কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার গোহারুয়ায় ১৬ বছর আগে উদ্বোধন করা হয়েছিল একটি ২০ শয্যার হাসপাতাল। প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের ৯টি ছোট-বড় ভবনও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জনবল সংকটসহ নানা কারণে আজও শুরু হয়নি এর কার্যকক্রম। লতাগুল্ম, আগাছায় ঢেকে আছে ভবনগুলো। হাসপাতাল এলাকার মধ্যে নিরাপদে ঘাস খেয়ে বেড়ায় গরু-ছাগল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
শুধু নাঙ্গলকোটের গোহারুয়ার হাসপাতালই নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এমন অবহেলায় পড়ে আছে ২৩৩ স্থাপনা। এগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ৫৮টি ও স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের ১৭৫টি ভবন রয়েছে। পরিত্যক্ত এসব ভবনের কোনটির ইট খুলে নেয়া হয়েছে, কোনটির খুলে নেয়া হয়ছে জানালার গ্রিল, সিঁড়ির রেলিং। কোন কোন ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ব্যবহারে আগেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এসব ভবন।
শুধু যে হাসপাতালের ভবনগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে তা নয়। বাক্সবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের কোটি কোটি টাকার রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতিও। বছরের পর বছর পড়ে থাকার কারণে ব্যবহারের আগেই নষ্ট হচ্ছে এগুলো। প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকা ও স্থান সংকুলানের অভাবে যন্ত্রপাতিগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, এগুলোর মধ্যে এমন সব যন্ত্রপাতি আছে, একবার নষ্ট হলে আর সারানোর উপায় নেই। তাছাড়া অনেক যন্ত্রাংশও এখন আর পাওয়া যায় না।
প্রায়ই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকসহ লোকবল সংকটের খবর পাওয়া যায়। এর বাইরে দেশের হাসপাতালগুলোর নানা দৈন্যদশা ও দুর্ভোগের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বরিশালের শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের পাঁচটি ইউনিট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। সেখানে মোমবাতি ও টর্চলাইট জ্বালিয়ে চিকিৎসা চালাতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। শুধু তাই নয়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকলে টর্চের আলোয় অপারেশন করা হয়। সেখানে দুটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর থাকলেও তা নষ্ট।
এমনিতেই দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নগর ও মফস্বলের বৈষম্য প্রবল। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য এ দেশের জনগণকে নিজেদের পকেট থেকে ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করতে হয়। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশেই আটকে আছে দীর্ঘদিন। এর মধ্যে যত বরাদ্দ হয় তার অর্ধেকও খরচ করতে পারে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আবার যা খরচ করে সেগুলোরও যথাযথ ব্যবহার হয় না। জনসাধারণ পূর্ণাঙ্গ সুফল ভোগ করতে পারে না। তার ওপর দুর্নীতি তো রয়েছেই। দুর্নীতির ওপর নজরদারি করা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) তথ্য মতে, দেশে দুর্নীতির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান ষষ্ঠ।
নতুন করে নির্মিত হাসপাতালগুলো কার্যক্রম চালু না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণ চিকিৎসা সেবার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। চিকিৎসক ও চিকিৎসা সঞ্জোমসহ নানা সংকট এবং অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালে আসা রোগীদের যথাযথ সেবা দেয়ার কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। অথচ দেশের দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের চিকিৎসার ভরসা হচ্ছে সরকারি হাসপাতাল। তারা যদি সেখানে গিয়ে সেবা না পান, তাহলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবেন। যাদের সামর্থ্য আছে তারা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কেউ কেউ চলে যান দেশের বাইরেও, যেমনটা চলে যান এমপি, মন্ত্রীরা। দেশের স্বাস্থ্যসেবার চিরচেনা ও পরিচিত রূপ এমনটাই। এর মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবার দৈন্য দশাই ফুটে উঠে, যেমনটা ফুটে উঠেছিল মহামারী করোনার সময়ও।
আমরা বলতে চাই, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তালিকা করে স্বাস্থ্যের পড়ে থাকা স্থাপনাগুলো চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি আছে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে হবে, চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় লোকবল দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে। নাগরিকদের কোনভাবেই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। পাশাপাশি স্থাপনা নির্মাণ করে জনগণের অর্থ অপচয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার গোহারুয়ায় ১৬ বছর আগে উদ্বোধন করা হয়েছিল একটি ২০ শয্যার হাসপাতাল। প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের ৯টি ছোট-বড় ভবনও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জনবল সংকটসহ নানা কারণে আজও শুরু হয়নি এর কার্যকক্রম। লতাগুল্ম, আগাছায় ঢেকে আছে ভবনগুলো। হাসপাতাল এলাকার মধ্যে নিরাপদে ঘাস খেয়ে বেড়ায় গরু-ছাগল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
শুধু নাঙ্গলকোটের গোহারুয়ার হাসপাতালই নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এমন অবহেলায় পড়ে আছে ২৩৩ স্থাপনা। এগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ৫৮টি ও স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের ১৭৫টি ভবন রয়েছে। পরিত্যক্ত এসব ভবনের কোনটির ইট খুলে নেয়া হয়েছে, কোনটির খুলে নেয়া হয়ছে জানালার গ্রিল, সিঁড়ির রেলিং। কোন কোন ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ব্যবহারে আগেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এসব ভবন।
শুধু যে হাসপাতালের ভবনগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে তা নয়। বাক্সবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের কোটি কোটি টাকার রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতিও। বছরের পর বছর পড়ে থাকার কারণে ব্যবহারের আগেই নষ্ট হচ্ছে এগুলো। প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকা ও স্থান সংকুলানের অভাবে যন্ত্রপাতিগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, এগুলোর মধ্যে এমন সব যন্ত্রপাতি আছে, একবার নষ্ট হলে আর সারানোর উপায় নেই। তাছাড়া অনেক যন্ত্রাংশও এখন আর পাওয়া যায় না।
প্রায়ই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকসহ লোকবল সংকটের খবর পাওয়া যায়। এর বাইরে দেশের হাসপাতালগুলোর নানা দৈন্যদশা ও দুর্ভোগের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বরিশালের শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের পাঁচটি ইউনিট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। সেখানে মোমবাতি ও টর্চলাইট জ্বালিয়ে চিকিৎসা চালাতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। শুধু তাই নয়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকলে টর্চের আলোয় অপারেশন করা হয়। সেখানে দুটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর থাকলেও তা নষ্ট।
এমনিতেই দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নগর ও মফস্বলের বৈষম্য প্রবল। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য এ দেশের জনগণকে নিজেদের পকেট থেকে ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করতে হয়। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশেই আটকে আছে দীর্ঘদিন। এর মধ্যে যত বরাদ্দ হয় তার অর্ধেকও খরচ করতে পারে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আবার যা খরচ করে সেগুলোরও যথাযথ ব্যবহার হয় না। জনসাধারণ পূর্ণাঙ্গ সুফল ভোগ করতে পারে না। তার ওপর দুর্নীতি তো রয়েছেই। দুর্নীতির ওপর নজরদারি করা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) তথ্য মতে, দেশে দুর্নীতির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান ষষ্ঠ।
নতুন করে নির্মিত হাসপাতালগুলো কার্যক্রম চালু না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণ চিকিৎসা সেবার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। চিকিৎসক ও চিকিৎসা সঞ্জোমসহ নানা সংকট এবং অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালে আসা রোগীদের যথাযথ সেবা দেয়ার কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। অথচ দেশের দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের চিকিৎসার ভরসা হচ্ছে সরকারি হাসপাতাল। তারা যদি সেখানে গিয়ে সেবা না পান, তাহলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবেন। যাদের সামর্থ্য আছে তারা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কেউ কেউ চলে যান দেশের বাইরেও, যেমনটা চলে যান এমপি, মন্ত্রীরা। দেশের স্বাস্থ্যসেবার চিরচেনা ও পরিচিত রূপ এমনটাই। এর মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবার দৈন্য দশাই ফুটে উঠে, যেমনটা ফুটে উঠেছিল মহামারী করোনার সময়ও।
আমরা বলতে চাই, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তালিকা করে স্বাস্থ্যের পড়ে থাকা স্থাপনাগুলো চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি আছে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে হবে, চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় লোকবল দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে। নাগরিকদের কোনভাবেই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। পাশাপাশি স্থাপনা নির্মাণ করে জনগণের অর্থ অপচয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।