alt

উপ-সম্পাদকীয়

বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু গণিত

আনোয়ার হোসেন

: বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

গণিত হলো বিজ্ঞানের ভাষা। সভ্যতার উন্নতির সাথে গণিতের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। জীবনকে নিয়মমাফিক পরিচালনার জন্য ন্যূনতম গণিতের জ্ঞান অপরিহার্য। অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত যারা তারাও গুনতে জানে। গণিত ছাড়া কোন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর সকল প্রাণীর মধ্যে ন্যূনতম গণিতের জ্ঞান রয়েছে। আণুবীক্ষণিক ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে গাছপালা, আকাশ-বাতাশ, গ্রহ-নক্ষত্র সবকিছুতে গণিতের ছোঁয়া রয়েছে।

গাণিতিক নিয়ম ছাড়া কোন কিছুই চলমান রাখা সম্ভব নয়। এজন্য গণিতকে সকল বিজ্ঞানের জননী বলা হয়। গ্রিক ‘ম্যাথেমা’ শব্দ থেকে এসেছে ইংরেজি ‘ম্যাথমেটিক্স’ শব্দটি। গ্রিক ম্যাথেমার অর্থ জ্ঞান বা শিক্ষা। জ্ঞানের সমার্থক হবার কারণে গ্রিসে জ্ঞানী বা শিক্ষক প্রত্যেককেই ম্যাথমেটিসিয়ান বা গণিতবিদ বলা হয়। প্রাচীন ও মধ্যযুগের সব প-িত-ধর্মবিদ, ইতিহাসবিদ, ভূগোলবিদ, দার্শনিক, চিকিৎসক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজতাত্ত্বিক যাই হোন না কেনÑ প্রায় সবাই গণিতে দক্ষ হতেন। আসলে গণিত ছাড়া কারোই পেশাগত দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব না।

গণিতকে বলা হয় প্রকৃতির ব্যাকরণ। আদিকাল থেকে তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখাসহ দৈনন্দিন জীবনের সর্বত্র গণিত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অ্যালার্মের মাধ্যমে ঘুম থেকে ওঠা থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সারা দিনই অতিবাহিত হয় গাণিতিকভাবে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কার্যকলাপ করতে সময় মেনটেইন করাও গণিত বিষয়ভুক্ত, দিন না রাত তাও গণিতের পাক-প্রাথমিক স্তর, দোকানে কিছু কিনতে গেলে জিনিসের দাম দেখে কিনি, ট্রেন- বাস, অটো-রিকশায় ভাড়া দিতেও গণিত প্রয়োজন।

গণিত ছাড়া প্রোগ্রামিং হচ্ছে সদ্যভূমিষ্ঠ একটি বাচ্চার মতো। যার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। সবধরনের গণিতই প্রোগ্রামিংয়ের জন্য প্রয়োজন হয়। ক্যালকুলাস, লিনিয়ার অ্যালজেব্রা, পরিসংখ্যান ও সম্ভাবনা, ডিসক্রিট ম্যাথমেটিকস ছাড়া প্রোগ্রামিং অচল। কম্পিউটার, সফটওয়্যার, কোডিং, যাতায়াত ব্যবস্থা, স্থাপত্যশিল্পসহ সর্বত্র রয়েছে গণিতের ব্যবহার। গণিত প্রায় প্রতিটি বিষয়ের ভিত্তি। গণিতের প্রতিটি দিক বা রূপ যেমন বীজগণিত, জটিল সংখ্যা, ত্রিকোণমিতি ইত্যাদি প্রতিদিন আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে।

আপনি যেক্ষেত্রে কাজ করেন সেক্ষেত্রে আপনি সর্বদা একই প্রভাব দেখতে পাবেন, তা ওষুধ, আবহাওয়াবিদ্যা বা ক্রিপ্টোগ্রাফি ইত্যাদিতেই হোক না কেন। মহাকাশচারীরা এটিকে মহাকাশে জীবনের সম্ভাবনা নির্ধারণ করতে ব্যবহার করে, পরিসংখ্যানবিদরা জনসংখ্যার প্রবণতা এবং হিসাবরক্ষকদের ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য ডেটার ওপর নির্ভর করে। এটি একটি কোম্পানি ভালো করছে নাকি লোকসান করছে তা নির্ধারণ করা। সংখ্যা দিয়ে সঠিকভাবে বিন্যাসের জ্ঞান মানুষের আছে বলেই বিশ্বকাপ ফুটবলে ৩২টি দলকে দিয়ে ৬৪টি ম্যাচ খেলিয়ে বিজয়ী বের করা যায়। গণিত না জানলে এই ৩২টি দলের মধ্যে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করতে আয়োজকদের ৫৩২টি খেলার আয়োজন করতে হতো।

জীববিজ্ঞান, অনুজীববিজ্ঞান, বংশগতিবিজ্ঞান এর জেনোটাইপ-ফেনোটাইপ নির্ধারণে সংখ্যার বিন্যাস জ্ঞান না থাকলে চলত না। এভাবে পরিবেশের নান্দনিক সবকিছুর অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে গাণিতিক যুক্তির সঠিক প্রয়োগ। বর্তমান সময় কম্পিউটারের যুগ। কম্পিউটারের আবিষ্কারক ছিলেন একজন গণিতবিদ। যে কোনো ধরনের গবেষণার ক্ষেত্রে গণিতের প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। গবেষণার ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের বাস্তবভিত্তিক মডেল তৈরি গণিত ছাড়া অসম্ভব। গণিত না থাকলে, পৃথিবী আজ যে বিশাল অগ্রগতি করেছে তা তৈরি করত না কারণ এটি প্রাকৃতিক বিশ্বকে বোঝার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। গণিত কণা এবং তরঙ্গের আচরণ, তরল প্রবাহ এবং জটিল সিস্টেমের গতিশীলতা বর্ণনা করে।

খ্যাতনামা জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিদ গ্যালিলিও বলেছিলেন, ‘আমি যদি আবার পড়াশোনা শুরু করতাম তবে আমি প্লেটোর পরামর্শ অনুসরণ করে গণিত দিয়ে শুরু করতাম।’ কিন্তু শৈশবে আমাদের সামনে গণিতকে ভীতিকর বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করায় গণিতের ভীতি থেকে যায় সারা জীবন। ফলে গণিত আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কী কাজে লাগে তা অজানাই থেকে যায়। গণিত সম্পর্কে অজ্ঞ হলে বিশ্বের অন্য জিনিস সঠিকভাবে জানা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে কান্ট বলেছেনÑ ‘প্রকৃত বিজ্ঞান হলো সেই বিজ্ঞান, যে বিজ্ঞান গাণিতিক।’

গণিত সব বিজ্ঞানকে নিখুঁত করে আধুনিক সভ্যতা গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, মেডিসিন ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিজ্ঞানের ওপর জোর দেওয়া হয়। এসব বিজ্ঞান কেবল গণিতের সহায়তায় সামনের দিকে অগ্রসর হয়। তাই গণিতকে বলা হয় সব বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু। মস্তিষ্ককে সূচালো করার সেরা উপায় গণিতচর্চা। গণিত আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও বিশ্লেষণমূলক দক্ষতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গণিতের জাদুকরি শক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি স্তর করতে পারে সাফল্যম-িত। মোটকথা গণিতে দক্ষ হয়ে উঠলে এবং গুরুত্বসহকারে অধ্যয়ন করলে আমরা বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে আরো অগ্রসর হতে পারব। তাই প্রাথমিক শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত গণিত শিক্ষাকে আরো সুসংহত করে তুলতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে যৌক্তিক জ্ঞানসম্পন্ন মেধাবী জনগোষ্ঠী, যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ ও জাতি সাফল্যের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর]

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু গণিত

আনোয়ার হোসেন

বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

গণিত হলো বিজ্ঞানের ভাষা। সভ্যতার উন্নতির সাথে গণিতের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। জীবনকে নিয়মমাফিক পরিচালনার জন্য ন্যূনতম গণিতের জ্ঞান অপরিহার্য। অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত যারা তারাও গুনতে জানে। গণিত ছাড়া কোন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর সকল প্রাণীর মধ্যে ন্যূনতম গণিতের জ্ঞান রয়েছে। আণুবীক্ষণিক ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে গাছপালা, আকাশ-বাতাশ, গ্রহ-নক্ষত্র সবকিছুতে গণিতের ছোঁয়া রয়েছে।

গাণিতিক নিয়ম ছাড়া কোন কিছুই চলমান রাখা সম্ভব নয়। এজন্য গণিতকে সকল বিজ্ঞানের জননী বলা হয়। গ্রিক ‘ম্যাথেমা’ শব্দ থেকে এসেছে ইংরেজি ‘ম্যাথমেটিক্স’ শব্দটি। গ্রিক ম্যাথেমার অর্থ জ্ঞান বা শিক্ষা। জ্ঞানের সমার্থক হবার কারণে গ্রিসে জ্ঞানী বা শিক্ষক প্রত্যেককেই ম্যাথমেটিসিয়ান বা গণিতবিদ বলা হয়। প্রাচীন ও মধ্যযুগের সব প-িত-ধর্মবিদ, ইতিহাসবিদ, ভূগোলবিদ, দার্শনিক, চিকিৎসক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজতাত্ত্বিক যাই হোন না কেনÑ প্রায় সবাই গণিতে দক্ষ হতেন। আসলে গণিত ছাড়া কারোই পেশাগত দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব না।

গণিতকে বলা হয় প্রকৃতির ব্যাকরণ। আদিকাল থেকে তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখাসহ দৈনন্দিন জীবনের সর্বত্র গণিত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অ্যালার্মের মাধ্যমে ঘুম থেকে ওঠা থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সারা দিনই অতিবাহিত হয় গাণিতিকভাবে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কার্যকলাপ করতে সময় মেনটেইন করাও গণিত বিষয়ভুক্ত, দিন না রাত তাও গণিতের পাক-প্রাথমিক স্তর, দোকানে কিছু কিনতে গেলে জিনিসের দাম দেখে কিনি, ট্রেন- বাস, অটো-রিকশায় ভাড়া দিতেও গণিত প্রয়োজন।

গণিত ছাড়া প্রোগ্রামিং হচ্ছে সদ্যভূমিষ্ঠ একটি বাচ্চার মতো। যার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। সবধরনের গণিতই প্রোগ্রামিংয়ের জন্য প্রয়োজন হয়। ক্যালকুলাস, লিনিয়ার অ্যালজেব্রা, পরিসংখ্যান ও সম্ভাবনা, ডিসক্রিট ম্যাথমেটিকস ছাড়া প্রোগ্রামিং অচল। কম্পিউটার, সফটওয়্যার, কোডিং, যাতায়াত ব্যবস্থা, স্থাপত্যশিল্পসহ সর্বত্র রয়েছে গণিতের ব্যবহার। গণিত প্রায় প্রতিটি বিষয়ের ভিত্তি। গণিতের প্রতিটি দিক বা রূপ যেমন বীজগণিত, জটিল সংখ্যা, ত্রিকোণমিতি ইত্যাদি প্রতিদিন আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে।

আপনি যেক্ষেত্রে কাজ করেন সেক্ষেত্রে আপনি সর্বদা একই প্রভাব দেখতে পাবেন, তা ওষুধ, আবহাওয়াবিদ্যা বা ক্রিপ্টোগ্রাফি ইত্যাদিতেই হোক না কেন। মহাকাশচারীরা এটিকে মহাকাশে জীবনের সম্ভাবনা নির্ধারণ করতে ব্যবহার করে, পরিসংখ্যানবিদরা জনসংখ্যার প্রবণতা এবং হিসাবরক্ষকদের ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য ডেটার ওপর নির্ভর করে। এটি একটি কোম্পানি ভালো করছে নাকি লোকসান করছে তা নির্ধারণ করা। সংখ্যা দিয়ে সঠিকভাবে বিন্যাসের জ্ঞান মানুষের আছে বলেই বিশ্বকাপ ফুটবলে ৩২টি দলকে দিয়ে ৬৪টি ম্যাচ খেলিয়ে বিজয়ী বের করা যায়। গণিত না জানলে এই ৩২টি দলের মধ্যে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করতে আয়োজকদের ৫৩২টি খেলার আয়োজন করতে হতো।

জীববিজ্ঞান, অনুজীববিজ্ঞান, বংশগতিবিজ্ঞান এর জেনোটাইপ-ফেনোটাইপ নির্ধারণে সংখ্যার বিন্যাস জ্ঞান না থাকলে চলত না। এভাবে পরিবেশের নান্দনিক সবকিছুর অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে গাণিতিক যুক্তির সঠিক প্রয়োগ। বর্তমান সময় কম্পিউটারের যুগ। কম্পিউটারের আবিষ্কারক ছিলেন একজন গণিতবিদ। যে কোনো ধরনের গবেষণার ক্ষেত্রে গণিতের প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। গবেষণার ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের বাস্তবভিত্তিক মডেল তৈরি গণিত ছাড়া অসম্ভব। গণিত না থাকলে, পৃথিবী আজ যে বিশাল অগ্রগতি করেছে তা তৈরি করত না কারণ এটি প্রাকৃতিক বিশ্বকে বোঝার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। গণিত কণা এবং তরঙ্গের আচরণ, তরল প্রবাহ এবং জটিল সিস্টেমের গতিশীলতা বর্ণনা করে।

খ্যাতনামা জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিদ গ্যালিলিও বলেছিলেন, ‘আমি যদি আবার পড়াশোনা শুরু করতাম তবে আমি প্লেটোর পরামর্শ অনুসরণ করে গণিত দিয়ে শুরু করতাম।’ কিন্তু শৈশবে আমাদের সামনে গণিতকে ভীতিকর বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করায় গণিতের ভীতি থেকে যায় সারা জীবন। ফলে গণিত আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কী কাজে লাগে তা অজানাই থেকে যায়। গণিত সম্পর্কে অজ্ঞ হলে বিশ্বের অন্য জিনিস সঠিকভাবে জানা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে কান্ট বলেছেনÑ ‘প্রকৃত বিজ্ঞান হলো সেই বিজ্ঞান, যে বিজ্ঞান গাণিতিক।’

গণিত সব বিজ্ঞানকে নিখুঁত করে আধুনিক সভ্যতা গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, মেডিসিন ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিজ্ঞানের ওপর জোর দেওয়া হয়। এসব বিজ্ঞান কেবল গণিতের সহায়তায় সামনের দিকে অগ্রসর হয়। তাই গণিতকে বলা হয় সব বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু। মস্তিষ্ককে সূচালো করার সেরা উপায় গণিতচর্চা। গণিত আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও বিশ্লেষণমূলক দক্ষতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গণিতের জাদুকরি শক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি স্তর করতে পারে সাফল্যম-িত। মোটকথা গণিতে দক্ষ হয়ে উঠলে এবং গুরুত্বসহকারে অধ্যয়ন করলে আমরা বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে আরো অগ্রসর হতে পারব। তাই প্রাথমিক শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত গণিত শিক্ষাকে আরো সুসংহত করে তুলতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে যৌক্তিক জ্ঞানসম্পন্ন মেধাবী জনগোষ্ঠী, যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ ও জাতি সাফল্যের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর]

back to top