alt

সম্পাদকীয়

আজ সেই কালরাত্রি : গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রচেষ্টা চালাতে হবে

: সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

আজ সেই কালরাত্রি। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়েছিল। সেই রাতে পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে যে গণহত্যা চালিয়েছে আধুনিক বিশ্বে তার দ্বিতীয় কোন নজির নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ইপিআর হেড কোয়ার্টারসহ ঢাকার রাস্তাঘাটে ঘুমন্ত অসহায় মানুষের ওপর তারা হামলা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং শিক্ষকদের কোয়ার্টারে চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বহু ঘরবাড়ি। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো। ওই এক রাতে পাকিস্তানি বাহিনী কত নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে তার কোন হিসাব পর্যন্ত করা যায়নি।

৫৩ বছর পর আমাদের আজ সেই কালরাত্রি তাদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়, যারা সেদিন অসহায়ভাবে প্রাণ দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল গণহত্যা চালিয়ে অস্ত্রের জোরে বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখতে। কিন্তু তখন স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি প্রস্তুত হয়ে গেছে। ২৫ মার্চের কালরাত্রির গণহত্যাও তাদের দমন করতে পারেনি। পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয়ে যায় সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ।

একাত্তরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানিরা এদেশে সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। ১ কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। বন্দীশিবিরে নারকীয় নির্যাতন চালিয়ে অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করা হয়। হানাদারদের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন লাখো বাঙালি নারী। শিশুরাও রক্ষা পায়নি। এরপর বুদ্ধিজীবী হত্যাকা- ঘটিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এসবই গণহত্যা।

২৫ মাচর্কে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ২০১৭ সালে। এর পর থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। গণহত্যা দিবস পালনের লক্ষ্যে আজ রাতে সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।

১৯৪৬ সালে এক প্রস্তাবে গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক আইনে দ-নীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি আজও। অথচ বিশ্বের অনেক দেশের গণহত্যাই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে আর্মেনিয়া গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথা বলা যায়।

পাকিস্তানের বিভিন্ন নথিতে এই গণহত্যার কথা স্পষ্ট হয়েছে। একাত্তরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে পাকিস্তানের পরাজয়ের কারণ নির্ণয়ের জন্য বিচারপতি হামুদুর রহমান কমিশন ও জেনারেল আফতাব কমিশন গঠিত হয়। সেই দুই কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে পাকিস্তানিদের জবানবন্দিতেও গণহত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে।

১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির ১৩, ১৪, ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী যে বর্বরতা চালিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি এবং গণহত্যার শামিল। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ গণহত্যার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপরও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে বাধা কোথায় সেটা একটা প্রশ্ন।

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সরকারকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। গণহত্যা নিয়ে তথ্য-প্রমাণভিত্তিক মানসম্মত গবেষণা করে তা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হবে। তার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে হবে। বন্ধু দেশগুলোর সমর্থন আদায় করতে হবে। বিশ্ব দরবারের বাংলাদেশের ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে হবে। এজন্য জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো জরুরি।

গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দায় এড়াতে পারে না। মানব ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়ে, বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। নইলে বিশ্ববাসীকে গণহত্যার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যাবে না।

বন্যা : কেন নেই টেকসই সমাধান?

জলাবদ্ধ নগরজীবন

ভূমিধসের হুমকি ও প্রস্তুতি

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ নারী দল : অভিনন্দন

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট : দ্রুত সমাধান প্রয়োজন

উপজেলা স্বাস্থ্যসেবায় সংকট

বজ্রপাত মোকাবিলায় চাই বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন

মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রতিশ্রুতি অনেক, ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ

আর্সেনিক দূষণ : জনস্বাস্থ্যের নীরব সংকট

ধর্মীয় অবমাননার অজুহাতে ‘মব জাস্টিস’ : সমাধান কোথায়?

সরকারি গাছ কাটা কঠোরভাবে বন্ধ করুন

এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতি : বাল্যবিয়ে রোধে ব্যবস্থা নিন

জলাবদ্ধতা : প্রশ্নবিদ্ধ নগর ব্যবস্থাপনা

ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিন

সার বিতরণে অনিয়ম : কৃষকের দুর্ভোগের অবসান হোক

ভারতে বিমান দুর্ঘটনা

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত : যুদ্ধ নয়, শান্তিই টেকসই সমাধান

বাড়ছে করোনার সংক্রমণ : মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

ঈদুল আজহা : ত্যাগ, ভালোবাসা ও সম্প্রীতির উৎসব

ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়া : ব্যবস্থাপনার ফাঁকফোকর ও নজরদারির সীমাবদ্ধতা

নির্বাচন নিয়ে বাদানুবাদ শুভ লক্ষণ নয়

অপরাধের উদ্বেগজনক প্রবণতা ও আইনশৃঙ্খলার বাস্তবতা

রেলের জমি দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

বাসে ডাকাতি ও নারী নির্যাতন : সড়কে জনসাধারণের আতঙ্ক

স্মার্টকার্ড জটিলতায় টিসিবির পণ্য সরবরাহ ব্যাহত, ব্যবস্থা নিন

মামলার ন্যায্যতা ও আইনের শাসন: কিসের পরিবর্তন ঘটেছে?

প্যারাবন ধ্বংস ও দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে চাই প্রস্তুতি ও সচেতনতা

নারীর ডাকে ‘মৈত্রী যাত্রা’

খাদ্যে ভেজাল : আইন আছে, প্রয়োগ কোথায়?

চুয়াত্তর পেরিয়ে পঁচাত্তরে সংবাদ: প্রতিজ্ঞায় অবিচল পথচলা

দখলে অস্তিত্ব সংকটে বন

এই যুদ্ধবিরতি হোক স্থায়ী শান্তির সূচনা

তাপপ্রবাহে চাই সতর্কতা, সচেতনতা ও সুরক্ষা পরিকল্পনা

যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

tab

সম্পাদকীয়

আজ সেই কালরাত্রি : গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রচেষ্টা চালাতে হবে

সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

আজ সেই কালরাত্রি। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়েছিল। সেই রাতে পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে যে গণহত্যা চালিয়েছে আধুনিক বিশ্বে তার দ্বিতীয় কোন নজির নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ইপিআর হেড কোয়ার্টারসহ ঢাকার রাস্তাঘাটে ঘুমন্ত অসহায় মানুষের ওপর তারা হামলা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং শিক্ষকদের কোয়ার্টারে চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বহু ঘরবাড়ি। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো। ওই এক রাতে পাকিস্তানি বাহিনী কত নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে তার কোন হিসাব পর্যন্ত করা যায়নি।

৫৩ বছর পর আমাদের আজ সেই কালরাত্রি তাদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়, যারা সেদিন অসহায়ভাবে প্রাণ দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল গণহত্যা চালিয়ে অস্ত্রের জোরে বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখতে। কিন্তু তখন স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি প্রস্তুত হয়ে গেছে। ২৫ মার্চের কালরাত্রির গণহত্যাও তাদের দমন করতে পারেনি। পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয়ে যায় সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ।

একাত্তরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানিরা এদেশে সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। ১ কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। বন্দীশিবিরে নারকীয় নির্যাতন চালিয়ে অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করা হয়। হানাদারদের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন লাখো বাঙালি নারী। শিশুরাও রক্ষা পায়নি। এরপর বুদ্ধিজীবী হত্যাকা- ঘটিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এসবই গণহত্যা।

২৫ মাচর্কে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ২০১৭ সালে। এর পর থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। গণহত্যা দিবস পালনের লক্ষ্যে আজ রাতে সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।

১৯৪৬ সালে এক প্রস্তাবে গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক আইনে দ-নীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি আজও। অথচ বিশ্বের অনেক দেশের গণহত্যাই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে আর্মেনিয়া গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথা বলা যায়।

পাকিস্তানের বিভিন্ন নথিতে এই গণহত্যার কথা স্পষ্ট হয়েছে। একাত্তরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে পাকিস্তানের পরাজয়ের কারণ নির্ণয়ের জন্য বিচারপতি হামুদুর রহমান কমিশন ও জেনারেল আফতাব কমিশন গঠিত হয়। সেই দুই কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে পাকিস্তানিদের জবানবন্দিতেও গণহত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে।

১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির ১৩, ১৪, ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী যে বর্বরতা চালিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি এবং গণহত্যার শামিল। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ গণহত্যার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপরও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে বাধা কোথায় সেটা একটা প্রশ্ন।

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সরকারকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। গণহত্যা নিয়ে তথ্য-প্রমাণভিত্তিক মানসম্মত গবেষণা করে তা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হবে। তার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে হবে। বন্ধু দেশগুলোর সমর্থন আদায় করতে হবে। বিশ্ব দরবারের বাংলাদেশের ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে হবে। এজন্য জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো জরুরি।

গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দায় এড়াতে পারে না। মানব ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়ে, বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। নইলে বিশ্ববাসীকে গণহত্যার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যাবে না।

back to top