ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মানুষ হত্যা: কঠোর ব্যবস্থা নিন

ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার মরদেহ গাছে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা আমাদেরকে মধ্যযুগীয় বর্বরতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

পুলিশ বলছে, ধর্মীয় অবমাননার কোনো অডিও-ভিডিও প্রমাণ মেলেনি, মুখে মুখে গুজব ছড়িয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি, কারখানায় উৎপাদন নিয়ে বিরোধের জেরে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনা শুধু একটি হত্যা নয়, এটা সমাজে গুজব ও উন্মাদনার ভয়ংকর রূপ। একটা অভিযোগ ছড়াতেই শত শত মানুষ জড়ো হয়ে আইন হাতে তুলে নেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে। কোনোভাবেই কেউ আইন নিজের হাতে নিতে পারে না।

অন্তর্বর্তী সরকার এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, নতুন বাংলাদেশে এমন সহিংসতার স্থান নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দশজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে শুধু গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়। এই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। গুজব ছড়ানোর উৎস খুঁজে বের করে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কারখানা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা তদন্ত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এমন ঘটনায় দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি। ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষা করতে গিয়ে মানুষ খুন করা কোনো সমাধান নয়। এতে সমাজ আরও বিভক্ত হয়। ধর্মীয় সহনশীলতা, মানবিক শিক্ষা এবং সামাজিক সংহতি গড়ে তোলার ওপর বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। ধর্ম বা বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে মানুষ হত্যা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা চাই, দিপুর মতো অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু যেন আর কখনো না ঘটে। নিহতের পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

সম্প্রতি