অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপানের স্বাস্থ্যক্ষতি থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ধূমপানের জন্য ‘নির্ধারিত স্থান’ এর বিধান রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যণীয় যে, পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনের নির্ধারিত ধূমপান এলাকা থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া আশপাশে ছড়িয়ে যায়, যা এই কক্ষের বাইরে বা আশপাশে থাকা অধূমপায়ীদের বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী এবং শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে রক্ষা করে না। সুতরাং বলা চলে, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান সংরক্ষণ করে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং অধূমপায়ীদের ধূমপানের পরোক্ষ স্বাস্থ্যক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব না।
গ্লোব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৪২.৭ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষেত্রে এবং প্রায় ২৩.৪ শতাংশ মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
অন্যদিকে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, কফি শপ এবং চায়ের স্টলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন প্রায় ৫০.৯ শতাংশ মানুষ। এছাড়াও বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ : এ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগে। পরোক্ষ ধূমপান ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এবং ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল ফুসফুসে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, যার প্রমাণ আমরা করোনাকালে প্রত্যক্ষ করেছি। এছাড়াও তামাকের কারণে বিভিন্ন জটিল অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইভালুয়েটিং দ্য ইফেক্টিভনেস অব স্মোক ফ্রি পলিসিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এর স্মোক ফ্রি পলিসিস ইমপ্রুভ হেলথ নামক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্র, রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা গেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ হ্রাস পায়, শ্বাসতন্ত্র ভালো থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে যায়। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র ঐ একই গবেষণার ফলাফল বলছে, ধূমপানমুক্ত পরিবেশে ধূমপায়ীর সিগারেট সেবনের মাত্রা দিনে গড়ে ২ থেকে ৪ টা পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপানের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ মোট তামাক ব্যবহারজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রায় ১০ শতাংশ। ‘ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ : এ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
থাইল্যান্ড, নেপালসহ বিশ্বের ৬৭টি দেশে সব ধরনের পাবলিক প্লেসে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ নিষিদ্ধ করেছে। আশা করা যায়, বাংলাদেশও এই দেশগুলোর পথ ধরে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করবে।
পরোক্ষ ধূমপানের স্বাস্থ্যক্ষতির হাত থেকে অধূমপায়ী সাধারণ জনগণ বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি, নারী ও শিশুকে রক্ষা করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনের ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বিলুপ্ত করে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার সময় এখনই।
মোতাহার হোসেন
সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপানের স্বাস্থ্যক্ষতি থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ধূমপানের জন্য ‘নির্ধারিত স্থান’ এর বিধান রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যণীয় যে, পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনের নির্ধারিত ধূমপান এলাকা থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া আশপাশে ছড়িয়ে যায়, যা এই কক্ষের বাইরে বা আশপাশে থাকা অধূমপায়ীদের বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী এবং শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে রক্ষা করে না। সুতরাং বলা চলে, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান সংরক্ষণ করে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং অধূমপায়ীদের ধূমপানের পরোক্ষ স্বাস্থ্যক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব না।
গ্লোব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৪২.৭ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষেত্রে এবং প্রায় ২৩.৪ শতাংশ মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
অন্যদিকে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, কফি শপ এবং চায়ের স্টলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন প্রায় ৫০.৯ শতাংশ মানুষ। এছাড়াও বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ : এ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগে। পরোক্ষ ধূমপান ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এবং ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল ফুসফুসে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, যার প্রমাণ আমরা করোনাকালে প্রত্যক্ষ করেছি। এছাড়াও তামাকের কারণে বিভিন্ন জটিল অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইভালুয়েটিং দ্য ইফেক্টিভনেস অব স্মোক ফ্রি পলিসিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এর স্মোক ফ্রি পলিসিস ইমপ্রুভ হেলথ নামক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্র, রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা গেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ হ্রাস পায়, শ্বাসতন্ত্র ভালো থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে যায়। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র ঐ একই গবেষণার ফলাফল বলছে, ধূমপানমুক্ত পরিবেশে ধূমপায়ীর সিগারেট সেবনের মাত্রা দিনে গড়ে ২ থেকে ৪ টা পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপানের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ মোট তামাক ব্যবহারজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রায় ১০ শতাংশ। ‘ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ : এ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
থাইল্যান্ড, নেপালসহ বিশ্বের ৬৭টি দেশে সব ধরনের পাবলিক প্লেসে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ নিষিদ্ধ করেছে। আশা করা যায়, বাংলাদেশও এই দেশগুলোর পথ ধরে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করবে।
পরোক্ষ ধূমপানের স্বাস্থ্যক্ষতির হাত থেকে অধূমপায়ী সাধারণ জনগণ বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি, নারী ও শিশুকে রক্ষা করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনের ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বিলুপ্ত করে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার সময় এখনই।
মোতাহার হোসেন
সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি