রাষ্ট্রপতির বাসভবন- বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামানোটা ‘অন্যায়’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতিম-লীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। গতকাল শুক্রবার ঢাকার তোপখানা রোডে বিএমএ মিলনায়তনে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সম্মেলনে’ অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর একই বছরের ১১ই নভেম্বর বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলা হয়। সেদিন এক ফেইসবুক পোস্টে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছিলেন, ‘বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে ৭১ পরবর্তী ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার যে, আমরা ৫ আগস্টের পর বঙ্গভবন থেকে তার ছবি সরাতে পারিনি। ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু জুলাইয়ের চেতনা বেঁচে থাকা পর্যন্ত তাকে আর কোথাও দেখা যাবে না।’
সে প্রসঙ্গ ধরে সেলিম বলেন, ‘মুজিবের ছবি বঙ্গভবন থেকে নামিয়ে দিয়েছে। খুব অন্যায় কাজ করেছে। মুজিবের ছবি নামানো ঠিক হয় নাই। মুজিবের ছবি থাকবে, কিন্তু পাশে ভাসানীর ছবিও রাখতে হবে। পাশে কর্নেল তাহেরের ছবিও রাখতে হবে। পাশে মনি সিংহের ছবিও রাখতে হবে।’
তনি বলেন, ‘এই সরকারকে নিরপেক্ষ সরকারের মতো আচরণ করতে হবে? সমস্ত দলীয় সংযোগ অবিলম্বে ছিন্ন করে দিতে হবে। তা না হলে এই সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। এটা সমস্ত জনগণই বোঝে।’
বৈষম্যের বিরোধিতা করে অভ্যুত্থান হলেও বৈষম্য দূর হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সম্ভাবনা এবং সংকটের এক দোলাচলের ভেতরে আমরা চলছি। গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। বলা হলো, এটা হলো বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থান।
‘আমি ইউনূস সাহেবকে প্রশ্ন করতে চাই, দেড় বছর পার হয়ে যাচ্ছে, বৈষম্য দূর করেছেন? এক ইঞ্চি বৈষম্য দূর হয় নাই।’
সেলিম বলেন, ‘নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য আছে। কিন্তু অর্থনৈতিক বৈষম্য হলো প্রধান। হিসাব বলে, ইউনূস সাহেব আসার পর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে। দেশে যদি শোষণ আর বৈষম্য বহাল থাকে, অর্থনৈতিক অবস্থা যদি এরকমই হয় যে গরিবের সম্পদ খালি বড়োলোকের কাছে যেতে থাকবে, তাহলে শোষণ আর বৈষম্য কমবে না।’ জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে ঐক্যমত্য কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একটা কাগজে সই নিয়েছে। এখন আরেকটি কাগজ ছাপিয়ে দিয়ে বলছে, এটাই হচ্ছে ঐকমত্যের দলিল।’
গণভোট প্রসঙ্গেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। তার ভাষ্য, গণভোটের মাধ্যমে সরকার বিরাট ‘চাল’ চেলেছে। ‘তারা এতগুলো বিষয় নিয়ে গণভোট করবে। আপনাকে বলতে হবে ‘হ্যাঁ’ কি ‘না’। আমি ১৩ নম্বর মানি, ১৪ নম্বর মানি না, ১৫ নম্বর অর্ধেক মানি। ১৬ নম্বর পোয়াটা মানি। আপনি কী করবেন? হ্যাঁ-ও বলতে পারছেন না। না-ও বলতে পারছেন না।
“কিন্তু আপনাকে হ্যাঁ-না দুটোর একটি বলতে হবে। এটা একটা বিরাট চাল চেলেছে। এবং সেটা যদি নির্বাচনের আগে করে ফেলে তাহলে তারা কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে প্রধান ভিত্তি, সে ভিত্তি ধুলিস্মাৎ করে দেবে।’
এ কথার ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘কেননা তাদের মুখ থেকেই উচ্চারিত হয়েছিল যে, আমরা নতুন সংবিধান করবো, নতুন পতাকা করবো এবং নতুন রাষ্ট্র আমরা এখানে প্রতিষ্ঠা করবো। এই কথা বলে কিন্তু তারা শুরু করেছিল। করতে পারেনি। কিন্তু ষড়যন্ত্র তাদের দূর হয় নাই।’
জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের জন্য সুবিধা হয়, যদি পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকে; পরিস্থিতির ভেতর অনিশ্চয়তা যদি তারা টিকিয়ে রাখতে পারে। ‘সুতরাং পায়ে-পা লাগিয়ে ঝগড়া তারা লাগাবে; বিবাদ লাগাবো; সংঘাত লাগাবে, যেন নির্বাচন হতে না পারে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
রাষ্ট্রপতির বাসভবন- বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামানোটা ‘অন্যায়’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতিম-লীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। গতকাল শুক্রবার ঢাকার তোপখানা রোডে বিএমএ মিলনায়তনে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সম্মেলনে’ অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর একই বছরের ১১ই নভেম্বর বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলা হয়। সেদিন এক ফেইসবুক পোস্টে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছিলেন, ‘বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে ৭১ পরবর্তী ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার যে, আমরা ৫ আগস্টের পর বঙ্গভবন থেকে তার ছবি সরাতে পারিনি। ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু জুলাইয়ের চেতনা বেঁচে থাকা পর্যন্ত তাকে আর কোথাও দেখা যাবে না।’
সে প্রসঙ্গ ধরে সেলিম বলেন, ‘মুজিবের ছবি বঙ্গভবন থেকে নামিয়ে দিয়েছে। খুব অন্যায় কাজ করেছে। মুজিবের ছবি নামানো ঠিক হয় নাই। মুজিবের ছবি থাকবে, কিন্তু পাশে ভাসানীর ছবিও রাখতে হবে। পাশে কর্নেল তাহেরের ছবিও রাখতে হবে। পাশে মনি সিংহের ছবিও রাখতে হবে।’
তনি বলেন, ‘এই সরকারকে নিরপেক্ষ সরকারের মতো আচরণ করতে হবে? সমস্ত দলীয় সংযোগ অবিলম্বে ছিন্ন করে দিতে হবে। তা না হলে এই সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। এটা সমস্ত জনগণই বোঝে।’
বৈষম্যের বিরোধিতা করে অভ্যুত্থান হলেও বৈষম্য দূর হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সম্ভাবনা এবং সংকটের এক দোলাচলের ভেতরে আমরা চলছি। গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। বলা হলো, এটা হলো বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থান।
‘আমি ইউনূস সাহেবকে প্রশ্ন করতে চাই, দেড় বছর পার হয়ে যাচ্ছে, বৈষম্য দূর করেছেন? এক ইঞ্চি বৈষম্য দূর হয় নাই।’
সেলিম বলেন, ‘নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য আছে। কিন্তু অর্থনৈতিক বৈষম্য হলো প্রধান। হিসাব বলে, ইউনূস সাহেব আসার পর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে। দেশে যদি শোষণ আর বৈষম্য বহাল থাকে, অর্থনৈতিক অবস্থা যদি এরকমই হয় যে গরিবের সম্পদ খালি বড়োলোকের কাছে যেতে থাকবে, তাহলে শোষণ আর বৈষম্য কমবে না।’ জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে ঐক্যমত্য কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একটা কাগজে সই নিয়েছে। এখন আরেকটি কাগজ ছাপিয়ে দিয়ে বলছে, এটাই হচ্ছে ঐকমত্যের দলিল।’
গণভোট প্রসঙ্গেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। তার ভাষ্য, গণভোটের মাধ্যমে সরকার বিরাট ‘চাল’ চেলেছে। ‘তারা এতগুলো বিষয় নিয়ে গণভোট করবে। আপনাকে বলতে হবে ‘হ্যাঁ’ কি ‘না’। আমি ১৩ নম্বর মানি, ১৪ নম্বর মানি না, ১৫ নম্বর অর্ধেক মানি। ১৬ নম্বর পোয়াটা মানি। আপনি কী করবেন? হ্যাঁ-ও বলতে পারছেন না। না-ও বলতে পারছেন না।
“কিন্তু আপনাকে হ্যাঁ-না দুটোর একটি বলতে হবে। এটা একটা বিরাট চাল চেলেছে। এবং সেটা যদি নির্বাচনের আগে করে ফেলে তাহলে তারা কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে প্রধান ভিত্তি, সে ভিত্তি ধুলিস্মাৎ করে দেবে।’
এ কথার ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘কেননা তাদের মুখ থেকেই উচ্চারিত হয়েছিল যে, আমরা নতুন সংবিধান করবো, নতুন পতাকা করবো এবং নতুন রাষ্ট্র আমরা এখানে প্রতিষ্ঠা করবো। এই কথা বলে কিন্তু তারা শুরু করেছিল। করতে পারেনি। কিন্তু ষড়যন্ত্র তাদের দূর হয় নাই।’
জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের জন্য সুবিধা হয়, যদি পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকে; পরিস্থিতির ভেতর অনিশ্চয়তা যদি তারা টিকিয়ে রাখতে পারে। ‘সুতরাং পায়ে-পা লাগিয়ে ঝগড়া তারা লাগাবে; বিবাদ লাগাবো; সংঘাত লাগাবে, যেন নির্বাচন হতে না পারে।’