দুই দিনের নাটকীয়তার পর চমকপ্রদ পটপরিবর্তনের পথ ধরে ফারুক আহমেদের জায়গায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি হয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভায় শুক্রবার,(৩০ মে ২০২৫) বিকেলে সভাপতি নির্বাচিত হন বুলবুল।

সভায় শুরুতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে বোর্ড পরিচালক ঘোষণা করা হয় তাকে। এরপর পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন দেশের সাবেক এই অধিনায়ক। বিসিবির ষোড়শ সভাপতি বুলবুল। নাজমুল হাসান ও ফারুক আহমেদের মতো তিনিও নির্বাচিত হলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

৫৭ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেটার আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছিলেন অনেক বছর ধরে। এবার পথচলা শুরু করছেন ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে।

গত বুধবার রাতে ফারুক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা জানান, বিসিবি সভাপতির দায়িত্বে পরিবর্তন চান তারা। ফারুক তখন সময় চাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু পরদিনই জানান, পদত্যাগ করবেন না তিনি। এর মধ্যেই জানা যায়, ফারুকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে অনাস্থা জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বিসিবির আট পরিচালক। সেই চিঠির সূত্র ধরে বিসিবি পরিচালক হিসেবে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় প্রজ্ঞাপন জারি করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

এই রাতেই ফারুকের নাম প্রত্যাহার করে এনএসসি। এবং নতুন কাউন্সিলর হিসেবে আমিনুলকে মনোনয়ন দেয়। শুক্রবার বিকেলে এনএসসির মনোনয়নে বোর্ড পরিচালকও করা হয় বুলবুলকে। এরপর জরুরি বোর্ড সভায় তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন পরিচালকদের ভোটে। সব মিলিয়ে ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ে অভাবনীয়ভাবে পাল্টে গেল দেশের ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ের ছবি। যেভাবে বিসিবি সভাপতি হয়েছিলেন ফারুক, সেই পথে তাকে বিদায় নিতে হলো। একই পথ ধরেই সভাপতি হলেন আমিনুল।

আগামী অক্টোবরের মধ্যে বিসিবি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। আপাতত আমিনুলের মেয়াদ নির্বাচন পর্যন্তই। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি পদে বদল আসলো। নতুন করে এই বড় দায়িত্বে বসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বুলবুল।

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আমিনুলের পদচারণা শুরু আশির দশকের মাঝামাঝি। ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন দলের মিডল অর্ডারের ভরসা। একসময়ও নেতৃত্বও পান। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বে স্কটল্যান্ডকে হারানোর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পায় দল। পরে নেতৃত্ব হারালেও দেশের অভিষেক টেস্টে করেন স্মরণীয় এক সেঞ্চুরি। ২০০৩ সালে খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে নাম লেখান তিনি। তার কোচিংয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে শিরোপা জয় করে আবাহনী লিমিটেড। পরে তিনি পরিবারসহ থিতু হন অস্ট্রেলিয়ায়। নতুন অধ্যায় শুরু হয় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে। সেখান থেকে পরে আইসিসিতে গত বছর দশেক কাজ করে আসছিলেন ডেভেলপমেন্টের নানা ভূমিকায়।

বুলবুল জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ও টেস্ট খেলেছেন, করেছেন অধিনায়কত্বও। ১৯৮৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর ৩৯টি ওয়ানডে খেলে তিন হাফ সেঞ্চুরিতে তার রান ৭৯৪। টেস্ট খেলেছেন ১৩টি। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান সাবেক এই ব্যাটার। ২০০২ সালে শেষ টেস্ট খেলার আগে ২৬ ইনিংসে করেন ৫৩০ রান। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে দুটি হাফ সেঞ্চুরিও। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি ওয়ানডে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বুলবুল। তার নেতৃত্বে ১৬ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জিতেছে দুটি।