নূরুল আমিন
গত ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি. তারিখে করাচীতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে, বাংলাদেশের দিকে তাকালে এখন লজ্জিত হই’।
আসলে লজ্জিত হওয়ারই কথা। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েছে।
বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭২.৮ বছর আর পাকিস্তানের ৬৯ বছর।
বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ৪.১৯% আর পাকিস্তানের ৫.৮%।
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৭৬৫ মার্কিন ডলার আর পাকিস্তানের ১৪৭১ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের জিডিপির আকার ৩৪৮ বিলিয়ন ডলার।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার পাকিস্তানের রিজার্ভ ৫.৪৫ বিলিয়ন ডলার।
আমাদের রপ্তানি ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ৩২.৫০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য ১৮.৭%, পাকিস্তানে ২৪%।
বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৬.৮%, পাকিস্তানে ৫৭%।
লিঙ্গ সমতায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৯তম আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৪২তম।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম আর পাকিস্তানের অবস্থান ৯৫তম।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৩%, আর পাকিস্তানে ২.২৩%।
বাংলাদেশে নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ ৪৩% আর পাকিস্তানে ২২%।
২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্যাঙ্ক, কামান, মেশিনগান নিয়ে এবং হাজার হাজার বাঙালিকে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। বর্বর হামলা চালিয়ে ওই রাত্রে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। তাদের শোষণ, নির্যাতন, বৈষম্য থেকে মুক্তির সংগ্রামে ৯ মাস যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ লোকের জীবন ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করি। তাই তারা লজ্জিত হলেও আমরা আনন্দিত হই না।
১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দেশকে সাড়ে তিন বছরে শক্ত অথনৈতিক ভিত্তিতে দাঁড় করাতে সক্ষম হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দেশের উন্নয়ন হয় বাধাগ্রস্ত।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ১৯৯৬ তে প্রথম ক্ষমতাসীন হন। পরবর্তীতে ২০০৯, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এ স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করেন। সরকার দেশের মানুষের ভাতের অধিকার ও উন্নয়ন অভিযানে সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। প্রথমেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেন। তারপর শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে সফলতা অর্জন করেন। গ্রামের দরিদ্র্য মানুষের জন্য দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রহণ করে এক অভিনব সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছে, যা দেশের দারিদ্র্য হ্রাসে বিরাট ভূমিকা রাখে। প্রধানমন্ত্রীর নিরলস পরিশ্রমে নারীর ক্ষমতায়নে, শিক্ষাবিস্তারে, তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতিতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে, জেন্ডার সমতায়, মাতৃমৃত্যু রোধে বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। তাই বাংলাদেশ আজ অনেক দেশের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল।
এরপর সরকার কতগুলো বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেয়, যেমনÑ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্কসহ ১০০ অর্থনৈতিক জোন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব এসেছে। ২০২০ সালে পাকিস্তানের টেলিভিশন টকশোতে উন্নয়ন পরামর্শক জনাব জাইঘাম খান বলেছিলেন ‘পাকিস্তানের উন্নয়ন যদি ঘটাতে চান সুইডেনকে না দেখে বাংলাদেশের দিকে তাকান। পাকিস্তানকে বাংলাদেশের মতো বানান’।
আজ ২০২৪ সালে এসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির কথা বলেছেন। এ যেন পাকিস্তান আমলে শোষিত, অবহেলিত ও অবমূল্যায়িত বাঙালির মধুর জবাব।
[লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন]
নূরুল আমিন
শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪
গত ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি. তারিখে করাচীতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে, বাংলাদেশের দিকে তাকালে এখন লজ্জিত হই’।
আসলে লজ্জিত হওয়ারই কথা। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েছে।
বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭২.৮ বছর আর পাকিস্তানের ৬৯ বছর।
বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ৪.১৯% আর পাকিস্তানের ৫.৮%।
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৭৬৫ মার্কিন ডলার আর পাকিস্তানের ১৪৭১ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের জিডিপির আকার ৩৪৮ বিলিয়ন ডলার।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার পাকিস্তানের রিজার্ভ ৫.৪৫ বিলিয়ন ডলার।
আমাদের রপ্তানি ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ৩২.৫০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য ১৮.৭%, পাকিস্তানে ২৪%।
বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৬.৮%, পাকিস্তানে ৫৭%।
লিঙ্গ সমতায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৯তম আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৪২তম।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম আর পাকিস্তানের অবস্থান ৯৫তম।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৩%, আর পাকিস্তানে ২.২৩%।
বাংলাদেশে নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ ৪৩% আর পাকিস্তানে ২২%।
২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্যাঙ্ক, কামান, মেশিনগান নিয়ে এবং হাজার হাজার বাঙালিকে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। বর্বর হামলা চালিয়ে ওই রাত্রে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। তাদের শোষণ, নির্যাতন, বৈষম্য থেকে মুক্তির সংগ্রামে ৯ মাস যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ লোকের জীবন ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করি। তাই তারা লজ্জিত হলেও আমরা আনন্দিত হই না।
১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দেশকে সাড়ে তিন বছরে শক্ত অথনৈতিক ভিত্তিতে দাঁড় করাতে সক্ষম হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দেশের উন্নয়ন হয় বাধাগ্রস্ত।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ১৯৯৬ তে প্রথম ক্ষমতাসীন হন। পরবর্তীতে ২০০৯, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এ স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করেন। সরকার দেশের মানুষের ভাতের অধিকার ও উন্নয়ন অভিযানে সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। প্রথমেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেন। তারপর শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে সফলতা অর্জন করেন। গ্রামের দরিদ্র্য মানুষের জন্য দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রহণ করে এক অভিনব সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছে, যা দেশের দারিদ্র্য হ্রাসে বিরাট ভূমিকা রাখে। প্রধানমন্ত্রীর নিরলস পরিশ্রমে নারীর ক্ষমতায়নে, শিক্ষাবিস্তারে, তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতিতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে, জেন্ডার সমতায়, মাতৃমৃত্যু রোধে বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। তাই বাংলাদেশ আজ অনেক দেশের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল।
এরপর সরকার কতগুলো বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেয়, যেমনÑ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্কসহ ১০০ অর্থনৈতিক জোন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব এসেছে। ২০২০ সালে পাকিস্তানের টেলিভিশন টকশোতে উন্নয়ন পরামর্শক জনাব জাইঘাম খান বলেছিলেন ‘পাকিস্তানের উন্নয়ন যদি ঘটাতে চান সুইডেনকে না দেখে বাংলাদেশের দিকে তাকান। পাকিস্তানকে বাংলাদেশের মতো বানান’।
আজ ২০২৪ সালে এসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির কথা বলেছেন। এ যেন পাকিস্তান আমলে শোষিত, অবহেলিত ও অবমূল্যায়িত বাঙালির মধুর জবাব।
[লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন]