alt

opinion » post-editorial

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

সিরাজ প্রামাণিক

: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন এবং অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি হিসেবে একে অপরকে ব্যাংক চেক প্রদান করে থাকি। যদি চেকের উপর বর্ণিত পরিমাণ টাকা চেক প্রদানকারীর অ্যাকাউন্টে না থাকে, তাহলে চেকটি ডিজঅনার হয়। পরবর্তীতে অর্থ পরিশোধের ব্যর্থতায় চেক প্রদানকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হয়। এতে মামলার রায় সাধারণত আসামির বিপক্ষে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে চেকের মামলা আসামির পক্ষেও যায়, যদি আসামি সে বিষয়গুলো আদালতের সামনে প্রমাণ করতে পারেন।

একটি কেস স্টাডিতে জানা যায়, আসামি ব্যবসায়িক কারণে বাদীর নিকট থেকে নয় লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ধার গ্রহণ করেন। এরপর টাকা পরিশোধে চেক দেন। সেই চেকটি ব্যাংক থেকে ডিজঅনার হয়েছে। বাদী আদালতে মামলা করে দিলেন। সেই মামলায় আসামি পক্ষে ডিফেন্স নিতে গিয়ে দেখা যায় নালিশি আরজিতে দিন, ক্ষণ, তারিখ, সময়, টাকা লেনদেনের স্থান, সাক্ষীদের উপস্থিতি এসব কোন কথায় বাদীর উল্লেখ নেই। এমনকি বাদী জবানবন্দিতেও এ কথাগুলো বলেন নাই। এন.আই অ্যাক্ট মামলা প্রমাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার নোটিশপ্রাপ্তির বিষয়। আসামির ওপর নোটিশ জারি ১৩৮ ধারার মামলার পূর্ব শর্ত, ব্যর্থতায় আসামি খালাস পাবে। এ মামলায়Ñ

১। আসামি কর্তৃক লিগ্যাল নোটিশপ্রাপ্ত হওয়ার কোন তারিখ উল্লেখ করেননি

২। নোটিশপ্রাপ্তির প্রমাণস্বরূপ প্রাপ্তি স্বীকার মাননীয় আদালতে সাবমিট করতে পারেন নাই

৩। ফেরত খামও আদালতে উপস্থাপন কিংবা নালিশি আরজিতে উল্লেখ করতে পারেন নাই

৪। পোস্ট মাস্টারের কোনরূপ প্রত্যয়নপত্রও সাবমিট করতে পারেন নাই

এ বিষয়ে উচ্চতর আদালতের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে ৩৯ বিএলডি পেজ নং-২২২। সেখানে বলা হচ্ছে যে, আসামির ওপর নোটিশ জারির বিষয়ে কোন সন্দেহ সৃষ্টি হলে এবং যদি লক্ষ্য করা যায় যে, আসামি ইচ্ছাকৃতভাবে নোটিশ উপেক্ষা করে নাই, তাহলে ১৩৮ ধারার পূর্ব শর্ত পরিপালনে ব্যর্থতার কারণে আসামি খালাস পাবে। কারণ ১৩৮ ধারার (১) উপধারার প্রোভাইশো (বি) তে বলা হয়েছে, আসামি কর্তৃক নোটিশপ্রাপ্তির তারিখ থেকে ৩০ দিন সময় দিতে হবে। যদি আসামি নোটিশ প্রাপ্ত না হয়, সেই প্রাপ্তির তারিখ জানার সুযোগ আছে কিনা? এই ৩০ দিনের সময় না দিয়ে যদি মামলা দায়ের করা হয় তাহলে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থি।

এন.আই অ্যাক্টের তামাদি বিষয় :

তামাদির মেয়াদ এ আইনের ১৪১(বি) ধারায় ধার্য করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ২২১ ধারার ৫ উপধারায় বলা হয়েছে যে, অভিযোগ গঠনের সময় অপরাধ সংগঠনের আইনানুগ সব উপাদান অভিযোগে থাকতে হবে। যদি নালিশি দরখাস্তে আসামি কর্তৃক নোটিশপ্রাপ্তির তারিখ উল্লেখ না থাকে, সেই তারিখ থেকে ৩০ দিন সময় না দেয়া হয়, সেই ৩০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করা না হয়, তাহলে ১৩৮ ধারার চেক ডিজঅনারের অপরাধ সংগঠনের ৩টি উপাদানের অনুপস্থিত থাকবে বলে তা অপরাধ সংগঠনে ব্যর্থ হবে। অনেক সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট এর ২৭ ধারার বিধান তুলে ধরে কিছু লেইম এক্সকিউস উপস্থাপন করা হয়। চেক ডিজঅনারের অপরাধের ক্ষেত্রে জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট এর ২৭ ধারার বিধান প্রয়োজ্য হবে কিনা? দ্য জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট প্রণীত হয়েছে ১৮৯৭ সালে আর দ্য নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রমেন্ট অ্যাক্ট প্রণীত হয়েছে ১৮৮১ সালে। ১৬ বছর আগে জন্ম হয়েছে এন.আই অ্যাক্টের। আর দ্য জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট এর ২৭ ধারা বলছে যে, এই ধারার বিধানাবলী কার্যকরী হবে দ্য জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট চালু হওয়ার পর থেকে। এ বিষয়ে ৬৪ ডিএলআর ২৫৫ পাতায় উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে।

নোটিশ জারির বিষয় অনুমান :

নোটিশ জারির বিষয় অনুমান প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে ডাক পিওনকে পরীক্ষা করার বিষয়ে বলা আছে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ৭ এসসিসি ৫১০ পৃষ্ঠায় বলছেন, বাদী ডাক পিওনকে আদালতে পরীক্ষা করে নোটিশ জারির বিষয় ২৭ ধারার অধীন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু নোটিশ জারি হয়েছে প্রমাণের দায়িত্ব কার? নোটিশ যে জারি হয়েছে তা প্রমাণের দায়িত্ব একমাত্র বাদীর। এ বিষয়ে ৬০ ডিএলআর ৬৭৭ পৃষ্ঠায় উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে।

ব্ল্যাংক চেকের ক্ষেত্রে :

আবার চেকটি অনেক সময় ব্ল্যাংক চেক হয়ে থাকে। ঋত প্রদানের আগেই কিছু ব্ল্যাংক চেক নেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বোম্বে হাইকোর্ট ২০১০ সালের ডিসিআর ২নং ভলিউমের ৩১৭ পৃষ্ঠায় বলছেন, ঋণ প্রদানের আগে জামানতস্বরূপ হিসেবে ব্ল্যাংক চেক গ্রহণ করা হলে তা কোন দায়-দেনার অস্তিত্ব সৃষ্টি করে না বিধায় তার দ্বারা চেক ডিজঅনারের মামলা দায়ের করা যায় না। আবার জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত চেক দিয়ে পক্ষদের মধ্যে কোন দায়-দেনার অধিকার সৃষ্টি করে না বলে উচ্চ আদালাতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। (এআইআর ১৯৭৫ অল ১০৪)।

চেকের উপর ওভাররাইটিং থাকলে :

আবার চেকের উপর ওভাররাইটিং থাকলে কিংবা টেম্পারিং করে তর্কিত চেকের টাকার অঙ্ক পরিবর্তন করলেও আসামি খালাস পাবে। এক্ষেত্রে ভারতের পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্ট ২০১০ সালে ডিসিআর ১নং ভলিউমের ১০৮ পৃষ্ঠায় একটি দারুণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

ভিন্ন হাতের লেখা হলে :

আবার আসামির স্বাক্ষর, টাকার অঙ্ক এবং পেয়ীর নাম ভিন্ন হাতের লেখা হলে এনআই অ্যাক্টের ৩ (ই) ধারার বিধান অনুসারে এটাকে ইস্যুয়েন্স অব চেক বলা যাবে না। সেই চেক আইনানুগভাবে বৈধ হবে না। এ বিষয়ে ৫৬ ডিএলআর ৬৩৬ পৃষ্ঠায় একটি দারুণ সিদ্ধান্ত আছে। সাধারণত উপরোক্ত বিষয়গুলো প্রমাণ করতে পারলেই চেক ডিজঅনারের মামলায় আসামির খালাস পাওয়া সম্ভব।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

চা-জনগোষ্ঠীর দণ্ডপূজা ও উপেক্ষিত অধিকার

মেরিটোক্রেসি: সমাজ ও রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা

রম্যগদ্য: হাতের মুঠোয় বিশ্ব

শারদীয় পূজার দিনলিপি

ঋণের জন্য আত্মহত্যা, ঋণ নিয়েই চল্লিশা

জাকসু নির্বাচন ও হট্টগোল: আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কী?

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠা হোক

ছবি

নেপালে সরকার পতন ও বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ

ডাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত

নির্বাচন কি সব সমস্যার সমাধান

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

tab

opinion » post-editorial

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

সিরাজ প্রামাণিক

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন এবং অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি হিসেবে একে অপরকে ব্যাংক চেক প্রদান করে থাকি। যদি চেকের উপর বর্ণিত পরিমাণ টাকা চেক প্রদানকারীর অ্যাকাউন্টে না থাকে, তাহলে চেকটি ডিজঅনার হয়। পরবর্তীতে অর্থ পরিশোধের ব্যর্থতায় চেক প্রদানকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হয়। এতে মামলার রায় সাধারণত আসামির বিপক্ষে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে চেকের মামলা আসামির পক্ষেও যায়, যদি আসামি সে বিষয়গুলো আদালতের সামনে প্রমাণ করতে পারেন।

একটি কেস স্টাডিতে জানা যায়, আসামি ব্যবসায়িক কারণে বাদীর নিকট থেকে নয় লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ধার গ্রহণ করেন। এরপর টাকা পরিশোধে চেক দেন। সেই চেকটি ব্যাংক থেকে ডিজঅনার হয়েছে। বাদী আদালতে মামলা করে দিলেন। সেই মামলায় আসামি পক্ষে ডিফেন্স নিতে গিয়ে দেখা যায় নালিশি আরজিতে দিন, ক্ষণ, তারিখ, সময়, টাকা লেনদেনের স্থান, সাক্ষীদের উপস্থিতি এসব কোন কথায় বাদীর উল্লেখ নেই। এমনকি বাদী জবানবন্দিতেও এ কথাগুলো বলেন নাই। এন.আই অ্যাক্ট মামলা প্রমাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার নোটিশপ্রাপ্তির বিষয়। আসামির ওপর নোটিশ জারি ১৩৮ ধারার মামলার পূর্ব শর্ত, ব্যর্থতায় আসামি খালাস পাবে। এ মামলায়Ñ

১। আসামি কর্তৃক লিগ্যাল নোটিশপ্রাপ্ত হওয়ার কোন তারিখ উল্লেখ করেননি

২। নোটিশপ্রাপ্তির প্রমাণস্বরূপ প্রাপ্তি স্বীকার মাননীয় আদালতে সাবমিট করতে পারেন নাই

৩। ফেরত খামও আদালতে উপস্থাপন কিংবা নালিশি আরজিতে উল্লেখ করতে পারেন নাই

৪। পোস্ট মাস্টারের কোনরূপ প্রত্যয়নপত্রও সাবমিট করতে পারেন নাই

এ বিষয়ে উচ্চতর আদালতের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে ৩৯ বিএলডি পেজ নং-২২২। সেখানে বলা হচ্ছে যে, আসামির ওপর নোটিশ জারির বিষয়ে কোন সন্দেহ সৃষ্টি হলে এবং যদি লক্ষ্য করা যায় যে, আসামি ইচ্ছাকৃতভাবে নোটিশ উপেক্ষা করে নাই, তাহলে ১৩৮ ধারার পূর্ব শর্ত পরিপালনে ব্যর্থতার কারণে আসামি খালাস পাবে। কারণ ১৩৮ ধারার (১) উপধারার প্রোভাইশো (বি) তে বলা হয়েছে, আসামি কর্তৃক নোটিশপ্রাপ্তির তারিখ থেকে ৩০ দিন সময় দিতে হবে। যদি আসামি নোটিশ প্রাপ্ত না হয়, সেই প্রাপ্তির তারিখ জানার সুযোগ আছে কিনা? এই ৩০ দিনের সময় না দিয়ে যদি মামলা দায়ের করা হয় তাহলে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থি।

এন.আই অ্যাক্টের তামাদি বিষয় :

তামাদির মেয়াদ এ আইনের ১৪১(বি) ধারায় ধার্য করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ২২১ ধারার ৫ উপধারায় বলা হয়েছে যে, অভিযোগ গঠনের সময় অপরাধ সংগঠনের আইনানুগ সব উপাদান অভিযোগে থাকতে হবে। যদি নালিশি দরখাস্তে আসামি কর্তৃক নোটিশপ্রাপ্তির তারিখ উল্লেখ না থাকে, সেই তারিখ থেকে ৩০ দিন সময় না দেয়া হয়, সেই ৩০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করা না হয়, তাহলে ১৩৮ ধারার চেক ডিজঅনারের অপরাধ সংগঠনের ৩টি উপাদানের অনুপস্থিত থাকবে বলে তা অপরাধ সংগঠনে ব্যর্থ হবে। অনেক সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট এর ২৭ ধারার বিধান তুলে ধরে কিছু লেইম এক্সকিউস উপস্থাপন করা হয়। চেক ডিজঅনারের অপরাধের ক্ষেত্রে জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট এর ২৭ ধারার বিধান প্রয়োজ্য হবে কিনা? দ্য জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট প্রণীত হয়েছে ১৮৯৭ সালে আর দ্য নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রমেন্ট অ্যাক্ট প্রণীত হয়েছে ১৮৮১ সালে। ১৬ বছর আগে জন্ম হয়েছে এন.আই অ্যাক্টের। আর দ্য জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট এর ২৭ ধারা বলছে যে, এই ধারার বিধানাবলী কার্যকরী হবে দ্য জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট চালু হওয়ার পর থেকে। এ বিষয়ে ৬৪ ডিএলআর ২৫৫ পাতায় উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে।

নোটিশ জারির বিষয় অনুমান :

নোটিশ জারির বিষয় অনুমান প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে ডাক পিওনকে পরীক্ষা করার বিষয়ে বলা আছে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ৭ এসসিসি ৫১০ পৃষ্ঠায় বলছেন, বাদী ডাক পিওনকে আদালতে পরীক্ষা করে নোটিশ জারির বিষয় ২৭ ধারার অধীন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু নোটিশ জারি হয়েছে প্রমাণের দায়িত্ব কার? নোটিশ যে জারি হয়েছে তা প্রমাণের দায়িত্ব একমাত্র বাদীর। এ বিষয়ে ৬০ ডিএলআর ৬৭৭ পৃষ্ঠায় উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে।

ব্ল্যাংক চেকের ক্ষেত্রে :

আবার চেকটি অনেক সময় ব্ল্যাংক চেক হয়ে থাকে। ঋত প্রদানের আগেই কিছু ব্ল্যাংক চেক নেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বোম্বে হাইকোর্ট ২০১০ সালের ডিসিআর ২নং ভলিউমের ৩১৭ পৃষ্ঠায় বলছেন, ঋণ প্রদানের আগে জামানতস্বরূপ হিসেবে ব্ল্যাংক চেক গ্রহণ করা হলে তা কোন দায়-দেনার অস্তিত্ব সৃষ্টি করে না বিধায় তার দ্বারা চেক ডিজঅনারের মামলা দায়ের করা যায় না। আবার জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত চেক দিয়ে পক্ষদের মধ্যে কোন দায়-দেনার অধিকার সৃষ্টি করে না বলে উচ্চ আদালাতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। (এআইআর ১৯৭৫ অল ১০৪)।

চেকের উপর ওভাররাইটিং থাকলে :

আবার চেকের উপর ওভাররাইটিং থাকলে কিংবা টেম্পারিং করে তর্কিত চেকের টাকার অঙ্ক পরিবর্তন করলেও আসামি খালাস পাবে। এক্ষেত্রে ভারতের পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্ট ২০১০ সালে ডিসিআর ১নং ভলিউমের ১০৮ পৃষ্ঠায় একটি দারুণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

ভিন্ন হাতের লেখা হলে :

আবার আসামির স্বাক্ষর, টাকার অঙ্ক এবং পেয়ীর নাম ভিন্ন হাতের লেখা হলে এনআই অ্যাক্টের ৩ (ই) ধারার বিধান অনুসারে এটাকে ইস্যুয়েন্স অব চেক বলা যাবে না। সেই চেক আইনানুগভাবে বৈধ হবে না। এ বিষয়ে ৫৬ ডিএলআর ৬৩৬ পৃষ্ঠায় একটি দারুণ সিদ্ধান্ত আছে। সাধারণত উপরোক্ত বিষয়গুলো প্রমাণ করতে পারলেই চেক ডিজঅনারের মামলায় আসামির খালাস পাওয়া সম্ভব।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top