বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। এই স্বাধীনতা হঠাৎ করে আসেনি। এর আগে ২৪ বছর কেটেছে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে। দীর্ঘ গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত হয়েছে বাঙালি জাতি।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির ওপর দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বর্বর আক্রমণ চালায়। গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দেশজুড়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রায় নয় মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অদম্য বাঙালি জাতি অর্জন করে চূড়ান্ত বিজয়। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছেন লাখো মানুষ। ত্যাগ স্বীকার করেছেন লাখো নারী। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। প্রশ্ন হচ্ছে, যে স্বপ্ন আর আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে তা কতটা পূরণ হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল- গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রের অঙ্গীকার। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের চার মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র স্থান করে নিয়েছিল। আজ এত বছর পর হিসাব মেলাতে গেলে দেখা যাবে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির কোনো কোনোটি রয়ে গেছে অধরা।
১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল। এর পরপরই কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো। তারপর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা ছিল হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র, সামরিক অভ্যুত্থান এবং সামরিক-বেসামরিক স্বৈরশাসন। এ ষড়যন্ত্র, হত্যা, ক্যু আর রক্তাক্ত সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নছবি ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে।
১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়ার সামরিক ফরমান বলে জনগণের দীর্ঘ সংগ্রাম ও লড়াইয়ে অর্জিত ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রকে বাদ দেয়া হয় সংবিধান থেকে। এরশাদ আমলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে (২০০৭ সাল ব্যতীত) নির্বাচন ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। তবে দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে অনেক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি চাপে পড়েছে। আর্থিক খাতের অনিয়ম, খেলাপি ঋণ, টাকা পাচার প্রভৃতি সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে দেশের মানুষ হাসফাস করছে দীর্ঘদিন ধরে। জাতীয় নির্বাচনের পর পরিস্থিতি বদলাবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন; কিন্তু দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা যায়নি এখনো। সরকারের বেধে দেওয়া দরে মিলছে না নির্দিষ্ট কিছু পণ্য। চালের দর বাড়ছে। মানুষের হতাশাও বাড়ছে। এই হতাশা থেকে মানুষের মুক্তি মিলবে, সব সংকট মোকাবিলা করে দেশ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবেÑ এমন প্রত্যাশাই করি আজকের দিনে।
মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। এই স্বাধীনতা হঠাৎ করে আসেনি। এর আগে ২৪ বছর কেটেছে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে। দীর্ঘ গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত হয়েছে বাঙালি জাতি।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির ওপর দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বর্বর আক্রমণ চালায়। গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দেশজুড়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রায় নয় মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অদম্য বাঙালি জাতি অর্জন করে চূড়ান্ত বিজয়। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছেন লাখো মানুষ। ত্যাগ স্বীকার করেছেন লাখো নারী। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। প্রশ্ন হচ্ছে, যে স্বপ্ন আর আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে তা কতটা পূরণ হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল- গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রের অঙ্গীকার। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের চার মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র স্থান করে নিয়েছিল। আজ এত বছর পর হিসাব মেলাতে গেলে দেখা যাবে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির কোনো কোনোটি রয়ে গেছে অধরা।
১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল। এর পরপরই কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো। তারপর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা ছিল হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র, সামরিক অভ্যুত্থান এবং সামরিক-বেসামরিক স্বৈরশাসন। এ ষড়যন্ত্র, হত্যা, ক্যু আর রক্তাক্ত সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নছবি ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে।
১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়ার সামরিক ফরমান বলে জনগণের দীর্ঘ সংগ্রাম ও লড়াইয়ে অর্জিত ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রকে বাদ দেয়া হয় সংবিধান থেকে। এরশাদ আমলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে (২০০৭ সাল ব্যতীত) নির্বাচন ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। তবে দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে অনেক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি চাপে পড়েছে। আর্থিক খাতের অনিয়ম, খেলাপি ঋণ, টাকা পাচার প্রভৃতি সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে দেশের মানুষ হাসফাস করছে দীর্ঘদিন ধরে। জাতীয় নির্বাচনের পর পরিস্থিতি বদলাবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন; কিন্তু দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা যায়নি এখনো। সরকারের বেধে দেওয়া দরে মিলছে না নির্দিষ্ট কিছু পণ্য। চালের দর বাড়ছে। মানুষের হতাশাও বাড়ছে। এই হতাশা থেকে মানুষের মুক্তি মিলবে, সব সংকট মোকাবিলা করে দেশ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবেÑ এমন প্রত্যাশাই করি আজকের দিনে।