alt

উপ-সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

হামজার রহমান শামীম

: সোমবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৪

স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক নির্ধারিত উদ্দেশ্য, মূলনীতি ও পদ্ধতিতে পরিচালিত শিশু, কিশোর ও যুবকদের জন্য স্কাউটিং একটি স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক ও শিক্ষামূলক আন্দোলন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য স্কাউটিং। স্কাউটিং বিশ্বব্যাপী একটি অসাম্প্রদায়িক, অরাজনৈতিক, শিক্ষামূলক শিশু-কিশোর যুব আন্দোলন। শিশু-কিশোরদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষার পাশাপাশি সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলী হিসেবে অবসরকে আনন্দময় হিসেবে কাজে লাগিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।

সমাজের মানুষের সেবার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস কাজ করে যাচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে এ দেশের শিশু-কিশোর ও যুবদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ স্কাউটস। অ্যাকটিভ সিটিজেন তৈরিতে বিশ^ স্কাউট সংস্থার মতো বাংলাদেশ স্কাউটসও কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করার থিমকে সামনে রেখে বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রতিটি সদস্য নিয়মিত কাজ করছে।

স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল (জড়নবৎঃ ঝঃবঢ়যবহংড়হ ঝসুঃয খড়ৎফ ইধফবহ চড়বিষষ ড়ভ এরষবিষষ) ১৯০৭ সালের ২৯ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পোল হারবারে অবস্থিত ব্রাউনসি দ্বীপে ২১ জন ছেলেকে নিয়ে পরীক্ষামূলক স্কাউট ক্যাম্প করেন। জানুয়ারি ১৯০৮ সালে ছয়টি কিস্তিতে ‘স্কাউটিং ফর বয়েজ (ঝপড়ঁঃরহম ঋড়ৎ ইড়ুং)’ নামে বই প্রকাশ করেন। বইটি ৩৫টি ভাষায় প্রকাশিত হয়। বালকরা এ বই পড়েই স্কাউটিং করতে শুরু করে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ নানা দেশের মতো ভারতীয় উপমহাদেশে স্কাউটিং ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

যার ফলশ্রুতিতে ১৯১৩ সালে ড. তারাপুরওয়ালার নেতৃত্বে বেনারসে, পন্ডিত শ্রীরাম বাজপেয়ীর নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে, ১৯১৪ সালে মিসেস অ্যানি বেসান্তের পৃষ্ঠপোষকতায় কানপুরে ও শ্রীলঙ্কায় স্কাউটিং চালু হয়। তবে ১৯১৪ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে ৬০ জন বালককে নিয়ে স্কাউট দল গঠনের মধ্য দিয়ে এ ভুখ-ে স্কাউট আন্দোলনের শুভ সুচনা হয়। তখন স্কাউট আন্দোলন শুধু মাত্র এ ভুখ-ে বসবাসরত ব্রিটিশ বালকদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। খোদ ভারতীয়দের জন্য স্কাউটিংয়ের অনুমতি ছিল না। ১৯১৫ সালের ল্যাজলিমুনের নেতৃত্বে সিন্দুতে ১৯১৬ সালে ডাক্তার এসএ মল্লিকের নেতৃত্বে বাংলায় ও ঐ একই বছর এন মহাজনের নেতৃত্বে বোম্বেইয়ে স্কাউটিং এর মশাল প্রজ্বালিত হয়। ১৯১৭ সালে যখন এই উপমহাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রদেশে স্কাউটিং ছড়িয়ে পড়েছে তখন এ আন্দোলনকে স্বীকৃতি দেয়ার জন সরকারের কাছে আবেদন করা হয় কিন্তু ব্রিটিশ সরকার আবেদন অগ্রাহ্য করে।

১৯১৮ সালে অ্যানি বেসান্তের নেতৃত্বে ভারত স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন উপমহাদেশে স্কাউটিং কার্যক্রম শুরু করেন। এই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যাবলী কিশোর যুবক তথা মানুষকে স্কাউটিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে। স্কাউটিংয়ের মহৎ উদ্দেশ্য জনসাধারণকে প্রভাবিত করে। ভারতবাসীদের উদ্যোগ এবং বিপির বারংবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক জনসমর্থন দেখে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালে এ দেশের ছেলেদের জন্য স্কাউটিং না করতে দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ১৯১৯ সাল থেকে খোদ ভারতবাসীদের জন্য স্কাউটিং করার অনুমতি মেলে।

এরপর ১৯২০ সালের বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রাদেশিক স্কাউট সংগঠন হিসেবে গঠিত হয়। এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় কলকাতায়। এভাবেই এ উপমহাদেশে স্কাউট আন্দোলনের শুভযাত্রা সুচিত হয় এবং ১৯৩৮ সালে ভারত স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ব স্কাউট সংস্থার স্বীকৃতি পায়।

বর্তমানে বাংলাদেশ এলাকার স্কাউট গ্রুপ তৎকালীন বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের তালিকাভুক্ত ছিল। এ অ্যাসোসিয়েশনের তালিকাভুক্ত জেলা স্কাউট হিসেবে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বর্তমান বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ববাংলায় স্কাউটিং চালু ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ পাকিস্তান ও ভারত এ দুই নামে পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়। পাকিস্তান আবার পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিশ পাকিস্তান নামে দুই ভাগে বিভক্ত থাকে। সেই পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে ১ ডিসেম্বর জনাব জালাল উদ্দিন সুজার প্রচেষ্টায় পাকিস্তানের করাচিতে পাকিস্তান বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ২২ মে কক্সবাজারের কৃতীসন্তান স্কাউটার এএম সলিমুল্লাহ ফাহমীর নেতৃত্বে ইস্ট বেঙ্গল স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয় এবং এর কার্যালয় স্থাপিত হয় ঢাকায়। এর আগে কলকাতায় বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয় থাকায় দেশ ভাগের পর প্রায় শূন্য হাতে কোনো রেকর্ডপত্র ব্যতিরেকেই স্কাউটারদের প্রচেষ্টায় এবং প্রাদেশিক গভর্নর তহবিল থেকে দেওয়া বছরে মাত্র এক হাজার টাকা পুঁজি সম্বল করে ইস্ট বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন কাজ শুরু করে। তৎকালীন প্রাদেশিক কমিশনার এএম সলিমুল্লাহ ফাহমী, প্রাদেশিক সাংগঠনিক কমিশনার এইচজিএস বিভার, প্রাদেশিক সম্পাদক এএফএম আব্দুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াকিল আহম্মদ আব্বাসী এবং আরও কয়েকজন নিবেদিত স্কাউটি প্রাণ ব্যক্তি সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইস্ট বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন একটি শক্তিশালী প্রাদেশিক সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে।

পরবর্তীতে ইস্ট বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন নাম পরিবতন করে পূর্ব পাকিস্তান বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন নামকরণ করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন পাকিস্তান বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন এর প্রাদেশিক শাখা হিসেবে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সম্পৃক্ত ছিল।

স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭২ সালের ৮ ও ৯ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত দেশের সমস্ত স্কাউট নেতারা বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান ও বাংলাদেশের চিফ স্কাউট বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রথম জাতীয় কাউন্সিল সভায় মিলিত হয়ে ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি গঠন করেন। এর প্রথম সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং প্রথম জাতীয় কমিশনার নির্বাচিত হন পিয়ার আলী নাজির।

১৯৭২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১১১নং অর্ডিনেন্স বলে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি বিশ্ব স্কাউট সংস্থার ১০৫তম সদস্য পদ লাভ করে। ১৯৭৪ সালের ৪-১০ জুন তারিখ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ৯ম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনান স্কাউট কনফারেন্স বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৫ সালে এই স্কাউট সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় বাংলাদেশ স্কাউট সমিতির নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ স্কাউটস’ রাখা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালের অধ্যাদেশে সমিতি শব্দের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্কাউটস’ নাম স্বীকৃতি দেয়া হয়। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের স্কাউটিংয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ তারিখে বাংলাদেশে গার্ল ইন স্কাউটিং চালু করা হয়। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্য সংখ্যা ২৪,৩৪,২৮২ জন। এর মধ্যে মহিলা সদস্য সংখ্যা ৪,১৬,৩৮৭ জন। অর্থাৎ স্কাউটিংয়ে মহিলাদের সংখ্যা মোট সংখ্যার মাত্র ১৭.১১%। মেয়েদের আরো স্কাউটিংয়ে সম্পৃক্ত করার সুযোগ রয়েছে। সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ স্কাউটসের অবস্থান ৪র্থ। স্কাউট সংখ্যার দ্রুত বর্ধনশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৫০ লক্ষ স্কাউট তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। স্কাউট সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত পক্ষে ২টি স্কাউট দল খোলার এবং প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণ পায়- এ বিষয়ক অনুশাসন জারি করেছেন।

৩ অক্টোবর ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ২৪৮তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ স্কাউটসের সূচনা দিবস হিসেবে ‘বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস’ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস উদযাপন করেছে প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী। এই পরিপ্রেক্ষিতে ‘প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ থিমকে সামনে রেখে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস উদযাপন করা হয়েছিল। দ্বিতীয়বার ‘স্কাউটিং করবো, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো’ থিমকে সামনে রেখে ৮ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে সারাদেশে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস উদযাপন করা হয়েছিল। ৮ এপ্রিল ২০২৪ তৃতীয়বারের মতো দেশব্যাপী উদযাপিত হবে বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস। এবারের বাংলাদেশ স্কাউটস দিবসের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্মার্ট স্কাউটিং, স্মার্ট সিটিজেন’। যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য বাংলাদেশ স্কাউটস কাব স্কাউটদের জন্য চিত্রাংকন, স্কাউটদের জন্য রচনা এবং রোভার স্কাউটদের জন্য অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ সারা দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। দেশের সব শিক্ষার্থীকে স্কাউট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য স্কাউটরাই হতে পারে প্রধান হাতিয়ার।

[লেখক : লিডার ট্রেনার (এলটি), উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ স্কাউটস]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

হামজার রহমান শামীম

সোমবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৪

স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক নির্ধারিত উদ্দেশ্য, মূলনীতি ও পদ্ধতিতে পরিচালিত শিশু, কিশোর ও যুবকদের জন্য স্কাউটিং একটি স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক ও শিক্ষামূলক আন্দোলন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য স্কাউটিং। স্কাউটিং বিশ্বব্যাপী একটি অসাম্প্রদায়িক, অরাজনৈতিক, শিক্ষামূলক শিশু-কিশোর যুব আন্দোলন। শিশু-কিশোরদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষার পাশাপাশি সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলী হিসেবে অবসরকে আনন্দময় হিসেবে কাজে লাগিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।

সমাজের মানুষের সেবার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস কাজ করে যাচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে এ দেশের শিশু-কিশোর ও যুবদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ স্কাউটস। অ্যাকটিভ সিটিজেন তৈরিতে বিশ^ স্কাউট সংস্থার মতো বাংলাদেশ স্কাউটসও কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করার থিমকে সামনে রেখে বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রতিটি সদস্য নিয়মিত কাজ করছে।

স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল (জড়নবৎঃ ঝঃবঢ়যবহংড়হ ঝসুঃয খড়ৎফ ইধফবহ চড়বিষষ ড়ভ এরষবিষষ) ১৯০৭ সালের ২৯ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পোল হারবারে অবস্থিত ব্রাউনসি দ্বীপে ২১ জন ছেলেকে নিয়ে পরীক্ষামূলক স্কাউট ক্যাম্প করেন। জানুয়ারি ১৯০৮ সালে ছয়টি কিস্তিতে ‘স্কাউটিং ফর বয়েজ (ঝপড়ঁঃরহম ঋড়ৎ ইড়ুং)’ নামে বই প্রকাশ করেন। বইটি ৩৫টি ভাষায় প্রকাশিত হয়। বালকরা এ বই পড়েই স্কাউটিং করতে শুরু করে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ নানা দেশের মতো ভারতীয় উপমহাদেশে স্কাউটিং ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

যার ফলশ্রুতিতে ১৯১৩ সালে ড. তারাপুরওয়ালার নেতৃত্বে বেনারসে, পন্ডিত শ্রীরাম বাজপেয়ীর নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে, ১৯১৪ সালে মিসেস অ্যানি বেসান্তের পৃষ্ঠপোষকতায় কানপুরে ও শ্রীলঙ্কায় স্কাউটিং চালু হয়। তবে ১৯১৪ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে ৬০ জন বালককে নিয়ে স্কাউট দল গঠনের মধ্য দিয়ে এ ভুখ-ে স্কাউট আন্দোলনের শুভ সুচনা হয়। তখন স্কাউট আন্দোলন শুধু মাত্র এ ভুখ-ে বসবাসরত ব্রিটিশ বালকদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। খোদ ভারতীয়দের জন্য স্কাউটিংয়ের অনুমতি ছিল না। ১৯১৫ সালের ল্যাজলিমুনের নেতৃত্বে সিন্দুতে ১৯১৬ সালে ডাক্তার এসএ মল্লিকের নেতৃত্বে বাংলায় ও ঐ একই বছর এন মহাজনের নেতৃত্বে বোম্বেইয়ে স্কাউটিং এর মশাল প্রজ্বালিত হয়। ১৯১৭ সালে যখন এই উপমহাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রদেশে স্কাউটিং ছড়িয়ে পড়েছে তখন এ আন্দোলনকে স্বীকৃতি দেয়ার জন সরকারের কাছে আবেদন করা হয় কিন্তু ব্রিটিশ সরকার আবেদন অগ্রাহ্য করে।

১৯১৮ সালে অ্যানি বেসান্তের নেতৃত্বে ভারত স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন উপমহাদেশে স্কাউটিং কার্যক্রম শুরু করেন। এই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যাবলী কিশোর যুবক তথা মানুষকে স্কাউটিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে। স্কাউটিংয়ের মহৎ উদ্দেশ্য জনসাধারণকে প্রভাবিত করে। ভারতবাসীদের উদ্যোগ এবং বিপির বারংবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক জনসমর্থন দেখে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালে এ দেশের ছেলেদের জন্য স্কাউটিং না করতে দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ১৯১৯ সাল থেকে খোদ ভারতবাসীদের জন্য স্কাউটিং করার অনুমতি মেলে।

এরপর ১৯২০ সালের বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রাদেশিক স্কাউট সংগঠন হিসেবে গঠিত হয়। এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় কলকাতায়। এভাবেই এ উপমহাদেশে স্কাউট আন্দোলনের শুভযাত্রা সুচিত হয় এবং ১৯৩৮ সালে ভারত স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ব স্কাউট সংস্থার স্বীকৃতি পায়।

বর্তমানে বাংলাদেশ এলাকার স্কাউট গ্রুপ তৎকালীন বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের তালিকাভুক্ত ছিল। এ অ্যাসোসিয়েশনের তালিকাভুক্ত জেলা স্কাউট হিসেবে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বর্তমান বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ববাংলায় স্কাউটিং চালু ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ পাকিস্তান ও ভারত এ দুই নামে পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়। পাকিস্তান আবার পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিশ পাকিস্তান নামে দুই ভাগে বিভক্ত থাকে। সেই পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে ১ ডিসেম্বর জনাব জালাল উদ্দিন সুজার প্রচেষ্টায় পাকিস্তানের করাচিতে পাকিস্তান বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ২২ মে কক্সবাজারের কৃতীসন্তান স্কাউটার এএম সলিমুল্লাহ ফাহমীর নেতৃত্বে ইস্ট বেঙ্গল স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয় এবং এর কার্যালয় স্থাপিত হয় ঢাকায়। এর আগে কলকাতায় বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয় থাকায় দেশ ভাগের পর প্রায় শূন্য হাতে কোনো রেকর্ডপত্র ব্যতিরেকেই স্কাউটারদের প্রচেষ্টায় এবং প্রাদেশিক গভর্নর তহবিল থেকে দেওয়া বছরে মাত্র এক হাজার টাকা পুঁজি সম্বল করে ইস্ট বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন কাজ শুরু করে। তৎকালীন প্রাদেশিক কমিশনার এএম সলিমুল্লাহ ফাহমী, প্রাদেশিক সাংগঠনিক কমিশনার এইচজিএস বিভার, প্রাদেশিক সম্পাদক এএফএম আব্দুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াকিল আহম্মদ আব্বাসী এবং আরও কয়েকজন নিবেদিত স্কাউটি প্রাণ ব্যক্তি সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইস্ট বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন একটি শক্তিশালী প্রাদেশিক সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে।

পরবর্তীতে ইস্ট বেঙ্গল বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন নাম পরিবতন করে পূর্ব পাকিস্তান বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন নামকরণ করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন পাকিস্তান বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন এর প্রাদেশিক শাখা হিসেবে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সম্পৃক্ত ছিল।

স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭২ সালের ৮ ও ৯ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত দেশের সমস্ত স্কাউট নেতারা বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান ও বাংলাদেশের চিফ স্কাউট বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রথম জাতীয় কাউন্সিল সভায় মিলিত হয়ে ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি গঠন করেন। এর প্রথম সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং প্রথম জাতীয় কমিশনার নির্বাচিত হন পিয়ার আলী নাজির।

১৯৭২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১১১নং অর্ডিনেন্স বলে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি বিশ্ব স্কাউট সংস্থার ১০৫তম সদস্য পদ লাভ করে। ১৯৭৪ সালের ৪-১০ জুন তারিখ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ৯ম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনান স্কাউট কনফারেন্স বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৫ সালে এই স্কাউট সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় বাংলাদেশ স্কাউট সমিতির নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ স্কাউটস’ রাখা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালের অধ্যাদেশে সমিতি শব্দের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্কাউটস’ নাম স্বীকৃতি দেয়া হয়। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের স্কাউটিংয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ তারিখে বাংলাদেশে গার্ল ইন স্কাউটিং চালু করা হয়। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্য সংখ্যা ২৪,৩৪,২৮২ জন। এর মধ্যে মহিলা সদস্য সংখ্যা ৪,১৬,৩৮৭ জন। অর্থাৎ স্কাউটিংয়ে মহিলাদের সংখ্যা মোট সংখ্যার মাত্র ১৭.১১%। মেয়েদের আরো স্কাউটিংয়ে সম্পৃক্ত করার সুযোগ রয়েছে। সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ স্কাউটসের অবস্থান ৪র্থ। স্কাউট সংখ্যার দ্রুত বর্ধনশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৫০ লক্ষ স্কাউট তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। স্কাউট সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত পক্ষে ২টি স্কাউট দল খোলার এবং প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণ পায়- এ বিষয়ক অনুশাসন জারি করেছেন।

৩ অক্টোবর ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ২৪৮তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ স্কাউটসের সূচনা দিবস হিসেবে ‘বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস’ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস উদযাপন করেছে প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী। এই পরিপ্রেক্ষিতে ‘প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ থিমকে সামনে রেখে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস উদযাপন করা হয়েছিল। দ্বিতীয়বার ‘স্কাউটিং করবো, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো’ থিমকে সামনে রেখে ৮ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে সারাদেশে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস উদযাপন করা হয়েছিল। ৮ এপ্রিল ২০২৪ তৃতীয়বারের মতো দেশব্যাপী উদযাপিত হবে বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস। এবারের বাংলাদেশ স্কাউটস দিবসের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্মার্ট স্কাউটিং, স্মার্ট সিটিজেন’। যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য বাংলাদেশ স্কাউটস কাব স্কাউটদের জন্য চিত্রাংকন, স্কাউটদের জন্য রচনা এবং রোভার স্কাউটদের জন্য অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ সারা দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। দেশের সব শিক্ষার্থীকে স্কাউট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য স্কাউটরাই হতে পারে প্রধান হাতিয়ার।

[লেখক : লিডার ট্রেনার (এলটি), উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ স্কাউটস]

back to top