সিরাজ প্রামাণিক
পাওনা পরিশোধের জন্য চেক প্রদানের পর চেকদাতা কর্তৃক অনেক সময় অভিযোগ উত্থাপন করা হয় যে, চেকটি হারিয়ে গেছে। আবার চেক নগদায়নের জন্য ব্যাংকে জমা দেয়ার পর চেক দাতা ব্যাংকে লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে সেটা স্টপ পেমেন্ট করতে বলে এবং কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে চেকটি হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে। অনেক সময় চেকদাতা এ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে রাখে। আবার অনেক সময় থানায় চেক হারানো বিষয়ে থানায় জি.ডি করে রাখে। এসকল ক্ষেত্রে চেক প্রদানের প্রমাণের দায়িত্ব কিন্তু আসামির ওপর বর্তায়। ১৮৮১ সালের এনআই অ্যাক্টের ১১৮ ধারানুসারে অনুমান করতে হবে যে, চেকটি তার দাতা কর্তৃক তার নিজ স্বাক্ষরে প্রাপকের দেনা বা দায় পরিশোধের জন্য প্রদান করা হয়েছিল।
হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া চেকের বিষয়ে চেক দাতাকে তিনটি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
(১) কেন তিনি একটি ফাঁকা স্বাক্ষরিত চেক রেখেছিলেন?
(২) চেকের প্রাপকের নিকট কোনো দায়-দেনা আছে কি-না?
(৩) চেকটি আসলে হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে কি-না?
মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় ওই বিষয়ে সাফাই সাক্ষী দিয়ে আসামিকে প্রমাণ করতে হবে যে, হারিয়ে যাওয়া চেক নিয়ে আসামি থানায় কোন মামলা দায়ের করেছিল বা কোন থানায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিডি করেছিল বা তর্কিত চেকটি উদ্ধারের জন্য বাদীর বিরুদ্ধে কোন ফৌজাদারি বা দেওয়ানি আদালতে মামলা করেছে ইত্যাদি বিষয়ও প্রমাণ করতে হবে। নতুবা আসামি তেমন কোনো সুবিধা পাবেন না।
মনে রাখবেন নালিশি চেকটি হারিয়ে গেছে কিনা বা সেটা চুরি হয়েছে কিনাÑ এগুলো একটি ঘটনাগত বিষয় এবং তা কেবলমাত্র বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হয়।
একটি কেইস স্টাডি থেকে জানা যায়, একটি মামলার চার্জ শুনানির সময় আসামিপক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, নালিশি চেকটি বাদী আসামির ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করার সময় চুরি করেছে এবং পরবর্তীতে ওই চুরি হওয়া চেক দিয়ে মামলা করেছে। তাই মামলাটিতে আসামির বিরুদ্ধে কোন চার্জ গঠন করার সুযোগ নেই। আদালত উভয় পক্ষকে শ্রবণের পর আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। আসামি উক্ত আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১-এ ধারার বিধান মোতাবেক মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ দরখাস্ত করে। গত ০৫/১১/২০১৭ তারিখে নিষ্পত্তিকৃত মামলায় (ক্রিমিনাল মিস কেস নং ৩২৯৭/২০১৬, আন রিপোর্টেড) মহামান্য হাইকোর্ট এ বিষয়ে মন্তব্য করেন যে, নালিশি চেকটি চুরি হয়েছে বা হারিয়ে গেছে এবং অনুরূপ চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া চেকের উপর ভিত্তি করে বিচারিক আদালত আসামিকে দ- প্রদান করলে সেটা বেআইনি বলে বিবেচিত হয় না। আসামি যদি ওই চেক চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ব্যাংককে কোন কিছু না জানায় বা থানায় জিডি না করে তাহলে অনুরূপ প্লি দ্বারা আসামি কোন সুবিধা পায় না।
বিষয়টি আলোচনা করতে গিয়ে এমএ আজম চৌধুরী বনাম এবিএম আসাদুজ্জামান [১৩ এডিসি (২০১৬) ৭৯] মামলায় আপিল বিভাগও একই মন্তব্য করেন। কাজেই চেক দেওয়ার পর চেকটি হারিয়ে গেছে কিংবা অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করা হয়েছে কিংবা স্টপ পেমেন্ট করা হয়েছে, থানায় জিডি করা হয়েছেÑ ইত্যাদি বলে আইনগতভাবে আসামির বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]
সিরাজ প্রামাণিক
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
পাওনা পরিশোধের জন্য চেক প্রদানের পর চেকদাতা কর্তৃক অনেক সময় অভিযোগ উত্থাপন করা হয় যে, চেকটি হারিয়ে গেছে। আবার চেক নগদায়নের জন্য ব্যাংকে জমা দেয়ার পর চেক দাতা ব্যাংকে লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে সেটা স্টপ পেমেন্ট করতে বলে এবং কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে চেকটি হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে। অনেক সময় চেকদাতা এ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে রাখে। আবার অনেক সময় থানায় চেক হারানো বিষয়ে থানায় জি.ডি করে রাখে। এসকল ক্ষেত্রে চেক প্রদানের প্রমাণের দায়িত্ব কিন্তু আসামির ওপর বর্তায়। ১৮৮১ সালের এনআই অ্যাক্টের ১১৮ ধারানুসারে অনুমান করতে হবে যে, চেকটি তার দাতা কর্তৃক তার নিজ স্বাক্ষরে প্রাপকের দেনা বা দায় পরিশোধের জন্য প্রদান করা হয়েছিল।
হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া চেকের বিষয়ে চেক দাতাকে তিনটি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
(১) কেন তিনি একটি ফাঁকা স্বাক্ষরিত চেক রেখেছিলেন?
(২) চেকের প্রাপকের নিকট কোনো দায়-দেনা আছে কি-না?
(৩) চেকটি আসলে হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে কি-না?
মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় ওই বিষয়ে সাফাই সাক্ষী দিয়ে আসামিকে প্রমাণ করতে হবে যে, হারিয়ে যাওয়া চেক নিয়ে আসামি থানায় কোন মামলা দায়ের করেছিল বা কোন থানায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিডি করেছিল বা তর্কিত চেকটি উদ্ধারের জন্য বাদীর বিরুদ্ধে কোন ফৌজাদারি বা দেওয়ানি আদালতে মামলা করেছে ইত্যাদি বিষয়ও প্রমাণ করতে হবে। নতুবা আসামি তেমন কোনো সুবিধা পাবেন না।
মনে রাখবেন নালিশি চেকটি হারিয়ে গেছে কিনা বা সেটা চুরি হয়েছে কিনাÑ এগুলো একটি ঘটনাগত বিষয় এবং তা কেবলমাত্র বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হয়।
একটি কেইস স্টাডি থেকে জানা যায়, একটি মামলার চার্জ শুনানির সময় আসামিপক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, নালিশি চেকটি বাদী আসামির ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করার সময় চুরি করেছে এবং পরবর্তীতে ওই চুরি হওয়া চেক দিয়ে মামলা করেছে। তাই মামলাটিতে আসামির বিরুদ্ধে কোন চার্জ গঠন করার সুযোগ নেই। আদালত উভয় পক্ষকে শ্রবণের পর আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। আসামি উক্ত আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১-এ ধারার বিধান মোতাবেক মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ দরখাস্ত করে। গত ০৫/১১/২০১৭ তারিখে নিষ্পত্তিকৃত মামলায় (ক্রিমিনাল মিস কেস নং ৩২৯৭/২০১৬, আন রিপোর্টেড) মহামান্য হাইকোর্ট এ বিষয়ে মন্তব্য করেন যে, নালিশি চেকটি চুরি হয়েছে বা হারিয়ে গেছে এবং অনুরূপ চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া চেকের উপর ভিত্তি করে বিচারিক আদালত আসামিকে দ- প্রদান করলে সেটা বেআইনি বলে বিবেচিত হয় না। আসামি যদি ওই চেক চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ব্যাংককে কোন কিছু না জানায় বা থানায় জিডি না করে তাহলে অনুরূপ প্লি দ্বারা আসামি কোন সুবিধা পায় না।
বিষয়টি আলোচনা করতে গিয়ে এমএ আজম চৌধুরী বনাম এবিএম আসাদুজ্জামান [১৩ এডিসি (২০১৬) ৭৯] মামলায় আপিল বিভাগও একই মন্তব্য করেন। কাজেই চেক দেওয়ার পর চেকটি হারিয়ে গেছে কিংবা অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করা হয়েছে কিংবা স্টপ পেমেন্ট করা হয়েছে, থানায় জিডি করা হয়েছেÑ ইত্যাদি বলে আইনগতভাবে আসামির বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]