আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন এবং ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশ এখন পুরোপুরি নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু করলো। নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেও দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার আকাক্সক্ষা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। ক্রিয়াশীল কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তফসিল ঘোষণার পর সেই অনিশ্চয়তা কিছুটা কাটল। অনেক দল নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে।
গণতন্ত্রে ফেরার একমাত্র পথ নির্বাচন। কিন্তু শুধু নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র হয়ে যায় না বা শক্তিশালী হয় না। তবে গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ হিসেবে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া জরুরি। আগের তিনটি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দশম ও দ্বাদশ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। কারণ ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সঙ্গী কয়েকটি দল ছাড়া প্রায় সবাই ভোট বর্জন করেছিল। একাদশ নির্বাচনে সবাই অংশ নিলেও সেই নির্বাচন নিয়েও বড় প্রশ্ন ছিল।
এবারের নির্বাচনেও পুরোনো একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তাদের জোটের অন্য দলগুলো নির্বাচন করতে পারবে কি না, সেটাও অনিশ্চিত।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, নিবন্ধন স্থগিত। দলটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে, মানুষের বড় একটি অংশ তাদের প্রতি ক্ষোভও পোষণ করে। কিন্তু দলটির বড় সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। তারা কি নির্বাচনের বাইরে থেকে যাবে?
দেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যদি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তাহলে সেই নির্বাচন কি সত্যিই অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে? আর যদি অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করা না যায়, তাহলে গণতন্ত্র কি টেকসই হবে? এসব প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তবে এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। শুধু ভোটের দিন নয়, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশনকে এখন থেকেই তৎপর হতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের ফলে ইসির ক্ষমতা আগের তুলনায় বেড়েছে। এই আইনের কার্যকর প্রয়োগ কতটা নিশ্চিত করতে পারে ইসি তা নির্বাচনের মান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শুধু ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। ভোটকে নানা উপায়ে প্রভাবিত করা যায়। ভোটের দিন যেমন, ভোটের আগের দিনগুলোতেও এই প্রভাব বিস্তারের রাজনৈতিক খেলা চলতে থাকে। ভোটারদের ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার ইসি ঠেকাতে পারছে কি না, তা দেখতে হবে।
দেশে নির্বাচন এলে ধর্মের ব্যবহার বা অপব্যবহার বেড়ে যায়। এটা একটি পুরোনো সমস্যা। এবারও ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। ইসি এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেবে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। টাকার প্রভাবও নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। এর বিরুদ্ধে ইসিকে কঠোর হতে হবে।
ধর্ম, গোত্র, গোষ্ঠী, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব ভোটার যেন নির্ভয়ে এবং নিরাপদে ভোট দিতে পারে, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু এবং নারীরা যেন নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করা ইসির দায়িত্ব। ভোটের পরেও যেন তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় সেটাও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন শুধু ইসির ওপর নির্ভর করে না। প্রশাসনের নিরপেক্ষ সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষ থাকবে এবং কতটা আন্তরিকভাবে ইসিকে সহযোগিতা করবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
এবার রেকর্ডসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকার কথা। তবে কেবল সংখ্যায় বড় হলেই হয় না, মাঠে নিয়োজিত বাহিনী কতটুকু দায়িত্ব পালন করে সেটাই আসল।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের। তারা যদি না চায় নির্বাচন ভালো হোক তাহলে কোনে নির্বাচনই ভালো হবে না। আচরণবিধি মানা, ভোটারদের স্বাধীন সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা রাজনৈতিক দলের মৌলিক দায়িত্ব। ভোটারদেরও দায়িত্ব আছে। সব পক্ষ যখন দায়িত্বশীল আচরণ করে, তখনই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
আমরা চাই, নির্ধারিত সময়ে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হোক। দেশ দ্রুত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসুক।
অর্থ-বাণিজ্য: রিজার্ভ ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো
অর্থ-বাণিজ্য: স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা
অপরাধ ও দুর্নীতি: সাবেক মন্ত্রী গাজীসহ ৮জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা