বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট শুরু বুধবার। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়
শততম টেস্টের আগে অনুশীলনের ফাঁকে ক্যামেরার মুখোমুখি মুশফিকুর রহিম
শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামলেই ১০০ টেস্ট খেলা বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হয়ে যাবেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটি বড় এক ব্যক্তিগত অর্জনই হবে। তবে মুশফিকের কাছে একশ’ টেস্ট হয়তো শুধুই একটা সংখ্যা। তার মধ্যে একশ’ থেকে আরও এগিয়ে যাওয়ার ক্ষুধাটা এখনও দেখেন বাংলাদেশ দলের কোচ ফিল সিমন্সও।
মঙ্গলবার মিরপুর সংবাদ সম্মেলনে কোচ সে কথাই বলেছেন, ‘তার মধ্যে এখনও সেই ইচ্ছা, সেই ক্ষুধা আছে, যা ১৫০ টেস্ট খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যেই দেখা যায়। সে ক্রমাগত ভালো করতে চায়, এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। নিজেকে আরও উন্নত করার মনোভাবই তাকে এখানে নিয়ে এসেছে।’
২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসে অভিষেক। ২০ বছরেরও বেশি সময়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কাল মুশফিক নামবেন শততম টেস্ট খেলতে। তার আগের কিংবা সমসাময়িক বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কেউই যখন এই মাইলফলক ছুঁতে পারলেন না, তার চেয়ে নামে ভারী বড় তারকারাও যখন তা পারলেন না, তখন মুশফিক কীভাবে পারছেন একশ’র গ-িতে পা রাখতে?
উত্তরটা সবারই জানা থাকার কথা। খেলাটার প্রতি নিবেদন আর পেশাদার মানসিকতা। এক বছরের কিছু বেশি সময় বাংলাদেশ দলের কোচ থেকে সেটা বুঝে গেছেন সিমন্সও, ‘আসল রহস্য হলো পেশাদারত্ব। আপনি নিজেকে কীভাবে পরিচালনা করেন, কীভাবে নিজের দক্ষতা উন্নত করেন এবং কীভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফল হতে কাজ করেন। যদি আপনি তার ক্যারিয়ারের দিকে তাকান, সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল, আর এটাই তাকে এতদিন ধরে খেলিয়ে যাচ্ছে।’
শততম টেস্টের আগে মুশফিক বন্দনায় সিমন্স আরও যোগ করেন, ‘আমাদের তার পেশাদারত্ব, তার দীর্ঘমেয়াদী পথচলা এবং বাংলাদেশের হয়ে খেলার প্রতি অকৃত্রিম আকাক্সক্ষা, এসবকে স্বীকার করতেই হবে। কারণ ১০০ টেস্ট ম্যাচে পৌঁছানো সহজ নয়। বাংলাদেশ বছরে ১৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলে না। তাই এই মাইলফলকে পৌঁছাতে তার অনেক সময় লেগেছে, এটা আমাদের উপলব্ধি করা উচিত।’ মুশফিকের সঙ্গে অল্প সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই তাকে খুব উঁচুমানের ক্রিকেটার মনে হয়েছে সাবেক এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারের। ‘আমি অত্যন্ত খুশি হব যদি বুধবার তার এই বিশেষ মুহূর্তটি সুন্দরভাবে উদ্যাপিত হয়’।
বাংলাদেশ দলের তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতি কোচের পরামর্শ মুশফিককে অনুসরণ করার, ‘তরুণদের জন্য বার্তা হচ্ছে- তার পেশাদার মনোভাব, নিজেকে পরিচালনার ধরন, অনুশীলনের প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং নিজেকে আরও ভালো করার আকাক্সক্ষাকে অনুসরণ করা। এই পর্যায়ে এসে স্থির থাকলে হয় না। সব সময় উন্নতি করতে হয়। এখন প্রযুক্তির কারণে বিশ্ব ক্রিকেট খুব ছোট। সবাই সব সময় আপনাকে বিশ্লেষণ করছে। তাই সব সময় এগোতে হবে। সে তার ক্যারিয়ারে অনেকবার নিজেকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছে।’ বয়স ৩৮ হয়ে গেছে। শততম টেস্ট উপলক্ষে তাই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন- ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিকে আগেই বিদায় বলা মুশফিক টেস্ট ক্রিকেট আর কতদিন খেলবেন? এই প্রশ্নটাকেই আবার অপ্রাসঙ্গিক করে দেয় মুশফিকের পারফরম্যান্স।
টেস্টে মাত্র চার ইনিংস আগেই গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন। পরের চার ইনিংসে ৪৯, ৩৫, ২৬ ও ২৩। শততম টেস্টটাকে স্মরণীয় করে রাখতেই হোক, কিংবা ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে এরকমই শানিত রাখতে মুশফিক নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখার প্রক্রিয়া থেকে এখনও সরেননি।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চার দিনে টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর সিলেট থেকেই ফোনে মুশফিক নিজের অনুশীলন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে। সে অনুযায়ী মিরপুর টেস্টের আগের তিন দিনই দলীয় অনুশীলনের বাইরে করেছেন ব্যক্তিগত অনুশীলন।
কোচ সিমন্সও মনে করেন, এখনই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলার সময় হয়নি তার, ‘আমি আসার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে মুশিকে বলেছিলাম এখন তুমি যা করছো, সেটা উপভোগ করো। প্রতিটি দিন, প্রতিটি টেস্ট উপভোগ করো। কারণ যতদিন তুমি পারফর্ম করবে, ততদিন তুমি নিজেই নির্ধারণ করবে কতদিন খেলবে। পারফরম্যান্সটাই সবচেয়ে জরুরি। যতদিন সে পারফর্ম করবে, তার পেশাদারত্ব তাকে সমর্থন করবে, যতদিন না সে নিজে “না” বলে।’
একজন ক্রিকেটারের খেলা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সিমন্সের কাছে- ফিটনেস, পারফরম্যান্স এবং খেলার ইচ্ছা। মুশফিকের মধ্যে এখনও তিনটিই দেখেন তিনি, ‘তিনটিই তার মধ্যে আছে। সে দলের সবচেয়ে ফিট খেলোয়াড়দের একজন, পারফর্মও করছে। এই তিনটি মানদ-ই ঠিক থাকলে, কতদিন খেলবে, সেটা সে নিজেই নির্ধারণ করবে।’
সিমন্সের বিশ্বাস, বাংলাদেশ দলে এখন যারা খেলছেন, তাদের সবারই সামর্থ্য আছে একশ’ টেস্ট খেলার। তবে সবার আগে সেই মাইলফলকে পা রাখা মুশফিক আর সবার মতো সিমন্সের কাছেও হয়ে থাকবেন ‘কিংবদন্তি’। সিমন্স বলেছেন, ‘অবশ্যই তিনি কিংবদন্তি। খুব কম খেলোয়াড়ই আছেন, যারা টেস্ট ক্রিকেটে তার মতো এতগুলো ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। আর ২০ বছর ধরে ধারাবাহিক পারফর্ম করা, এটা তাকে নিঃসন্দেহে কিংবদন্তির পর্যায়ে রাখে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট শুরু বুধবার। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়
শততম টেস্টের আগে অনুশীলনের ফাঁকে ক্যামেরার মুখোমুখি মুশফিকুর রহিম
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামলেই ১০০ টেস্ট খেলা বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হয়ে যাবেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটি বড় এক ব্যক্তিগত অর্জনই হবে। তবে মুশফিকের কাছে একশ’ টেস্ট হয়তো শুধুই একটা সংখ্যা। তার মধ্যে একশ’ থেকে আরও এগিয়ে যাওয়ার ক্ষুধাটা এখনও দেখেন বাংলাদেশ দলের কোচ ফিল সিমন্সও।
মঙ্গলবার মিরপুর সংবাদ সম্মেলনে কোচ সে কথাই বলেছেন, ‘তার মধ্যে এখনও সেই ইচ্ছা, সেই ক্ষুধা আছে, যা ১৫০ টেস্ট খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যেই দেখা যায়। সে ক্রমাগত ভালো করতে চায়, এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। নিজেকে আরও উন্নত করার মনোভাবই তাকে এখানে নিয়ে এসেছে।’
২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসে অভিষেক। ২০ বছরেরও বেশি সময়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কাল মুশফিক নামবেন শততম টেস্ট খেলতে। তার আগের কিংবা সমসাময়িক বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কেউই যখন এই মাইলফলক ছুঁতে পারলেন না, তার চেয়ে নামে ভারী বড় তারকারাও যখন তা পারলেন না, তখন মুশফিক কীভাবে পারছেন একশ’র গ-িতে পা রাখতে?
উত্তরটা সবারই জানা থাকার কথা। খেলাটার প্রতি নিবেদন আর পেশাদার মানসিকতা। এক বছরের কিছু বেশি সময় বাংলাদেশ দলের কোচ থেকে সেটা বুঝে গেছেন সিমন্সও, ‘আসল রহস্য হলো পেশাদারত্ব। আপনি নিজেকে কীভাবে পরিচালনা করেন, কীভাবে নিজের দক্ষতা উন্নত করেন এবং কীভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফল হতে কাজ করেন। যদি আপনি তার ক্যারিয়ারের দিকে তাকান, সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল, আর এটাই তাকে এতদিন ধরে খেলিয়ে যাচ্ছে।’
শততম টেস্টের আগে মুশফিক বন্দনায় সিমন্স আরও যোগ করেন, ‘আমাদের তার পেশাদারত্ব, তার দীর্ঘমেয়াদী পথচলা এবং বাংলাদেশের হয়ে খেলার প্রতি অকৃত্রিম আকাক্সক্ষা, এসবকে স্বীকার করতেই হবে। কারণ ১০০ টেস্ট ম্যাচে পৌঁছানো সহজ নয়। বাংলাদেশ বছরে ১৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলে না। তাই এই মাইলফলকে পৌঁছাতে তার অনেক সময় লেগেছে, এটা আমাদের উপলব্ধি করা উচিত।’ মুশফিকের সঙ্গে অল্প সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই তাকে খুব উঁচুমানের ক্রিকেটার মনে হয়েছে সাবেক এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারের। ‘আমি অত্যন্ত খুশি হব যদি বুধবার তার এই বিশেষ মুহূর্তটি সুন্দরভাবে উদ্যাপিত হয়’।
বাংলাদেশ দলের তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতি কোচের পরামর্শ মুশফিককে অনুসরণ করার, ‘তরুণদের জন্য বার্তা হচ্ছে- তার পেশাদার মনোভাব, নিজেকে পরিচালনার ধরন, অনুশীলনের প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং নিজেকে আরও ভালো করার আকাক্সক্ষাকে অনুসরণ করা। এই পর্যায়ে এসে স্থির থাকলে হয় না। সব সময় উন্নতি করতে হয়। এখন প্রযুক্তির কারণে বিশ্ব ক্রিকেট খুব ছোট। সবাই সব সময় আপনাকে বিশ্লেষণ করছে। তাই সব সময় এগোতে হবে। সে তার ক্যারিয়ারে অনেকবার নিজেকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছে।’ বয়স ৩৮ হয়ে গেছে। শততম টেস্ট উপলক্ষে তাই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন- ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিকে আগেই বিদায় বলা মুশফিক টেস্ট ক্রিকেট আর কতদিন খেলবেন? এই প্রশ্নটাকেই আবার অপ্রাসঙ্গিক করে দেয় মুশফিকের পারফরম্যান্স।
টেস্টে মাত্র চার ইনিংস আগেই গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন। পরের চার ইনিংসে ৪৯, ৩৫, ২৬ ও ২৩। শততম টেস্টটাকে স্মরণীয় করে রাখতেই হোক, কিংবা ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে এরকমই শানিত রাখতে মুশফিক নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখার প্রক্রিয়া থেকে এখনও সরেননি।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চার দিনে টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর সিলেট থেকেই ফোনে মুশফিক নিজের অনুশীলন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে। সে অনুযায়ী মিরপুর টেস্টের আগের তিন দিনই দলীয় অনুশীলনের বাইরে করেছেন ব্যক্তিগত অনুশীলন।
কোচ সিমন্সও মনে করেন, এখনই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলার সময় হয়নি তার, ‘আমি আসার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে মুশিকে বলেছিলাম এখন তুমি যা করছো, সেটা উপভোগ করো। প্রতিটি দিন, প্রতিটি টেস্ট উপভোগ করো। কারণ যতদিন তুমি পারফর্ম করবে, ততদিন তুমি নিজেই নির্ধারণ করবে কতদিন খেলবে। পারফরম্যান্সটাই সবচেয়ে জরুরি। যতদিন সে পারফর্ম করবে, তার পেশাদারত্ব তাকে সমর্থন করবে, যতদিন না সে নিজে “না” বলে।’
একজন ক্রিকেটারের খেলা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সিমন্সের কাছে- ফিটনেস, পারফরম্যান্স এবং খেলার ইচ্ছা। মুশফিকের মধ্যে এখনও তিনটিই দেখেন তিনি, ‘তিনটিই তার মধ্যে আছে। সে দলের সবচেয়ে ফিট খেলোয়াড়দের একজন, পারফর্মও করছে। এই তিনটি মানদ-ই ঠিক থাকলে, কতদিন খেলবে, সেটা সে নিজেই নির্ধারণ করবে।’
সিমন্সের বিশ্বাস, বাংলাদেশ দলে এখন যারা খেলছেন, তাদের সবারই সামর্থ্য আছে একশ’ টেস্ট খেলার। তবে সবার আগে সেই মাইলফলকে পা রাখা মুশফিক আর সবার মতো সিমন্সের কাছেও হয়ে থাকবেন ‘কিংবদন্তি’। সিমন্স বলেছেন, ‘অবশ্যই তিনি কিংবদন্তি। খুব কম খেলোয়াড়ই আছেন, যারা টেস্ট ক্রিকেটে তার মতো এতগুলো ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। আর ২০ বছর ধরে ধারাবাহিক পারফর্ম করা, এটা তাকে নিঃসন্দেহে কিংবদন্তির পর্যায়ে রাখে।’