পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮ বছর পার হয়েছে। দীর্ঘ সশস্ত্র সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। আশা করা হয়েছিল, পাহাড়ে শান্তি ফিরবে। কিন্তু দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক ও অসন্তোষ বাড়ছে। জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এমএন লারমা) অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার চুক্তির ধারা বাস্তবায়ন নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করছে।
সরকার বলছে, ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়িত হয়েছে। জেএসএস বলছে, মাত্র ২৪টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। বিশেষ করে ভূমি কমিশনের কার্যক্রম, জেলা পরিষদের ক্ষমতা হস্তান্তর, আঞ্চলিক পরিষদের কার্যকর ভূমিকা-এসব মৌলিক বিষয় এখনও আটকে আছে। বাস্তবে যেসব জায়গায় অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল, সেখানেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। রাঙামাটি জেলা পরিষদ ভবনে তালা ঝুলে থাকা, শিক্ষক নিয়োগে তীব্র দ্বন্দ্ব, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লাঞ্ছিত হওয়া-এ ধরনের ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিন দশকেও জেলা পরিষদে নির্বাচন হয়নি। এতে স্থানীয় শাসনব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও পাহাড়ে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে তার প্রভাব দেশের ওপরও পড়ে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন পাহাড়ের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে। পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতেও উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বেড়েছে। আগে যেসব নাগরিক সেবা পাওয়া কঠিন ছিল, এখন সেগুলো সহজলভ্য হয়েছে। তবে উন্নয়ন তখনই টেকসই হয় যখন পারস্পরিক আস্থার ভিত্তি দৃঢ় হয়।
পার্বত্য চুক্তি নিয়ে কোনো মতপার্থক্য থাকতে পারে। তার সমাধান হওয়া জরুরি। আলোচনার টেবিলেই সমাধান খুঁজতে হবে। দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস ও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখে শান্তি টেকসই হবে না।
ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, ক্ষমতা হস্তান্তর, নির্বাচনের মতো চুক্তির মৌলিক ধারা বাস্তবায়ন ছাড়া পাহাড়ের টেকসই শান্তি কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে। পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর উদ্বেগকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। পার্বত্য চুক্তির সাফল্য নির্ভর করে সবার আস্থার ওপর।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮ বছর পার হয়েছে। দীর্ঘ সশস্ত্র সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। আশা করা হয়েছিল, পাহাড়ে শান্তি ফিরবে। কিন্তু দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক ও অসন্তোষ বাড়ছে। জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এমএন লারমা) অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার চুক্তির ধারা বাস্তবায়ন নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করছে।
সরকার বলছে, ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়িত হয়েছে। জেএসএস বলছে, মাত্র ২৪টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। বিশেষ করে ভূমি কমিশনের কার্যক্রম, জেলা পরিষদের ক্ষমতা হস্তান্তর, আঞ্চলিক পরিষদের কার্যকর ভূমিকা-এসব মৌলিক বিষয় এখনও আটকে আছে। বাস্তবে যেসব জায়গায় অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল, সেখানেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। রাঙামাটি জেলা পরিষদ ভবনে তালা ঝুলে থাকা, শিক্ষক নিয়োগে তীব্র দ্বন্দ্ব, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লাঞ্ছিত হওয়া-এ ধরনের ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিন দশকেও জেলা পরিষদে নির্বাচন হয়নি। এতে স্থানীয় শাসনব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও পাহাড়ে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে তার প্রভাব দেশের ওপরও পড়ে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন পাহাড়ের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে। পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতেও উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বেড়েছে। আগে যেসব নাগরিক সেবা পাওয়া কঠিন ছিল, এখন সেগুলো সহজলভ্য হয়েছে। তবে উন্নয়ন তখনই টেকসই হয় যখন পারস্পরিক আস্থার ভিত্তি দৃঢ় হয়।
পার্বত্য চুক্তি নিয়ে কোনো মতপার্থক্য থাকতে পারে। তার সমাধান হওয়া জরুরি। আলোচনার টেবিলেই সমাধান খুঁজতে হবে। দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস ও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখে শান্তি টেকসই হবে না।
ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, ক্ষমতা হস্তান্তর, নির্বাচনের মতো চুক্তির মৌলিক ধারা বাস্তবায়ন ছাড়া পাহাড়ের টেকসই শান্তি কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে। পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর উদ্বেগকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। পার্বত্য চুক্তির সাফল্য নির্ভর করে সবার আস্থার ওপর।