বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তবে তার অভিষেক সংবাদ সম্মেলনে অভ্যর্থনার চেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে কিছু প্রশ্ন। সেই প্রশ্নগুলোর কেন্দ্রে ছিলো তার চারপাশে থাকা বিসিবির পুরোনো কিছু পরিচালক, যাদের হাত ধরেই মাত্র ৯ মাসেই বিদায় নিতে হয়েছে তার পূর্বসূরি ফারুক আহমেদকে।
একই কক্ষে, একই মঞ্চে গত বছরের ২১ আগস্ট সভাপতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। তখন যাদের হাসিমুখে পাশে পেয়েছিলেন, তারাই সময় গড়াতেই হয়ে উঠেছেন শত্রু। অভিযোগ, অনাস্থা আর চাপের মাধ্যমে তাকেই অবশেষে পদচ্যুত করা হয়েছে। এবার সেই একই চরিত্রদের সঙ্গে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন আমিনুল। প্রশ্ন উঠেছে—ফারুকের শত্রুরা কি আমিনুলের হয়ে উঠবেন বন্ধু?
বিসিবির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় কিছু মুখ—মাহবুব আনাম, আকরাম খান, কাজী ইনাম আহমেদ, ফাহিম সিনহা, ইফতেখার রহমানসহ আরও কয়েকজন পরিচালক বোর্ডে রয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে। কেউ কেউ তো দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বোর্ড পরিচালনায় যুক্ত। তাদের ঘিরে আছে বিতর্ক, আছে নানা অভিযোগের পাহাড়।
ফারুক আহমেদকে সরাতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অনাস্থা চিঠি পাঠিয়েছেন ৯ পরিচালকের মধ্যে ৮ জনই। শুধু আকরাম খান সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেননি। অথচ চিঠিতে যে ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা এসব পরিচালকদের বিরুদ্ধেও নানা সময়ে উঠেছে। কিন্তু তখন কেউ প্রতিবাদ করেননি, এমনকি মুখও খোলেননি।
এই পটভূমিতে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সংবাদ সম্মেলনে উঠেছে কিছু স্পষ্ট ও শক্ত প্রশ্ন:
"ম্যান ম্যানেজমেন্ট"-এর ঘাটতিতে বিদায় নিতে হয়েছে ফারুককে। সেই একই চরিত্রদের সঙ্গে কাজ করতে হবে আমিনুলকেও। কতটা প্রস্তুত তিনি?
যাদের বিরুদ্ধে অতীতে তিনি ছিলেন সোচ্চার, তারাই এখন তার পাশে—এটা কতটা স্বস্তির?
দীর্ঘদিন ধরে বিসিবির নেতৃত্বে থাকা বিতর্কিত কিছু পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে কতটা সফল হবেন?
এনএসসি মনোনীত হিসেবেই ফারুক যেমন এসেছিলেন, তেমনি আমিনুলও। তাহলে মন্ত্রণালয়ের প্রভাব কি থাকবে না?
এসব প্রশ্নে আমিনুল সরাসরি সমালোচনা না করে কৌশলে বলেন, “আমরা তো একটা দল। এই মুহূর্তে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সকলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।”
তিনি আরও বলেন, “আমি সবসময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করেছি, কারণ ক্রিকেটই আমাকে সবকিছু দিয়েছে। সকলকে নিয়েই চেষ্টা করব সেরাটা দিতে।”
নেতৃত্বে আসার পর আমিনুল জানিয়েছেন, তার বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বা দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব পালনের কোনো পরিকল্পনা নেই। এটি হয়তো তার কাজ কিছুটা সহজ করবে। বিপরীতে ফারুক আহমেদ নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রস্তুত করছিলেন, ক্লাবপাড়া গোছানোর লড়াইয়ে নামায় তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আজকে আমি শুরু করলাম, সামনেই বলে দেবে সবকিছু। তবে আমি এটা বিশ্বাস করি, একটা ক্রিকেট দল, বা একটা দেশ তখনই এগিয়ে যায়, যখন দল হিসেবে কাজ করে। একটা বোলার কিন্তু কখনও একা বল করতে পারে না, তার ফিল্ডার দরকার হয়, উইকেটকিপার দরকার হয়। আমরা একেক সময় একেকটা ভূমিকা পালন করব। চেষ্টা করব সেই জিনিসটা প্রতিষ্ঠিত করার।”
কিন্তু স্বল্পমেয়াদি এই দায়িত্বেও আমিনুলকে কাজ করতে হবে সেই পরিচালকদের সঙ্গে, যাদের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন ছিল বরাবরই। যাদের স্বার্থে কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়েছে বহুবার। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ফারুককে সরানো যাদের জন্য এতটা সহজ ছিল, আমিনুলের পথ কি হবে আলাদা?
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ও আইসিসিতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আমিনুলের জন্য বিসিবি সভাপতির চ্যালেঞ্জ ভিন্নতর। এখানে শুধু ক্রিকেট নয়, সমান গুরুত্বপূর্ণ বোর্ডের রাজনীতি, প্রভাব ও চাপ সামাল দেওয়া। যেসব পরিচালকের হাত ধরে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, তারাই কি হবেন তার অগ্রযাত্রার অন্তরায়?
সামনের দিনগুলিই বলে দেবে, আমিনুল ইসলাম বুলবুল আদতে তাদের বন্ধু হতে পারেন, নাকি তার ভাগ্যেও জুটবে ফারুক আহমেদের পরিণতি।
শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তবে তার অভিষেক সংবাদ সম্মেলনে অভ্যর্থনার চেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে কিছু প্রশ্ন। সেই প্রশ্নগুলোর কেন্দ্রে ছিলো তার চারপাশে থাকা বিসিবির পুরোনো কিছু পরিচালক, যাদের হাত ধরেই মাত্র ৯ মাসেই বিদায় নিতে হয়েছে তার পূর্বসূরি ফারুক আহমেদকে।
একই কক্ষে, একই মঞ্চে গত বছরের ২১ আগস্ট সভাপতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। তখন যাদের হাসিমুখে পাশে পেয়েছিলেন, তারাই সময় গড়াতেই হয়ে উঠেছেন শত্রু। অভিযোগ, অনাস্থা আর চাপের মাধ্যমে তাকেই অবশেষে পদচ্যুত করা হয়েছে। এবার সেই একই চরিত্রদের সঙ্গে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন আমিনুল। প্রশ্ন উঠেছে—ফারুকের শত্রুরা কি আমিনুলের হয়ে উঠবেন বন্ধু?
বিসিবির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় কিছু মুখ—মাহবুব আনাম, আকরাম খান, কাজী ইনাম আহমেদ, ফাহিম সিনহা, ইফতেখার রহমানসহ আরও কয়েকজন পরিচালক বোর্ডে রয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে। কেউ কেউ তো দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বোর্ড পরিচালনায় যুক্ত। তাদের ঘিরে আছে বিতর্ক, আছে নানা অভিযোগের পাহাড়।
ফারুক আহমেদকে সরাতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অনাস্থা চিঠি পাঠিয়েছেন ৯ পরিচালকের মধ্যে ৮ জনই। শুধু আকরাম খান সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেননি। অথচ চিঠিতে যে ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা এসব পরিচালকদের বিরুদ্ধেও নানা সময়ে উঠেছে। কিন্তু তখন কেউ প্রতিবাদ করেননি, এমনকি মুখও খোলেননি।
এই পটভূমিতে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সংবাদ সম্মেলনে উঠেছে কিছু স্পষ্ট ও শক্ত প্রশ্ন:
"ম্যান ম্যানেজমেন্ট"-এর ঘাটতিতে বিদায় নিতে হয়েছে ফারুককে। সেই একই চরিত্রদের সঙ্গে কাজ করতে হবে আমিনুলকেও। কতটা প্রস্তুত তিনি?
যাদের বিরুদ্ধে অতীতে তিনি ছিলেন সোচ্চার, তারাই এখন তার পাশে—এটা কতটা স্বস্তির?
দীর্ঘদিন ধরে বিসিবির নেতৃত্বে থাকা বিতর্কিত কিছু পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে কতটা সফল হবেন?
এনএসসি মনোনীত হিসেবেই ফারুক যেমন এসেছিলেন, তেমনি আমিনুলও। তাহলে মন্ত্রণালয়ের প্রভাব কি থাকবে না?
এসব প্রশ্নে আমিনুল সরাসরি সমালোচনা না করে কৌশলে বলেন, “আমরা তো একটা দল। এই মুহূর্তে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সকলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।”
তিনি আরও বলেন, “আমি সবসময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করেছি, কারণ ক্রিকেটই আমাকে সবকিছু দিয়েছে। সকলকে নিয়েই চেষ্টা করব সেরাটা দিতে।”
নেতৃত্বে আসার পর আমিনুল জানিয়েছেন, তার বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বা দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব পালনের কোনো পরিকল্পনা নেই। এটি হয়তো তার কাজ কিছুটা সহজ করবে। বিপরীতে ফারুক আহমেদ নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রস্তুত করছিলেন, ক্লাবপাড়া গোছানোর লড়াইয়ে নামায় তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আজকে আমি শুরু করলাম, সামনেই বলে দেবে সবকিছু। তবে আমি এটা বিশ্বাস করি, একটা ক্রিকেট দল, বা একটা দেশ তখনই এগিয়ে যায়, যখন দল হিসেবে কাজ করে। একটা বোলার কিন্তু কখনও একা বল করতে পারে না, তার ফিল্ডার দরকার হয়, উইকেটকিপার দরকার হয়। আমরা একেক সময় একেকটা ভূমিকা পালন করব। চেষ্টা করব সেই জিনিসটা প্রতিষ্ঠিত করার।”
কিন্তু স্বল্পমেয়াদি এই দায়িত্বেও আমিনুলকে কাজ করতে হবে সেই পরিচালকদের সঙ্গে, যাদের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন ছিল বরাবরই। যাদের স্বার্থে কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়েছে বহুবার। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ফারুককে সরানো যাদের জন্য এতটা সহজ ছিল, আমিনুলের পথ কি হবে আলাদা?
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ও আইসিসিতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আমিনুলের জন্য বিসিবি সভাপতির চ্যালেঞ্জ ভিন্নতর। এখানে শুধু ক্রিকেট নয়, সমান গুরুত্বপূর্ণ বোর্ডের রাজনীতি, প্রভাব ও চাপ সামাল দেওয়া। যেসব পরিচালকের হাত ধরে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, তারাই কি হবেন তার অগ্রযাত্রার অন্তরায়?
সামনের দিনগুলিই বলে দেবে, আমিনুল ইসলাম বুলবুল আদতে তাদের বন্ধু হতে পারেন, নাকি তার ভাগ্যেও জুটবে ফারুক আহমেদের পরিণতি।