সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তারের ঘটনা দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর ধানমন্ডির একটি জিম থেকে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সামাজিক মাধ্যম ও টকশোতে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার প্রোপাগান্ডা চালিয়েছেন, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছেন।
যে প্রক্রিয়ায় এবং মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে রাতভর আটকে রাখা, তারপর মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার দেখানো-এটি কোন ধরনের আইনের শাসন! সন্ত্রাসবিরোধী আইন সন্ত্রাসী কর্মকা দমনের জন্য প্রয়োগ করবার কথা। মতপ্রকাশের জন্য এই আইন প্রয়োগ করা চলে কিনা সেটা আমরা জানতে চাইব।
সরকারের সমালোচনা করা বা ভিন্নমত প্রকাশ করা কোনো অপরাধ নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাংবাদিকতা জবাবদিহিতার হাতিয়ার। বিদ্যমান বাস্তবতায় সংসদ নেই। এই অবস্থায় স্বাধীন মত প্রকাশের গুরুত্ব আরও বেশি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করলে শাসনব্যবস্থা কেবল দুর্বলই হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, “সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। মন খুলে সমালোচনা করুন।” কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ২০২৪-এর আগস্ট থেকে ২০২৫-এর নভেম্বর পর্যন্ত শত শত সাংবাদিক হামলা, মামলা, হয়রানি ও গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে অনেক মামলা মিথ্যা ও প্রতিহিংসামূলক। এ ধরনের ঘটনা গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে।
মনে রাখতে হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার। এর ওপর আঘাত গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে মুক্ত গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখতেই হবে।