alt

উপ-সম্পাদকীয়

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি : দীর্ঘমেয়াদে সুফল মিলতে পারে

রেজাউল করিম খোকন

: বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

দেরিতে হলেও ডলারের দাম বাজারের বাস্তব দামের কাছাকাছি নেয়া হয়েছে। ঋণের সুদের হারও বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদে এসব সিদ্ধান্ত ব্যবসায় চাপ তৈরি করবে; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি এর ভালো সুফল মিলতে পারে। ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকা। সেই বাড়তি রাজস্বের একটি অংশ জ্বালানি আমদানির বাড়তি খরচ মেটাতে ব্যয় করা হলে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন না-ও হতে পারে। নতুন করে ব্যবসার খরচ না বাড়লে দীর্ঘমেয়াদে এ সিদ্ধান্তের সুফল মিলবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অর্থনীতির ওপর কমবেশি নেতিবাচক প্রভাব রাখবে, তবে অর্থনীতির স্বার্থে এসব সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেয়া উচিত ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তগুলো বিলম্বিত সিদ্ধান্ত। সুদের হার বাজারভিত্তিক করার কারণে অর্থ ধার করার খরচ বাড়বে। এর ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নানারকম খরচ আছে। ঘুষ-দুর্নীতির কারণেও ব্যবসার খরচ বাড়ে। তবে দক্ষতা, সুশাসন, জবাবদিহি, দুর্নীতি হ্রাসÑ এসব নিশ্চিত করতে পারলে এর বিরূপ প্রভাব অনেক কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, সেগুলো সঠিক ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। বেশ অনেক আগে থেকে এসব নিয়ে কথা হচ্ছিল। অর্থনীতির স্বার্থে সবকিছু সঠিক পথে থাকতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপের পর এখন কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বা ব্যবসার খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ব্যবসার খরচ বেড়ে গেলে পণ্যমূল্য আরেক দফা বাড়বে। তাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষ আরও চাপে পড়বে। প্রায় দেড় বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারিত একটি সীমার মধ্যে ধরে রাখলেও বাস্তবে কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে আমদানিকারকদের ১১৭ থেকে ১২০ টাকায় ডলার কিনতে হয়েছে। ব্যাংককে তাদের অতিরিক্ত দাম পরিশোধ করতে হতো ভিন্ন পন্থায়। এখন ডলারের দাম বাজারভিত্তিক হওয়ায় ভিন্ন পন্থায় আর বেশি দাম পরিশোধ করতে হবে না। ফলে ডলারের দাম বৃদ্ধি আপাতত তাদের খুব বেশি চাপে ফেলবে না। তবে ব্যাংকগুলো ডলারের দাম নির্ধারণের নতুন ব্যবস্থা কিভাবে কার্যকর করছে, তার ওপর নির্ভর করবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব।

ঋণের ক্ষেত্রে স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিলভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতি বাতিল করে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে নীতি সুদহার। তবে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, সুদ বাজারভিত্তিক হলেও তা যেন বর্তমানের চেয়ে ১ শতাংশের বেশি না বাড়ে। গত মাসে ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। একবারে ডলারের বড় মূল্যবৃদ্ধির সুফল অবশ্য দ্রুতই পাবেন রপ্তানিকারকেরা। যদি ব্যবসার খরচ নতুন করে আর না বাড়ে তাহলে ডলারের বাড়তি দামের সুবিধা রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেবে। তাতে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি লাভবান হবে। নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে রপ্তানি আয় যেমন বাড়বে, তেমনি বৈধ পথে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিরও বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

যদি ব্যবসার অন্যান্য খরচ বাড়ে তাহলে হয়তো কিছুটা চাপ তৈরি হবে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ঋণের সুদ বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত ব্যবসার ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা বুঝতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। বিষয়টি নির্ভর করবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কিভাবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে, তার ওপর। ডলার-সংকটের এ সময়ে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়লে তা সংকট কাটাতে কাজে লাগবে। ডলারের দাম একলাফে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানির খরচ বেড়ে যাবে । তাতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এ চাপ মোকাবিলায় সরকারকে ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে বাড়তি যে রাজস্ব আদায় হবে, তা থেকে জ্বালানি আমদানির বাড়তি খরচ সমন্বয় করা যেতে পারে। সেটি করা গেলে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম না বাড়িয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে।

ডলারের দামে বড় বৃদ্ধি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে প্রভাবিত করবে। এছাড়া মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ বাংলাদেশ থেকে মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এখন কম অর্থ পাবেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ডলার-সংকটের কারণে বিমান পরিবহন সংস্থার অর্থ এবং বিদেশি বহুজাতিক একাধিক কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ ও মুনাফা লম্বা সময় ধরে আটকে আছে। এসব অর্থ প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বেশি দামে ডলার কিনতে হবে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আয় কমবে। গত এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশি বিভিন্ন বিমান পরিবহন সংস্থার প্রায় ৩২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বাংলাদেশ আটকে রয়েছে।

ডলার-সংকটের কারণে এ অর্থ সংশ্লিষ্ট দেশে নিতে পারছে না বৈশ্বিক বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো। এখন এ অর্থ নিতে বেশি দামে ডলার কিনতে হবে তাদের। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি বড় সুবিধা দেবে রপ্তানিকারকদের। যদি ব্যবসার অন্যান্য খরচ না বাড়ে, তাহলে প্রতি ডলারে ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি আয় হবে রপ্তানিকারকদের। এতে তাদের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। বর্তমানে বিশ্ববাজারের যে পরিস্থিতি তাতে ডলারের এ মূল্যবৃদ্ধি বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় আমাদের সক্ষমতা বাড়াবে; কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যদি পরিবহন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি খরচ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে রপ্তানিকারকেরা এর সুফল পাবেন না। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ব্যবসার অন্যান্য খরচ যাতে না বাড়ে, সেই জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

এত দিন প্রবাসী আয়ের ডলার নিজেদের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে আনতে সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলো নিজেদের উদ্যোগে বাড়তি আড়াই শতাংশ অর্থ দিয়ে আসছিল। এখন ডলারের দাম নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ায় নিজেদের দেওয়া প্রণোদনা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

গত এপ্রিল মাসে দেশে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এর আগে মার্চে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১০ কোটি ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। ডলারের দামের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে নিজেদের দেওয়া প্রণোদনা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। সরকারি প্রণোদনা বহাল থাকবে। এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। ডলারের বড় মূল্যবৃদ্ধির সুফল পেতে সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি : দীর্ঘমেয়াদে সুফল মিলতে পারে

রেজাউল করিম খোকন

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

দেরিতে হলেও ডলারের দাম বাজারের বাস্তব দামের কাছাকাছি নেয়া হয়েছে। ঋণের সুদের হারও বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদে এসব সিদ্ধান্ত ব্যবসায় চাপ তৈরি করবে; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি এর ভালো সুফল মিলতে পারে। ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকা। সেই বাড়তি রাজস্বের একটি অংশ জ্বালানি আমদানির বাড়তি খরচ মেটাতে ব্যয় করা হলে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন না-ও হতে পারে। নতুন করে ব্যবসার খরচ না বাড়লে দীর্ঘমেয়াদে এ সিদ্ধান্তের সুফল মিলবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অর্থনীতির ওপর কমবেশি নেতিবাচক প্রভাব রাখবে, তবে অর্থনীতির স্বার্থে এসব সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেয়া উচিত ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তগুলো বিলম্বিত সিদ্ধান্ত। সুদের হার বাজারভিত্তিক করার কারণে অর্থ ধার করার খরচ বাড়বে। এর ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নানারকম খরচ আছে। ঘুষ-দুর্নীতির কারণেও ব্যবসার খরচ বাড়ে। তবে দক্ষতা, সুশাসন, জবাবদিহি, দুর্নীতি হ্রাসÑ এসব নিশ্চিত করতে পারলে এর বিরূপ প্রভাব অনেক কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, সেগুলো সঠিক ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। বেশ অনেক আগে থেকে এসব নিয়ে কথা হচ্ছিল। অর্থনীতির স্বার্থে সবকিছু সঠিক পথে থাকতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপের পর এখন কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বা ব্যবসার খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ব্যবসার খরচ বেড়ে গেলে পণ্যমূল্য আরেক দফা বাড়বে। তাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষ আরও চাপে পড়বে। প্রায় দেড় বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারিত একটি সীমার মধ্যে ধরে রাখলেও বাস্তবে কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে আমদানিকারকদের ১১৭ থেকে ১২০ টাকায় ডলার কিনতে হয়েছে। ব্যাংককে তাদের অতিরিক্ত দাম পরিশোধ করতে হতো ভিন্ন পন্থায়। এখন ডলারের দাম বাজারভিত্তিক হওয়ায় ভিন্ন পন্থায় আর বেশি দাম পরিশোধ করতে হবে না। ফলে ডলারের দাম বৃদ্ধি আপাতত তাদের খুব বেশি চাপে ফেলবে না। তবে ব্যাংকগুলো ডলারের দাম নির্ধারণের নতুন ব্যবস্থা কিভাবে কার্যকর করছে, তার ওপর নির্ভর করবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব।

ঋণের ক্ষেত্রে স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিলভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতি বাতিল করে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে নীতি সুদহার। তবে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, সুদ বাজারভিত্তিক হলেও তা যেন বর্তমানের চেয়ে ১ শতাংশের বেশি না বাড়ে। গত মাসে ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। একবারে ডলারের বড় মূল্যবৃদ্ধির সুফল অবশ্য দ্রুতই পাবেন রপ্তানিকারকেরা। যদি ব্যবসার খরচ নতুন করে আর না বাড়ে তাহলে ডলারের বাড়তি দামের সুবিধা রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেবে। তাতে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি লাভবান হবে। নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে রপ্তানি আয় যেমন বাড়বে, তেমনি বৈধ পথে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিরও বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

যদি ব্যবসার অন্যান্য খরচ বাড়ে তাহলে হয়তো কিছুটা চাপ তৈরি হবে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ঋণের সুদ বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত ব্যবসার ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা বুঝতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। বিষয়টি নির্ভর করবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কিভাবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে, তার ওপর। ডলার-সংকটের এ সময়ে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়লে তা সংকট কাটাতে কাজে লাগবে। ডলারের দাম একলাফে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানির খরচ বেড়ে যাবে । তাতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এ চাপ মোকাবিলায় সরকারকে ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে বাড়তি যে রাজস্ব আদায় হবে, তা থেকে জ্বালানি আমদানির বাড়তি খরচ সমন্বয় করা যেতে পারে। সেটি করা গেলে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম না বাড়িয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে।

ডলারের দামে বড় বৃদ্ধি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে প্রভাবিত করবে। এছাড়া মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ বাংলাদেশ থেকে মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এখন কম অর্থ পাবেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ডলার-সংকটের কারণে বিমান পরিবহন সংস্থার অর্থ এবং বিদেশি বহুজাতিক একাধিক কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ ও মুনাফা লম্বা সময় ধরে আটকে আছে। এসব অর্থ প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বেশি দামে ডলার কিনতে হবে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আয় কমবে। গত এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশি বিভিন্ন বিমান পরিবহন সংস্থার প্রায় ৩২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বাংলাদেশ আটকে রয়েছে।

ডলার-সংকটের কারণে এ অর্থ সংশ্লিষ্ট দেশে নিতে পারছে না বৈশ্বিক বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো। এখন এ অর্থ নিতে বেশি দামে ডলার কিনতে হবে তাদের। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি বড় সুবিধা দেবে রপ্তানিকারকদের। যদি ব্যবসার অন্যান্য খরচ না বাড়ে, তাহলে প্রতি ডলারে ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি আয় হবে রপ্তানিকারকদের। এতে তাদের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। বর্তমানে বিশ্ববাজারের যে পরিস্থিতি তাতে ডলারের এ মূল্যবৃদ্ধি বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় আমাদের সক্ষমতা বাড়াবে; কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যদি পরিবহন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি খরচ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে রপ্তানিকারকেরা এর সুফল পাবেন না। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ব্যবসার অন্যান্য খরচ যাতে না বাড়ে, সেই জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

এত দিন প্রবাসী আয়ের ডলার নিজেদের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে আনতে সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলো নিজেদের উদ্যোগে বাড়তি আড়াই শতাংশ অর্থ দিয়ে আসছিল। এখন ডলারের দাম নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ায় নিজেদের দেওয়া প্রণোদনা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

গত এপ্রিল মাসে দেশে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এর আগে মার্চে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১০ কোটি ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। ডলারের দামের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে নিজেদের দেওয়া প্রণোদনা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। সরকারি প্রণোদনা বহাল থাকবে। এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। ডলারের বড় মূল্যবৃদ্ধির সুফল পেতে সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

back to top