চাঁদপুর সেচ প্রকল্প রক্ষায় ব্যবস্থা নিন

চাঁদপুর সেচ প্রকল্প একসময় এ অঞ্চলের কৃষির ভরসা ছিল। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধার মাধ্যমে হাজারো কৃষকের জীবন-জীবিকা জড়িত এই প্রকল্পের সঙ্গে। কিন্তু আজ সেই প্রকল্পই সংকটে। কাগজে-কলমে সাড়ে সাতশ’ কিলোমিটারের বেশি সেচ খাল থাকলেও বাস্তবে সচল রয়েছে মাত্র চারশ’ কিলোমিটার। বাকি সাড়ে তিনশ’ কিলোমিটার খাল দখল, ভরাট ও অব্যবস্থাপনার কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কৃষি উৎপাদনে।

সংবাদ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে পানি না পাওয়ায় বোরোসহ গুরুত্বপূর্ণ ফসলের আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কোথাও চারাগাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ছে, কোথাও আবার সময় শেষ হলে অতিরিক্ত পানিতে ফসল নষ্ট হচ্ছে। ফলে জমি অনাবাদী থাকছে, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, খাদ্য উৎপাদনও ঝুঁকির মুখে পড়ছে। শুধু খাল সংস্কার করলেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, কারণ খালের মুখে, সুরু খালে কিংবা বিভিন্ন অংশে স্থানীয়ভাবে বাঁধ দেওয়া, মাছ চাষের জন্য পানি আটকে রাখা এবং ঘরবাড়ি নির্মাণের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

একসময় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে খালগুলো ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন তারা না থাকলেও দখল যে কমেছে-এমন প্রমাণ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এই সেচ খাল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। সেচ খাল ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এটি জনস্বার্থে নির্মিত রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল সংস্কার ও নতুন পাম্প স্থাপনের উদ্যোগের কথা বলেছে। সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘদিনের দখল, পুরোনো যন্ত্রপাতি ও স্থানীয় অসচেতনতার কারণে সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। শুধু প্রকৌশলগত উদ্যোগ নয়, প্রশাসনিক কঠোরতা ও সামাজিক সচেতনতার সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়।

জরুরি ভিত্তিতে দখলমুক্ত অভিযান চালাতে হবে। নিয়মিত তদারকি থাকতে হবে। খাল রক্ষায় স্থানীয় কমিটি গঠন এবং সেচ ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে মাছ চাষ বা অন্য কোনো কারণে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্প্রতি