আজ বিজয় দিবস। এবার আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছি। দীর্ঘ প্রায় নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ জন্ম লাভ করেছে। অগণিত শহীদ, মা-বোনদের অশ্রু-বেদনা ও সাহসিকতার বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক অর্জন নয়, বরং আমাদের জাতির আত্মপরিচয়ের উজ্জ্বল প্রতীক।
মুক্তিযুদ্ধ কেবল সামরিক বিজয় নয়, বরং মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজের ন্যায়ের ভিত্তি দৃঢ় করার এক দুর্বার আন্দোলন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেÑসামরিক শাসন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব এবং ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক শক্তির রাজনীতিতে পুনর্বাসন। এ সবই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ক্ষুণœ করেছে।
জাতীয় মুক্তির আকাক্সক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। আমরা শোষণমুক্ত সমাজ চেয়েছি, জনগণের স্বাধিকার চেয়েছি। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের স্বপ্ন দেখেছি। আমারা চেয়েছি, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে; কোনো বৈষম্য করা হবে না। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে পেরেছি কি? এই প্রশ্ন আমাদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেয়।
স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের আত্মার মুক্তি, আর্থিক উন্নতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতির উন্নয়ন। আজকের দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য আমাদের আরও কাজ করতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, অসহিষ্ণুতা ও ক্ষুদ্র স্বার্থবোধকে তুচ্ছ করতে হবে এবং জাতীয় সংহতি বজায় রাখতে হবে। একমাত্র এ পথেই আমরা একাত্তরের চেতনার প্রতিফলন দেখতে পাব।
এবারের বিজয় দিবস আমাদের শুধু উদযাপনের দিন নয়, বরং আত্মসমীক্ষার ও সংকল্প গ্রহণের দিন। আমরা আমাদের অতীত, গৌরবগাথা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে চাই। এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে জাতীয় উত্তরাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এ বিজয়ের স্মৃতিতে আমরা প্রতিজ্ঞা করবÑগণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে ব্যাধিগ্রস্ত সমাজকে উত্তরণ ঘটানো।
একাত্তরই বাংলাদেশের পরিচয়। যেই লক্ষ্য নিয়ে এই দেশ সৃষ্টি হয়েছে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আগামীর পথ চলতে হবে।