alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জমির বায়না দলিল কার্যকর কিংবা বাতিলের আইনি প্রক্রিয়া

সিরাজ প্রামাণিক

: শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

আপনি জমি বায়না করেছেন কিংবা চুক্তি করেছেন কিন্তু এখন তিনি জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে কিংবা রেজিস্ট্রি করে নিতে অর্থাৎ বায়না চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছেন। বায়না দলিল অনুযায়ী আপনি জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে দিতে কিংবা রেজিস্ট্রি করিয়ে নিতে অর্থাৎ চুক্তি বাস্তবায়নে যে কোন পক্ষকে বাধ্য করতে পারবেন কিংবা ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবেন।

সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩(খ) ধারা মতে বায়না বলবৎ থাকাবস্থায় বায়নাকৃত স্থাবর সম্পত্তি বায়না গ্রহীতা ব্যতীত অন্য কারো কাছে বিক্রি করা যাবে না। যদি না বায়না দলিলটি আইনসম্মতভাবে বাতিল করা না হয়। অনেক সময় জমির ক্রেতা সময়মতো টাকা জোগাড় করতে না পারলে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। বায়না চুক্তি বাতিলের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে দলিলের ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে কি বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি আছেন কিনা।

যদি দলিলের ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি থাকে তবে ব্যাপারটি খুব সহজ; কিন্তু উভয় পক্ষ যদি বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি না থাকে তবে কাজটি একটু কঠিন হয়ে যায়। যদি জমির ক্রেতা ও বিক্রেতা বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি হলে, উভয়পক্ষ একত্রে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে পূর্বের বায়না দলিলটি বাতিলের জন্য ‘বাতিল দলিল’ করতে হবে। উক্ত দলিলে বায়না দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ে স্বাক্ষর দিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করিয়ে নিতে হবে। তাহলেই উক্ত বায়না চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাবে।

আর যদি জমির ক্রেতা চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি না থাকে, এক্ষেত্রে আইনজীবীর কাছে গিয়ে উক্ত বায়না দলিলের ক্রেতা বরাবর একটি উকিল নোটিশ দিতে হবে। উক্ত নোটিশে ক্রেতাকে বায়না দলিলের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধের জন্য কয়েক দিন সময় দিতে পারেন এবং আরো উল্লেখ করতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি বকেয়া টাকা পরিশোধ না করে; তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। উকিল নোটিশ প্রাপ্তির পর ক্রেতা সময় মতো টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয় তাহলে ভালো। সেটা না হলে বিক্রেতা আদালতে গিয়ে যথাযথ কারণ দেখিয়ে বায়না চুক্তি বাতিলের মামলা করতে পারে।

ভুক্তভোগী পক্ষ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭-এর ১২ ধারা মতে আদালতে চুক্তি প্রবলের মামলা করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, এরকম মামলা করতে হলে চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হতে বা চুক্তি অস্বীকারের তারিখ হতে এক বছরের মধ্যে করতে হবে। এ আইনের ২১(এ) ধারার বিধান অনুসারে আদালতের মাধ্যমে চুক্তি বলবত করতে হলে আপনাকে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবেÑ ১. চুক্তি বা বায়নানামাটি লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে নতুবা চুক্তি প্রবলের মামলা আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করা যাবে না; ২. বায়নার অবশিষ্ট টাকা আদালতে জমা না করলে এ মামলা দায়ের করা যাবে না।

আদালত সবকিছু দেখে সন্তুষ্ট হলে উক্ত বায়না চুক্তিটি বাতিল করে দিতে পারে। আবার আদালত জমির বিক্রেতার ক্ষতিপূরণ হিসেবে বায়না চুক্তির টাকা বিক্রেতার কাছে রেখে দেওয়ার আদেশ দিতে পারে। আদালতের বায়না চুক্তিটি বাতিলের রায় পাওয়ার পর জমির মালিক পুনরায় জমিটি অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতে পারবেন।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

নবম পে স্কেল ও এর আর্থসামাজিক প্রভাব

মৃত্যুদণ্ড, তারপর...

জমির ভুয়া দলিল কীভাবে বাতিল করবেন?

জুলাই সনদ আদিবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি

ব্যাংকের দুরবস্থা থামানো যাচ্ছে না কেন

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

কাঁপছে ডলারের সিংহাসন

ত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন : প্রতীকী প্রদর্শনী, নাকি বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির বাঁক নেওয়ার মুহূর্ত?

অপরিণত নবজাতক : ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও যত্নের জরুরি বাস্তবতা

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জমির বায়না দলিল কার্যকর কিংবা বাতিলের আইনি প্রক্রিয়া

সিরাজ প্রামাণিক

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

আপনি জমি বায়না করেছেন কিংবা চুক্তি করেছেন কিন্তু এখন তিনি জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে কিংবা রেজিস্ট্রি করে নিতে অর্থাৎ বায়না চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছেন। বায়না দলিল অনুযায়ী আপনি জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে দিতে কিংবা রেজিস্ট্রি করিয়ে নিতে অর্থাৎ চুক্তি বাস্তবায়নে যে কোন পক্ষকে বাধ্য করতে পারবেন কিংবা ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবেন।

সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩(খ) ধারা মতে বায়না বলবৎ থাকাবস্থায় বায়নাকৃত স্থাবর সম্পত্তি বায়না গ্রহীতা ব্যতীত অন্য কারো কাছে বিক্রি করা যাবে না। যদি না বায়না দলিলটি আইনসম্মতভাবে বাতিল করা না হয়। অনেক সময় জমির ক্রেতা সময়মতো টাকা জোগাড় করতে না পারলে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। বায়না চুক্তি বাতিলের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে দলিলের ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে কি বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি আছেন কিনা।

যদি দলিলের ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি থাকে তবে ব্যাপারটি খুব সহজ; কিন্তু উভয় পক্ষ যদি বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি না থাকে তবে কাজটি একটু কঠিন হয়ে যায়। যদি জমির ক্রেতা ও বিক্রেতা বায়না চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি হলে, উভয়পক্ষ একত্রে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে পূর্বের বায়না দলিলটি বাতিলের জন্য ‘বাতিল দলিল’ করতে হবে। উক্ত দলিলে বায়না দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ে স্বাক্ষর দিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করিয়ে নিতে হবে। তাহলেই উক্ত বায়না চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাবে।

আর যদি জমির ক্রেতা চুক্তিটি বাতিলের জন্য রাজি না থাকে, এক্ষেত্রে আইনজীবীর কাছে গিয়ে উক্ত বায়না দলিলের ক্রেতা বরাবর একটি উকিল নোটিশ দিতে হবে। উক্ত নোটিশে ক্রেতাকে বায়না দলিলের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধের জন্য কয়েক দিন সময় দিতে পারেন এবং আরো উল্লেখ করতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি বকেয়া টাকা পরিশোধ না করে; তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। উকিল নোটিশ প্রাপ্তির পর ক্রেতা সময় মতো টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয় তাহলে ভালো। সেটা না হলে বিক্রেতা আদালতে গিয়ে যথাযথ কারণ দেখিয়ে বায়না চুক্তি বাতিলের মামলা করতে পারে।

ভুক্তভোগী পক্ষ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭-এর ১২ ধারা মতে আদালতে চুক্তি প্রবলের মামলা করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, এরকম মামলা করতে হলে চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হতে বা চুক্তি অস্বীকারের তারিখ হতে এক বছরের মধ্যে করতে হবে। এ আইনের ২১(এ) ধারার বিধান অনুসারে আদালতের মাধ্যমে চুক্তি বলবত করতে হলে আপনাকে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবেÑ ১. চুক্তি বা বায়নানামাটি লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে নতুবা চুক্তি প্রবলের মামলা আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করা যাবে না; ২. বায়নার অবশিষ্ট টাকা আদালতে জমা না করলে এ মামলা দায়ের করা যাবে না।

আদালত সবকিছু দেখে সন্তুষ্ট হলে উক্ত বায়না চুক্তিটি বাতিল করে দিতে পারে। আবার আদালত জমির বিক্রেতার ক্ষতিপূরণ হিসেবে বায়না চুক্তির টাকা বিক্রেতার কাছে রেখে দেওয়ার আদেশ দিতে পারে। আদালতের বায়না চুক্তিটি বাতিলের রায় পাওয়ার পর জমির মালিক পুনরায় জমিটি অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতে পারবেন।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top