জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা তার আগে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা হস্তান্তরের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের সামনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, “সাংবিধানিক আদেশ জারি করার পর এবং জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে সরকার যেন গণভোট আয়োজন করে—এটি আমরা লিখিতভাবে সুপারিশ করেছি। পাশাপাশি সরকারকে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে গণভোটের তফসিল নির্ধারণের পরামর্শও দিয়েছি।”
তবে পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক স্পষ্টীকরণে বলা হয়, কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে আলী রীয়াজের বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচনের দিন বা তার আগে যেকোনো দিন সরকার জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজন করতে পারে—এই সুপারিশই কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগের প্রস্তাব করেছে কমিশন। তার ভাষায়, “গণভোটের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। আমরা মনে করি, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এটি অত্যাবশ্যক। সে কারণেই গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, গণভোটের তারিখ নির্ধারণ করবে সরকার। “আমরা শুধু বলেছি, সরকার যেন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।”
নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে জানিয়েছে, রমজানের আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে, আর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। সে বিবেচনায় এর আগে গণভোট আয়োজন অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন এক কমিশনার।
দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, তার অঙ্গীকার হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদ ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়। তবে সনদে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট না থাকায় বিশেষজ্ঞদের মতামত ও রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশন বাস্তবায়নসংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত করে প্রধান উপদেষ্টার হাতে তা তুলে দেয়।
জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে গণভোট চেয়ে আসছিল, অন্যদিকে বিএনপিসহ কয়েকটি দল এ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছিল। শেষ পর্যন্ত গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হলেও কবে এবং কীভাবে তা হবে, সে প্রশ্নে মতভেদ রয়ে গেছে।
জামায়াত ও তার সহযোগী কয়েকটি দল আগামী নভেম্বরেই গণভোট আয়োজনের দাবি তুলেছে, পাশাপাশি তারা প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে। বিএনপি এই দুই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে এবং নভেম্বরে গণভোট চাওয়াকে ‘অন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান’-এর অংশ হিসেবে দেখছে।
গণভোটের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে আলী রীয়াজ বলেন, “সরকার একটি আদেশ জারি করবে, যার অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে একটি প্রশ্ন থাকবে। তবে আদেশের সঙ্গে যুক্ত তফসিলে থাকা ৪৮টি বিষয়কে অন্তর্বর্তী সরকার বিল আকারে প্রস্তুত করে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে।”
তার মতে, গণভোটের মাধ্যমে জনগণের অনুমোদন পাওয়া গেলে ওই বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজে সহায়ক হবে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “সংবিধান সংস্কার পরিষদ জুলাই সনদের মূল চেতনা ধারণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন বা পরিবর্তন করবে। যদি ২৭০ দিনের মধ্যে পরিষদ দায়িত্ব সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে গণভোটে অনুমোদিত বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলো প্রতিস্থাপন করবে।”
২৭০ দিন মেয়াদ শেষে সংবিধান সংস্কার পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে। জাতীয় সংসদের সদস্যরাই এই পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা প্রস্তাব করেছি—সংসদের সদস্যরা সংসদীয় সদস্য হিসেবে এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে পৃথকভাবে শপথ নেবেন। পরিষদ নিজের রুলস অব প্রসিডিউর তৈরি করবে।”
তিনি জানান, সংসদের স্পিকার পরিষদের সভাপতি হবেন; অনুপস্থিত থাকলে ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব পালন করবেন, আর উভয়ের অনুপস্থিতিতে সভাপতি প্যানেল থেকে কেউ সভাপতিত্ব করবেন।
তার মতে, “আমরা বিশ্বাস করি, সংবিধান সংস্কার পরিষদ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে এবং এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না, যেখানে সরকারের বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর করতে হবে। আমরা ইতিবাচক আস্থাই রাখতে চাই।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা তার আগে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা হস্তান্তরের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের সামনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, “সাংবিধানিক আদেশ জারি করার পর এবং জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে সরকার যেন গণভোট আয়োজন করে—এটি আমরা লিখিতভাবে সুপারিশ করেছি। পাশাপাশি সরকারকে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে গণভোটের তফসিল নির্ধারণের পরামর্শও দিয়েছি।”
তবে পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক স্পষ্টীকরণে বলা হয়, কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে আলী রীয়াজের বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচনের দিন বা তার আগে যেকোনো দিন সরকার জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজন করতে পারে—এই সুপারিশই কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগের প্রস্তাব করেছে কমিশন। তার ভাষায়, “গণভোটের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। আমরা মনে করি, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এটি অত্যাবশ্যক। সে কারণেই গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, গণভোটের তারিখ নির্ধারণ করবে সরকার। “আমরা শুধু বলেছি, সরকার যেন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।”
নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে জানিয়েছে, রমজানের আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে, আর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। সে বিবেচনায় এর আগে গণভোট আয়োজন অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন এক কমিশনার।
দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, তার অঙ্গীকার হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদ ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়। তবে সনদে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট না থাকায় বিশেষজ্ঞদের মতামত ও রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশন বাস্তবায়নসংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত করে প্রধান উপদেষ্টার হাতে তা তুলে দেয়।
জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে গণভোট চেয়ে আসছিল, অন্যদিকে বিএনপিসহ কয়েকটি দল এ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছিল। শেষ পর্যন্ত গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হলেও কবে এবং কীভাবে তা হবে, সে প্রশ্নে মতভেদ রয়ে গেছে।
জামায়াত ও তার সহযোগী কয়েকটি দল আগামী নভেম্বরেই গণভোট আয়োজনের দাবি তুলেছে, পাশাপাশি তারা প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে। বিএনপি এই দুই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে এবং নভেম্বরে গণভোট চাওয়াকে ‘অন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান’-এর অংশ হিসেবে দেখছে।
গণভোটের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে আলী রীয়াজ বলেন, “সরকার একটি আদেশ জারি করবে, যার অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে একটি প্রশ্ন থাকবে। তবে আদেশের সঙ্গে যুক্ত তফসিলে থাকা ৪৮টি বিষয়কে অন্তর্বর্তী সরকার বিল আকারে প্রস্তুত করে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে।”
তার মতে, গণভোটের মাধ্যমে জনগণের অনুমোদন পাওয়া গেলে ওই বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজে সহায়ক হবে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “সংবিধান সংস্কার পরিষদ জুলাই সনদের মূল চেতনা ধারণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন বা পরিবর্তন করবে। যদি ২৭০ দিনের মধ্যে পরিষদ দায়িত্ব সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে গণভোটে অনুমোদিত বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলো প্রতিস্থাপন করবে।”
২৭০ দিন মেয়াদ শেষে সংবিধান সংস্কার পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে। জাতীয় সংসদের সদস্যরাই এই পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা প্রস্তাব করেছি—সংসদের সদস্যরা সংসদীয় সদস্য হিসেবে এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে পৃথকভাবে শপথ নেবেন। পরিষদ নিজের রুলস অব প্রসিডিউর তৈরি করবে।”
তিনি জানান, সংসদের স্পিকার পরিষদের সভাপতি হবেন; অনুপস্থিত থাকলে ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব পালন করবেন, আর উভয়ের অনুপস্থিতিতে সভাপতি প্যানেল থেকে কেউ সভাপতিত্ব করবেন।
তার মতে, “আমরা বিশ্বাস করি, সংবিধান সংস্কার পরিষদ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে এবং এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না, যেখানে সরকারের বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর করতে হবে। আমরা ইতিবাচক আস্থাই রাখতে চাই।”