alt

উপ-সম্পাদকীয়

মূল্যস্ফীতি কমবে কীভাবে

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: রোববার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথা অনুযায়ী বিরোধী দলের আন্দোলনের দিকে মনোনিবেশ করার চেয়ে নতুন সরকারের জন্য অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মূল্যস্ফীতি কমানো। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানো, আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কেন শ্রীলঙ্কার পথ অনুসরণ করছে নাÑ তা নিয়ে অনেক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা অহর্নিশ পত্রিকার পাতায় এবং টকশোতে শুনতে পাই। এইসব আলোচনা-পর্যালোচনা শুনলে মনে হয়, মূল্যস্ফীতি হ্রাস করা খুব সহজ, শুধু টকশোর কথক ও অর্থনীতিবিদদের কথামতো কাজ করতে হবে। তাদের অভিমত হচ্ছে, বাংলাদেশের নীতি প্রণেতারা অর্থনীতি বোঝেন না, তাই বর্তমান নীতি নির্ধারকদের দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ‘সুবাতাস’ বইবেও না।

কিন্তু এদের অনেকের কথার মধ্যে অর্থনীতির চেয়ে রাজনীতির আঁচ বেশি। বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ নীতি সুদ বাড়ানো এবং টাকার অবমূল্যায়নের পক্ষে বলতে গিয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘রেফারেন্স রেট’কে টুপি পরিয়ে দেয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, সুদ হার এত বেশি বৃদ্ধি করতে হবে যাতে কেউ ঋণের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ না হয়। এতদিন তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে নোট ছাপানো বন্ধ করতে বলেছেন, তাদের আশঙ্কা ছাপানো সব টাকা সরকার নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি টাকাও নেয়নি, বরং আগের বকেয়া ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

এই পরিসংখ্যান দেখে অর্থনীতিবিদেরা সুর বদল করে এখন বলছেন, ছাপানো সব টাকা ইসলামিক ব্যাংকগুলো নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনে তারা টাকা তো নেবেই; সরকার এবং তফসিলি ব্যাংকের প্রয়োজনে টাকা দেয়াই বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ। কোনো তফসিলি ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়লে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কাছে ধরনা দেবেই; কেন্দ্রিয় ব্যাংক তারল্য সংকটে শুধু অর্থ দেবে না, সংকট সৃষ্টির কারণও বিশ্লেষণ করবে।

সরকার চলতি বছরে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২৭ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা; বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের কারণে প্রাইভেট সেক্টরে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের সক্ষমতা কমলেও এতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার কথা। যারা অহর্নিশ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের উদাহরণ টেনে বাংলাদেশ সরকার বা কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ব্যর্থতা তুলে ধরছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হ্রাস নীতি নির্ধারকদের প্রয়াসলব্ধ সফলতা নয়, অনেকটা স্বয়ংক্রিয়। শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াত্ব কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সেই দেশের সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বেশি মেধা খাটাতে বা প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হয়নি। কারণ করোনা উত্তর পর্যটন খাতের পুনরুত্থান শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার নতুন সরকার আগের সরকারের ভুল নীতি পরিহারপূর্বক কৃষিতে কেমিক্যাল সার এবং কীটনাশক ব্যবহার উৎসাহিত করায় কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। উপরন্তু আগের সরকারের হ্রাসকৃত ভ্যাটনীতি পরিহারপূর্ক ভ্যাটহার বর্ধিত করাসহ বিভিন্ন ক্ষত্রে প্রদত্ত ভর্তুকি হ্রাস করায় সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। দেশটিরি সরকারের এই সব ভুলের সংশোধন আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আনতে সহায়তা করেছে; এর ফলে শ্রীলঙ্কার রপ্তানি বেড়েছে, শিল্প উৎপাদন বেড়েছে, আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়া গেছে এবং রেমিট্যান্সও বেড়েছে।

করোনার পর শ্রীলঙ্কার ৭৬ শতাংশ রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে বিপুল সংখ্যক দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি। শ্রীলঙ্কার শতভাগ লোক শিক্ষিত, ভাষা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা বাংলাদেশের চেয়ে অগ্রগামী। রেমিট্যান্স বাড়াতে শ্রীলঙ্কা প্রণোদনা দিচ্ছে; কিন্তু রেমিট্যান্স বৃদ্ধির একমাত্র কারণ প্রণোদনা নয়, এর পেছনে কাজ করেছে শ্রীলঙ্কার প্রবাসীদের দেশাত্মবোধ, দেশকে দেউলিয়া থেকে পুনরুদ্ধারে সরকারের পক্ষ-বিপক্ষ নির্বিশেষে সবাই দেশে ডলার পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রণোদনা দিচ্ছে, কিন্তু আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ছে না। না বাড়ার কারণ চেপে রাখা ডলারের বিনিময় হার নয়, দায়ী হচ্ছে দেশের সরকার, অর্থনীতি এবং ব্যাংকের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার। সরকারকে দুর্বল করতে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ না করে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে সংঘবদ্ধ একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে দেশে-বিদেশে কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি সবল। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার, ২০২৭ সনের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ২৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫.২৩ বিলিয়ন ডলার, অন্য হিসাবে ২০.০২ বিলিয়ন ডলার।

আমাদেরও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ডলার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে কমছে। সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের ষড়যন্ত্র ছাড়াও আমাদের রেমিট্যান্স না বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে কালোবাজারে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপক চাহিদা। এই ব্যাপক চাহিদার কারণে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়নো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ঘুষ-দুর্নীতির অর্থ, আন্ডার ইনভয়েসের অর্থ, বিদেশে চিকিৎসার অর্থ, টিউশন ফি নিয়মিত দেশ থেকে অবৈধ পথে পাচার হচ্ছে। স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে চিরতরে দেশত্যাগীদের অর্থ পাচারের পরিমাণও কম নয়। বিনোদন আর বিয়ের বাজার করার জন্য হাজার হাজার লোক ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর যাচ্ছেÑ এদের প্রায় সবার বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, ঘুষ আর ওভার ইনভয়েসের ডলার ওদের অ্যাকাউন্টে নিয়মিত জমা হয়। হাজীদেরও প্রতি বছর কালোবাজার থেকে হারাম পন্থায় ডলার, রিয়াল কিনতে দেখা যায়। তাই ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট চালু করেও রেমিট্যান্স বাড়ানো বা অর্থ পাচার রোধ করা যাবে বলে মনে হয় না।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর তাগিদে আর্জেন্টিনার পেসোর অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বারবার; কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি, ডলারের দাপ্তরিক বিনিময়মূল্য ২৩৮.৫ পেসোর বিপরীতে কালোবাজারে বিনিময়মূল্য ৪৭৪. ০ পেসো। ২০২২ সনে লেবাননের মূল্যস্ফীতি ছিল ১৭০ শতাংশ, পরবর্তীকালে কিছুটা কমে যায়, কিন্তু রেমিট্যান্স বাড়ানোর তাগিদে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শে লেবানিজ পাউন্ডের অবমূল্যায়ন করার কারণে বর্তমানে আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ২৩০ শতাংশ।

ইট বা বালি ছাড়া আমাদের প্রায় সব পণ্য ডলার খরচ করে আমদানি করতে হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ১৬ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার পরও আমদানি ব্যয় হয়েছে ৭৫.০৬ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে আমরা রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাবদ পেয়েছি যথাক্রমে ৫৫.৫৫ বিলিয়ন ও ২৩ বিলিয়ন ডলার; অর্থাৎ উভয় খাতের আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মিটাতে হচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৮৫ টাকা, এখন ১১০ টাকা; এর ফলে শুধু টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ৮৫ টাকার জিনিসের দাম হয়ে গেছে ১১০ টাকা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বাজারেও দাম বেড়েছে।

উল্লেখিত যে দুটি কারণে মূল্যস্ফীতি হয়েছে সেই দুটি প্রভাবকের তাড়া বন্ধ না হলে মূল্যস্ফীতি কমবে কী করে! মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে গরিব পরিবারগুলোকে স্বস্তি দিতে সরকার খোলা বাজারে কম দরে জিনিসপত্র বিক্রি করছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১ লাখ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় হাজার হাজার নিঃস্ব পরিবারকে বিনে পয়সায় অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছে। সরকারের এই কার্যক্রম প্রয়োজনে আরও বাড়াতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও ইতোমধ্যে নিত্য ব্যবহার্য কয়েকটি পণ্যের শুল্ক হার কমিয়েছে। সুখের খবর হচ্ছে, রাজস্ব আদায় বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৪.২৭ শতাংশ।

রাজস্ব আদায় যত বৃদ্ধি পাবে, সরকারের ঋণ নির্ভরতা ও মূল্যস্ফীতি তত কমবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রাজস্ব আদায় আরও বাড়ানো সম্ভব। অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ মোতাবেক সুদ হার অতিরিক্ত বৃদ্ধি করে বিনিয়োগ ও জনগণের ক্রয় ক্ষমতা সংকুচিত করা হলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা সৃষ্টি হলে কর্মহীন লোকের সংখ্যা বাড়বে, শিল্পায়ন থেমে যাবে, উৎপাদন কমবে, উন্নয়ন কর্মকান্ড ভেস্তে যাবে। টাকার আরও অবমূল্যায়ন করা হলে মূল্যস্ফীতিও আরও বেড়ে যাবে।

ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমাদের অস্বস্তির কারণ। দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার ৭০ শতাংশই আসে রপ্তানি থেকে, ২৮ শতাংশ আসে রেমিট্যান্সে থেকে এবং বাকি ২ শতাংশ আসে বৈদেশিক বিনিয়োগ, ঋণ ও অন্যান্য খাত থেকে। আমাদের রপ্তানির আয়ের ৮০ শতাংশ আসে গার্মেন্টস থেকে, তাই রপ্তানি আয় ব্যাপকভাবে বাড়ানোর সুযোগ কম। পৃথিবীর বহু দেশ বৈদেশিক মুদ্রার জন্য পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। কক্সবাজার হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুময় অভঙ্গ সমুদ্র সৈকত, কিন্তু রক্ষণশীল পরিবেশ ও নিরাপত্তার অভাবে বিদেশি পর্যটকদের তা আকৃষ্ট করে না। তাই পর্যটন খাতেও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার আয় প্রায় শূন্য। একমাত্র রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সুযোগ আছে রেমিট্যান্সে। ২০২৩ সনে ভারত এই খাতে আয় করেছে ১২৫ বিলিয়ন ডলার, ফিলিপিন্স ৪০ বিলিয়ন ডলার, আর আমাদের রেমিট্যান্স মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলার।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধি করতে হলে বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের মিথ্যা এবং গুজবের প্রচার রোধ করা জরুরি। হুন্ডি ব্যবসাসহ আন্ডার ইনভয়েস, ওভার ইনভয়েস রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বুদ্ধিভিত্তিক তদারকি বাড়ানো ফরজ। অন্যদিকে কম সুদ হারে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা থেকে ঋণ নিতে হবে, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, পাকিস্তানের মতো চীন বা সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ডলার জমা নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টাকশাল]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মূল্যস্ফীতি কমবে কীভাবে

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

রোববার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথা অনুযায়ী বিরোধী দলের আন্দোলনের দিকে মনোনিবেশ করার চেয়ে নতুন সরকারের জন্য অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মূল্যস্ফীতি কমানো। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানো, আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কেন শ্রীলঙ্কার পথ অনুসরণ করছে নাÑ তা নিয়ে অনেক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা অহর্নিশ পত্রিকার পাতায় এবং টকশোতে শুনতে পাই। এইসব আলোচনা-পর্যালোচনা শুনলে মনে হয়, মূল্যস্ফীতি হ্রাস করা খুব সহজ, শুধু টকশোর কথক ও অর্থনীতিবিদদের কথামতো কাজ করতে হবে। তাদের অভিমত হচ্ছে, বাংলাদেশের নীতি প্রণেতারা অর্থনীতি বোঝেন না, তাই বর্তমান নীতি নির্ধারকদের দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ‘সুবাতাস’ বইবেও না।

কিন্তু এদের অনেকের কথার মধ্যে অর্থনীতির চেয়ে রাজনীতির আঁচ বেশি। বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ নীতি সুদ বাড়ানো এবং টাকার অবমূল্যায়নের পক্ষে বলতে গিয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘রেফারেন্স রেট’কে টুপি পরিয়ে দেয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, সুদ হার এত বেশি বৃদ্ধি করতে হবে যাতে কেউ ঋণের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ না হয়। এতদিন তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে নোট ছাপানো বন্ধ করতে বলেছেন, তাদের আশঙ্কা ছাপানো সব টাকা সরকার নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি টাকাও নেয়নি, বরং আগের বকেয়া ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

এই পরিসংখ্যান দেখে অর্থনীতিবিদেরা সুর বদল করে এখন বলছেন, ছাপানো সব টাকা ইসলামিক ব্যাংকগুলো নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনে তারা টাকা তো নেবেই; সরকার এবং তফসিলি ব্যাংকের প্রয়োজনে টাকা দেয়াই বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ। কোনো তফসিলি ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়লে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কাছে ধরনা দেবেই; কেন্দ্রিয় ব্যাংক তারল্য সংকটে শুধু অর্থ দেবে না, সংকট সৃষ্টির কারণও বিশ্লেষণ করবে।

সরকার চলতি বছরে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২৭ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা; বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের কারণে প্রাইভেট সেক্টরে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের সক্ষমতা কমলেও এতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার কথা। যারা অহর্নিশ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের উদাহরণ টেনে বাংলাদেশ সরকার বা কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ব্যর্থতা তুলে ধরছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হ্রাস নীতি নির্ধারকদের প্রয়াসলব্ধ সফলতা নয়, অনেকটা স্বয়ংক্রিয়। শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াত্ব কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সেই দেশের সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বেশি মেধা খাটাতে বা প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হয়নি। কারণ করোনা উত্তর পর্যটন খাতের পুনরুত্থান শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার নতুন সরকার আগের সরকারের ভুল নীতি পরিহারপূর্বক কৃষিতে কেমিক্যাল সার এবং কীটনাশক ব্যবহার উৎসাহিত করায় কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। উপরন্তু আগের সরকারের হ্রাসকৃত ভ্যাটনীতি পরিহারপূর্ক ভ্যাটহার বর্ধিত করাসহ বিভিন্ন ক্ষত্রে প্রদত্ত ভর্তুকি হ্রাস করায় সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। দেশটিরি সরকারের এই সব ভুলের সংশোধন আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আনতে সহায়তা করেছে; এর ফলে শ্রীলঙ্কার রপ্তানি বেড়েছে, শিল্প উৎপাদন বেড়েছে, আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়া গেছে এবং রেমিট্যান্সও বেড়েছে।

করোনার পর শ্রীলঙ্কার ৭৬ শতাংশ রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে বিপুল সংখ্যক দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি। শ্রীলঙ্কার শতভাগ লোক শিক্ষিত, ভাষা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা বাংলাদেশের চেয়ে অগ্রগামী। রেমিট্যান্স বাড়াতে শ্রীলঙ্কা প্রণোদনা দিচ্ছে; কিন্তু রেমিট্যান্স বৃদ্ধির একমাত্র কারণ প্রণোদনা নয়, এর পেছনে কাজ করেছে শ্রীলঙ্কার প্রবাসীদের দেশাত্মবোধ, দেশকে দেউলিয়া থেকে পুনরুদ্ধারে সরকারের পক্ষ-বিপক্ষ নির্বিশেষে সবাই দেশে ডলার পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রণোদনা দিচ্ছে, কিন্তু আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ছে না। না বাড়ার কারণ চেপে রাখা ডলারের বিনিময় হার নয়, দায়ী হচ্ছে দেশের সরকার, অর্থনীতি এবং ব্যাংকের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার। সরকারকে দুর্বল করতে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ না করে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে সংঘবদ্ধ একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে দেশে-বিদেশে কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি সবল। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার, ২০২৭ সনের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ২৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫.২৩ বিলিয়ন ডলার, অন্য হিসাবে ২০.০২ বিলিয়ন ডলার।

আমাদেরও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ডলার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে কমছে। সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের ষড়যন্ত্র ছাড়াও আমাদের রেমিট্যান্স না বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে কালোবাজারে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপক চাহিদা। এই ব্যাপক চাহিদার কারণে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়নো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ঘুষ-দুর্নীতির অর্থ, আন্ডার ইনভয়েসের অর্থ, বিদেশে চিকিৎসার অর্থ, টিউশন ফি নিয়মিত দেশ থেকে অবৈধ পথে পাচার হচ্ছে। স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে চিরতরে দেশত্যাগীদের অর্থ পাচারের পরিমাণও কম নয়। বিনোদন আর বিয়ের বাজার করার জন্য হাজার হাজার লোক ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর যাচ্ছেÑ এদের প্রায় সবার বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, ঘুষ আর ওভার ইনভয়েসের ডলার ওদের অ্যাকাউন্টে নিয়মিত জমা হয়। হাজীদেরও প্রতি বছর কালোবাজার থেকে হারাম পন্থায় ডলার, রিয়াল কিনতে দেখা যায়। তাই ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট চালু করেও রেমিট্যান্স বাড়ানো বা অর্থ পাচার রোধ করা যাবে বলে মনে হয় না।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর তাগিদে আর্জেন্টিনার পেসোর অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বারবার; কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি, ডলারের দাপ্তরিক বিনিময়মূল্য ২৩৮.৫ পেসোর বিপরীতে কালোবাজারে বিনিময়মূল্য ৪৭৪. ০ পেসো। ২০২২ সনে লেবাননের মূল্যস্ফীতি ছিল ১৭০ শতাংশ, পরবর্তীকালে কিছুটা কমে যায়, কিন্তু রেমিট্যান্স বাড়ানোর তাগিদে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শে লেবানিজ পাউন্ডের অবমূল্যায়ন করার কারণে বর্তমানে আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ২৩০ শতাংশ।

ইট বা বালি ছাড়া আমাদের প্রায় সব পণ্য ডলার খরচ করে আমদানি করতে হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ১৬ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার পরও আমদানি ব্যয় হয়েছে ৭৫.০৬ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে আমরা রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাবদ পেয়েছি যথাক্রমে ৫৫.৫৫ বিলিয়ন ও ২৩ বিলিয়ন ডলার; অর্থাৎ উভয় খাতের আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মিটাতে হচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৮৫ টাকা, এখন ১১০ টাকা; এর ফলে শুধু টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ৮৫ টাকার জিনিসের দাম হয়ে গেছে ১১০ টাকা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বাজারেও দাম বেড়েছে।

উল্লেখিত যে দুটি কারণে মূল্যস্ফীতি হয়েছে সেই দুটি প্রভাবকের তাড়া বন্ধ না হলে মূল্যস্ফীতি কমবে কী করে! মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে গরিব পরিবারগুলোকে স্বস্তি দিতে সরকার খোলা বাজারে কম দরে জিনিসপত্র বিক্রি করছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১ লাখ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় হাজার হাজার নিঃস্ব পরিবারকে বিনে পয়সায় অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছে। সরকারের এই কার্যক্রম প্রয়োজনে আরও বাড়াতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও ইতোমধ্যে নিত্য ব্যবহার্য কয়েকটি পণ্যের শুল্ক হার কমিয়েছে। সুখের খবর হচ্ছে, রাজস্ব আদায় বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৪.২৭ শতাংশ।

রাজস্ব আদায় যত বৃদ্ধি পাবে, সরকারের ঋণ নির্ভরতা ও মূল্যস্ফীতি তত কমবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রাজস্ব আদায় আরও বাড়ানো সম্ভব। অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ মোতাবেক সুদ হার অতিরিক্ত বৃদ্ধি করে বিনিয়োগ ও জনগণের ক্রয় ক্ষমতা সংকুচিত করা হলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা সৃষ্টি হলে কর্মহীন লোকের সংখ্যা বাড়বে, শিল্পায়ন থেমে যাবে, উৎপাদন কমবে, উন্নয়ন কর্মকান্ড ভেস্তে যাবে। টাকার আরও অবমূল্যায়ন করা হলে মূল্যস্ফীতিও আরও বেড়ে যাবে।

ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমাদের অস্বস্তির কারণ। দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার ৭০ শতাংশই আসে রপ্তানি থেকে, ২৮ শতাংশ আসে রেমিট্যান্সে থেকে এবং বাকি ২ শতাংশ আসে বৈদেশিক বিনিয়োগ, ঋণ ও অন্যান্য খাত থেকে। আমাদের রপ্তানির আয়ের ৮০ শতাংশ আসে গার্মেন্টস থেকে, তাই রপ্তানি আয় ব্যাপকভাবে বাড়ানোর সুযোগ কম। পৃথিবীর বহু দেশ বৈদেশিক মুদ্রার জন্য পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। কক্সবাজার হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুময় অভঙ্গ সমুদ্র সৈকত, কিন্তু রক্ষণশীল পরিবেশ ও নিরাপত্তার অভাবে বিদেশি পর্যটকদের তা আকৃষ্ট করে না। তাই পর্যটন খাতেও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার আয় প্রায় শূন্য। একমাত্র রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সুযোগ আছে রেমিট্যান্সে। ২০২৩ সনে ভারত এই খাতে আয় করেছে ১২৫ বিলিয়ন ডলার, ফিলিপিন্স ৪০ বিলিয়ন ডলার, আর আমাদের রেমিট্যান্স মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলার।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধি করতে হলে বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের মিথ্যা এবং গুজবের প্রচার রোধ করা জরুরি। হুন্ডি ব্যবসাসহ আন্ডার ইনভয়েস, ওভার ইনভয়েস রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বুদ্ধিভিত্তিক তদারকি বাড়ানো ফরজ। অন্যদিকে কম সুদ হারে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা থেকে ঋণ নিতে হবে, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, পাকিস্তানের মতো চীন বা সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ডলার জমা নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টাকশাল]

back to top