি তো গণতন্ত্র হলো না।’
ভারত যদি স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে দেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, আমাদের কিছু করার নাই’
বিএনপি কোনোটার সাথে একমত না হলে বেঠিক, এটি তো গণতন্ত্র হলো না
১৭ বছর পর বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন। গতকাল সোমবার সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে বিবিসি। গতকাল দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব প্রকাশ করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল।
সেই সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারসহ বিএনপির অবস্থান নিয়ে কথা হয়। সেই সাথে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি।
বিবিসি বাংলার সংস্কারের প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, একজন ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, থাকবেন না। এরকম আরো যে বিষয়গুলো আছে, এগুলো বাংলাদেশে যখন স্বৈরাচার ছিল তাদের মুখের উপরে বিএনপিই বলেছিলাম।
এখন হয়তো অনেকে সংস্কারের কথা বলছেন। সেদিন কিন্তু সংস্কারের ‘স’-ও তারা বলেননি। সকল ব্যাপারে একমত হবো না, কিছু ব্যাপারে হয়তো দ্বিমত থাকতেই পারে, এটাই তো গণতন্ত্র, এটাই তো এসেন্স অব গণতন্ত্র।
সংস্কার ও জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান
অন্তর্বর্তী সরকার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন- বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নে তারেক রহমানের সরাসরি জবাব, বিষয়টি তো রাজনৈতিক। এটি তো কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়। আমরা প্রথম থেকে বলেছি, আমরা চাই, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক।
মূলত যেই সংস্কারগুলো না করলেই নয়, এরকম সংস্কারসহ একটি স্বাভাবিক সুষ্ঠু, স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা প্রত্যাশা করি, উনাদের উপরে যে মূল দায়িত্ব, সেটি উনারা সঠিকভাবে সম্পাদন করবেন।
বিবিসি বাংলার আরেকটি প্রশ্ন ছিলো- ‘আপনি কয়েক মাস আগে একটি মন্তব্য করেছিলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আপনার এই মন্তব্যটি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া কি? তিনি তখন বলেছিলেন যে সন্দেহটা উনার মনে। আপনার মনে কি সেই সন্দেহ আছে?
এর উত্তরে তারেক রহমান বলেন, আমি যখন এই কথাটি বলেছিলাম, সেই সময় পর্যন্ত ওনারা কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে সঠিক কোনো টাইম ফ্রেম বা কোনো কিছু বলেননি। এবং সে কারণেই শুধু আমার মনের মধ্যেই নয়, বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ প্রায় সকলের মনের মধ্যেই সন্দেহ ছিল।
আমি মনে করি, উনারা যা বলেছেন উনারা যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় থাকবেন, ততই সন্দেহ চলে যাবে আস্তে আস্তে।
বিবিসি বাংলা লন্ডনে অন্তবর্তী সরকার প্রধান ও তাকে রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গ তুলে আবার প্রশ্ন করে, নির্বাচনের বাইরে কি আপনাদের মধ্যে আর কোনো কথা হয়েছে? বা কোনো সমঝোতা কিছু হয়েছে?
তারেক রহমান জানান, এর বাইরে উনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, জনগণ যদি আপনাদেরকে সুযোগ দেয়, তাহলে আপনারা কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য? এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিবিসি বাংলার আরেক প্রশ্ন ছিলো- সরকার, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন? জবাবে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানে ইন্টেরিম। খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশ পরিচালনা তো একটি বিশাল বিষয়।
নির্বাচনের বাইরে সকল কিছু বিবেচনা করলে মনে হয়েছে যে, হয়তো উনারা চেষ্টা করেছেন অনেক বিষয়ে। স্বাভাবিকভাবে ওনাদের লিমিটেশনস আছে।
## এক এগারোর সরকার নিয়ে মূল্যায়ন কী?
এক এগারোর সরকার বা সেনা সমর্থিত সরকারের সেই সময়টাকে ঘিরে তারেক রহমানের মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক বাক্যে যদি বলতে হয়, এক এগারোর সরকার অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি সরকার ছিল।
### বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তন হয়েছে কতটা
ঢাকায় নেয়া ২০০৪ সালের একটি সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদক জানতে চান, বিএনপির রাজনীতিতে আসলে কতটা পরিবর্তন হয়েছে; ভবিষ্যৎ বিএনপিই বা কেমন হবে?
উত্তরে তারেক রহমান জানান, আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণ, দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব। তাঁর ভাষায়, ‘আপনি বললেন অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ইয়েস, আমরা অতীতে এই ভালো কাজগুলো করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে, ভবিষ্যৎ বিএনপির গণতন্ত্রের যে বুনিয়াদ, একটি শক্তিশালী বুনিয়াদ তৈরি করা। জবাবদিহিতা তৈরি করা।’
## কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির মূলনীতি কী হবে?
বিএনপি যদি সরকার গঠন করে তবে কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির মূলনীতি কী হবে? তারেক রহমানের জবাব, বিএনপির মূলনীতি একটাই- সবার আগে বাংলাদেশ। কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির নীতি সবার আগে বাংলাদেশ।
## ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অবস্থান কী?
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপির নীতি কী হবে? এরকম প্রশ্নে তারেক বলেন, এখানে তো আপনি পার্টিকুলার (সুনির্দিষ্ট) একটি দেশের কথা বলেছেন। এখানে ওই দেশ বা অন্য দেশ তো বিষয় না। আমি আগে আমার দেশের মানুষের স্বার্থ দেখব।
তারেক রহমান আরো বলেন, অবশ্যই আমি আমার পানির হিস্যা চাই। অবশ্যই আমি দেখতে চাই না যে, আরেক ফেলানী ঝুলে আছে। অবশ্যই আমরা এটা মেনে নিব না।
শেখ হাসিনার দিল্লিতে থাকা এবং ভারতের সাথে সম্পর্কের শীতলতা প্রশ্নে বিএনপির উদ্যোগ কী হবে জানতে চায় বিবিসি বাংলা।
তারেক রহমান জানান, এখন তারা যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। আমাকে আমার দেশের মানুষের সাথে থাকতে হবে।
## ৩১ দফা না কি জুলাই সনদ, অগ্রাধিকার কী হবে
৩১ দফা না কি জুলাই সনদ, অগ্রাধিকার কী হবে- এ প্রশ্নে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সবকিছু বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলো বসেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আহ্বান করেছে। এখানে যতটুকু হয়েছে, যেগুলো শুধুমাত্র আইন দিয়ে করলে হয়ে যায়, সেগুলো হয়ে যাক। যেগুলোর সাংবিধানিক এনডোর্সমেন্ট লাগবে, সেগুলো আমরা মনে করি যে, নির্বাচিত সংসদ হওয়ার পরে সেখানে গ্রহণ করাটাই ভালো হবে।
এ ক্ষেত্রে বিবিসি বাংলা জানতে চায়, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা নাকি জুলাই সনদ, কোনটা অগ্রাধিকার পাবে?
তারেক রহমান জানান, স্বাভাবিকভাবে আমরা ঐকমত্য কমিশনে যেগুলোতে সকলে মিলে একমত হয়েছি, ইনশাআল্লাহ সরকার গঠনের সুযোগ পেলে প্রথমে সেগুলোতেই অবশ্যই জোর দিব। আর, তারপরে অবশ্যই ৩১ দফা আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জনগণের প্রতি। আমরা সেগুলো তো করবই।
## সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান
শেষ প্রশ্নটি ছিলো এরকম- আপনারা যদি ক্ষমতায় আসেন সেক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদ বা সংবাদ মাধ্যমের উপর দমন-পীড়নের বিষয়গুলো যে আর হবে না, সেই নিশ্চয়তা কি আপনি দিতে পারেন?
তারেক রহমান সাফ জানান, জ্বি একদম দিতে পারি। আপনি ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পত্রপত্রিকা খুলুন। দেখুন কিভাবে অনেক খবর ছাপা হয়েছিল। যার সত্যতা কিন্তু ছিল না, অপপ্রচার ছিল। কিন্তু অপপ্রচারটা সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনেক সাংবাদিক যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্বৈরাচারের সময় এবং পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। স্বৈরাচারের সময় বহু সাংবাদিককে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন-ধমক দেওয়া হতো। বিএনপির সময় এগুলো করা হয়নি।