খুলনায় আ’লীগের চ্যালেঞ্জ ভোটার উপস্থিতি
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর একদিন বাকি। ১২ জুন সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে তালুকদার আবদুল খালেক, জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে আবদুল আউয়াল, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে এসএম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে বিএনপির মতো বড় দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে অন্য প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ ভোটাররা। এক্ষেত্রে কেন্দ্রে ভোটার হাজির করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াত সবসময় নির্বাচনবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ কারণে মানুষের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তবে ভাটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র এ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারবে না। আশা করছি খুলনায় অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শক্তিমত্তা ও বাস্তবতার নিরিখে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হবেন এমন ধারণা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সিটি ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তবে উত্তেজনা থাকবে ৩১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অধিকাংশ ওয়ার্ডে একাধিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে স্থানীয় বিএনপি নেতারা অনেকেই কাজ করছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, বিগত দিনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে। এবার বিএনপির মতো বড় দল নির্বাচন বর্জন করায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়ার চিন্তা করার সুযোগ নেই।
কুদরত ই খুদা আরও বলেন, শক্তিমত্তা ও বাস্তবতার নিরিখে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হবেন এমন ধারণা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সিটি ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়বে। তবে এসব নির্বাচন থেকে ক্ষমতাসীন দল কী বার্তা পেল, তার প্রভাব থাকবে জাতীয় নির্বাচনে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান জানান, বাস্তবতার নিরিখে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হবেন এটা ঠিক। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো।
আশরাফ উজ জামান বলেন, বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের কিছু সমর্থকদের কেন্দ্রে নিতে পারলেও বিএনপির কর্মীরা এবার সেভাবে ভোটকেন্দ্রে যাবেন না বলে মনে করছেন তিনি।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, নির্বাচন এলে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসে নগরবাসী। নির্বাচন হয়ে গেলে দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে যায়। এসব প্রতিশ্রুতির অর্ধেক বাস্তবায়ন হলেও নগরের চেহারা পাল্টে যেত। খুলনা সিটির নাগরিক সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়নো দরকার।
তিনি বলেন, এবারের সিটি ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ কম। তবে কয়েকটি ওয়ার্ডে একাধিক শক্ত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। জয় পেতে তারাই নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে রেখেছেন।
আগের নির্বাচনগুলোর ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খুলনা সিটিতে বিএনপির একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। গত পাঁচটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তিনবার, আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুইবার মেয়র হয়েছেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার খালেক বিএনপির প্রার্থীকে ৬৭ হাজার ৯৪৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে খালেক বিএনপির কাছে ৬০ হাজার ৬৭১ ভোটে হেরে যান।
এবার বিএনপি নির্বাচনে নেই। এমনকি ভোটের দিন কেন্দ্রে গেলে নেতাকর্মীদের বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছে দলটি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হক ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট পান। জাতীয় পার্টির এস এম মুশফিকুর রহমান পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭২ ভোট।
এবার ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টি প্রার্থী পরিবর্তন করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, খুলনায় মেয়র পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। তালুকদার আবদুল খালেক নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন টানা ১৯ বছর। তিনি চার বারের সংসদ সদস্য, একবার প্রতিমন্ত্রী এবং দুবার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্ত্রী হাবিবুন নাহার উপমন্ত্রী।
খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, খুলনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। দলের পাশাপাশি ১৪ দলের নেতাকর্মীরাও সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় রয়েছেন। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনও ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে রয়েছে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
বাবুল রানা বলেন, গত মেয়াদে আওয়ামী লীগ অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করেছে- সব মিলিয়ে নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথাও বলেন এই নেতা।
যদিও উন্নয়ন এবং ভোগান্তি নিয়ে ভোটারদের অভিযোগ রয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিসহ নানা প্রতিকূল অবস্থার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও গতবার দেয়া কয়েকটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারার কথা স্বীকারও করছেন তালুকদার খালেক। পরিচ্ছন্ন, জলাবদ্ধতা মুক্ত ও স্মার্ট খুলনা গড়ে তুলতে ভোটারদের কাছে যেয়ে পুনরায় নগরবাসীর সমর্থন চাইছেন তিনি।
তালুকদার খালেক বলেন, গত মেয়াদে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিসহ নানা প্রতিকূল অবস্থার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে নগরের সার্বিক উন্নয়ন ও সেবা প্রদানে আমার আন্তরিকতার অভাব ছিল না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুজন খুলনা জেলা শাখার সম্পাদক কুদরত ই খুদা বলেন, গতবারের দেয়া প্রতিশ্রুতির ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছেন তালুকদার আবদুল খালেক।
অবশ্য অনেক উন্নয়নকাজ চলমান। ওই কাজগুলো শেষ হলে নগরের অনেকটা পরিবর্তন আসতে পারে। তবে কাজগুলো অনেক ধীরগতিতে হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
তালুকদার আবদুল খালেক আরও বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে নেয়াও একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। সেই জায়গা থেকে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়েও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানান এই মেয়র প্রার্থী।
গত দুই নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে যারা এবারের ভোটের মাঠে রয়েছেন, তার মধ্যে আওয়ামী লীগের পর ভোটার বেশি রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় এবার সাংগঠনিক পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করেছে দলটি। নগরজুড়ে মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়ালের পোস্টার চোখে পড়ে। প্রচার মাইকেও হাতপাখা প্রতীকে চাওয়া হচ্ছে ভোট।
দলটির নেতাকর্মীদের দাবি, ৪০ হাজার নিজেদের ভোটব্যাংক রয়েছে তাদের। প্রার্থী না দেয়ায় বিএনপির ভোট তাদের পক্ষে আসবে বলে মনে করছেন তারা। বিএনপির পাশাপাশি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী অন্যান্য দলের ভোট হাতপাখার বাক্সে যাবে বলে বিশ্বাস তাদের।
দলটির মেয়র প্রার্থী মাওলানা আবদুল আউয়াল বলেন, এখন মানুষ চায় ইসলামী শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা। বিএনপির সমর্থকরা সরকারের প্রতি অনাস্থায়। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে মানুষ আমাদের বেছে নেবে।
জাকের পার্টি থেকে মেয়র পদে প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেনকে দেয়া হয়েছে। খুলনায় দলটির অবস্থা খুব একটা সুসংহত না হলেও হাতপাখার প্রার্থীর বাক্সে যেত, এ রকম কিছু সাধারণ ভোটারের ভোট কাটবে জাকের পার্টি।
জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক। কর্মী-সমর্থকের সংখ্যাও কম। খুলনায় দলটির মধ্যে বিভেদ আছে। গত নির্বাচনে দলটির প্রার্থী মুশফিকুর এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর মনোনয়ন ফরম নিলেও বেগম রওশন এরশাদের নির্দেশনায় দলটির সাবেক সংসদ সদস্য গফ্ফার বিশ্বাস নির্বাচন থেকে সরে আসেন। তবে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করবেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।
২০১৮ সালের বিপর্যয় কাটাতে জাতীয় পার্টি থেকে এবার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধুকে। যদিও তিনি ২০১৩ সালে মেয়র পদে নির্বাচন করে মাত্র হাজার তিনেক ভোট পেয়েছিলেন।
তবে নিজেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দাবি করে মধু বলেন, ২০১৩ সালে নির্বাচনে তার দোয়াত-কলম প্রতীক ছিল, এবার লাঙ্গল হওয়ায় তিনি লড়াইয়ে থাকবেন। বিএনপি মাঠে না থাকায় বিএনপির সমর্থকরা তাকে ভোট দেবেন বলে মনে করেন তিনি।
সিটি নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বক্তব্য দিলেও নগরের পাঁচটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতের পাঁচ নেতা।
এ বিষয়ে খুলনা নগর জামায়াতের আমির মাহফুজুর রহমান জানান, অনেক নেতা এবং তাদের পরিবার নিজ এলাকায় জনপ্রিয়। তারা এর আগেও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে অংশ নিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও কেউ কেউ প্রার্থী হয়েছেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা নগর জামায়াতের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, জামায়াতের ভোটাররা কাউন্সিলর পদে তাদের প্রার্থীদের ভোট দিলেও মেয়র পদে হয়তো একক কোন প্রার্থী তাদের ভোট পাবেন না।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনে ২৮৯টি কেন্দ্রে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন। এ জন্য তিন হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের পাশাপাশি ১ হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষের প্রতিটিতেও বসছে ক্যামেরা। নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার খুলনা নগর এলাকায় ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে ভোটগ্রহণকে সামনে রেখে আগের ও পরের দিন বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার মধ্যরাত থেকে ১৩ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় কোন মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। আর ১১ জুন মধ্যরাত থেকে ১২ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, জিপ গাড়ি, পিক আপ, প্রাইভেট কার ও ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
তবে, অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যটকের ক্ষেত্রে ওই আইন শিথিল করা হয়েছে। এর বাইরে জরুরি সেবা কাজের সঙ্গে যুক্ত যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে ওই নিষেধাজ্ঞার প্রযোজ্য হবে না বলে নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
বরিশালে ঝুঁকিতে নৌকা প্রার্থী
বরিশাল সিটি করপোরেশনের পঞ্চম নির্বাচন সোমবার । ২০০২ সালে প্রথম শ্রেণীর বরিশাল পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ সময়ে বরিশাল পৌরসভার আয়তন ছিল মাত্র ২৫ বর্গকিলোমিটার। পরে পৌরসভা সংলগ্ন কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে অনেকগুলো ওয়ার্ড বা গ্রামকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হলে বর্তমান সিটি করপোরেশনের আয়তন দাঁড়ায় ৫৮ বর্গকিলোমিটারে। নগরীতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। অবশ্য এই সংখ্যার মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক আছে মৃত ব্যক্তি। এদের অনেকেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার বহু পূর্বেই মারা গেলেও ভোটার তালিকায় তাদের নাম রয়ে গেছে। তাই প্রকৃত ভোটার সংখ্যা নির্ধারণ করা এখন সম্ভব নয়। ভোটার তালিকায় যে সংখ্যক ভোটার আছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন। আর নারী ভোটার সংখ্যা হলো ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের এই সিটি করপোরেশনটিতে রয়েছে ৩০টি ওয়ার্ড। সোমবারের ভোটে অংশ নিচ্ছেন মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১৬ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৪২ জন জয়ের আশা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১২৬টি কেন্দ্রে ৮৯৪টি বুথে তাদের ভোট নেয়া হবে।
এটা সর্বজনবিদিত যে, বরিশালে বিএনপির সমর্থক ও ভোটার বেশি। তার মধ্যে আবার বিএনপির একচ্ছত্র নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের দলীয় জনপ্রিয়তা আরও বেশি। বিভিন্ন দলের মতে ২০১৮ সালের প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাতের পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সেই মজিবর রহমান সরোয়ারকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতি বছরের বাজেটে যেসব উন্নয়নমূলক কাজের প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলেছেন তার ১০% পূরণ করতে পারেননি। তিনি যে কাজ করেছেন তা সবই নিজের একক মতামতের ভিত্তিতে। কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন করা হয়েছে একই ঠিকাদার দিয়ে। মেয়র থাকাবস্থাতে তার বিতর্কিত বহু কর্মকান্ড নিজের দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। নগরবাসী অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের দুর্ভোগের কথা মেয়রকে জানাতে পারেননি। অন্যদিকে তিনি কয়েক শত যুবককে সংগ্রহ করেছিলেন- যারা মিছিলের আকৃতি বড় করত। যখন যেখানে মেয়র মহোদয় যেতেন সেখানে যেয়ে জনসংখ্যা বাড়াতেন। এরা কেউই প্রৃকত অর্থে আওয়ামী লীগের ছিলেন না। এরা সবাই ছিলেন সাদিক লীগের সদস্য। এই কারণে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর আপন চাচা খোকন সেরনিয়াবাত মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি সাদিক লীগের সমর্থন পাননি। এমনকি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিংহভাগ সদস্যদের সহযোগিতা না পাওয়ার পরেও তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। এমনকি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতারা এসে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালালেও স্থানীয় বেশিরভাগ নেতা কর্মীই নিশ্চুপ রয়েছেন। বরং তারা আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর নীরব কর্মী হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকি এটাও কানাঘুষা আছে যে, সাদিক লীগের সমর্থন পেয়েই ইসলামী আন্দোলনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা সৈয়দ ফয়জুল করিম মেয়র প্রার্থী হতে সম্মত হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নির্বাচিত হলে বরিশালে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভবিষ্যতে কোন পদ পদবী পাওয়া যে দুঃসাধ্য হবে সেটা তারা হিসাবে নেননি। খোকন সেরনিয়াবাত অবশ্য তার নির্বাচনী প্রচারে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের পর গত দশ বছরে বরিশালে যে কোন উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি তা প্রকাশ্যে বলে বরিশালের উন্নয়ন, রাজনৈতিক সহাবস্থান, মেয়র সাদিকের আমলে মাত্রারিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পুনর্বিবেচনা করার আশ্বাস দিচ্ছেন। এছাড়াও তিনি সাবেক মেয়র হিরনের ন্যায় বরিশালে গুণগত পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করবেন বলে ওয়াদা করছেন। এখানে উল্লেখ্য, অনেকেই মনে করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও তার ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। আবার তারা আছেন উভয় সংকটে। খোকন সেরনিয়াবাত বিজয়ী হলে এদের নেতৃত্ব যে এখন কার্যকর নয় তা প্রমাণিত হবে। আবার যদি পরাজিত হন তাহলে তাদেরকে দলের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
বরিশাল নগরী সংলগ্ন এবং কোতোয়ালী থানাধীন চরমোনাইর পীরের রাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এই পীর সাহেবের বহু সংখ্যক মুরিদ আছেন বরিশাল নগরীতে। মুরিদ না হয়েও এখানকার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের শেষে আখেরি মোনাজাতে বরিশাল থেকে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়ে থাকেন। আর এসব কারণে দলটির বহু সংখ্যক ভোটার আছে বরিশাল নগরীতে। চরমোনাইসহ অন্য স্থান থেকে প্রতিদিন নারী-পুরুষ মিলে কয়েক হাজার প্রচার কর্মী নগরীতে এসে ভাগ ভাগ হয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচার করছেন। এই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে আবার ধর্মকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। এমনকি প্রচারকর্মীরা পবিত্র কোরআন শরিফ নিয়ে প্রচারে নামেন এবং কোরআন শরিফ স্পর্শ করে ভোট দেয়ার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করান। উল্লেখ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই দলটি প্রায় ত্রিশ হাজার ভোট পেয়েছিল। এখন সংখ্যাটি আর না হোক তার দ্বিগুণ হয়েছে। এর সঙ্গে যদি সাদিক লীগের সমর্থকেরা তাকে ভোট দেন তাহলে ফলাফল কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এই প্রার্থীর নেতারা আবার বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও খবর চাউর হয়ে আছে।
কেন্দ্রীয় ঘোষণানুযায়ী মেয়র পদে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। তবে সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের ছেলে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক নেতা কামরুল আহসান রুপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। বিএনপির সদস্য না হলেও বিএনপি তাকে বহিষ্কার করলেও তিনি মনে করছেন বিএনপির সাধারণ ভোটাররা তাকেই ভোট দেবেন। অবশ্য রুপন যদি বিএনপির ভোট পায় তাহলে লাভ হবে নৌকার প্রার্থীর।
এছাড়া রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস। প্রায় এক বছর আগে থেকেই এই প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য সভা-সমাবেশ করছেন। একসময়ে নগরীর বর্ধিত এলাকায় দলটির সমর্থন থাকলেও এখন আর আগের মতো জৌলুস নেই। দলটি আশা করছে বরিশালের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য বিএনপির ভোটাররা তাকেই ভোট দেবে। অবশ্য তাতে আওয়ামী প্রার্থীর কোন ক্ষতি হবে না। এছাড়া রয়েছেন জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাশীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলী হোসেন হাওলাদার, মো. আসাদুজ্জামান।
প্রার্থীরা প্রথম থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার প্রচারণা চালালেও ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোন সাড়া নেই। অনেকেরই ধারণা অতীতের ন্যায় ভোট কেন্দ্রে না গেলেও হবে। অথচ প্রার্থীরা কিন্তু কীভাবে ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রমুখী হওয়ার জন্য ব্যাপক অনুরোধ করছেন।
ভোটের ব্যাপারে সুজনের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়েছে, ভোটের প্রচারণার পরিবেশ আগের থেকে অনেক ভালো। প্রার্থীদের মধ্যে সহনশীলতা বেড়েছে। ফৌজাদারি মামলা নিয়ে নির্বাচন করার প্রার্থীর সংখ্যাও কমেছে। নির্বাচনে শিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। আবার ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। অন্যদিকে ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য কয়েকজন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক বরিশাল এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। লঞ্চঘাটে চায়ের দোকানে আ. করিম নামের একজন ভোটার বলছিলেন এবার ভোট নিয়ে মারামারি নেই। তবে বেলা দুটার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রচার মাইকের সংখ্যা এত বেশি যে, কে কার পক্ষে কোন প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন তা বোঝা যায় না।
আ. করিমের ন্যায় বরিশালবাসী ভোটের পরিবেশ নিয়ে খুশি। তারা প্রশাসনের উদ্যোগেরও প্রশংসা করছেন। তারপরেও এবারকার নির্বাচনে মেয়র পদে কে নির্বাচিত হবে তা ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। কারণ বরিশাল সিটি করপোরেশনের এবারকার নির্বাচনে বহু সংখ্যক কিন্তু, অথচ, নতুবার হিসাব রয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত হয়তো বিএনপির নেতারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। কিন্তু বিএনপি সমর্থকরা মেয়র পদে কাকে বেশি পছন্দ করবেন তার ওপরেই নির্ভর করছে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বরিশাল নগরবাসীর ভাগ্য।
বিজিবির ১০ প্লাটুন সদস্য বরিশালে পৌঁছেছে : বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শনিবার দুপুরে বিজিবির ১০ প্লাটুন সদস্য নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বরিশাল এসে পৌঁছেছে। তারা ১১ জুন থেকে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা শুরু করবে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করবেন।
এদিকে শনিবার সকাল ১১টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিভিন্ন ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে চার হাজার সদস্য বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করবে। ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্নস্থানে পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
তিনি বলেন নগরীতে ভোট কেন্দ্র ১২৬টি এবং বুথ ৮৯৪টি। তার মধ্যে ১০৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬/৭ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য থাকবেন। নগরীর ত্রিশটি ওয়ার্ডে ৫১টি মোবাইল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স স্ট্যান্ডবাই থাকবে। নগরীর তিনটি থানার দায়িত্বে একজন উপ-পুলিশ কমিশনার, তিনজন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও ৬ জন সহকারী কমিশনার দায়িত্বে থাকবেন। নারী পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রভিত্তিক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গেও পুলিশের টিম থাকবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। ভোটাররা রাস্তায় পুলিশ দেখে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করবে। তিনি আরও বলেন অনেক বহিরাগত নির্বাচনী প্রচারের জন্য বরিশালে এসেছেন। তাদেরকে শনিবার রাতের মধ্যে নগরী ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে যারা থাকবেন তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
র্যাবের সদস্যরা স্ট্রইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছে : শনিবার (১০ জুন) দুপুরে বরিশালস্থ র্যাব-৮ এর সদরদপ্তরে র্যাবের পক্ষ থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহামদুল হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বভাবিক রাখতে র্যাবের ১৬টি টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছে। নগরীতে প্রবেশ ও বাহিরের দ্বারে র্যাবের পক্ষ থেকে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা সাদা পোশাকেও নগরী চষে বেড়াচ্ছে।
এই এলাকার ভোটার নন এরকম যেসব ব্যক্তিরা নগরীতে এসে অবস্থান করছেন তাদেরকে শনিবার রাত ১২টার মধ্যে নগরী ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারপরেও যদি কেউ থেকে যান তাহলে তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনী সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যেকোন ধরনের অপতৎপরতা কঠোরভাবে দমন করা হবে। নির্বাচনকে ভন্ডুল করার জন্য কেউ সহিংসতা বা নাশকতার চেষ্টা করলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ১০ জুন ২০২৩
খুলনায় আ’লীগের চ্যালেঞ্জ ভোটার উপস্থিতি
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর একদিন বাকি। ১২ জুন সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে তালুকদার আবদুল খালেক, জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে আবদুল আউয়াল, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে এসএম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে বিএনপির মতো বড় দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে অন্য প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ ভোটাররা। এক্ষেত্রে কেন্দ্রে ভোটার হাজির করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াত সবসময় নির্বাচনবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ কারণে মানুষের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তবে ভাটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র এ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারবে না। আশা করছি খুলনায় অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শক্তিমত্তা ও বাস্তবতার নিরিখে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হবেন এমন ধারণা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সিটি ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তবে উত্তেজনা থাকবে ৩১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অধিকাংশ ওয়ার্ডে একাধিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে স্থানীয় বিএনপি নেতারা অনেকেই কাজ করছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, বিগত দিনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে। এবার বিএনপির মতো বড় দল নির্বাচন বর্জন করায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়ার চিন্তা করার সুযোগ নেই।
কুদরত ই খুদা আরও বলেন, শক্তিমত্তা ও বাস্তবতার নিরিখে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হবেন এমন ধারণা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সিটি ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়বে। তবে এসব নির্বাচন থেকে ক্ষমতাসীন দল কী বার্তা পেল, তার প্রভাব থাকবে জাতীয় নির্বাচনে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান জানান, বাস্তবতার নিরিখে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হবেন এটা ঠিক। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো।
আশরাফ উজ জামান বলেন, বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের কিছু সমর্থকদের কেন্দ্রে নিতে পারলেও বিএনপির কর্মীরা এবার সেভাবে ভোটকেন্দ্রে যাবেন না বলে মনে করছেন তিনি।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, নির্বাচন এলে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসে নগরবাসী। নির্বাচন হয়ে গেলে দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে যায়। এসব প্রতিশ্রুতির অর্ধেক বাস্তবায়ন হলেও নগরের চেহারা পাল্টে যেত। খুলনা সিটির নাগরিক সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়নো দরকার।
তিনি বলেন, এবারের সিটি ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ কম। তবে কয়েকটি ওয়ার্ডে একাধিক শক্ত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। জয় পেতে তারাই নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে রেখেছেন।
আগের নির্বাচনগুলোর ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খুলনা সিটিতে বিএনপির একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। গত পাঁচটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তিনবার, আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুইবার মেয়র হয়েছেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার খালেক বিএনপির প্রার্থীকে ৬৭ হাজার ৯৪৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে খালেক বিএনপির কাছে ৬০ হাজার ৬৭১ ভোটে হেরে যান।
এবার বিএনপি নির্বাচনে নেই। এমনকি ভোটের দিন কেন্দ্রে গেলে নেতাকর্মীদের বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছে দলটি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হক ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট পান। জাতীয় পার্টির এস এম মুশফিকুর রহমান পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭২ ভোট।
এবার ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টি প্রার্থী পরিবর্তন করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, খুলনায় মেয়র পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। তালুকদার আবদুল খালেক নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন টানা ১৯ বছর। তিনি চার বারের সংসদ সদস্য, একবার প্রতিমন্ত্রী এবং দুবার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্ত্রী হাবিবুন নাহার উপমন্ত্রী।
খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, খুলনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। দলের পাশাপাশি ১৪ দলের নেতাকর্মীরাও সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় রয়েছেন। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনও ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে রয়েছে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
বাবুল রানা বলেন, গত মেয়াদে আওয়ামী লীগ অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করেছে- সব মিলিয়ে নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথাও বলেন এই নেতা।
যদিও উন্নয়ন এবং ভোগান্তি নিয়ে ভোটারদের অভিযোগ রয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিসহ নানা প্রতিকূল অবস্থার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও গতবার দেয়া কয়েকটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারার কথা স্বীকারও করছেন তালুকদার খালেক। পরিচ্ছন্ন, জলাবদ্ধতা মুক্ত ও স্মার্ট খুলনা গড়ে তুলতে ভোটারদের কাছে যেয়ে পুনরায় নগরবাসীর সমর্থন চাইছেন তিনি।
তালুকদার খালেক বলেন, গত মেয়াদে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিসহ নানা প্রতিকূল অবস্থার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে নগরের সার্বিক উন্নয়ন ও সেবা প্রদানে আমার আন্তরিকতার অভাব ছিল না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুজন খুলনা জেলা শাখার সম্পাদক কুদরত ই খুদা বলেন, গতবারের দেয়া প্রতিশ্রুতির ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছেন তালুকদার আবদুল খালেক।
অবশ্য অনেক উন্নয়নকাজ চলমান। ওই কাজগুলো শেষ হলে নগরের অনেকটা পরিবর্তন আসতে পারে। তবে কাজগুলো অনেক ধীরগতিতে হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
তালুকদার আবদুল খালেক আরও বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে নেয়াও একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। সেই জায়গা থেকে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়েও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানান এই মেয়র প্রার্থী।
গত দুই নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে যারা এবারের ভোটের মাঠে রয়েছেন, তার মধ্যে আওয়ামী লীগের পর ভোটার বেশি রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় এবার সাংগঠনিক পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করেছে দলটি। নগরজুড়ে মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়ালের পোস্টার চোখে পড়ে। প্রচার মাইকেও হাতপাখা প্রতীকে চাওয়া হচ্ছে ভোট।
দলটির নেতাকর্মীদের দাবি, ৪০ হাজার নিজেদের ভোটব্যাংক রয়েছে তাদের। প্রার্থী না দেয়ায় বিএনপির ভোট তাদের পক্ষে আসবে বলে মনে করছেন তারা। বিএনপির পাশাপাশি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী অন্যান্য দলের ভোট হাতপাখার বাক্সে যাবে বলে বিশ্বাস তাদের।
দলটির মেয়র প্রার্থী মাওলানা আবদুল আউয়াল বলেন, এখন মানুষ চায় ইসলামী শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা। বিএনপির সমর্থকরা সরকারের প্রতি অনাস্থায়। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে মানুষ আমাদের বেছে নেবে।
জাকের পার্টি থেকে মেয়র পদে প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেনকে দেয়া হয়েছে। খুলনায় দলটির অবস্থা খুব একটা সুসংহত না হলেও হাতপাখার প্রার্থীর বাক্সে যেত, এ রকম কিছু সাধারণ ভোটারের ভোট কাটবে জাকের পার্টি।
জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক। কর্মী-সমর্থকের সংখ্যাও কম। খুলনায় দলটির মধ্যে বিভেদ আছে। গত নির্বাচনে দলটির প্রার্থী মুশফিকুর এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর মনোনয়ন ফরম নিলেও বেগম রওশন এরশাদের নির্দেশনায় দলটির সাবেক সংসদ সদস্য গফ্ফার বিশ্বাস নির্বাচন থেকে সরে আসেন। তবে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করবেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।
২০১৮ সালের বিপর্যয় কাটাতে জাতীয় পার্টি থেকে এবার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধুকে। যদিও তিনি ২০১৩ সালে মেয়র পদে নির্বাচন করে মাত্র হাজার তিনেক ভোট পেয়েছিলেন।
তবে নিজেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দাবি করে মধু বলেন, ২০১৩ সালে নির্বাচনে তার দোয়াত-কলম প্রতীক ছিল, এবার লাঙ্গল হওয়ায় তিনি লড়াইয়ে থাকবেন। বিএনপি মাঠে না থাকায় বিএনপির সমর্থকরা তাকে ভোট দেবেন বলে মনে করেন তিনি।
সিটি নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বক্তব্য দিলেও নগরের পাঁচটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতের পাঁচ নেতা।
এ বিষয়ে খুলনা নগর জামায়াতের আমির মাহফুজুর রহমান জানান, অনেক নেতা এবং তাদের পরিবার নিজ এলাকায় জনপ্রিয়। তারা এর আগেও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে অংশ নিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও কেউ কেউ প্রার্থী হয়েছেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা নগর জামায়াতের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, জামায়াতের ভোটাররা কাউন্সিলর পদে তাদের প্রার্থীদের ভোট দিলেও মেয়র পদে হয়তো একক কোন প্রার্থী তাদের ভোট পাবেন না।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনে ২৮৯টি কেন্দ্রে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন। এ জন্য তিন হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের পাশাপাশি ১ হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষের প্রতিটিতেও বসছে ক্যামেরা। নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার খুলনা নগর এলাকায় ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে ভোটগ্রহণকে সামনে রেখে আগের ও পরের দিন বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার মধ্যরাত থেকে ১৩ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় কোন মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। আর ১১ জুন মধ্যরাত থেকে ১২ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, জিপ গাড়ি, পিক আপ, প্রাইভেট কার ও ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
তবে, অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যটকের ক্ষেত্রে ওই আইন শিথিল করা হয়েছে। এর বাইরে জরুরি সেবা কাজের সঙ্গে যুক্ত যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে ওই নিষেধাজ্ঞার প্রযোজ্য হবে না বলে নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
বরিশালে ঝুঁকিতে নৌকা প্রার্থী
বরিশাল সিটি করপোরেশনের পঞ্চম নির্বাচন সোমবার । ২০০২ সালে প্রথম শ্রেণীর বরিশাল পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ সময়ে বরিশাল পৌরসভার আয়তন ছিল মাত্র ২৫ বর্গকিলোমিটার। পরে পৌরসভা সংলগ্ন কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে অনেকগুলো ওয়ার্ড বা গ্রামকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হলে বর্তমান সিটি করপোরেশনের আয়তন দাঁড়ায় ৫৮ বর্গকিলোমিটারে। নগরীতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। অবশ্য এই সংখ্যার মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক আছে মৃত ব্যক্তি। এদের অনেকেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার বহু পূর্বেই মারা গেলেও ভোটার তালিকায় তাদের নাম রয়ে গেছে। তাই প্রকৃত ভোটার সংখ্যা নির্ধারণ করা এখন সম্ভব নয়। ভোটার তালিকায় যে সংখ্যক ভোটার আছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন। আর নারী ভোটার সংখ্যা হলো ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের এই সিটি করপোরেশনটিতে রয়েছে ৩০টি ওয়ার্ড। সোমবারের ভোটে অংশ নিচ্ছেন মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১৬ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৪২ জন জয়ের আশা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১২৬টি কেন্দ্রে ৮৯৪টি বুথে তাদের ভোট নেয়া হবে।
এটা সর্বজনবিদিত যে, বরিশালে বিএনপির সমর্থক ও ভোটার বেশি। তার মধ্যে আবার বিএনপির একচ্ছত্র নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের দলীয় জনপ্রিয়তা আরও বেশি। বিভিন্ন দলের মতে ২০১৮ সালের প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাতের পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সেই মজিবর রহমান সরোয়ারকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতি বছরের বাজেটে যেসব উন্নয়নমূলক কাজের প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলেছেন তার ১০% পূরণ করতে পারেননি। তিনি যে কাজ করেছেন তা সবই নিজের একক মতামতের ভিত্তিতে। কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন করা হয়েছে একই ঠিকাদার দিয়ে। মেয়র থাকাবস্থাতে তার বিতর্কিত বহু কর্মকান্ড নিজের দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। নগরবাসী অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের দুর্ভোগের কথা মেয়রকে জানাতে পারেননি। অন্যদিকে তিনি কয়েক শত যুবককে সংগ্রহ করেছিলেন- যারা মিছিলের আকৃতি বড় করত। যখন যেখানে মেয়র মহোদয় যেতেন সেখানে যেয়ে জনসংখ্যা বাড়াতেন। এরা কেউই প্রৃকত অর্থে আওয়ামী লীগের ছিলেন না। এরা সবাই ছিলেন সাদিক লীগের সদস্য। এই কারণে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর আপন চাচা খোকন সেরনিয়াবাত মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি সাদিক লীগের সমর্থন পাননি। এমনকি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিংহভাগ সদস্যদের সহযোগিতা না পাওয়ার পরেও তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। এমনকি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতারা এসে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালালেও স্থানীয় বেশিরভাগ নেতা কর্মীই নিশ্চুপ রয়েছেন। বরং তারা আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর নীরব কর্মী হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকি এটাও কানাঘুষা আছে যে, সাদিক লীগের সমর্থন পেয়েই ইসলামী আন্দোলনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা সৈয়দ ফয়জুল করিম মেয়র প্রার্থী হতে সম্মত হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নির্বাচিত হলে বরিশালে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভবিষ্যতে কোন পদ পদবী পাওয়া যে দুঃসাধ্য হবে সেটা তারা হিসাবে নেননি। খোকন সেরনিয়াবাত অবশ্য তার নির্বাচনী প্রচারে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের পর গত দশ বছরে বরিশালে যে কোন উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি তা প্রকাশ্যে বলে বরিশালের উন্নয়ন, রাজনৈতিক সহাবস্থান, মেয়র সাদিকের আমলে মাত্রারিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পুনর্বিবেচনা করার আশ্বাস দিচ্ছেন। এছাড়াও তিনি সাবেক মেয়র হিরনের ন্যায় বরিশালে গুণগত পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করবেন বলে ওয়াদা করছেন। এখানে উল্লেখ্য, অনেকেই মনে করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও তার ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। আবার তারা আছেন উভয় সংকটে। খোকন সেরনিয়াবাত বিজয়ী হলে এদের নেতৃত্ব যে এখন কার্যকর নয় তা প্রমাণিত হবে। আবার যদি পরাজিত হন তাহলে তাদেরকে দলের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
বরিশাল নগরী সংলগ্ন এবং কোতোয়ালী থানাধীন চরমোনাইর পীরের রাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এই পীর সাহেবের বহু সংখ্যক মুরিদ আছেন বরিশাল নগরীতে। মুরিদ না হয়েও এখানকার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের শেষে আখেরি মোনাজাতে বরিশাল থেকে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়ে থাকেন। আর এসব কারণে দলটির বহু সংখ্যক ভোটার আছে বরিশাল নগরীতে। চরমোনাইসহ অন্য স্থান থেকে প্রতিদিন নারী-পুরুষ মিলে কয়েক হাজার প্রচার কর্মী নগরীতে এসে ভাগ ভাগ হয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচার করছেন। এই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে আবার ধর্মকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। এমনকি প্রচারকর্মীরা পবিত্র কোরআন শরিফ নিয়ে প্রচারে নামেন এবং কোরআন শরিফ স্পর্শ করে ভোট দেয়ার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করান। উল্লেখ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই দলটি প্রায় ত্রিশ হাজার ভোট পেয়েছিল। এখন সংখ্যাটি আর না হোক তার দ্বিগুণ হয়েছে। এর সঙ্গে যদি সাদিক লীগের সমর্থকেরা তাকে ভোট দেন তাহলে ফলাফল কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এই প্রার্থীর নেতারা আবার বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও খবর চাউর হয়ে আছে।
কেন্দ্রীয় ঘোষণানুযায়ী মেয়র পদে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। তবে সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের ছেলে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক নেতা কামরুল আহসান রুপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। বিএনপির সদস্য না হলেও বিএনপি তাকে বহিষ্কার করলেও তিনি মনে করছেন বিএনপির সাধারণ ভোটাররা তাকেই ভোট দেবেন। অবশ্য রুপন যদি বিএনপির ভোট পায় তাহলে লাভ হবে নৌকার প্রার্থীর।
এছাড়া রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস। প্রায় এক বছর আগে থেকেই এই প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য সভা-সমাবেশ করছেন। একসময়ে নগরীর বর্ধিত এলাকায় দলটির সমর্থন থাকলেও এখন আর আগের মতো জৌলুস নেই। দলটি আশা করছে বরিশালের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য বিএনপির ভোটাররা তাকেই ভোট দেবে। অবশ্য তাতে আওয়ামী প্রার্থীর কোন ক্ষতি হবে না। এছাড়া রয়েছেন জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাশীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলী হোসেন হাওলাদার, মো. আসাদুজ্জামান।
প্রার্থীরা প্রথম থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার প্রচারণা চালালেও ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোন সাড়া নেই। অনেকেরই ধারণা অতীতের ন্যায় ভোট কেন্দ্রে না গেলেও হবে। অথচ প্রার্থীরা কিন্তু কীভাবে ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রমুখী হওয়ার জন্য ব্যাপক অনুরোধ করছেন।
ভোটের ব্যাপারে সুজনের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়েছে, ভোটের প্রচারণার পরিবেশ আগের থেকে অনেক ভালো। প্রার্থীদের মধ্যে সহনশীলতা বেড়েছে। ফৌজাদারি মামলা নিয়ে নির্বাচন করার প্রার্থীর সংখ্যাও কমেছে। নির্বাচনে শিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। আবার ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। অন্যদিকে ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য কয়েকজন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক বরিশাল এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। লঞ্চঘাটে চায়ের দোকানে আ. করিম নামের একজন ভোটার বলছিলেন এবার ভোট নিয়ে মারামারি নেই। তবে বেলা দুটার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রচার মাইকের সংখ্যা এত বেশি যে, কে কার পক্ষে কোন প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন তা বোঝা যায় না।
আ. করিমের ন্যায় বরিশালবাসী ভোটের পরিবেশ নিয়ে খুশি। তারা প্রশাসনের উদ্যোগেরও প্রশংসা করছেন। তারপরেও এবারকার নির্বাচনে মেয়র পদে কে নির্বাচিত হবে তা ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। কারণ বরিশাল সিটি করপোরেশনের এবারকার নির্বাচনে বহু সংখ্যক কিন্তু, অথচ, নতুবার হিসাব রয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত হয়তো বিএনপির নেতারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। কিন্তু বিএনপি সমর্থকরা মেয়র পদে কাকে বেশি পছন্দ করবেন তার ওপরেই নির্ভর করছে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বরিশাল নগরবাসীর ভাগ্য।
বিজিবির ১০ প্লাটুন সদস্য বরিশালে পৌঁছেছে : বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শনিবার দুপুরে বিজিবির ১০ প্লাটুন সদস্য নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বরিশাল এসে পৌঁছেছে। তারা ১১ জুন থেকে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা শুরু করবে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করবেন।
এদিকে শনিবার সকাল ১১টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিভিন্ন ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে চার হাজার সদস্য বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করবে। ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্নস্থানে পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
তিনি বলেন নগরীতে ভোট কেন্দ্র ১২৬টি এবং বুথ ৮৯৪টি। তার মধ্যে ১০৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬/৭ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য থাকবেন। নগরীর ত্রিশটি ওয়ার্ডে ৫১টি মোবাইল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স স্ট্যান্ডবাই থাকবে। নগরীর তিনটি থানার দায়িত্বে একজন উপ-পুলিশ কমিশনার, তিনজন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও ৬ জন সহকারী কমিশনার দায়িত্বে থাকবেন। নারী পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রভিত্তিক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গেও পুলিশের টিম থাকবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। ভোটাররা রাস্তায় পুলিশ দেখে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করবে। তিনি আরও বলেন অনেক বহিরাগত নির্বাচনী প্রচারের জন্য বরিশালে এসেছেন। তাদেরকে শনিবার রাতের মধ্যে নগরী ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে যারা থাকবেন তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
র্যাবের সদস্যরা স্ট্রইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছে : শনিবার (১০ জুন) দুপুরে বরিশালস্থ র্যাব-৮ এর সদরদপ্তরে র্যাবের পক্ষ থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহামদুল হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বভাবিক রাখতে র্যাবের ১৬টি টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছে। নগরীতে প্রবেশ ও বাহিরের দ্বারে র্যাবের পক্ষ থেকে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা সাদা পোশাকেও নগরী চষে বেড়াচ্ছে।
এই এলাকার ভোটার নন এরকম যেসব ব্যক্তিরা নগরীতে এসে অবস্থান করছেন তাদেরকে শনিবার রাত ১২টার মধ্যে নগরী ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারপরেও যদি কেউ থেকে যান তাহলে তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনী সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যেকোন ধরনের অপতৎপরতা কঠোরভাবে দমন করা হবে। নির্বাচনকে ভন্ডুল করার জন্য কেউ সহিংসতা বা নাশকতার চেষ্টা করলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।