alt

উপ-সম্পাদকীয়

পরিবেশ সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রিসাইকেল

অমৃত চিছাম

: সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৪
image

বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান দিন দিন উন্নত থেকে উন্নতর হিসেবে গড়ে উঠছে। একইসঙ্গে সভ্যতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বর্জ্য বা আবর্জনার পরিমাণও। সবকিছুর ঊর্ধ্বে প্রথমেই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে পরিবেশ সুরক্ষার কথা। কারণ পরিবেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে সুস্থ সুন্দর জীবন ধারণের কথা চিন্তা করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা প্রায় একই কথা। পরিবেশ ও প্রাণীজগৎ একে অপরের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে কল্পনা করা যায় না। আর বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো পরিবেশ। যেখানে প্রায় সব প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তাই এখন সময় এসেছে পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি গভীর মনযোগ প্রদর্শন করার। পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়টি আসলে কী? অতি সহজ ভাষায় বলতে গেলে, পরিবেশ সুরক্ষা হলো প্রাকৃতিক ও মানবনির্মিত পরিবেশের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের পদক্ষেপ। এটি মাটি, বায়ু, পানি, ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন দিকে মনোনিবেশ করে। কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে বর্জ্য উৎপাদনের বিষয়টি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণও। আর বর্তমানে যা কিনা পরিবেশ সুরক্ষায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা বর্তমানে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। আর এ বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রতিটি সদস্য কোনো না কোনোভাবে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য উৎপাদনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এ বিশাল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা থেকে অতি সহজেই অনুমান করা যায় যে, দেশে দৈনিক কী পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ উৎপাদন হচ্ছে। ধারণা করা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে প্রায় প্রতিটি সমস্যার কোনো না কোনো সুন্দর সমাধান আছে। আর ঠিক এ রকমই একটি কার্যকরী ও সময় উপযোগী সমাধান হচ্ছে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থের রিসাইকেল। এর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ অনেকটা কমে আসবে, সেইসঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও কিছুটা অগ্রসর হওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি হবে। রিসাইকেল বিষয়টা আসলে কী? রিসাইকেল হলো যে উপাদান বর্জ্য হিসেবে প্রকৃতিতে থেকে তা প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি সাধন করতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করত তাকে সংগ্রহ করে পুনরায় মানব কল্যাণে ব্যবহার উপযোগী উপাদানে তথা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনাকেই রিসাইকেল বলে। রিসাইকেল করার ফলে ওই উপাদানের গুনের তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটে না শুধু কিছু প্রক্রিয়া ব্যয় নির্বাহ করেই উপাদানকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর ফলে নতুন করে উপাদান তৈরির জন্য আলাদা করে ব্যয় করতে হয় না। এর ফলে ওই দ্রব্যের মূল্য সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। প্রকৃতিতে কোনো সম্পদের পরিমাণ অসীম নয়। হোক তা খনিজ সম্পদ কিংবা অন্য যে কোনো সম্পদ। সম্পদকে প্রকৃতিতে বর্জ্য হিসেবে ফেলে রেখে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় না ঘটিয়ে বরং বর্জ্যকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংগ্রহ ও পরিশোধনের মাধ্যমে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারলে তা একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে, অন্যদিকে দেশের সামাজিক ও পরিবেশ সুরক্ষায় কতই না উপকারী হবে তা খুব সহজেই অনুমেয়। বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য রিসাইকেলের ওপর জোর দেয়া এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে পরিবেশ সুরক্ষায় রিসাইকেলের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠছে। আয়রন, ই-বর্জ্য, কাগজ, ও প্লাস্টিকের রিসাইকেল সামাজিক, অর্থনৈতিক তথা পরিবেশ সুরক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশে প্রতিদিন যে হারে শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাঁচামাল হচ্ছে লোহা বা আয়রন। দেশে প্রতি বছর লোহার চাহিদা প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টন। দেশের মোট আয়রন (লোহা) চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আসে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প থেকে। দেশে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় লোহা বা আয়রন এর চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখেই চট্টগ্রাম সমুদ্রসৈকত থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত বিস্তৃতি নিয়ে গড়ে উঠেছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। কম মূল্যে পরিত্যক্ত বিদেশি জাহাজ ক্রয় করে তা দেশে এনে প্রয়োজন অনুযায়ী কেটে ছোট ছোট অংশে পরিণত করা হয় ও পরবর্তীতে রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রড, পীত, বার, বিমসহ আরও অনেক উপকরণ তৈরি করা হয়। উল্লেখ্য বিশ্বে জাহাজ ভাঙা শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শীর্ষে। রিসাইকেল প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৫০,০০০ শ্রমিক, শিক্ষিত যুবক, ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রিসাইকেল করার ফলে দেশ বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে, সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৮ কোটি ও ১৩ কোটির বেশি। দেশে গত ২১ বছরে মোবাইল ফোন থেকে ১০,৫০৪ মেট্রিক টন বিষাক্ত ইলেকট্রনিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। আর ২০৩৫ সাল নাগাদ যার পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬ লাখ ২০ হাজার টনে। এই সম্পদের বাজার প্রায় ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বুয়েট ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালিত যৌথ গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, এক মেট্রিক টন প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড ও র‌্যাম থেকে পাওয়া যেতে পারে ২৮ হাজার ডলার বা ২৪ লাখ টাকা মূল্যমানের স্বর্ণ, রুপা, তামা ও টিন। প্রাথমিকভাবে চালনো এক গবেষণা অনুসারে, এই ব্যবসায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ই-বর্জ্য রিসাইকেল করার ফলে দেশ বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে, সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মাত্র ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ২ লাখ ২৮ হাজার টনের মতো রিসাইকেল বা পুনঃব্যবহার হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিক বর্জ্য আগুনে পোড়ানোর ফলে ২০১৯ সালে বায়ুম-লে প্রায় ৮.৫ কোটি টন কার্বণ ডাই-অক্সাইড যোগ হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১৫০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে জমা হচ্ছে। দেশে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকসামগ্রী রিসাইকেল করার উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার কারখানা রয়েছে। তবে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে এত সমস্যার মধ্যে আশার আলো এই যে, দেশে বর্তমানে প্লাস্টিক রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গুঁড়ো করে বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। যা কিনা ২০৩০ সাল নাগাদ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকায় পরিণত হবে। ২০২২ অর্থবছরে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে। রপ্তানি খাতে ১২তম অবস্থানে উঠে এসেছে পণ্যটি। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ তথা জাতীয় অর্থনীতির জন্য প্লাস্টিক রিসাইকেল কী পরিমাণ কার্যকর হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। দেশে বর্তমানে প্লাস্টিক রিসাইকেল শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দক্ষ, আধা দক্ষ মিলিয়ে ৫ হাজার ৫০০ কারখানায় প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যে বস্তুটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে তা হলো কাগজ। যা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ বনজ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া কাগজ উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার ফলে তা পরিবেশ দূষণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অথচ কাগজ রিসাইকেল করা হলে ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ কমানো ও প্রায় ৭৫ শতাংশ বায়ুদূষণ হ্রাস করা সম্ভব। ১ টন কাগজ উৎপাদনে প্রায় ২৪টি গাছ নিধন করতে হয়। তাই দেশে বর্তমানে কাগজ উৎপাদনের চাইতে কাগজ রিসাইকেল প্রতি মনযোগী হওয়া সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। রিসাইকেল করার ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ সুরক্ষিত হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি গ্রিন হাউসের প্রভাব থেকে পৃথিবীও বহুলাংশে রক্ষা পাবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ ক. নাম্বার অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য সচেষ্ট থাকবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের অবশ্যই পরিবেশ, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। আর এর একটি যুগোপযোগী সমাধান হতে পারে রিসাইকেল পদ্ধতি। পরিত্যক্ত উপাদান রিসাইকেল করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক, সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা বহুলাংশে সম্ভব হবে। পরিত্যক্ত বস্ত্যসমূহ যেগুলো রিসাইকেলের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখতে পারি। এছাড়া পরিবেশের বিপর্যয় ঘটলে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পতিত হবে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় রিসাইকেলের প্রতি আরও গভীর মনোযোগ ও একইসঙ্গে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন আগামীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য সুন্দর পরিবেশ ও ধরিত্রী গড়ে তুলতে এখন থেকেই সবাই পরিত্যক্ত উপাদান সামগ্রীর রিসাইকেল করার মধ্য দিয়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আরও বেশি সচেষ্ট হই। এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়নেও পরিত্যক্ত বস্তসমূহের রিসাইকেল কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে একদিকে যেমন বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব দূর, লিঙ্গ সমতায়ন এবং সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ বহুলাংশে হ্রাস পাবে। পরিশেষে, পরিত্যক্ত উপাদান সামগ্রীর রিসাইকেল রূপকল্প ২০৪১ বা বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করবে এটাই দেশের সব সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।

[লেখক: শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয়]

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

পরিবেশ সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রিসাইকেল

অমৃত চিছাম

image

সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৪

বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান দিন দিন উন্নত থেকে উন্নতর হিসেবে গড়ে উঠছে। একইসঙ্গে সভ্যতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বর্জ্য বা আবর্জনার পরিমাণও। সবকিছুর ঊর্ধ্বে প্রথমেই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে পরিবেশ সুরক্ষার কথা। কারণ পরিবেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে সুস্থ সুন্দর জীবন ধারণের কথা চিন্তা করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা প্রায় একই কথা। পরিবেশ ও প্রাণীজগৎ একে অপরের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে কল্পনা করা যায় না। আর বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো পরিবেশ। যেখানে প্রায় সব প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তাই এখন সময় এসেছে পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি গভীর মনযোগ প্রদর্শন করার। পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়টি আসলে কী? অতি সহজ ভাষায় বলতে গেলে, পরিবেশ সুরক্ষা হলো প্রাকৃতিক ও মানবনির্মিত পরিবেশের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের পদক্ষেপ। এটি মাটি, বায়ু, পানি, ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন দিকে মনোনিবেশ করে। কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে বর্জ্য উৎপাদনের বিষয়টি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণও। আর বর্তমানে যা কিনা পরিবেশ সুরক্ষায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা বর্তমানে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। আর এ বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রতিটি সদস্য কোনো না কোনোভাবে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য উৎপাদনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এ বিশাল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা থেকে অতি সহজেই অনুমান করা যায় যে, দেশে দৈনিক কী পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ উৎপাদন হচ্ছে। ধারণা করা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে প্রায় প্রতিটি সমস্যার কোনো না কোনো সুন্দর সমাধান আছে। আর ঠিক এ রকমই একটি কার্যকরী ও সময় উপযোগী সমাধান হচ্ছে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থের রিসাইকেল। এর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ অনেকটা কমে আসবে, সেইসঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও কিছুটা অগ্রসর হওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি হবে। রিসাইকেল বিষয়টা আসলে কী? রিসাইকেল হলো যে উপাদান বর্জ্য হিসেবে প্রকৃতিতে থেকে তা প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি সাধন করতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করত তাকে সংগ্রহ করে পুনরায় মানব কল্যাণে ব্যবহার উপযোগী উপাদানে তথা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনাকেই রিসাইকেল বলে। রিসাইকেল করার ফলে ওই উপাদানের গুনের তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটে না শুধু কিছু প্রক্রিয়া ব্যয় নির্বাহ করেই উপাদানকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর ফলে নতুন করে উপাদান তৈরির জন্য আলাদা করে ব্যয় করতে হয় না। এর ফলে ওই দ্রব্যের মূল্য সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। প্রকৃতিতে কোনো সম্পদের পরিমাণ অসীম নয়। হোক তা খনিজ সম্পদ কিংবা অন্য যে কোনো সম্পদ। সম্পদকে প্রকৃতিতে বর্জ্য হিসেবে ফেলে রেখে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় না ঘটিয়ে বরং বর্জ্যকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংগ্রহ ও পরিশোধনের মাধ্যমে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারলে তা একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে, অন্যদিকে দেশের সামাজিক ও পরিবেশ সুরক্ষায় কতই না উপকারী হবে তা খুব সহজেই অনুমেয়। বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য রিসাইকেলের ওপর জোর দেয়া এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে পরিবেশ সুরক্ষায় রিসাইকেলের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠছে। আয়রন, ই-বর্জ্য, কাগজ, ও প্লাস্টিকের রিসাইকেল সামাজিক, অর্থনৈতিক তথা পরিবেশ সুরক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশে প্রতিদিন যে হারে শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাঁচামাল হচ্ছে লোহা বা আয়রন। দেশে প্রতি বছর লোহার চাহিদা প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টন। দেশের মোট আয়রন (লোহা) চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আসে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প থেকে। দেশে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় লোহা বা আয়রন এর চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখেই চট্টগ্রাম সমুদ্রসৈকত থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত বিস্তৃতি নিয়ে গড়ে উঠেছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। কম মূল্যে পরিত্যক্ত বিদেশি জাহাজ ক্রয় করে তা দেশে এনে প্রয়োজন অনুযায়ী কেটে ছোট ছোট অংশে পরিণত করা হয় ও পরবর্তীতে রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রড, পীত, বার, বিমসহ আরও অনেক উপকরণ তৈরি করা হয়। উল্লেখ্য বিশ্বে জাহাজ ভাঙা শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শীর্ষে। রিসাইকেল প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৫০,০০০ শ্রমিক, শিক্ষিত যুবক, ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রিসাইকেল করার ফলে দেশ বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে, সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৮ কোটি ও ১৩ কোটির বেশি। দেশে গত ২১ বছরে মোবাইল ফোন থেকে ১০,৫০৪ মেট্রিক টন বিষাক্ত ইলেকট্রনিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। আর ২০৩৫ সাল নাগাদ যার পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬ লাখ ২০ হাজার টনে। এই সম্পদের বাজার প্রায় ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বুয়েট ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালিত যৌথ গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, এক মেট্রিক টন প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড ও র‌্যাম থেকে পাওয়া যেতে পারে ২৮ হাজার ডলার বা ২৪ লাখ টাকা মূল্যমানের স্বর্ণ, রুপা, তামা ও টিন। প্রাথমিকভাবে চালনো এক গবেষণা অনুসারে, এই ব্যবসায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ই-বর্জ্য রিসাইকেল করার ফলে দেশ বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে, সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মাত্র ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ২ লাখ ২৮ হাজার টনের মতো রিসাইকেল বা পুনঃব্যবহার হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিক বর্জ্য আগুনে পোড়ানোর ফলে ২০১৯ সালে বায়ুম-লে প্রায় ৮.৫ কোটি টন কার্বণ ডাই-অক্সাইড যোগ হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১৫০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে জমা হচ্ছে। দেশে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকসামগ্রী রিসাইকেল করার উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার কারখানা রয়েছে। তবে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে এত সমস্যার মধ্যে আশার আলো এই যে, দেশে বর্তমানে প্লাস্টিক রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গুঁড়ো করে বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। যা কিনা ২০৩০ সাল নাগাদ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকায় পরিণত হবে। ২০২২ অর্থবছরে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে। রপ্তানি খাতে ১২তম অবস্থানে উঠে এসেছে পণ্যটি। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ তথা জাতীয় অর্থনীতির জন্য প্লাস্টিক রিসাইকেল কী পরিমাণ কার্যকর হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। দেশে বর্তমানে প্লাস্টিক রিসাইকেল শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দক্ষ, আধা দক্ষ মিলিয়ে ৫ হাজার ৫০০ কারখানায় প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যে বস্তুটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে তা হলো কাগজ। যা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ বনজ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া কাগজ উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার ফলে তা পরিবেশ দূষণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অথচ কাগজ রিসাইকেল করা হলে ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ কমানো ও প্রায় ৭৫ শতাংশ বায়ুদূষণ হ্রাস করা সম্ভব। ১ টন কাগজ উৎপাদনে প্রায় ২৪টি গাছ নিধন করতে হয়। তাই দেশে বর্তমানে কাগজ উৎপাদনের চাইতে কাগজ রিসাইকেল প্রতি মনযোগী হওয়া সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। রিসাইকেল করার ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ সুরক্ষিত হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি গ্রিন হাউসের প্রভাব থেকে পৃথিবীও বহুলাংশে রক্ষা পাবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ ক. নাম্বার অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য সচেষ্ট থাকবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের অবশ্যই পরিবেশ, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। আর এর একটি যুগোপযোগী সমাধান হতে পারে রিসাইকেল পদ্ধতি। পরিত্যক্ত উপাদান রিসাইকেল করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক, সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা বহুলাংশে সম্ভব হবে। পরিত্যক্ত বস্ত্যসমূহ যেগুলো রিসাইকেলের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখতে পারি। এছাড়া পরিবেশের বিপর্যয় ঘটলে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পতিত হবে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় রিসাইকেলের প্রতি আরও গভীর মনোযোগ ও একইসঙ্গে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন আগামীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য সুন্দর পরিবেশ ও ধরিত্রী গড়ে তুলতে এখন থেকেই সবাই পরিত্যক্ত উপাদান সামগ্রীর রিসাইকেল করার মধ্য দিয়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আরও বেশি সচেষ্ট হই। এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়নেও পরিত্যক্ত বস্তসমূহের রিসাইকেল কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে একদিকে যেমন বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব দূর, লিঙ্গ সমতায়ন এবং সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ বহুলাংশে হ্রাস পাবে। পরিশেষে, পরিত্যক্ত উপাদান সামগ্রীর রিসাইকেল রূপকল্প ২০৪১ বা বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করবে এটাই দেশের সব সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।

[লেখক: শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয়]

back to top