বিসিবির ১৬তম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বোর্ড সভাপতি হিসেবে প্রথমদিনের মতো সংবাদ সম্মেলনে এসে ৩৫ মিনিট কথা বলেছেন তিনি। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবরে বিসিবির নির্বাচন। আসন্ন এই নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক এই ক্রিকেটার। স্বল্প এই সময়ে ক্রিকেটের উন্নতি কতটা সম্ভব! সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়, নির্বাচনের আগে কোন কাজটা করে যেতে চান, যা কিনা উন্নতি হিসেবে গণ্য হবে।

সাংবাদিকের করা এমন প্রশ্নে বুলবুল বলেন, ‘যেহেতু সময়টা কম, আমরা জানি যে টেস্ট ম্যাচ পাঁচদিনের হয়। ওয়ানডে হয় সাত ঘণ্টার। আমি একটা কুইক টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলতে এসেছি। সো একটা ভালো টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলবো, যা আপনারা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন। চেষ্টা করবো, ক্রিকেটটা যাতে সবাই খেলতে পারে, যাতে সবার খেলা হয়। যেন একটা স্টেটমেন্ট হয়, ক্রিকেটটা সবার জন্য। এই ধারাটা শুরু করে দিয়ে যেতে চাই।’

একটা সময় ক্রিকেট বোর্ডে খেলোয়াড়দের সংখ্যা কম ছিল। গঠনতন্ত্র খেলোয়াড়দের অনুমতি দিতো না। সময় বদলেছে, অনেক সাবেক ক্রিকেটার লম্বা সময় ধরেই ক্রিকেট বোর্ডে এসেছেন। এখনও আছেন। সর্বশেষ ফারুক আহমেদও ছিলেন, যিনি সাবেক অধিনায়ক। কিন্তু ভালো ক্রিকেটার হলেও তারা শেষ পর্যন্ত ভালো সংগঠক হয়ে উঠতে পারছেন না। বুলবুল কি ওই ধারা ভেঙে সফল হতে পারবেন?

বুলবুলের উত্তর, ‘একটা সময় প্লেয়াররা কাউন্সিলর হতে পারেনি, কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে খেলোয়াড়দের কাউন্সিল হওয়ার জন্য। অবস্থা পাল্টেছে এখন। শেষ বোর্ড সভাপতি সাবেক খেলোয়াড় ছিলেন। আমরা খেলোয়াড়রা শিখছি। আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, আমার যে স্কিল সেট আছে, এটা একটা প্যাকেজ। কেননা আমি তাজিকিস্তানের মতো ছোট্ট দেশের সঙ্গেও কাজ করেছি। আমি চেষ্টা করবো সর্বোচ্চটা দিয়ে, ইনশাআল্লাহ ফেল করবো না। আমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে শেয়ার করবো আমার অভিজ্ঞতাটা। ক্রিকেটার হিসেবে আমি এখানে বসিনি, আমার যে দায়িত্ব আছে আমি সেটা এখানে পালন করার চেষ্টা করবো।’

ফারুক সভাপতি হয়ে সিনিয়র পরিচালকদের ঠিকমতো পরিচালনা করতে পারেননি। এখানে নিজের মুন্সিয়ানা জরুরি। অনেকদিন ধরে দেশের বাইরে থাকা বুলবুল কি পারবেন সিনিয়র পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে? তিনি সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চান, ‘সভাপতি হিসেবে আমার আজকের দিনটা শুরু হলো। এটি নিয়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আমরা চেষ্টা করবো সবার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে, সবার এনার্জি যেন আমরা একসঙ্গে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারি।’

ফারুক বোর্ডে আসার আগে সোচ্চার ছিলেন অনেক কিছু নিয়ে। বুলবুল বোর্ডের অনেক কিছু নিয়ে সমালোচনা করেছেন। সেই বোর্ডেই, আগের পরিচালকদের নিয়ে তিনি বোর্ডে কাজ করবেন। স্বপ্ন কি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, ‘আজকেই শুরু করলাম, এটা তো পরে বোঝা যাবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, একটা ক্রিকেট দল একটা দেশ তখনই এগিয়ে যায় যখন দল হিসেবে কাজ করে। একজন বোলার কিন্তু একলা বোলিং করতে পারে না। ফিল্ডার লাগে, উইকেটকিপার লাগে। আমরা একেক সময় একেকটা রোল প্লে করবো।’

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বুলবুল জানিয়েছে কোনো প্রক্রিয়ায় তিনি বোর্ড সভাপতি হয়ে আসলেন, ‘গত ১৯ বছর ধরে ক্রিকেট উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি আইসিসি এবং এসিসিতে। এটা আমার জন্য নতুন উচ্চতার একটা পরীক্ষা বা সুযোগ। আপনাদের কাছ থেকে আমি শত শত প্রশ্ন পেতাম, আপনাকে ডাকা হয় আপনি আসেন না কেন? আপনি কী সুযোগ পেলে আসবেন? সত্যিকার অর্থে এই প্রথম গত মাসের এপ্রিল মাসের শেষদিকে আমি একটা কল পাই ন্যাশন্যাল স্পোর্টস কাউন্সিল থেকে এবং বলা হয় যে আপনাকে একটা সুযোগ দেয়া হবে, আপনি কি সুযোগ গ্রহণ করবেন? আমি যে আপনাদেরকে এত প্রতিশ্রুতি দিতাম বা অপেক্ষা করতাম একটা কলের জন্য। যখন এই কল পেয়েছি, তখন আর পেছনে তাকাইনি।’

বুলবুল আরও বলেন, ‘আমার একটাই লক্ষ্য ছিল কীভাবে এই কলটাকে রেসপেক্ট করতে পারি। তারপর পর্যায়ক্রমে ক্রিকেট বোর্ডের ডাইরেক্টররা আমাকে নির্বাচিত করেছেন।

আমি এই কলটা পেয়েছিলাম আমাদের সম্মানিত স্পোর্টস উপদেষ্টার কাছ থেকে। আমি অনার্ড যে এই রকম একটা কল পেয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে এই দায়িত্বটা পেয়েছি। এই দায়িত্বটা বাংলাদেশের ক্রিকেট না, ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কী ক্রিকেট আছে চেষ্টা করবো সেটা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। আমি বিশ্বাস করি, ১১ জন ক্রিকেট খেলে না, বাংলাদেশের সবাই ক্রিকেট খেলে।’