alt

opinion » editorial

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাস্তবতা ও সম্ভাবনার দ্বন্দ্ব

: সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি মানবিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। ২০১৭ সালে মায়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন নিয়ে আট বছর ধরে আলোচনা চললেও সুফল মেলেনি। এই পটভূমিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর এবং তার পরামর্শ ও প্রতিশ্রুতি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও তাদের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আগামী রোজার ঈদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে এই আশাবাদ কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের পরামর্শে গভীর তাৎপর্য রয়েছে। তিনি মায়ানমারে চলমান সহিংসতা বন্ধ করা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং মানবিক সহায়তা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব এই প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রাখাইনে বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব বাড়ছে। তবে এই সংলাপ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। মায়ানমারের সামরিক জান্তা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান সংঘাতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়া এখনো দূর অস্ত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা। কেউ কেউ বলেছেন, চীন ও মায়ানমারের সম্মতি ছাড়া এবং আরাকানের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।

প্রধান উপদেষ্টার আশাবাদী বক্তব্য রোহিঙ্গাদের মনে কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। ‘আগামী রোজার ঈদে নিজ দেশে ফিরে ঈদ উদ্্যাপন’Ñএমন বক্তব্য সুন্দর শোনালেও বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আট বছরে যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগোয়নি, তা এক বছরে সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকাটাই স্বাভাবিক।

আগামী এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেকেরও বেশি কমে যাওয়ার ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বর্তমানে জনপ্রতি মাসিক সাড়ে ১২ ডলার সহায়তা দেয়া হলেও তা ৬ ডলারে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। আশাঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই সহায়তা কমে গেলে অনেকে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, যা পাচার, অপরাধ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াবে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান এই প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সঠিকভাবেই বলেছেন, খাদ্য সহায়তা কমলে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তি বাড়বে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে তাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তবে শুধু আহ্বান নয়, এর বাস্তবায়নের জন্য জোরালো পদক্ষেপ দরকার। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক করিডোর স্থাপনের প্রস্তাব একটি ইতিবাচক ধারণা হলেও এর জন্য মায়ানমারের সম্মতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাস্তবতা ও সম্ভাবনার দ্বন্দ্ব। আশাবাদী বক্তব্য এবং পরামর্শের পাশাপাশি দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং কার্যকর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। বাংলাদেশ একা এই বিশাল দায়ভার বোঝা অনির্দিষ্টকাল ধরে বইতে পারে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে মায়ানমারকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সম্মত করাতে হবে। একই সঙ্গে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। শুধু আশার বাণী নয়, বাস্তব পদক্ষেপই পারে এই সংকটের টেকসই সমাধান আনতে।

গাছে পেরক ঠোকার নিষ্ঠুরতার অবসান হোক

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি : দায় চাপানোর সংস্কৃতি নয়, ব্যবস্থা নিন

কবর থেকে লাশ তুলে আগুন: কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অচলাবস্থা ও নাগরিক দুর্ভোগ

ঈদে মিলাদুন্নবী : মহানবীর আদর্শ অনুসরণ করা জরুরি

নীলফামারীতে শ্রমিকের প্রাণহানি: এই মৃত্যু কি এড়ানো যেত না

বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন: নারী সহপাঠীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি, নারী প্রার্থীদের সাইবার হয়রানি

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর কেন এই নৈরাজ্য

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নিন

নারী ও শিশু নির্যাতনের উদ্বেগজনক চিত্র

ভবদহের জলাবদ্ধতা: শিক্ষা ও জীবনযাত্রার উপর অব্যাহত সংকট

সৈয়দপুরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দুর্দশা

জমি রেজিস্ট্রিতে ঘুষের বোঝা: সাধারণ মানুষের ভোগান্তি

মবের নামে মানুষ হত্যা : সমাজ কোথায় যাচ্ছে?

‘জুলাই জাতীয় সনদ’ : কেন প্রশ্ন তোলা যাবে না

সুন্দরবন রক্ষায় টেকসই ব্যবস্থা নিন

মামলা, গ্রেপ্তার, জামিন : প্রশ্নবিদ্ধ আইনের শাসন

শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ : ঐক্য ও উদ্যমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

বন্যা ও ভাঙন : দ্রুত ব্যবস্থা নিন

অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ নিশ্চিত করুন

ভূমি অফিসে ঘুষ বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন

জন্ম নিবন্ধনে জটিলতা দূর করা জরুরি

‘সাদা পাথর’ লুটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন

সার বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিন

তরুণদের জন্য আলাদা বুথ! সিদ্ধান্ত কার? কেন?

চিকিৎসক সংকটে জীবননগরের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

গণপিটুনির সংস্কৃতি রুখতে হবে এখনই

সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনার বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন

ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবায় ভোগান্তির অবসান ঘটান

সড়কে মৃত্যু : দুর্ঘটনা নাকি অব্যবস্থাপনার ফল?

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর

নির্বাচনের ঘোষণায় স্বস্তি, তবে আছে অনেক চ্যালেঞ্জ

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’: কিছু জিজ্ঞাসা

বয়স্ক ভাতা পেতে আর কত অপেক্ষা

ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

গণঅভ্যুত্থানের এক বছর: প্রত্যাশায় কী প্রাপ্তি

tab

opinion » editorial

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাস্তবতা ও সম্ভাবনার দ্বন্দ্ব

সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি মানবিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। ২০১৭ সালে মায়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন নিয়ে আট বছর ধরে আলোচনা চললেও সুফল মেলেনি। এই পটভূমিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর এবং তার পরামর্শ ও প্রতিশ্রুতি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও তাদের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আগামী রোজার ঈদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে এই আশাবাদ কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের পরামর্শে গভীর তাৎপর্য রয়েছে। তিনি মায়ানমারে চলমান সহিংসতা বন্ধ করা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং মানবিক সহায়তা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব এই প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রাখাইনে বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব বাড়ছে। তবে এই সংলাপ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। মায়ানমারের সামরিক জান্তা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান সংঘাতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়া এখনো দূর অস্ত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা। কেউ কেউ বলেছেন, চীন ও মায়ানমারের সম্মতি ছাড়া এবং আরাকানের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।

প্রধান উপদেষ্টার আশাবাদী বক্তব্য রোহিঙ্গাদের মনে কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। ‘আগামী রোজার ঈদে নিজ দেশে ফিরে ঈদ উদ্্যাপন’Ñএমন বক্তব্য সুন্দর শোনালেও বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আট বছরে যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগোয়নি, তা এক বছরে সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকাটাই স্বাভাবিক।

আগামী এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেকেরও বেশি কমে যাওয়ার ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বর্তমানে জনপ্রতি মাসিক সাড়ে ১২ ডলার সহায়তা দেয়া হলেও তা ৬ ডলারে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। আশাঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই সহায়তা কমে গেলে অনেকে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, যা পাচার, অপরাধ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াবে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান এই প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সঠিকভাবেই বলেছেন, খাদ্য সহায়তা কমলে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তি বাড়বে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে তাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তবে শুধু আহ্বান নয়, এর বাস্তবায়নের জন্য জোরালো পদক্ষেপ দরকার। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক করিডোর স্থাপনের প্রস্তাব একটি ইতিবাচক ধারণা হলেও এর জন্য মায়ানমারের সম্মতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাস্তবতা ও সম্ভাবনার দ্বন্দ্ব। আশাবাদী বক্তব্য এবং পরামর্শের পাশাপাশি দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং কার্যকর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। বাংলাদেশ একা এই বিশাল দায়ভার বোঝা অনির্দিষ্টকাল ধরে বইতে পারে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে মায়ানমারকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সম্মত করাতে হবে। একই সঙ্গে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। শুধু আশার বাণী নয়, বাস্তব পদক্ষেপই পারে এই সংকটের টেকসই সমাধান আনতে।

back to top