alt

উপ-সম্পাদকীয়

অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা

কায়ছার আলী

: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

“আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে, কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে, পাহাড় শিখায় তাহার সমান, হই যেন ভাই মৌন-মহান।” আকাশের মতো ঔদার্য, ক্লান্তিহীন বায়ুর মতো কর্মীদের প্রেরণা এবং পাহাড়ের মতো উচ্চতা নিয়ে যিনি আজও মাথা উঁচু করে বেঁচে ছিলেন, তিনি হলেন পৃথিবীর আপামর জনগণের অবিসংবাদিত নেতা এবং দুনিয়া কাঁপানো মাহাত্ম্যের মুকুট নিয়ে দেশে দেশে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে জাতীয় সংহতির বীজ বপন ও পুনর্জীবন বাস্তবায়ন করেছেন ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ও মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের জীবনীর প্রতি যার আগ্রহ বেশি তিনি হলেন অহিংস বর্ণবাদবিরোধী দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা।

ম্যান্ডেলা দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী এবং কঠোর নির্মম নিঃসঙ্গ কয়েদি জীবনযাপন করলেও বর্ণবাদের সঙ্গে কখনো আপষ করেননি। গভীর রাতের শেষে যেভাবে ভোর হয় ঠিক সেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এফ ডাবলিউ ডি ক্লার্ক ১৯৮৯ সালে বর্ণবৈষম্য নীতির অবসান ঘটান। ১৯৯০ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং দীর্ঘ ২৭ বছর পর অবশেষে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পান।

মুক্তির পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম চূড়ান্ত পর্যায়েÑ আমি স্বপ্ন দেখি এমন এক সমাজের যেখানে সমঅধিকার নিয়ে সবাই সম্প্রীতিতে বসবাস করবে। বর্ণবাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এই বর্ণবাদের অবসান ঘটাতে হবে। এই দেশ সাদাকালোর দেশ। আমাদের আন্দোলন সাদাদের বিরুদ্ধে নয়, তাদের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে’।

পরবর্তীতে তিনি তার দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং এরই ধারাবাহিকতায় সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন এবং উপরাষ্ট্রপতি করেন শ্বেতাঙ্গ নেতা পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি ডি-ক্লার্ককে। ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক উপদেষ্টারা বললেন, আমরা শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ক্ষমতায় এসেছি। আর এখন তাদেরই ক্ষমতায় বসানো হচ্ছে। দেশপ্রেমিক এবং দূরদর্শী সম্পন্ন দেশ এবং সমাজের ঐক্য রাখার স্বার্থেই তিনি উত্তরে বললেন ‘সাদারা অনেক দিন ক্ষমতায় ছিল। দেশ পরিচালনায় তারা অনেক অভিজ্ঞ। আজ দেশের স্বার্থে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের বড়ই প্রয়োজন। ব্যক্তিগত বিদ্বেষ যতই থাকুক না কেন।’

তিনি ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালন করে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যারা তাকে রাজদ- দিয়েছিল আবার তারাই তাকে বাধ্য হয়ে সম্মানিত করেছেন। চমৎকার বিষয়টি হলো ইংল্যান্ডের লৌহমানবী খ্যাত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ম্যান্ডেলার মুক্তির নয় বছর আগে দম্ভোক্তি বলেছিলেন ‘কেউ যদি ভেবে থাকে এ.এন.সি কখনও দক্ষিণ আফ্রিকায় সরকার গঠন করতে পারবে তবে সে এক অন্ধকার অলিক রাজ্যে বাস করছে।’

কিন্তু নয় বছর পর থ্যাচারকেই দেখতে হলো সেই অন্ধকারের অলিক রাজ্য স্বয়ং ওয়েস্টমিনস্টার হলে। আর ঠিক গ্র্যান্ড অপেরার দৃশ্যের মতো রাজকীয় রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা পায়ে পায়ে সারি বেঁধে আর হলের পেছনে হেলমেট পরা প্রহরীরা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। লর্ড চ্যান্সেলর, লর্ড ম্যাকি, অব ক্লার্সফার্ন তাদের রাষ্ট্রীয় পোশাক পরে উপস্থিত হলেন। তারপর সবশেষে লম্বা ও খানিকটা হেলে পড়া দেহ সৌষ্ঠবের অধিকারী নেলসন ম্যান্ডেলা হাজির হলেন এবং খানিকটা বিচলিতভাবে হাউসের স্পিকার বুথ্রোয়েডের হাত ধরে এগিয়ে এলেন। ভদ্র মহিলা পরে বলেছিলেন সেই পাঁচ মিনিট ছিল তার জীবনের সবচেয়ে স্মৃতিবহ ক্ষণ।

ম্যান্ডেলা ধীরে লয়ে এমন কঠিন বক্তব্য রাখেন যা লেডি থ্যাচারকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। রানির সঙ্গে নৈশভোজের আগে ম্যান্ডেলা রানিকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তিনি কেবল একটি গাঁয়ের ছেলে। ব্রিটেন সমাজের সব দরজা খুলে দেয়ার জন্য এবং সকালে তার বাগানে পায়চারী করতে দেয়ায় রানিকে ধন্যবাদ জানান।

[লেখক : শিক্ষক]

আকস্মিক বন্যা প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কৌশল

পতিতাবৃত্তি কি অপরাধ?

বন্যা-পরবর্তী কৃষকের সুরক্ষা করণীয়

নদী সংস্কার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজের চরকায় তেল দেবার নাম দেশপ্রেম

রম্যগদ্য : ডাক্তারি যখন আইসিইউতে

ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য

বাঙালির ইলিশচর্চা

এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কুষ্ঠ রোগ

প্রসঙ্গ : পরিসংখ্যানের তথ্য বিকৃতি

বোরো ধান বিষয়ে কিছু সতর্কতা এবং সার ব্যবস্থাপনা

বন্যার জন্য ভারত কতটুকু দায়ী

গ্রাফিতিতে আদিবাসীদের বঞ্চনার চিত্র

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

পুলিশের সংস্কার হোক জনগণের কল্যাণে

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের মনস্তত্ত্ব

উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হবে

বন্যার বিভিন্ন ঝুঁকি ও করণীয়

প্রশ্নে জর্জরিত মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবির্ভাব

রম্যগদ্য : এ-পাস, না ও-পাস?

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি, উত্তরণের উপায়

গৃহকর্মী নির্যাতনের অবসান হোক

মাঙ্কিপক্স : সতর্কতা ও সচেতনতা

সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে

শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে

বাদী কিংবা বিবাদীর মৃত্যুতে আইনি ফলাফল কী?

নদ-নদীর সংজ্ঞার্থ ও সংখ্যা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

রাষ্ট্র সংস্কার ও পরিবেশ ন্যায়বিচার

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য কি দূর হবে

আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তহীন কাজ

নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু করাই দেশপ্রেম

দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

ছবি

ইসমাইল হানিয়ের করুণ মৃত্যু

ক্যাপিটল : মার্কিনিদের গণতন্ত্রের প্রতীক

হাওর উন্নয়নে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা

কায়ছার আলী

শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

“আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে, কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে, পাহাড় শিখায় তাহার সমান, হই যেন ভাই মৌন-মহান।” আকাশের মতো ঔদার্য, ক্লান্তিহীন বায়ুর মতো কর্মীদের প্রেরণা এবং পাহাড়ের মতো উচ্চতা নিয়ে যিনি আজও মাথা উঁচু করে বেঁচে ছিলেন, তিনি হলেন পৃথিবীর আপামর জনগণের অবিসংবাদিত নেতা এবং দুনিয়া কাঁপানো মাহাত্ম্যের মুকুট নিয়ে দেশে দেশে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে জাতীয় সংহতির বীজ বপন ও পুনর্জীবন বাস্তবায়ন করেছেন ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ও মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের জীবনীর প্রতি যার আগ্রহ বেশি তিনি হলেন অহিংস বর্ণবাদবিরোধী দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা।

ম্যান্ডেলা দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী এবং কঠোর নির্মম নিঃসঙ্গ কয়েদি জীবনযাপন করলেও বর্ণবাদের সঙ্গে কখনো আপষ করেননি। গভীর রাতের শেষে যেভাবে ভোর হয় ঠিক সেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এফ ডাবলিউ ডি ক্লার্ক ১৯৮৯ সালে বর্ণবৈষম্য নীতির অবসান ঘটান। ১৯৯০ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং দীর্ঘ ২৭ বছর পর অবশেষে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পান।

মুক্তির পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম চূড়ান্ত পর্যায়েÑ আমি স্বপ্ন দেখি এমন এক সমাজের যেখানে সমঅধিকার নিয়ে সবাই সম্প্রীতিতে বসবাস করবে। বর্ণবাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এই বর্ণবাদের অবসান ঘটাতে হবে। এই দেশ সাদাকালোর দেশ। আমাদের আন্দোলন সাদাদের বিরুদ্ধে নয়, তাদের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে’।

পরবর্তীতে তিনি তার দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং এরই ধারাবাহিকতায় সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন এবং উপরাষ্ট্রপতি করেন শ্বেতাঙ্গ নেতা পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি ডি-ক্লার্ককে। ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক উপদেষ্টারা বললেন, আমরা শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ক্ষমতায় এসেছি। আর এখন তাদেরই ক্ষমতায় বসানো হচ্ছে। দেশপ্রেমিক এবং দূরদর্শী সম্পন্ন দেশ এবং সমাজের ঐক্য রাখার স্বার্থেই তিনি উত্তরে বললেন ‘সাদারা অনেক দিন ক্ষমতায় ছিল। দেশ পরিচালনায় তারা অনেক অভিজ্ঞ। আজ দেশের স্বার্থে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের বড়ই প্রয়োজন। ব্যক্তিগত বিদ্বেষ যতই থাকুক না কেন।’

তিনি ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালন করে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যারা তাকে রাজদ- দিয়েছিল আবার তারাই তাকে বাধ্য হয়ে সম্মানিত করেছেন। চমৎকার বিষয়টি হলো ইংল্যান্ডের লৌহমানবী খ্যাত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ম্যান্ডেলার মুক্তির নয় বছর আগে দম্ভোক্তি বলেছিলেন ‘কেউ যদি ভেবে থাকে এ.এন.সি কখনও দক্ষিণ আফ্রিকায় সরকার গঠন করতে পারবে তবে সে এক অন্ধকার অলিক রাজ্যে বাস করছে।’

কিন্তু নয় বছর পর থ্যাচারকেই দেখতে হলো সেই অন্ধকারের অলিক রাজ্য স্বয়ং ওয়েস্টমিনস্টার হলে। আর ঠিক গ্র্যান্ড অপেরার দৃশ্যের মতো রাজকীয় রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা পায়ে পায়ে সারি বেঁধে আর হলের পেছনে হেলমেট পরা প্রহরীরা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। লর্ড চ্যান্সেলর, লর্ড ম্যাকি, অব ক্লার্সফার্ন তাদের রাষ্ট্রীয় পোশাক পরে উপস্থিত হলেন। তারপর সবশেষে লম্বা ও খানিকটা হেলে পড়া দেহ সৌষ্ঠবের অধিকারী নেলসন ম্যান্ডেলা হাজির হলেন এবং খানিকটা বিচলিতভাবে হাউসের স্পিকার বুথ্রোয়েডের হাত ধরে এগিয়ে এলেন। ভদ্র মহিলা পরে বলেছিলেন সেই পাঁচ মিনিট ছিল তার জীবনের সবচেয়ে স্মৃতিবহ ক্ষণ।

ম্যান্ডেলা ধীরে লয়ে এমন কঠিন বক্তব্য রাখেন যা লেডি থ্যাচারকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। রানির সঙ্গে নৈশভোজের আগে ম্যান্ডেলা রানিকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তিনি কেবল একটি গাঁয়ের ছেলে। ব্রিটেন সমাজের সব দরজা খুলে দেয়ার জন্য এবং সকালে তার বাগানে পায়চারী করতে দেয়ায় রানিকে ধন্যবাদ জানান।

[লেখক : শিক্ষক]

back to top