কে এম মাসুম বিল্লাহ
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে বিসিএস-এ অনেকেই ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার কিংবা অন্য বিশেষায়িত বিষয় ছেড়ে প্রশাসন কিংবা পুলিশ ক্যাডারে আসছেন। যে সাবজেক্ট এ পড়াশোনা সেই ফিল্ডে না থেকে প্রশাসন, পররাষ্ট্র কিংবা পুলিশ ক্যাডার কেনো পছন্দের শীর্ষে? একজন এমবিবিএস পাশ করা শিক্ষার্থী বিসিএস দিয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে আসবেন কিংবা কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা করে বিসিএস দিয়ে কৃষি কর্মকর্তা হয়ে কৃষির উন্নয়ণ সাধন করবেন এটাই কাম্য। তবে কেনো তারা তাদের টেকনিক্যাল ক্যাডার পাওয়ার পরও প্রশাসন কিংবা পররাষ্ট্র ক্যাডারের জন্য চেষ্টা করবেন?
সত্যি বলতে আমাদের সিস্টেমটা এমন যে এখানে কিছু ক্যাডারে পাওয়ার প্রাকটিস, প্রমোশন, আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা এতো বেশি দেয়া হয়েছে যে অন্য ক্যাডারদের থেকে তা অনেকাংশে বেশি। "আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য" শব্দটির সাথে আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। আর একারনেই কিছু কিছু ক্যাডার সব সময়ই সবার পছন্দের শীর্ষে থাকছে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের মত বিশেষায়িত বিষয়গুলো থেকে জেনারেল ক্যাডারে আসার প্রবনতা কিন্তু বাড়ছে। আর আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য দূর করা না গেলে এমন প্রবনতা সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়তে পারে! গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ৩৬ বিসিএস এ মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে জেনারেল ক্যাডারে এসেছেন ৪.৩০% এবং ৩৭ ও ৩৮ বিসিএস এ তা প্রায় যথাক্রমে ৮.৫ ও ৮%! বিগত বিসিএসগুলোতে সংখ্যাটি আরো বেশি।
একজন মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টদের ডিগ্রী নিতে যে পরিমান কস্ট করতে হয় একজন জেনারেল সাবজেক্ট থেকে ডিগ্রী নিতে কিন্তু তুলনামূলক কম কস্ট হয়। তবে বিসিএস দেয়ার পর যখন একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট বিসিএস স্বাস্হ্য ক্যাডারে যোগদান করেন আর জেনারেল থেকে একজন পুলিশ কিংবা প্রশাসনে ক্যাডারে যোগদান করছেন দুজনের মধ্যে তখন বিশাল পার্থক্য! প্রশাসনিক ক্ষমতার কথা বাদই দিন, কর্মক্ষেত্র পরিবেশ, প্রমোশন সবদিক থেকেই স্বাস্থ্য ক্যাডার পিছিয়ে! একই কথা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্যও প্রযোজ্য! তাহলে কেনো তারা প্রশাসন ক্যাডারে না এসে স্বাস্থ্য বা অন্য ক্যাডারে আসবেন?
শিক্ষা ক্যাডারদের বলা হয় সবথেকে অবহেলিত! প্রমোশন ও অন্যসব বিবেচনা করলে অবশ্য অবহেলিত বলা ছাড়া উপায় কি! অন্য যেকোনো ক্যাডারের থেকে প্রশাসনিক ক্ষমতা, প্রমোশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিবেচনায় অনেকটা পিছিয়ে। যেখানে প্রভাষক থেকে সহকারি অধ্যাপক হতে প্রায় ৮/১০ বছর লেগে যায় অথচ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ৩ বছরে সহকারি অধ্যাপক ও ৮/১০ বছরে সহযোগি অধ্যাপকও হয়ে যান! সাম্প্রতিক সময়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারগন তাদের বৈষম্য দূরীকরণের জন্য মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন; সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি; অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ ইত্যাদী।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিয়ে অনেক দিন থেকেই আলোচনা হচ্ছে। টেকনিক্যাল সহ বেশ কিছু ক্যাডার সার্ভিসে থাকা ক্যাডারগনের মধ্যে এ নিয়ে একটা চাপা অভিমান যে রয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিশেষ করে উপ-সচিব নিয়োগের সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ % ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫% নিয়োগ পায়।
এ যাবতকালে গঠিত বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্কার কমিটি একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষার মাধ্যমে উপসচিব ও তৎপরবর্তী পদগুলোতে নিয়োগের সুপারিশ করলেও সবকিছু সেই আগের মতই চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন হয় এবং কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারও হয়। তবে ভুলে গেলে চলবে না যে অতীতে কোটা পদ্ধতি চালু ছিলো। এরফলে তুলনামূলক কম নম্বর পেয়ে ভালো ক্যাডার পাওয়ার মত ঘটনাও কিন্তু কম নয়। একজন কোটাধারী এক হাজার সিরিয়ালে থেকেও কিন্তু প্রশাসন ক্যাডার পেতে পারেন আবার আরেকজন দুইশত তম সিরিয়ালে থেকেও কিন্তু অন্য ক্যাডার পেয়েছেন।
অর্থাৎ এরা কিন্তু দুই রকম কোটা সুবিধা পেয়ে আসছেন। চাকরিতে যোগদানের সময় কোটা এবং প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বরাদ্দকৃত উচ্চতর পদে কোটা! এটা সম্পূর্নরূপে একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি বলে অনেকেই এই পদ্ধতির সংস্কার চেয়ে সোচ্চার হয়েছেন। যদিও সব ক্যাডারগনই একই পরিক্ষা দিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে আসেন। তাদের মেধার খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনা করলে কিছু কিছু ক্যাডার সার্ভিসকে একটু বেশিই সুবিধা দেয়া হয়েছে। যদিও কর্মক্ষেত্রের ধরন অনুযায়ী সব ক্যাডারের সুযোগ সুবিধা অভিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও কিছু কিছু বৈষম্যমূলক নীতির সংস্কার হতেই পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য দূর করা।
[লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা]
কে এম মাসুম বিল্লাহ
শনিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৪
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে বিসিএস-এ অনেকেই ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার কিংবা অন্য বিশেষায়িত বিষয় ছেড়ে প্রশাসন কিংবা পুলিশ ক্যাডারে আসছেন। যে সাবজেক্ট এ পড়াশোনা সেই ফিল্ডে না থেকে প্রশাসন, পররাষ্ট্র কিংবা পুলিশ ক্যাডার কেনো পছন্দের শীর্ষে? একজন এমবিবিএস পাশ করা শিক্ষার্থী বিসিএস দিয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে আসবেন কিংবা কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা করে বিসিএস দিয়ে কৃষি কর্মকর্তা হয়ে কৃষির উন্নয়ণ সাধন করবেন এটাই কাম্য। তবে কেনো তারা তাদের টেকনিক্যাল ক্যাডার পাওয়ার পরও প্রশাসন কিংবা পররাষ্ট্র ক্যাডারের জন্য চেষ্টা করবেন?
সত্যি বলতে আমাদের সিস্টেমটা এমন যে এখানে কিছু ক্যাডারে পাওয়ার প্রাকটিস, প্রমোশন, আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা এতো বেশি দেয়া হয়েছে যে অন্য ক্যাডারদের থেকে তা অনেকাংশে বেশি। "আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য" শব্দটির সাথে আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। আর একারনেই কিছু কিছু ক্যাডার সব সময়ই সবার পছন্দের শীর্ষে থাকছে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের মত বিশেষায়িত বিষয়গুলো থেকে জেনারেল ক্যাডারে আসার প্রবনতা কিন্তু বাড়ছে। আর আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য দূর করা না গেলে এমন প্রবনতা সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়তে পারে! গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ৩৬ বিসিএস এ মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে জেনারেল ক্যাডারে এসেছেন ৪.৩০% এবং ৩৭ ও ৩৮ বিসিএস এ তা প্রায় যথাক্রমে ৮.৫ ও ৮%! বিগত বিসিএসগুলোতে সংখ্যাটি আরো বেশি।
একজন মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টদের ডিগ্রী নিতে যে পরিমান কস্ট করতে হয় একজন জেনারেল সাবজেক্ট থেকে ডিগ্রী নিতে কিন্তু তুলনামূলক কম কস্ট হয়। তবে বিসিএস দেয়ার পর যখন একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট বিসিএস স্বাস্হ্য ক্যাডারে যোগদান করেন আর জেনারেল থেকে একজন পুলিশ কিংবা প্রশাসনে ক্যাডারে যোগদান করছেন দুজনের মধ্যে তখন বিশাল পার্থক্য! প্রশাসনিক ক্ষমতার কথা বাদই দিন, কর্মক্ষেত্র পরিবেশ, প্রমোশন সবদিক থেকেই স্বাস্থ্য ক্যাডার পিছিয়ে! একই কথা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্যও প্রযোজ্য! তাহলে কেনো তারা প্রশাসন ক্যাডারে না এসে স্বাস্থ্য বা অন্য ক্যাডারে আসবেন?
শিক্ষা ক্যাডারদের বলা হয় সবথেকে অবহেলিত! প্রমোশন ও অন্যসব বিবেচনা করলে অবশ্য অবহেলিত বলা ছাড়া উপায় কি! অন্য যেকোনো ক্যাডারের থেকে প্রশাসনিক ক্ষমতা, প্রমোশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিবেচনায় অনেকটা পিছিয়ে। যেখানে প্রভাষক থেকে সহকারি অধ্যাপক হতে প্রায় ৮/১০ বছর লেগে যায় অথচ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ৩ বছরে সহকারি অধ্যাপক ও ৮/১০ বছরে সহযোগি অধ্যাপকও হয়ে যান! সাম্প্রতিক সময়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারগন তাদের বৈষম্য দূরীকরণের জন্য মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন; সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি; অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ ইত্যাদী।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিয়ে অনেক দিন থেকেই আলোচনা হচ্ছে। টেকনিক্যাল সহ বেশ কিছু ক্যাডার সার্ভিসে থাকা ক্যাডারগনের মধ্যে এ নিয়ে একটা চাপা অভিমান যে রয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিশেষ করে উপ-সচিব নিয়োগের সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ % ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫% নিয়োগ পায়।
এ যাবতকালে গঠিত বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্কার কমিটি একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষার মাধ্যমে উপসচিব ও তৎপরবর্তী পদগুলোতে নিয়োগের সুপারিশ করলেও সবকিছু সেই আগের মতই চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন হয় এবং কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারও হয়। তবে ভুলে গেলে চলবে না যে অতীতে কোটা পদ্ধতি চালু ছিলো। এরফলে তুলনামূলক কম নম্বর পেয়ে ভালো ক্যাডার পাওয়ার মত ঘটনাও কিন্তু কম নয়। একজন কোটাধারী এক হাজার সিরিয়ালে থেকেও কিন্তু প্রশাসন ক্যাডার পেতে পারেন আবার আরেকজন দুইশত তম সিরিয়ালে থেকেও কিন্তু অন্য ক্যাডার পেয়েছেন।
অর্থাৎ এরা কিন্তু দুই রকম কোটা সুবিধা পেয়ে আসছেন। চাকরিতে যোগদানের সময় কোটা এবং প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বরাদ্দকৃত উচ্চতর পদে কোটা! এটা সম্পূর্নরূপে একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি বলে অনেকেই এই পদ্ধতির সংস্কার চেয়ে সোচ্চার হয়েছেন। যদিও সব ক্যাডারগনই একই পরিক্ষা দিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে আসেন। তাদের মেধার খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনা করলে কিছু কিছু ক্যাডার সার্ভিসকে একটু বেশিই সুবিধা দেয়া হয়েছে। যদিও কর্মক্ষেত্রের ধরন অনুযায়ী সব ক্যাডারের সুযোগ সুবিধা অভিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও কিছু কিছু বৈষম্যমূলক নীতির সংস্কার হতেই পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য দূর করা।
[লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা]