বিশ্বকাপে চারবার অংশ নেয়ার পর পঞ্চমবারে এসে পেয়েছেন সাফল্য। তবে সেখানেই থেমে থাকতে চান না লিওনেল মেসি। আগামী বছরের আসরেও আর্জেন্টিনার হয়ে আরও একবার খেলতে চান এ কিংবদন্তি। তবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি নিজের শরীরের সাড়া শুনবেন।
ইন্টার মায়ামির এই ৩৮ বছর বয়সী তারকা ২০২২ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জয়ের পথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এখন তার ইচ্ছে, আগামী বছর উত্তর আমেরিকায় যখন আলবিসেলেস্তেরা শিরোপা রক্ষা করতে নামবে, তখন আবারও মাঠে থাকা।
আটবার ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি এনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ, এবং আমি খুবই চাই সেখানে থাকতে। তবে আমি দেখবো আগামী বছর আমার শরীর কেমন প্রতিক্রিয়া দেয়, তারপরই সিদ্ধান্ত নেব যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় আয়োজিত সেই বিশ্বকাপে আমি খেলতে পারবো কিনা।’
মেসির বয়স আগামী জুনে ৩৯ হবে। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই সেখানে থাকতে চাই, ফিট থাকতে চাই, এবং যদি আমি দলে থাকি, তবে জাতীয় দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই।
আগামী মৌসুমে ইন্টার মায়ামির সঙ্গে প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি শুরু হলে প্রতিদিন নিজের অবস্থা যাচাই করবো। দেখবো আমি সত্যিই শতভাগ ফিট কিনা, দলের জন্য উপকারী কিনা। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
২০০৪ সালে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হওয়া মেসি চান আরেকবার ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে নিজের শেষ আলো ছড়াতে। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বকাপ মানেই আলাদা রোমাঞ্চ। আমরা তো গতবারের বিশ্বকাপ জয় করেছি। এবার সেটি রক্ষা করার সুযোগ পাওয়া সত্যিই দারুণ এক অনুভূতি। জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা সব সময়ই স্বপ্নের মতো, বিশেষ করে অফিসিয়াল টুর্নামেন্টে।’
১৭ বছর বয়সে লা লিগায় বার্সেলোনার জার্সিতে পেশাদার ফুটবলে পা রাখেন মেসি। ২০২১ সালে যোগ দেন পিএসজিতে, আর ২০২৩ সালে চলে যান মায়ামিতে। মায়ামি জীবন নিয়ে মেসির মন্তব্য, ‘এখানে থাকার প্রতিটি দিকই আমার ভালো লাগে। আমি অনেকটা সময় কাটিয়েছি বার্সেলোনায়। ওটা আমার কাছে অসাধারণ এক শহর, যেখানে আমি বড় হয়েছি, অসংখ্য সুন্দর স্মৃতি আছে, তাই ওটাকে ভীষণভাবে মিস করি।’
‘তবে মায়ামি এমন এক শহর যেখানে আমরা খুব ভালোভাবে থাকতে পারি, জীবন উপভোগ করতে পারি, শান্তিতে থাকতে পারি। এখানকার পরিবেশ আমাদের সন্তানদেরও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে,’ যোগ করেন এই আর্জেন্টাইন।
আর্জেন্টিনার হয়ে এখন পর্যন্ত ১৯৫ ম্যাচ খেলেছেন লিওনেল মেসি, গোল করেছেন ১১৪টি।
গত বার কাতারে বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগেই মেসি জানিয়েছিলেন, শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন। গত বার ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। সোনার বল জিতেছেন মেসি। তার পর এখনও পর্যন্ত অবসর নেননি তিনি। মেসিকে আরও একটি বিশ্বকাপে খেলার আর্জি জানিয়েছেন তাঁর কোচ, সতীর্থ, বন্ধু ও ভক্তেরা। এখন দেখার, আরও এক বার ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে আকাশি-সাদা জার্সিতে মেসিকে নামতে দেখা যায় কি না।
ম্যারাডোনা সবকিছুকে
ছাপিয়ে গিয়েছিলেন
এনবিসি নাইটলি নিউজের টম লামাসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারটি যেন শুধু একজন ফুটবলারের বক্তব্য নয় বরং এক দার্শনিকের স্বীকারোক্তি। যিনি জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের অর্থ খুঁজেছেন শুধু জয়ের ভেতর নয়, শ্রদ্ধা আর পারস্পরিক প্রেরণার ভেতরেও।
মেসির মুখে প্রথমেই উচ্চারিত হয় সেই নাম, যিনি আর্জেন্টিনার জন্য শুধু ফুটবলার নন, এক অনুভব। দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা।
‘আমাদের আর্জেন্টিনিয়ানদের জন্য দিয়েগো সব সময়ই ছিলেন সবচেয়ে বড় আইডল, সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধা। তিনি আমাদের জন্য যা কিছু ছিলেন, তার কোনো তুলনা হয় না। যদিও আমি খুব ছোট ছিলাম। দিয়েগো সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। যে কোনো সীমানার চেয়েও সে বড় কিছু ছিল।’
ফুটবলের সীমা ছাড়িয়ে যখন অন্য খেলায় চোখ ফেরান মেসি, তখনও তার কণ্ঠে ঝরে পড়ে সেই একই শ্রদ্ধা ও বিস্ময়, ‘অন্য খেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে, যেমনটা হয়েছিল জর্ডানের সঙ্গে। তিনি যা করেছেন, তা বাস্কেটবলে বিপ্লব এনেছে।’
এরপর আসে টেনিসের প্রসঙ্গ, যেখানে মেসি খুঁজে পান খেলোয়াড়সুলভ মর্যাদা, শৃঙ্খলা আর দীর্ঘস্থায়ী প্রতিযোগিতার সৌন্দর্য, ‘আমি টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে ফেদেরার, রাফা আর জকোভিচকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি। তারা তিনজন মিলে প্রতিযোগিতাটাকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যা আগে কখনও ছিল না। অনেক বছর ধরে একে অন্যের বিপক্ষে লড়াই করে তারা খেলাটাকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলেছেন।’
বাস্কেটবলেও তিনি খুঁজে পেয়েছেন এমন কিছু কিংবদন্তি, যাদের অবদান আজও তাকে অনুপ্রাণিত করে, ‘বাস্কেটবলে উদাহরণ হিসেবে লেব্রন জেমস, স্টিফেন কারি- এরা অসাধারণ। আমি তাদের খুব শ্রদ্ধা করি। তারা প্রত্যেকে নিজেদের মতো করে খেলাটাকে অনেক কিছু দিয়েছে।’
আর শেষে বিনয়ী স্বীকারোক্তি, ‘জানি না, হয়তো আরও অনেকের নাম বলা উচিত ছিল, কিন্তু যাদের কথা প্রথমেই মনে এসেছে, তারাই আমার প্রিয়।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
বিশ্বকাপে চারবার অংশ নেয়ার পর পঞ্চমবারে এসে পেয়েছেন সাফল্য। তবে সেখানেই থেমে থাকতে চান না লিওনেল মেসি। আগামী বছরের আসরেও আর্জেন্টিনার হয়ে আরও একবার খেলতে চান এ কিংবদন্তি। তবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি নিজের শরীরের সাড়া শুনবেন।
ইন্টার মায়ামির এই ৩৮ বছর বয়সী তারকা ২০২২ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জয়ের পথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এখন তার ইচ্ছে, আগামী বছর উত্তর আমেরিকায় যখন আলবিসেলেস্তেরা শিরোপা রক্ষা করতে নামবে, তখন আবারও মাঠে থাকা।
আটবার ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি এনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ, এবং আমি খুবই চাই সেখানে থাকতে। তবে আমি দেখবো আগামী বছর আমার শরীর কেমন প্রতিক্রিয়া দেয়, তারপরই সিদ্ধান্ত নেব যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় আয়োজিত সেই বিশ্বকাপে আমি খেলতে পারবো কিনা।’
মেসির বয়স আগামী জুনে ৩৯ হবে। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই সেখানে থাকতে চাই, ফিট থাকতে চাই, এবং যদি আমি দলে থাকি, তবে জাতীয় দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই।
আগামী মৌসুমে ইন্টার মায়ামির সঙ্গে প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি শুরু হলে প্রতিদিন নিজের অবস্থা যাচাই করবো। দেখবো আমি সত্যিই শতভাগ ফিট কিনা, দলের জন্য উপকারী কিনা। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
২০০৪ সালে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হওয়া মেসি চান আরেকবার ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে নিজের শেষ আলো ছড়াতে। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বকাপ মানেই আলাদা রোমাঞ্চ। আমরা তো গতবারের বিশ্বকাপ জয় করেছি। এবার সেটি রক্ষা করার সুযোগ পাওয়া সত্যিই দারুণ এক অনুভূতি। জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা সব সময়ই স্বপ্নের মতো, বিশেষ করে অফিসিয়াল টুর্নামেন্টে।’
১৭ বছর বয়সে লা লিগায় বার্সেলোনার জার্সিতে পেশাদার ফুটবলে পা রাখেন মেসি। ২০২১ সালে যোগ দেন পিএসজিতে, আর ২০২৩ সালে চলে যান মায়ামিতে। মায়ামি জীবন নিয়ে মেসির মন্তব্য, ‘এখানে থাকার প্রতিটি দিকই আমার ভালো লাগে। আমি অনেকটা সময় কাটিয়েছি বার্সেলোনায়। ওটা আমার কাছে অসাধারণ এক শহর, যেখানে আমি বড় হয়েছি, অসংখ্য সুন্দর স্মৃতি আছে, তাই ওটাকে ভীষণভাবে মিস করি।’
‘তবে মায়ামি এমন এক শহর যেখানে আমরা খুব ভালোভাবে থাকতে পারি, জীবন উপভোগ করতে পারি, শান্তিতে থাকতে পারি। এখানকার পরিবেশ আমাদের সন্তানদেরও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে,’ যোগ করেন এই আর্জেন্টাইন।
আর্জেন্টিনার হয়ে এখন পর্যন্ত ১৯৫ ম্যাচ খেলেছেন লিওনেল মেসি, গোল করেছেন ১১৪টি।
গত বার কাতারে বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগেই মেসি জানিয়েছিলেন, শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন। গত বার ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। সোনার বল জিতেছেন মেসি। তার পর এখনও পর্যন্ত অবসর নেননি তিনি। মেসিকে আরও একটি বিশ্বকাপে খেলার আর্জি জানিয়েছেন তাঁর কোচ, সতীর্থ, বন্ধু ও ভক্তেরা। এখন দেখার, আরও এক বার ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে আকাশি-সাদা জার্সিতে মেসিকে নামতে দেখা যায় কি না।
ম্যারাডোনা সবকিছুকে
ছাপিয়ে গিয়েছিলেন
এনবিসি নাইটলি নিউজের টম লামাসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারটি যেন শুধু একজন ফুটবলারের বক্তব্য নয় বরং এক দার্শনিকের স্বীকারোক্তি। যিনি জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের অর্থ খুঁজেছেন শুধু জয়ের ভেতর নয়, শ্রদ্ধা আর পারস্পরিক প্রেরণার ভেতরেও।
মেসির মুখে প্রথমেই উচ্চারিত হয় সেই নাম, যিনি আর্জেন্টিনার জন্য শুধু ফুটবলার নন, এক অনুভব। দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা।
‘আমাদের আর্জেন্টিনিয়ানদের জন্য দিয়েগো সব সময়ই ছিলেন সবচেয়ে বড় আইডল, সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধা। তিনি আমাদের জন্য যা কিছু ছিলেন, তার কোনো তুলনা হয় না। যদিও আমি খুব ছোট ছিলাম। দিয়েগো সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। যে কোনো সীমানার চেয়েও সে বড় কিছু ছিল।’
ফুটবলের সীমা ছাড়িয়ে যখন অন্য খেলায় চোখ ফেরান মেসি, তখনও তার কণ্ঠে ঝরে পড়ে সেই একই শ্রদ্ধা ও বিস্ময়, ‘অন্য খেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে, যেমনটা হয়েছিল জর্ডানের সঙ্গে। তিনি যা করেছেন, তা বাস্কেটবলে বিপ্লব এনেছে।’
এরপর আসে টেনিসের প্রসঙ্গ, যেখানে মেসি খুঁজে পান খেলোয়াড়সুলভ মর্যাদা, শৃঙ্খলা আর দীর্ঘস্থায়ী প্রতিযোগিতার সৌন্দর্য, ‘আমি টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে ফেদেরার, রাফা আর জকোভিচকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি। তারা তিনজন মিলে প্রতিযোগিতাটাকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যা আগে কখনও ছিল না। অনেক বছর ধরে একে অন্যের বিপক্ষে লড়াই করে তারা খেলাটাকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলেছেন।’
বাস্কেটবলেও তিনি খুঁজে পেয়েছেন এমন কিছু কিংবদন্তি, যাদের অবদান আজও তাকে অনুপ্রাণিত করে, ‘বাস্কেটবলে উদাহরণ হিসেবে লেব্রন জেমস, স্টিফেন কারি- এরা অসাধারণ। আমি তাদের খুব শ্রদ্ধা করি। তারা প্রত্যেকে নিজেদের মতো করে খেলাটাকে অনেক কিছু দিয়েছে।’
আর শেষে বিনয়ী স্বীকারোক্তি, ‘জানি না, হয়তো আরও অনেকের নাম বলা উচিত ছিল, কিন্তু যাদের কথা প্রথমেই মনে এসেছে, তারাই আমার প্রিয়।’