alt

উপ-সম্পাদকীয়

চাই খেলার মাঠ ও পার্ক

মোতাহার হোসেন

: মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

নগরীর জনসংখ্যার তুলনায় শিশু-কিশোর-কিশোরীদের জন্য খেলার মাঠ, পার্কের সংখ্যা অপ্রতুল। উন্নত এলাকায় খেলার মাঠ, পার্ক থাকলেও অনুন্নত ও অপরিকল্পিত এলাকায় এসবের সংকট তীব্র। পরিকল্পনামাফিক নতুন খেলার মাঠ, পার্ক তৈরির উদ্যোগও অপ্রতুল। পরিবেশবাদী একটি সংগঠনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ীÑ ‘খেলার মাঠকে আধুনিক নগর পরিকল্পনায় বিনোদন সুবিধার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম এক ঘণ্টা করে খেলাধুলা ও শারীর চর্চায় সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন। এ হিসাবে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য সোয়া দুই একর খোলা জায়গা এবং এক একর খেলার মাঠের প্রয়োজন। ইউএন-হ্যাবিটেটের মতে হাঁটা দূরত্বে খেলার মাঠ, সবুজ এলাকা থাকা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিকল্পনার মানদ- অনুযায়ী যেকোনো আবাসন এলাকার ন্যূনতম ১০ শতাংশ খেলার মাঠ-পার্ক সুবিধার জন্য বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় মেয়েদের খেলার সুযোগ নিশ্চিত করতে এলাকাভিত্তিক বিশেষায়িত খেলার মাঠ তৈরি করতে পারলে মেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ বাড়ানো সম্ভব।

নগর পরিকল্পনার মানদ- অনুযায়ী ঢাকা মহাগরীতে ৭৯৫, চট্টগ্রামে ৫৪১, রাজশাহীতে ৩৭, খুলনায় ৬৫, সিলেটে ৪০ ও বরিশালে ৪৫টি খেলার মাঠের ঘাটতি রয়েছে। রাজধানী ঢাকা গড়ে ওঠছে অপরিকল্পিতভাবে। ঢাকায় নেই পর্যাপ্ত উন্মুক্ত খেলার মাঠ এবং পার্ক।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, যত্রতত্র বাড়ি, ভবনসহ স্থাপনা নির্মাণে রাজউক ও নগর কর্তৃপক্ষের বিধি-বিধান অনুসরণে রহস্যজনকভাবে শৈথল্য প্রর্দশনের কারণেই ঢাকা সম্প্রসারিত হচ্ছে ও গড়ে ওঠছে প্রয়োজনীয় মাঠ, পার্ক, মুক্ত জলাশয় ছাড়াই। গত দুই দশকে ঢাকায় উন্মুক্ত মাঠের সংখ্যা ১৫০টি থেকে নেমে এসেছে ২৪টিরও নিচে। এ কারণে শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সিদের খেলাধুলাসহ চিত্ত-বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একইভাবে অবসরপ্রাপ্ত ও বয়স্ক নাগরিকরা প্রভাত ও সান্ধ্যকালীন হাঁটার সুযোগ পাচ্ছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যে কোনো শহরের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য নয় বর্গমিটার খোলা জায়গা থাকা প্রয়োজন এবং খোলা জায়গায় হওয়া উচিত পার্ক বা খেলার মাঠ। অথচ ঢাকা শহরে খোলা জায়গার পরিমাণ ব্যক্তি পিছু সামান্য।

গবেষণায় ওঠে এসেছেÑ রাজধানীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের সঙ্গে কমছে শিশুদের খেলার মাঠ। অধিকাংশ মাঠ উন্নয়নের পরে তা বন্ধ রাখায় খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। এর মধ্যে কয়েকটি মাঠের উন্নয়ন কাজ চলছে আবার কোনোটি পড়ে আছে তালাবদ্ধ। রাজউক ঢাকা মহানগর অঞ্চলের জন্য বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ২০১৬-৩৫-এর জন্য প্রস্তাব তৈরিতে করা জরিপ মতে ঢাকা মহানগরীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু। সেখানে নগরে সাড়ে ১২ হাজার মানুষের বিপরীতে একটি দুই একরের খেলার মাঠের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি মেয়রের সেই প্রস্তাব অনুযায়ী নগরের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করার কথা; কিন্তু দুই সিটি কর্পোরেশন নতুন মাঠের দিকে নজর না দিয়ে যেগুলো বিদ্যমান আছে সেখানে কিছু উন্নয়ন কাজ করে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করে দিচ্ছে। একইসঙ্গে পার্ক ও খেলার মাঠের প্রকল্প নিয়ে কাজ করায় আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে মাঠের পরিধি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর মানুষকে স্বস্তি দিতে এবং জলবায়ু অভিঘাত রুখতে উন্মুক্ত স্থান বাড়ানোর বিকল্প নেই। শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে না পারলে এবং সেখানে শিশুদের খেলার সুযোগ দিতে না পারলে তাদের বিকাশ ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার পথ বাধাগ্রস্ত হবে।

দুই সিটি কর্পোরেশন বলছে তাদের আলাদা দুটি প্রকল্পের আওতায় ৪৯টি পার্ক ও খেলার মাঠের কাজ শেষ করে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি করে খেলার মাঠ তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যেখানেই ফাঁকা স্থান পাচ্ছে সেখানেই পার্ক কিংবা খেলার মাঠ তৈরি করা হচ্ছে বলেও দাবি তাদের। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসারে, কোনো এলাকায় প্রতি পাঁচ হাজার মানুষের জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। সে মাঠের আকার হবে এক একর। সেক্ষেত্রে ঢাকার প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জন্য মাঠের প্রয়োজন প্রায় পাঁচ হাজার একর।

রাজউকের ১৯৯৫ সালে মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী তখন মাথাপিছু সবুজ পরিসরের পরিমাণ ছিল ০.৫ বর্গমিটার। ২০০৯ সালে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকায় মাথাপিছু সবুজ পরিসরের পরিমাণ মাত্র ০.০৫২ বর্গমিটার। বর্তমানে পার্ক ও উন্মুক্ত পরিসরের অপর্যাপ্ততা ঢাকার বড় সমস্যা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নেয়া একটি প্রকল্পের আওতায় ১৮টি পার্ক ও মাঠের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ সম্পন্ন হয়নি। সম্প্রতি ৭টি পার্ক ও খেলার মাঠ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এলাকার ডিজাইনে সেই এলাকার জনসংখ্যাকে মাথায় রেখে খেলার মাঠের পরিকল্পনা করা উচিত। এক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচ বছরে যদি একটি করে খেলার মাঠ করার চিন্তা করা হয় তাহলে বছরে আরও ১২৯টি নতুন খেলার মাঠ পাওয়া যাবে। ঢাকার জনসংখ্যা বর্তমানে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে মানদ- অনুসরণ করে পার্ক-খেলার মাঠ পুরোপুরি নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে কিছু কিছু জায়গায় পুনরুন্নয়নের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক কিছু খেলার মাঠ-পার্ক তৈরি করা সম্ভব।

প্রত্যাশা করি নগরীর সব মাঠ ও পার্কে সার্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে রাজধানীর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠসমূহ প্রতিষ্ঠান ছুটির পর স্থানীয় নাগরিকদের প্রবেশ উম্মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠান ও মাঠের নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নামমাত্র প্রবেশ ফির বিনিময়ে মাঠে প্রভাত, বিকাল, সন্ধ্যায় পাড়া-মহল্লার সকল বয়সীদের জন্য উন্মুক্ত প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সকল মাঠে শিশু ও বয়স্কদের প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি তাদের সহায়তা, হালকা পানীয়, প্রাথমিক চিকিৎসা, হালকা বিনোদনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারণ একটি সুস্থ জাতি গঠনে শরীর চর্চা, হাঁটা, বিনোদন অপরিহার্র্য।

[লেখক : গণমাধ্যমকর্মী]

অনিয়ন্ত্রিত অটোরিকশা ও সড়ক দুর্ঘটনা

অপরিকল্পিত ভ্যাট ও কর বৃদ্ধি

ছবি

‘বেগমপাড়া’ হইতে খোলা চিঠি

সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানবে কে

মকর সংক্রান্তি : বাঙালির উৎসব ও ঐতিহ্যের ধারক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : অপসংস্কৃতি ও নৈতিক প্রশ্ন

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কূটতর্ক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

রজিনাদের বেঁচে থাকার লড়াই

মানব পাচার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা

সংবিধান সংশোধন : আমাদের বলার আছে

চিন্তা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা

গ্রাম উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা

‘দেশজ নাট্যশৈলী’র কেন্দ্রীয় নাট্যআঙ্গিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ও কিছু প্রশ্ন

রাখাইন পরিস্থিতি : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বড় পরীক্ষা

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব

রম্যগদ্য : নিশুতিরাতের আগন্তুক

গুরু রবিদাস জির কথা

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জন্য অশনিসংকেত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

কোথায় নাই কোটা?

ছবি

ও আমার স্বপ্ন ঝরা আকুল করা জন্মভূমি

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

চাই খেলার মাঠ ও পার্ক

মোতাহার হোসেন

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

নগরীর জনসংখ্যার তুলনায় শিশু-কিশোর-কিশোরীদের জন্য খেলার মাঠ, পার্কের সংখ্যা অপ্রতুল। উন্নত এলাকায় খেলার মাঠ, পার্ক থাকলেও অনুন্নত ও অপরিকল্পিত এলাকায় এসবের সংকট তীব্র। পরিকল্পনামাফিক নতুন খেলার মাঠ, পার্ক তৈরির উদ্যোগও অপ্রতুল। পরিবেশবাদী একটি সংগঠনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ীÑ ‘খেলার মাঠকে আধুনিক নগর পরিকল্পনায় বিনোদন সুবিধার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম এক ঘণ্টা করে খেলাধুলা ও শারীর চর্চায় সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন। এ হিসাবে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য সোয়া দুই একর খোলা জায়গা এবং এক একর খেলার মাঠের প্রয়োজন। ইউএন-হ্যাবিটেটের মতে হাঁটা দূরত্বে খেলার মাঠ, সবুজ এলাকা থাকা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিকল্পনার মানদ- অনুযায়ী যেকোনো আবাসন এলাকার ন্যূনতম ১০ শতাংশ খেলার মাঠ-পার্ক সুবিধার জন্য বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় মেয়েদের খেলার সুযোগ নিশ্চিত করতে এলাকাভিত্তিক বিশেষায়িত খেলার মাঠ তৈরি করতে পারলে মেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ বাড়ানো সম্ভব।

নগর পরিকল্পনার মানদ- অনুযায়ী ঢাকা মহাগরীতে ৭৯৫, চট্টগ্রামে ৫৪১, রাজশাহীতে ৩৭, খুলনায় ৬৫, সিলেটে ৪০ ও বরিশালে ৪৫টি খেলার মাঠের ঘাটতি রয়েছে। রাজধানী ঢাকা গড়ে ওঠছে অপরিকল্পিতভাবে। ঢাকায় নেই পর্যাপ্ত উন্মুক্ত খেলার মাঠ এবং পার্ক।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, যত্রতত্র বাড়ি, ভবনসহ স্থাপনা নির্মাণে রাজউক ও নগর কর্তৃপক্ষের বিধি-বিধান অনুসরণে রহস্যজনকভাবে শৈথল্য প্রর্দশনের কারণেই ঢাকা সম্প্রসারিত হচ্ছে ও গড়ে ওঠছে প্রয়োজনীয় মাঠ, পার্ক, মুক্ত জলাশয় ছাড়াই। গত দুই দশকে ঢাকায় উন্মুক্ত মাঠের সংখ্যা ১৫০টি থেকে নেমে এসেছে ২৪টিরও নিচে। এ কারণে শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সিদের খেলাধুলাসহ চিত্ত-বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একইভাবে অবসরপ্রাপ্ত ও বয়স্ক নাগরিকরা প্রভাত ও সান্ধ্যকালীন হাঁটার সুযোগ পাচ্ছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যে কোনো শহরের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য নয় বর্গমিটার খোলা জায়গা থাকা প্রয়োজন এবং খোলা জায়গায় হওয়া উচিত পার্ক বা খেলার মাঠ। অথচ ঢাকা শহরে খোলা জায়গার পরিমাণ ব্যক্তি পিছু সামান্য।

গবেষণায় ওঠে এসেছেÑ রাজধানীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের সঙ্গে কমছে শিশুদের খেলার মাঠ। অধিকাংশ মাঠ উন্নয়নের পরে তা বন্ধ রাখায় খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। এর মধ্যে কয়েকটি মাঠের উন্নয়ন কাজ চলছে আবার কোনোটি পড়ে আছে তালাবদ্ধ। রাজউক ঢাকা মহানগর অঞ্চলের জন্য বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ২০১৬-৩৫-এর জন্য প্রস্তাব তৈরিতে করা জরিপ মতে ঢাকা মহানগরীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু। সেখানে নগরে সাড়ে ১২ হাজার মানুষের বিপরীতে একটি দুই একরের খেলার মাঠের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি মেয়রের সেই প্রস্তাব অনুযায়ী নগরের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করার কথা; কিন্তু দুই সিটি কর্পোরেশন নতুন মাঠের দিকে নজর না দিয়ে যেগুলো বিদ্যমান আছে সেখানে কিছু উন্নয়ন কাজ করে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করে দিচ্ছে। একইসঙ্গে পার্ক ও খেলার মাঠের প্রকল্প নিয়ে কাজ করায় আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে মাঠের পরিধি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর মানুষকে স্বস্তি দিতে এবং জলবায়ু অভিঘাত রুখতে উন্মুক্ত স্থান বাড়ানোর বিকল্প নেই। শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে না পারলে এবং সেখানে শিশুদের খেলার সুযোগ দিতে না পারলে তাদের বিকাশ ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার পথ বাধাগ্রস্ত হবে।

দুই সিটি কর্পোরেশন বলছে তাদের আলাদা দুটি প্রকল্পের আওতায় ৪৯টি পার্ক ও খেলার মাঠের কাজ শেষ করে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি করে খেলার মাঠ তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যেখানেই ফাঁকা স্থান পাচ্ছে সেখানেই পার্ক কিংবা খেলার মাঠ তৈরি করা হচ্ছে বলেও দাবি তাদের। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসারে, কোনো এলাকায় প্রতি পাঁচ হাজার মানুষের জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। সে মাঠের আকার হবে এক একর। সেক্ষেত্রে ঢাকার প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জন্য মাঠের প্রয়োজন প্রায় পাঁচ হাজার একর।

রাজউকের ১৯৯৫ সালে মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী তখন মাথাপিছু সবুজ পরিসরের পরিমাণ ছিল ০.৫ বর্গমিটার। ২০০৯ সালে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকায় মাথাপিছু সবুজ পরিসরের পরিমাণ মাত্র ০.০৫২ বর্গমিটার। বর্তমানে পার্ক ও উন্মুক্ত পরিসরের অপর্যাপ্ততা ঢাকার বড় সমস্যা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নেয়া একটি প্রকল্পের আওতায় ১৮টি পার্ক ও মাঠের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ সম্পন্ন হয়নি। সম্প্রতি ৭টি পার্ক ও খেলার মাঠ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এলাকার ডিজাইনে সেই এলাকার জনসংখ্যাকে মাথায় রেখে খেলার মাঠের পরিকল্পনা করা উচিত। এক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচ বছরে যদি একটি করে খেলার মাঠ করার চিন্তা করা হয় তাহলে বছরে আরও ১২৯টি নতুন খেলার মাঠ পাওয়া যাবে। ঢাকার জনসংখ্যা বর্তমানে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে মানদ- অনুসরণ করে পার্ক-খেলার মাঠ পুরোপুরি নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে কিছু কিছু জায়গায় পুনরুন্নয়নের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক কিছু খেলার মাঠ-পার্ক তৈরি করা সম্ভব।

প্রত্যাশা করি নগরীর সব মাঠ ও পার্কে সার্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে রাজধানীর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠসমূহ প্রতিষ্ঠান ছুটির পর স্থানীয় নাগরিকদের প্রবেশ উম্মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠান ও মাঠের নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নামমাত্র প্রবেশ ফির বিনিময়ে মাঠে প্রভাত, বিকাল, সন্ধ্যায় পাড়া-মহল্লার সকল বয়সীদের জন্য উন্মুক্ত প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সকল মাঠে শিশু ও বয়স্কদের প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি তাদের সহায়তা, হালকা পানীয়, প্রাথমিক চিকিৎসা, হালকা বিনোদনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারণ একটি সুস্থ জাতি গঠনে শরীর চর্চা, হাঁটা, বিনোদন অপরিহার্র্য।

[লেখক : গণমাধ্যমকর্মী]

back to top