একটি গোষ্ঠী একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করে ২০২৪ সালের আন্দোলনকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ বিএনপির। দলটির দাবি চব্বিশের মতো এ রকম কয়েকটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে একাত্তরের তুলনা চলে না। কারণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নতুন একটা দেশ সৃষ্টি করেছে, জন্ম দিয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে’ বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘চেষ্টা চলছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে পেছনে ঠেলে দিয়ে চব্বিশ সালের আন্দোলনকে সামনে আনার। অথচ ১৯৭১ সাল আমাদের জন্মের ঠিকানা, আমাদের অস্তিত্ব ও পরিচয়ের ভিত্তি।’
জামায়াকে ইঙ্গিত করে ফখরুল আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশে একাত্তর সালে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা একাত্তরকে এখন নিচে নামিয়ে দিতে চায়, তারা শুধুমাত্র চব্বিশের জুলাইয়ের যে আন্দোলন, তাকে বড় করে দেখাতে চায়। আমরা ২০২৪-এর যে আন্দোলন, সেটা ১৫ বছর ধরে করেছি, আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, হাসিনাকে উৎখাতের জন্য ১৫ বছর সংগ্রাম করেছি, আমরা এতে বিভক্তি আনতে চাই না।’
ফখরুলের অভিযোগ, ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু কিছু শক্তি, কিছু মানুষ এখানে বিভক্তি আনতে চায়। ১৯৭১ সালকে যারা ভুলিয়ে দিতে চায়, তাদের লক্ষ্য একটাই, তারা ১৯৭১ কে অস্বীকার করতে চায়। আমরা যে লড়াই করে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হয়েছি, আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে, সেটাকে তারা অস্বীকার করতে চায়।’
৭১ বনাম ২৪ বিতর্ক
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালকে ভুলে যাওয়ার অবকাশ নেই। কারণ ১৯৭১-ই আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কেউ এটাকে অস্বীকার করতে চাইলে তা হবে জাতির সঙ্গে প্রতারণা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অতীত ভুলি না। যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকে গোলমাল বলেছিল, তারাই আজ ইতিহাস নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে। জাতিকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা চলছে। কিছু মানুষ সেই বিভাজনে ইন্ধন জোগাচ্ছে।’
জুলাই সনদ ও নির্বাচন প্রসঙ্গ
জুলাই সনদ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব বিষয়ে সই করেছি, সেসবের দায়িত্ব আমরা নিব। কিন্তু যেসব বিষয়ে সই করিনি, সেগুলোর দায় আমরা নেব না। আলোচনা ছাড়া নতুন কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়।’
নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পিআর (প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে আসন বণ্টন) হবে কিনা, তা নির্ধারণ করবে পরবর্তী সংসদ। গণভোটের কথা বলেছে, আমরা রাজি হয়েছি, ঠিক আছে। গণভোটের প্রয়োজন ছিল না, তার পরও রাজি হয়েছি। আমরা বলেছি, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে খরচ কমবে। অথচ এখন বলা হচ্ছে আগে গণভোট, পরে নির্বাচন। এই প্রস্তাব নির্বাচন পেছানোরই কৌশল।’
ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান
শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর ও সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতে বসে তিনি যেভাবে মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে বোঝা যায় তার কোনো অনুশোচনা নেই। ভারত সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক এবং আইনানুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করা হোক।’
প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য প্রসঙ্গ
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন বানচালে ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তির কাছ থেকে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড় আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’
সরকারপ্রধানের এ বক্তব্য ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলছিলেন, বিভিন্ন শক্তি থেকে যে কোনো সময় হামলা হতে পারে। উনার পরিষ্কার করে বলা উচিত ছিল, হামলা কোত্থেকে আসবে কারা করবে।’
ফখরুল অভয় প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতি প্রস্তুত আছে, যেগুলো হামলা প্রতিরোধ করতে। এই কথাগুলো আমরা এজন্য বলছি, হামলা, ভয় দেখিয়ে এই দেশের মানুষকে কখনো পরাজিত করা যায় না। খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই এই দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়।’ সভায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। লড়াই করে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছেন, আপনারা এই দেশের ভিত্তি তৈরি করেছেন। আপনাদের যুদ্ধই ছিল এই দেশ প্রতিষ্ঠার মূল কথা। এখন গণতন্ত্র রক্ষা করাও আপনাদের দায়িত্ব।
এই দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। দেশের শত্রুরা যেভাবে চক্রান্ত করছে, তাতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
জুলাই সনদের প্রয়োজন নাই
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের মানুষের একটা ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ প্রয়োজন। আর জুলাই সনদ প্রয়োজন উপদেষ্টাদের মতো কিছু মানুষের, যারা আগামীতে এ দেশে থাকতে গিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়বেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নেতা হিসেবে, কর্মী হিসেবে মনে করি, জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নাই। আমাদের একটি সংসদ প্রয়োজন, যারা গণতন্ত্রকে বাস্তবায়ন করবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিয়ে হাফিজ বলেন, ‘কমিশনে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয় নাই, সেই সব জিনিসও চূড়ান্ত খসড়ায় দেয়া হয়েছে, যেটা আমাদের মহাসচিব বলেছেন। বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়েকজন তথাকথিত প-িত ব্যক্তির প-িতির মাধ্যমে যে সনদ আমরা দেখতে পারছি, সেই সনদের প্রয়োজন আমাদের নাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে আঙুল তুলে হাফিজ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে এই সরকার তাদের ভুলিয়ে দিতে চায়। এই সরকার কোথাও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তার।
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ সংগ্রামের সঙ্গে অন্য কোনো আন্দোলনের তুলনা হয় না। এই দেশের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।’
হাফিজের অভিযোগ, ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র করছে। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হয়, তবে তাদের প্রতিহত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির এ সিনিয়র নেতা।
একাত্তরের সঙ্গে কোনো তুলনা চলে না
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই যে জুলাই অভ্যুত্থান, তার আগে এরশাদবিরোধী অভ্যুত্থান, তার আগে ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, এ রকম কয়েকটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থান হয়েছে, যার ফলে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের কোনো তুলনা চলে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ একটা নতুন দেশ সৃষ্টি করেছে, জন্ম দিয়েছে। সেটা কারা দিয়েছে? এই আপনারা, মুক্তিযোদ্ধারা নতুন দেশ সৃষ্টি করেছেন। আগামী দিনে মুক্তিযুদ্ধকে কেউ যেন ছোট করার চেষ্টা না করে। যদি মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, আমরা এখনও জীবিত আছি; ইনশাল্লাহ আমরা তা প্রতিরোধ করবো।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সারাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেন-বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নজমুল হক নানন্নু, জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান প্রমুখ।একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে চব্বিশকে বড় করতে চায় একটি মহল: বিএনপি
একটি গোষ্ঠী একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করে ২০২৪ সালের আন্দোলনকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ বিএনপির। দলটির দাবি চব্বিশের মতো এ রকম কয়েকটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে একাত্তরের তুলনা চলে না। কারণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নতুন একটা দেশ সৃষ্টি করেছে, জন্ম দিয়েছে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে’ বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘চেষ্টা চলছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে পেছনে ঠেলে দিয়ে চব্বিশ সালের আন্দোলনকে সামনে আনার। অথচ ১৯৭১ সাল আমাদের জন্মের ঠিকানা, আমাদের অস্তিত্ব ও পরিচয়ের ভিত্তি।’
জামায়াকে ইঙ্গিত করে ফখরুল আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশে একাত্তর সালে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা একাত্তরকে এখন নিচে নামিয়ে দিতে চায়, তারা শুধুমাত্র চব্বিশের জুলাইয়ের যে আন্দোলন, তাকে বড় করে দেখাতে চায়। আমরা ২০২৪-এর যে আন্দোলন, সেটা ১৫ বছর ধরে করেছি, আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, হাসিনাকে উৎখাতের জন্য ১৫ বছর সংগ্রাম করেছি, আমরা এতে বিভক্তি আনতে চাই না।’
ফখরুলের অভিযোগ, ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু কিছু শক্তি, কিছু মানুষ এখানে বিভক্তি আনতে চায়। ১৯৭১ সালকে যারা ভুলিয়ে দিতে চায়, তাদের লক্ষ্য একটাই, তারা ১৯৭১ কে অস্বীকার করতে চায়। আমরা যে লড়াই করে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হয়েছি, আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে, সেটাকে তারা অস্বীকার করতে চায়।’
৭১ বনাম ২৪ বিতর্ক
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালকে ভুলে যাওয়ার অবকাশ নেই। কারণ ১৯৭১-ই আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কেউ এটাকে অস্বীকার করতে চাইলে তা হবে জাতির সঙ্গে প্রতারণা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অতীত ভুলি না। যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকে গোলমাল বলেছিল, তারাই আজ ইতিহাস নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে। জাতিকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা চলছে। কিছু মানুষ সেই বিভাজনে ইন্ধন জোগাচ্ছে।’
জুলাই সনদ ও নির্বাচন প্রসঙ্গ
জুলাই সনদ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব বিষয়ে সই করেছি, সেসবের দায়িত্ব আমরা নিব। কিন্তু যেসব বিষয়ে সই করিনি, সেগুলোর দায় আমরা নেব না। আলোচনা ছাড়া নতুন কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়।’
নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পিআর (প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে আসন বণ্টন) হবে কিনা, তা নির্ধারণ করবে পরবর্তী সংসদ। গণভোটের কথা বলেছে, আমরা রাজি হয়েছি, ঠিক আছে। গণভোটের প্রয়োজন ছিল না, তার পরও রাজি হয়েছি। আমরা বলেছি, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে খরচ কমবে। অথচ এখন বলা হচ্ছে আগে গণভোট, পরে নির্বাচন। এই প্রস্তাব নির্বাচন পেছানোরই কৌশল।’
ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান
শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর ও সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতে বসে তিনি যেভাবে মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে বোঝা যায় তার কোনো অনুশোচনা নেই। ভারত সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক এবং আইনানুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করা হোক।’
প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য প্রসঙ্গ
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন বানচালে ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তির কাছ থেকে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড় আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’
সরকারপ্রধানের এ বক্তব্য ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলছিলেন, বিভিন্ন শক্তি থেকে যে কোনো সময় হামলা হতে পারে। উনার পরিষ্কার করে বলা উচিত ছিল, হামলা কোত্থেকে আসবে কারা করবে।’
ফখরুল অভয় প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতি প্রস্তুত আছে, যেগুলো হামলা প্রতিরোধ করতে। এই কথাগুলো আমরা এজন্য বলছি, হামলা, ভয় দেখিয়ে এই দেশের মানুষকে কখনো পরাজিত করা যায় না। খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই এই দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়।’ সভায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। লড়াই করে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছেন, আপনারা এই দেশের ভিত্তি তৈরি করেছেন। আপনাদের যুদ্ধই ছিল এই দেশ প্রতিষ্ঠার মূল কথা। এখন গণতন্ত্র রক্ষা করাও আপনাদের দায়িত্ব।
এই দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। দেশের শত্রুরা যেভাবে চক্রান্ত করছে, তাতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
জুলাই সনদের প্রয়োজন নাই
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের মানুষের একটা ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ প্রয়োজন। আর জুলাই সনদ প্রয়োজন উপদেষ্টাদের মতো কিছু মানুষের, যারা আগামীতে এ দেশে থাকতে গিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়বেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নেতা হিসেবে, কর্মী হিসেবে মনে করি, জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নাই। আমাদের একটি সংসদ প্রয়োজন, যারা গণতন্ত্রকে বাস্তবায়ন করবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিয়ে হাফিজ বলেন, ‘কমিশনে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয় নাই, সেই সব জিনিসও চূড়ান্ত খসড়ায় দেয়া হয়েছে, যেটা আমাদের মহাসচিব বলেছেন। বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়েকজন তথাকথিত প-িত ব্যক্তির প-িতির মাধ্যমে যে সনদ আমরা দেখতে পারছি, সেই সনদের প্রয়োজন আমাদের নাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে আঙুল তুলে হাফিজ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে এই সরকার তাদের ভুলিয়ে দিতে চায়। এই সরকার কোথাও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তার।
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ সংগ্রামের সঙ্গে অন্য কোনো আন্দোলনের তুলনা হয় না। এই দেশের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।’
হাফিজের অভিযোগ, ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র করছে। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হয়, তবে তাদের প্রতিহত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির এ সিনিয়র
একাত্তরের সঙ্গে কোনো তুলনা চলে না
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই যে জুলাই অভ্যুত্থান, তার আগে এরশাদবিরোধী অভ্যুত্থান, তার আগে ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, এ রকম কয়েকটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থান হয়েছে, যার ফলে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের কোনো তুলনা চলে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ একটা নতুন দেশ সৃষ্টি করেছে, জন্ম দিয়েছে। সেটা কারা দিয়েছে? এই আপনারা, মুক্তিযোদ্ধারা নতুন দেশ সৃষ্টি করেছেন। আগামী দিনে মুক্তিযুদ্ধকে কেউ যেন ছোট করার চেষ্টা না করে। যদি মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, আমরা এখনও জীবিত আছি; ইনশাল্লাহ আমরা তা প্রতিরোধ করবো।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সারাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেনÑ বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নজমুল হক নানন্নু, জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
একটি গোষ্ঠী একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করে ২০২৪ সালের আন্দোলনকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ বিএনপির। দলটির দাবি চব্বিশের মতো এ রকম কয়েকটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে একাত্তরের তুলনা চলে না। কারণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নতুন একটা দেশ সৃষ্টি করেছে, জন্ম দিয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে’ বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘চেষ্টা চলছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে পেছনে ঠেলে দিয়ে চব্বিশ সালের আন্দোলনকে সামনে আনার। অথচ ১৯৭১ সাল আমাদের জন্মের ঠিকানা, আমাদের অস্তিত্ব ও পরিচয়ের ভিত্তি।’
জামায়াকে ইঙ্গিত করে ফখরুল আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশে একাত্তর সালে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা একাত্তরকে এখন নিচে নামিয়ে দিতে চায়, তারা শুধুমাত্র চব্বিশের জুলাইয়ের যে আন্দোলন, তাকে বড় করে দেখাতে চায়। আমরা ২০২৪-এর যে আন্দোলন, সেটা ১৫ বছর ধরে করেছি, আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, হাসিনাকে উৎখাতের জন্য ১৫ বছর সংগ্রাম করেছি, আমরা এতে বিভক্তি আনতে চাই না।’
ফখরুলের অভিযোগ, ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু কিছু শক্তি, কিছু মানুষ এখানে বিভক্তি আনতে চায়। ১৯৭১ সালকে যারা ভুলিয়ে দিতে চায়, তাদের লক্ষ্য একটাই, তারা ১৯৭১ কে অস্বীকার করতে চায়। আমরা যে লড়াই করে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হয়েছি, আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে, সেটাকে তারা অস্বীকার করতে চায়।’
৭১ বনাম ২৪ বিতর্ক
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালকে ভুলে যাওয়ার অবকাশ নেই। কারণ ১৯৭১-ই আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কেউ এটাকে অস্বীকার করতে চাইলে তা হবে জাতির সঙ্গে প্রতারণা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অতীত ভুলি না। যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকে গোলমাল বলেছিল, তারাই আজ ইতিহাস নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে। জাতিকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা চলছে। কিছু মানুষ সেই বিভাজনে ইন্ধন জোগাচ্ছে।’
জুলাই সনদ ও নির্বাচন প্রসঙ্গ
জুলাই সনদ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব বিষয়ে সই করেছি, সেসবের দায়িত্ব আমরা নিব। কিন্তু যেসব বিষয়ে সই করিনি, সেগুলোর দায় আমরা নেব না। আলোচনা ছাড়া নতুন কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়।’
নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পিআর (প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে আসন বণ্টন) হবে কিনা, তা নির্ধারণ করবে পরবর্তী সংসদ। গণভোটের কথা বলেছে, আমরা রাজি হয়েছি, ঠিক আছে। গণভোটের প্রয়োজন ছিল না, তার পরও রাজি হয়েছি। আমরা বলেছি, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে খরচ কমবে। অথচ এখন বলা হচ্ছে আগে গণভোট, পরে নির্বাচন। এই প্রস্তাব নির্বাচন পেছানোরই কৌশল।’
ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান
শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর ও সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতে বসে তিনি যেভাবে মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে বোঝা যায় তার কোনো অনুশোচনা নেই। ভারত সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক এবং আইনানুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করা হোক।’
প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য প্রসঙ্গ
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন বানচালে ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তির কাছ থেকে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড় আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’
সরকারপ্রধানের এ বক্তব্য ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলছিলেন, বিভিন্ন শক্তি থেকে যে কোনো সময় হামলা হতে পারে। উনার পরিষ্কার করে বলা উচিত ছিল, হামলা কোত্থেকে আসবে কারা করবে।’
ফখরুল অভয় প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতি প্রস্তুত আছে, যেগুলো হামলা প্রতিরোধ করতে। এই কথাগুলো আমরা এজন্য বলছি, হামলা, ভয় দেখিয়ে এই দেশের মানুষকে কখনো পরাজিত করা যায় না। খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই এই দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়।’ সভায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। লড়াই করে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছেন, আপনারা এই দেশের ভিত্তি তৈরি করেছেন। আপনাদের যুদ্ধই ছিল এই দেশ প্রতিষ্ঠার মূল কথা। এখন গণতন্ত্র রক্ষা করাও আপনাদের দায়িত্ব।
এই দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। দেশের শত্রুরা যেভাবে চক্রান্ত করছে, তাতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
জুলাই সনদের প্রয়োজন নাই
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের মানুষের একটা ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ প্রয়োজন। আর জুলাই সনদ প্রয়োজন উপদেষ্টাদের মতো কিছু মানুষের, যারা আগামীতে এ দেশে থাকতে গিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়বেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নেতা হিসেবে, কর্মী হিসেবে মনে করি, জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নাই। আমাদের একটি সংসদ প্রয়োজন, যারা গণতন্ত্রকে বাস্তবায়ন করবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিয়ে হাফিজ বলেন, ‘কমিশনে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয় নাই, সেই সব জিনিসও চূড়ান্ত খসড়ায় দেয়া হয়েছে, যেটা আমাদের মহাসচিব বলেছেন। বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়েকজন তথাকথিত প-িত ব্যক্তির প-িতির মাধ্যমে যে সনদ আমরা দেখতে পারছি, সেই সনদের প্রয়োজন আমাদের নাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে আঙুল তুলে হাফিজ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে এই সরকার তাদের ভুলিয়ে দিতে চায়। এই সরকার কোথাও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তার।
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ সংগ্রামের সঙ্গে অন্য কোনো আন্দোলনের তুলনা হয় না। এই দেশের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।’
হাফিজের অভিযোগ, ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র করছে। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হয়, তবে তাদের প্রতিহত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির এ সিনিয়র নেতা।
একাত্তরের সঙ্গে কোনো তুলনা চলে না
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই যে জুলাই অভ্যুত্থান, তার আগে এরশাদবিরোধী অভ্যুত্থান, তার আগে ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, এ রকম কয়েকটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থান হয়েছে, যার ফলে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের কোনো তুলনা চলে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ একটা নতুন দেশ সৃষ্টি করেছে, জন্ম দিয়েছে। সেটা কারা দিয়েছে? এই আপনারা, মুক্তিযোদ্ধারা নতুন দেশ সৃষ্টি করেছেন। আগামী দিনে মুক্তিযুদ্ধকে কেউ যেন ছোট করার চেষ্টা না করে। যদি মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, আমরা এখনও জীবিত আছি; ইনশাল্লাহ আমরা তা প্রতিরোধ করবো।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সারাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেন-বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নজমুল হক নানন্নু, জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান প্রমুখ।একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে চব্বিশকে বড় করতে চায় একটি মহল: বিএনপি
একটি গোষ্ঠী একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করে ২০২৪ সালের আন্দোলনকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ বিএনপির। দলটির দাবি চব্বিশের মতো এ রকম কয়েকটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে একাত্তরের তুলনা চলে না। কারণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নতুন একটা দেশ সৃষ্টি করেছে, জন্ম দিয়েছে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে’ বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘চেষ্টা চলছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে পেছনে ঠেলে দিয়ে চব্বিশ সালের আন্দোলনকে সামনে আনার। অথচ ১৯৭১ সাল আমাদের জন্মের ঠিকানা, আমাদের অস্তিত্ব ও পরিচয়ের ভিত্তি।’
জামায়াকে ইঙ্গিত করে ফখরুল আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশে একাত্তর সালে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা একাত্তরকে এখন নিচে নামিয়ে দিতে চায়, তারা শুধুমাত্র চব্বিশের জুলাইয়ের যে আন্দোলন, তাকে বড় করে দেখাতে চায়। আমরা ২০২৪-এর যে আন্দোলন, সেটা ১৫ বছর ধরে করেছি, আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, হাসিনাকে উৎখাতের জন্য ১৫ বছর সংগ্রাম করেছি, আমরা এতে বিভক্তি আনতে চাই না।’
ফখরুলের অভিযোগ, ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু কিছু শক্তি, কিছু মানুষ এখানে বিভক্তি আনতে চায়। ১৯৭১ সালকে যারা ভুলিয়ে দিতে চায়, তাদের লক্ষ্য একটাই, তারা ১৯৭১ কে অস্বীকার করতে চায়। আমরা যে লড়াই করে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হয়েছি, আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে, সেটাকে তারা অস্বীকার করতে চায়।’
৭১ বনাম ২৪ বিতর্ক
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালকে ভুলে যাওয়ার অবকাশ নেই। কারণ ১৯৭১-ই আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কেউ এটাকে অস্বীকার করতে চাইলে তা হবে জাতির সঙ্গে প্রতারণা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অতীত ভুলি না। যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকে গোলমাল বলেছিল, তারাই আজ ইতিহাস নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে। জাতিকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা চলছে। কিছু মানুষ সেই বিভাজনে ইন্ধন জোগাচ্ছে।’
জুলাই সনদ ও নির্বাচন প্রসঙ্গ
জুলাই সনদ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব বিষয়ে সই করেছি, সেসবের দায়িত্ব আমরা নিব। কিন্তু যেসব বিষয়ে সই করিনি, সেগুলোর দায় আমরা নেব না। আলোচনা ছাড়া নতুন কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়।’
নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পিআর (প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে আসন বণ্টন) হবে কিনা, তা নির্ধারণ করবে পরবর্তী সংসদ। গণভোটের কথা বলেছে, আমরা রাজি হয়েছি, ঠিক আছে। গণভোটের প্রয়োজন ছিল না, তার পরও রাজি হয়েছি। আমরা বলেছি, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে খরচ কমবে। অথচ এখন বলা হচ্ছে আগে গণভোট, পরে নির্বাচন। এই প্রস্তাব নির্বাচন পেছানোরই কৌশল।’
ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান
শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর ও সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতে বসে তিনি যেভাবে মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে বোঝা যায় তার কোনো অনুশোচনা নেই। ভারত সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক এবং আইনানুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করা হোক।’
প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য প্রসঙ্গ
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন বানচালে ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তির কাছ থেকে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড় আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’
সরকারপ্রধানের এ বক্তব্য ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলছিলেন, বিভিন্ন শক্তি থেকে যে কোনো সময় হামলা হতে পারে। উনার পরিষ্কার করে বলা উচিত ছিল, হামলা কোত্থেকে আসবে কারা করবে।’
ফখরুল অভয় প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতি প্রস্তুত আছে, যেগুলো হামলা প্রতিরোধ করতে। এই কথাগুলো আমরা এজন্য বলছি, হামলা, ভয় দেখিয়ে এই দেশের মানুষকে কখনো পরাজিত করা যায় না। খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই এই দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়।’ সভায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। লড়াই করে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছেন, আপনারা এই দেশের ভিত্তি তৈরি করেছেন। আপনাদের যুদ্ধই ছিল এই দেশ প্রতিষ্ঠার মূল কথা। এখন গণতন্ত্র রক্ষা করাও আপনাদের দায়িত্ব।
এই দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। দেশের শত্রুরা যেভাবে চক্রান্ত করছে, তাতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
জুলাই সনদের প্রয়োজন নাই
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের মানুষের একটা ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ প্রয়োজন। আর জুলাই সনদ প্রয়োজন উপদেষ্টাদের মতো কিছু মানুষের, যারা আগামীতে এ দেশে থাকতে গিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়বেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নেতা হিসেবে, কর্মী হিসেবে মনে করি, জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নাই। আমাদের একটি সংসদ প্রয়োজন, যারা গণতন্ত্রকে বাস্তবায়ন করবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিয়ে হাফিজ বলেন, ‘কমিশনে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয় নাই, সেই সব জিনিসও চূড়ান্ত খসড়ায় দেয়া হয়েছে, যেটা আমাদের মহাসচিব বলেছেন। বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়েকজন তথাকথিত প-িত ব্যক্তির প-িতির মাধ্যমে যে সনদ আমরা দেখতে পারছি, সেই সনদের প্রয়োজন আমাদের নাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে আঙুল তুলে হাফিজ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে এই সরকার তাদের ভুলিয়ে দিতে চায়। এই সরকার কোথাও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তার।
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ সংগ্রামের সঙ্গে অন্য কোনো আন্দোলনের তুলনা হয় না। এই দেশের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।’
হাফিজের অভিযোগ, ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র করছে। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হয়, তবে তাদের প্রতিহত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির এ সিনিয়র
একাত্তরের সঙ্গে কোনো তুলনা চলে না
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই যে জুলাই অভ্যুত্থান, তার আগে এরশাদবিরোধী অভ্যুত্থান, তার আগে ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, এ রকম কয়েকটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থান হয়েছে, যার ফলে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের কোনো তুলনা চলে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ একটা নতুন দেশ সৃষ্টি করেছে, জন্ম দিয়েছে। সেটা কারা দিয়েছে? এই আপনারা, মুক্তিযোদ্ধারা নতুন দেশ সৃষ্টি করেছেন। আগামী দিনে মুক্তিযুদ্ধকে কেউ যেন ছোট করার চেষ্টা না করে। যদি মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, আমরা এখনও জীবিত আছি; ইনশাল্লাহ আমরা তা প্রতিরোধ করবো।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সারাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেনÑ বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নজমুল হক নানন্নু, জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান প্রমুখ।