alt

উপ-সম্পাদকীয়

দুর্নীতি কি ‘নীতিতে’ পরিণত হচ্ছে

রহমান মৃধা

: রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

বিশ্বজুড়ে মানসিক অশান্তি, দুঃখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে অসংখ্য তরুণ-তরুণীর জীবন। নির্জনতা, ধৈর্য, নির্মমতার ব্যথা বুকে চাপিয়ে ধুঁকে ধুঁকে একাকীত্বের জীবন পার করছে মানুষ জাতি। ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য এবং নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে করছে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত। ঠিক একই সময় অন্যদিকে একই বিশ্বের এক প্রান্তে চলছে লুটপাট, দুর্নীতি, রাহাজানি, হয়রানি এমনকি ডাকাতি। জাতির দুর্দিনে অবৈধ অর্থের প্রাসাদ গড়ছে অনেকে। মানব জাতির এই দুর্দিনে যারা কু-কর্মে লিপ্ত তাদেরকে যদি আমরা সঠিক পথ দেখাতে ব্যর্থ হই তবে জাতি হিসেবে আমরা সবাই হবো নির্লজ্জ। অনেকে পেটের দায়ে অন্যায় করে। এমন লোকের অভাব নেই মেনে নিলাম কিন্তু যারা লোভ-লালসা এবং বিলাসের জন্য অন্যায় করে কিভাবে মেনে নিবো তাদেরকে? এরা পেটের দায়ে নয় এরা অন্যায় করে চলছে এদের পাশবিক ও বিকৃত রুচির তৃপ্তি মিটাতে।

কিন্তু এই তৃপ্তিটা কতক্ষণ রাখতে পারবে সেটার জন্যও কি ভাবা হচ্ছে? এই কাজগুলো যারা করছে তারা মনেই করে না যে এটা অন্যায়, কারণ সমাজের সব অন্যায় এদের কাছে এখন ন্যায়সঙ্গত। তাদের ধারণা তারা সৃজনশীল কর্মের মধ্যেই আছে। তাদের চোখে এখন আঙ্গুল দিয়ে জানাতে হবে যে এ কাজগুলো সৃজনশীল বা বাস্তবসম্মত নয়। একই সাথে জানতে হবে কেন তাদেরকে এটা আকর্ষণ করছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে সমাজ এখন আপদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। এটার সীমাহীনতা কঠিন হয়ে আরও গভীর সীমাহীনতায় ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বজনীন দুর্নীতি হচ্ছে যা সর্বজনীন নয়। কারণ দুর্নীতি কখনো চিরস্থায়ী হতে পারে না।

আসলে কোথাও এর তেমন শক্ত জবাবদিহিতা নেই। সুশাসনের মূলনীতি হচ্ছে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা। এটি প্রতিষ্ঠা না করা গেলে সুশাসন আসবে না। এটা আসতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

দুর্নীতির সব সঞ্চয় জমা হয় শেষে ব্যাংকে, আসুন জেনে নেই কী হচ্ছে সেখানে। দেখা যাচ্ছে সরকার কর্তৃক একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পর ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮০ শতাংশ, আগে যা ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। শুধু একজন চেয়ারম্যান ও এমডির কারণে ব্যাংকটির এমন অবস্থা হয়ে গেল! ৮০ শতাংশ ঋণ যখন খেলাপি হয়ে গেল, তখন তো সরকারের উচিত কাউকে না কাউকে দায়ী করা। আর এত ঋণ যে খেলাপি হয়ে গেল, তা তো কোনো শাখা ব্যবস্থাপকের জন্য হয়নি। চেয়ারম্যান-এমডি ছাড়া একটি ব্যাংকে এত খেলাপি হতে পারে না; কিন্তু চেয়ারম্যান দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার মানে চেয়ারম্যানকে যারা রক্ষা করছেন, তারা দুদকের চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণে তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

মূলত ব্যাংক খাতকে রাজনীতিকীকরণ করতেই এমন পরিবর্তন; কিন্তু ব্যাংক রাজনীতির জায়গা না। একটি ব্যাংকের শতকরা ১০ ভাগ টাকা মালিকের বা সরকারের। বাকি টাকা পুরোটাই জনগণের আমানত। এই আমানতের টাকা সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর যত চাপ, যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতকারীদের স্বার্থ না দেখে যারা লুটপাট করে তাদের স্বার্থ দেখে। এটা বলতে ভালো না দেখালেও বাস্তবতা এটাই।

সমস্যা হচ্ছে আমানতকারীদের স্বার্থ দেখার জন্য যারা আছে তারাও দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই বলতে হয় অভাগা দেশের মানুষের চোখ থাকতেও তারা অন্ধ না হলে এ সকল ব্যাংক চেয়ারম্যানদের কিছু হতো। সবকিছু জানার পর মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে, যেমন এদের কারা রক্ষা করছে, কিসের বিনিময়ে রক্ষা করছে? আমার প্রশ্ন দুর্নীতি কি তাহলে অর্থনীতি, পৌরনীতি, রাজনীতির মতোই একটি নীতি? নাকি সবকিছুর সমন্বয়ে গঠিত এই নীতি যাকে ধরতে গেলে যায় না ধরা, ছুঁতে গেলে যায় না ছোঁয়া। নাকি এটা জাতির হৃদয়ে লতার মতো জড়িয়ে পড়েছে! তাই যদি হয় তবে দুর্নীতিকে বরং নীতিতে পরিণত করুন।

দেশ ভরা নেতা আছে কিন্তু নেতার অনুসারী নেই। নেতা তার মনুষ্যত্ব, লজ্জা শরম এবং বিশ্বস্ততা হারিয়েছে। নেতা বলছেন কী করতে হবে কিন্তু কে কার কথা শোনে। জনগণ বুঝে গেছে নেতার নেতৃত্বের সুযোগ করে দিলে সে করবে পরিবর্তন নিজের এবং পরিবারের।

সেক্ষেত্রে জনগণের কী হবে? হয়ত সবাই বলবে তাহলে মিটিংয়ে নেতার বক্তৃতা শুনতে এত লোক জড়ো হয় কেন? মাওলানার ওয়াজ শুনতেও জনগণ যায়, তার অর্থ এই নয় যে তিনি যা বলছেন জনগণ সেভাবে কাজ করছে। জনগণ স্ট্রিট স্মার্ট, তাই তারা চোখ কান খোলা রেখে সব শুনছে, দেখছে এবং তারপর তাদের সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে।

সুশাসনের মূলনীতি হচ্ছে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা। এটি প্রতিষ্ঠা না করা গেলে সুশাসন আসবে না। এটা আসতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে

লন্ডন বা ঢাকার লাক্সারি পরিবেশে বসে যে সব নেতা অর্ডার করছে কী করতে হবে তাদের কথা কেউ আর শুনছে না। বর্তমানে ক্ষমতায় যে সরকার তার কথাও হয়তো জনগণ শুনছে না। তবে সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারীরা তাদের রুটিন অনুযায়ী কাজ করে চলছে। দেশের রাজনীতিতে শুধু ধান্দাবাজি, যার কারণে নেতার পেছনে কোনো অনুসারী নেই, আছে শুধু চামচারা। অনেকেই সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, দেশে আজ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের মধ্যে একটা ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। তাদের এগিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকার যেভাবে দেশ চালাতে চাচ্ছে, সেটা আর পারবে না। মানুষ একদিন দাঁড়িয়ে বলবে, এটা একেবারে অসহ্য হয়ে গেছে। এর পরিবর্তন আনতে হবে। এখন কথা বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? জনগণ? কে সেই জনগণ? বিদেশিরা নাকি দেশের ১৭ কোটি মানুষ?

জনগণ তো এখন আগের মতো বোকা নয়, যখন যার যা খুশি বলবে আর তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে। ও দিন গুজার গেয়া। কই দেশের প্রতি যদি সত্যিই এত দরদ তাহলে আগের সেই শহিদ ভাইদের মতো করে কেন আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ছি না? কারণ আমরা জনগণ বারবার শুধু জর্জরিত, শোষিত, নিপীড়িত এবং নির্যাতিত। আমাদের ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়েছে। হতাশায় নিমজ্জিত আমাদের সমস্ত শরীর।

মন বলে শোষণ, শাসন আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে সোচ্চার হই আর ঝাঁপিয়ে পড়ি কিন্তু না তা করব না, কারণ আমরা শান্তিপ্রিয় শান্ত জনগণ।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

দুর্নীতি কি ‘নীতিতে’ পরিণত হচ্ছে

রহমান মৃধা

রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

বিশ্বজুড়ে মানসিক অশান্তি, দুঃখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে অসংখ্য তরুণ-তরুণীর জীবন। নির্জনতা, ধৈর্য, নির্মমতার ব্যথা বুকে চাপিয়ে ধুঁকে ধুঁকে একাকীত্বের জীবন পার করছে মানুষ জাতি। ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য এবং নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে করছে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত। ঠিক একই সময় অন্যদিকে একই বিশ্বের এক প্রান্তে চলছে লুটপাট, দুর্নীতি, রাহাজানি, হয়রানি এমনকি ডাকাতি। জাতির দুর্দিনে অবৈধ অর্থের প্রাসাদ গড়ছে অনেকে। মানব জাতির এই দুর্দিনে যারা কু-কর্মে লিপ্ত তাদেরকে যদি আমরা সঠিক পথ দেখাতে ব্যর্থ হই তবে জাতি হিসেবে আমরা সবাই হবো নির্লজ্জ। অনেকে পেটের দায়ে অন্যায় করে। এমন লোকের অভাব নেই মেনে নিলাম কিন্তু যারা লোভ-লালসা এবং বিলাসের জন্য অন্যায় করে কিভাবে মেনে নিবো তাদেরকে? এরা পেটের দায়ে নয় এরা অন্যায় করে চলছে এদের পাশবিক ও বিকৃত রুচির তৃপ্তি মিটাতে।

কিন্তু এই তৃপ্তিটা কতক্ষণ রাখতে পারবে সেটার জন্যও কি ভাবা হচ্ছে? এই কাজগুলো যারা করছে তারা মনেই করে না যে এটা অন্যায়, কারণ সমাজের সব অন্যায় এদের কাছে এখন ন্যায়সঙ্গত। তাদের ধারণা তারা সৃজনশীল কর্মের মধ্যেই আছে। তাদের চোখে এখন আঙ্গুল দিয়ে জানাতে হবে যে এ কাজগুলো সৃজনশীল বা বাস্তবসম্মত নয়। একই সাথে জানতে হবে কেন তাদেরকে এটা আকর্ষণ করছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে সমাজ এখন আপদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। এটার সীমাহীনতা কঠিন হয়ে আরও গভীর সীমাহীনতায় ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বজনীন দুর্নীতি হচ্ছে যা সর্বজনীন নয়। কারণ দুর্নীতি কখনো চিরস্থায়ী হতে পারে না।

আসলে কোথাও এর তেমন শক্ত জবাবদিহিতা নেই। সুশাসনের মূলনীতি হচ্ছে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা। এটি প্রতিষ্ঠা না করা গেলে সুশাসন আসবে না। এটা আসতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

দুর্নীতির সব সঞ্চয় জমা হয় শেষে ব্যাংকে, আসুন জেনে নেই কী হচ্ছে সেখানে। দেখা যাচ্ছে সরকার কর্তৃক একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পর ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮০ শতাংশ, আগে যা ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। শুধু একজন চেয়ারম্যান ও এমডির কারণে ব্যাংকটির এমন অবস্থা হয়ে গেল! ৮০ শতাংশ ঋণ যখন খেলাপি হয়ে গেল, তখন তো সরকারের উচিত কাউকে না কাউকে দায়ী করা। আর এত ঋণ যে খেলাপি হয়ে গেল, তা তো কোনো শাখা ব্যবস্থাপকের জন্য হয়নি। চেয়ারম্যান-এমডি ছাড়া একটি ব্যাংকে এত খেলাপি হতে পারে না; কিন্তু চেয়ারম্যান দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার মানে চেয়ারম্যানকে যারা রক্ষা করছেন, তারা দুদকের চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণে তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

মূলত ব্যাংক খাতকে রাজনীতিকীকরণ করতেই এমন পরিবর্তন; কিন্তু ব্যাংক রাজনীতির জায়গা না। একটি ব্যাংকের শতকরা ১০ ভাগ টাকা মালিকের বা সরকারের। বাকি টাকা পুরোটাই জনগণের আমানত। এই আমানতের টাকা সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর যত চাপ, যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতকারীদের স্বার্থ না দেখে যারা লুটপাট করে তাদের স্বার্থ দেখে। এটা বলতে ভালো না দেখালেও বাস্তবতা এটাই।

সমস্যা হচ্ছে আমানতকারীদের স্বার্থ দেখার জন্য যারা আছে তারাও দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই বলতে হয় অভাগা দেশের মানুষের চোখ থাকতেও তারা অন্ধ না হলে এ সকল ব্যাংক চেয়ারম্যানদের কিছু হতো। সবকিছু জানার পর মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে, যেমন এদের কারা রক্ষা করছে, কিসের বিনিময়ে রক্ষা করছে? আমার প্রশ্ন দুর্নীতি কি তাহলে অর্থনীতি, পৌরনীতি, রাজনীতির মতোই একটি নীতি? নাকি সবকিছুর সমন্বয়ে গঠিত এই নীতি যাকে ধরতে গেলে যায় না ধরা, ছুঁতে গেলে যায় না ছোঁয়া। নাকি এটা জাতির হৃদয়ে লতার মতো জড়িয়ে পড়েছে! তাই যদি হয় তবে দুর্নীতিকে বরং নীতিতে পরিণত করুন।

দেশ ভরা নেতা আছে কিন্তু নেতার অনুসারী নেই। নেতা তার মনুষ্যত্ব, লজ্জা শরম এবং বিশ্বস্ততা হারিয়েছে। নেতা বলছেন কী করতে হবে কিন্তু কে কার কথা শোনে। জনগণ বুঝে গেছে নেতার নেতৃত্বের সুযোগ করে দিলে সে করবে পরিবর্তন নিজের এবং পরিবারের।

সেক্ষেত্রে জনগণের কী হবে? হয়ত সবাই বলবে তাহলে মিটিংয়ে নেতার বক্তৃতা শুনতে এত লোক জড়ো হয় কেন? মাওলানার ওয়াজ শুনতেও জনগণ যায়, তার অর্থ এই নয় যে তিনি যা বলছেন জনগণ সেভাবে কাজ করছে। জনগণ স্ট্রিট স্মার্ট, তাই তারা চোখ কান খোলা রেখে সব শুনছে, দেখছে এবং তারপর তাদের সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে।

সুশাসনের মূলনীতি হচ্ছে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা। এটি প্রতিষ্ঠা না করা গেলে সুশাসন আসবে না। এটা আসতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে

লন্ডন বা ঢাকার লাক্সারি পরিবেশে বসে যে সব নেতা অর্ডার করছে কী করতে হবে তাদের কথা কেউ আর শুনছে না। বর্তমানে ক্ষমতায় যে সরকার তার কথাও হয়তো জনগণ শুনছে না। তবে সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারীরা তাদের রুটিন অনুযায়ী কাজ করে চলছে। দেশের রাজনীতিতে শুধু ধান্দাবাজি, যার কারণে নেতার পেছনে কোনো অনুসারী নেই, আছে শুধু চামচারা। অনেকেই সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, দেশে আজ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের মধ্যে একটা ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। তাদের এগিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকার যেভাবে দেশ চালাতে চাচ্ছে, সেটা আর পারবে না। মানুষ একদিন দাঁড়িয়ে বলবে, এটা একেবারে অসহ্য হয়ে গেছে। এর পরিবর্তন আনতে হবে। এখন কথা বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? জনগণ? কে সেই জনগণ? বিদেশিরা নাকি দেশের ১৭ কোটি মানুষ?

জনগণ তো এখন আগের মতো বোকা নয়, যখন যার যা খুশি বলবে আর তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে। ও দিন গুজার গেয়া। কই দেশের প্রতি যদি সত্যিই এত দরদ তাহলে আগের সেই শহিদ ভাইদের মতো করে কেন আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ছি না? কারণ আমরা জনগণ বারবার শুধু জর্জরিত, শোষিত, নিপীড়িত এবং নির্যাতিত। আমাদের ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়েছে। হতাশায় নিমজ্জিত আমাদের সমস্ত শরীর।

মন বলে শোষণ, শাসন আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে সোচ্চার হই আর ঝাঁপিয়ে পড়ি কিন্তু না তা করব না, কারণ আমরা শান্তিপ্রিয় শান্ত জনগণ।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

back to top