alt

উপ-সম্পাদকীয়

বাঙালির ইলিশচর্চা

ফয়সাল বিন লতিফ

: শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। অতন্ত্য সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি মাছ। সব বয়সী মানুষের কাছে মাছটি সমান জনপ্রিয়। ইলিশ নিয়ে বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, আদিখ্যেতা এবং বাড়াবাড়ি অন্য যে কোন মাছের তুলনায় বেশি। মৌসুমে জেলেদের জালে ইলিশ মাছ ধরা না পড়লেও সেটি যেমন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়, তেমনি ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও শিরোনাম হয়। যেখানে ২০ কেজি ওজনের বড় মাছ ধরা পড়লেও শিরোনাম হয় না। কিন্তু দুই কেজি ওজনের ইলিশ ধরা পড়লেই সেটি খবরে আসে। সর্বপরি রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে বাঙালির ইলিশচর্চা।

বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ও এ মাছটি ব্যাপক জনপ্রিয়। ইলিশের সবচেয়ে বড় আধার বাংলাদেশ। বৈশ্বিক ইলিশ আহরণের ৭০ শতাংশই হয় বাংলাদেশে। দেশের মোট মৎস উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। জিডিপিতে ও ইলিশের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। এরই ধারাবাহিকতায় ইলিশ মাছকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

১৫ বছর আগে যেখানে দেশের ২১টি উপজেলা থেকে ইলিশ পাওয়া যেত কিন্তু বর্তমানে দেশের ১২৫টি উপজেলা থেকে জেলেরা মাছ আহরণ করছে। একটি ইলিশের আয়ুষ্কাল ৫-৭ বছর হয়ে থাকে। ইলিশের শতকরা ৯০ ভাগই ৩০-৪০ সেন্টিমিটার আকারের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মোট ৩ প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২টি (চন্দনা ও গোর্তা) ইলিশ সারা জীবন উপকূল ও সাগরে কাটায় এবং অন্য ১টি মিঠাপানি ও লোনা পানিতে জীবন অতিবাহিত করে।

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় দেশের অধিকাংশ মানুষ কি ইলিশের স্বাদ পায়? সরবরাহ বাড়লে দাম কমবেÑ অর্থনীতির এই সহজ সূত্রটি ইলিশের বাজারে গিয়ে ব্যর্থ হয়। ভরা মৌসুমে বাজারে জোগান ভালো থাকলেও ইলিশ কখনোই গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়সীমার নাগালে থাকে না। নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের রান্না ঘরে ও ইলিশের সুবাস ছড়ায় না। ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় ইলিশ মাছ নিয়ে হা-হুতাশের শেষ নেই স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে।

ভরা মৌসুমে ও এক কেজির ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে অন্তত দেড় হাজার টাকা। ইলিশের দাম শুনে শ্রমজীবী মানুষের দামাদামি করার সাহসই হয় না। হতাশ হয়ে ফিরে আসছে বাজার থেকে এবং লজ্জায় এর প্রতিকার চাওয়ার সাহস ও পাচ্ছে না। অপর দিকে সচ্ছল মানুষরা ও ভরা মৌসুমে চাহিদার অতিরিক্ত কিনে মজুত করে রাখে, যাতে করে সারা বছর খেতে পারে। ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন ইলিশের চাহিদা থাকে তুঙ্গে, অন্যদিকে ইলিশ ব্যবসায়ীরা ও দাম হাঁকিয়ে থাকে আকাশচুম্বী। যার ফলে শ্রমজীবী মানুষদের পক্ষে ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।

স্বল্প আয়ের মানুষের সন্তানরা বইতে হয়তো পড়েছে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। কিন্তু তাদের কতজন বছরে অন্তত এক পিস ইলিশ মাছ খেতে পায়Ñ সেটি একটি বিরাট প্রশ্ন। সম্প্রতি মাদ্রাসাপড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ কী জিজ্ঞেস করা হলেÑ তার উত্তর ছিল পাঙ্গাশ। সেই অবুঝ বালকটি হয়তো মাছ বলতে পাঙ্গাশ মাছকেই চেনে। ইলিশ হয়তো দেখেইনি।

যে মাছকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ বলা হয়, সেই মাছ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ খেতে পারে নাÑ সেটি কি বাজার ব্যবস্থার ত্রুটি নয়? আড়তদাররা ইলিশ মাছের দাম সব সময়ই উঁচুতে তুলে রাখেন। মাছের সরবরাহ বেশি থাকলে ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সব সময় সংকট জিইয়ে রাখেন। অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা মাছ আহরণের খরচকে এর পেছনে দায়ী মনে করছেন। যেখানে আগে একটি ট্রলার প্রতি খরচ হতো ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা সেখানে এখন খরচ হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ও ক্ষেত্রবিশেষ আর ও অনেক বেশি। এছাড়া মা ইলিশ রক্ষায় বাংলাদেশে যখন ৬৫ দিনের অবরোধ চলে, তখন বাংলাদেশি জেলেরা মাছ ধরতে যেতে পারে না। ওই নিষিদ্ধ সময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিযে যায়। যাতে করে দেশীয় জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় ট্রলার আটকের খবরও গণমাধ্যমের শিরোনামে দেখা যায়। এর জন্য প্রয়োজন যৌথ দেশের কূটনৈতিক সমাধান, যেমনÑ দুই দেশের একই সময়ে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময় নির্ধারণ করা, ইলিশের প্রজনন ও যাতায়াতের সুরক্ষিত পথ নিশ্চিত করা, ইলিশ সুরক্ষায় যৌথ দেশের আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

কেন ইলিশ মাছ বছরের কোনও একটি সময় এসেও সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার নাগালে আসে না। এর জন্য ব্যাপক গবেষণা করা শুরু হওয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীরা। পুকুরে ইলিশ চাষ করা যায় কিনা; টিনজাত করে ইলিশ বিক্রি করা যায় কিনাÑ এ রকম গবেষণা ও চলছে। বিশিষ্ট মৎস বিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান মনে করেনÑ বাজারে ইলিশ মাছ কেটে পিস পিস করে বিক্রি করা যেতে পারে। অর্থাৎ যার একটি ইলিশ কেনার সামার্থ নেই, তিনি তার প্রয়োজন মতো পিস কিনে পরিবার নিয়ে খেতে পারেন।

মৎস্য উপদেষ্টা গত ১১ আগস্ট সচিবলায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে ইলিশ নিয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ যাতে ইলিশ মাছ পায় এবং দাম কমে, সেই উদ্যোগ নেয়া হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে সেটা হতে পারে না। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এর সঙ্গে সঙ্গে তাকে সরকারি বিপনন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের সাহায্যে সব ধরনের সিন্ডিকেটকে ধ্বংস করে মাছ বাজারের অস্থিরতাকে কমিয়ে আনতে হবে।

বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ইলিশ। এই মাছটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে, নদীর দূষণ ও দখল থেকে নদীকে রক্ষা করতে হবে। ইলিশ খুব সংবেদনশীল একটা মাছ। তার প্রজনন টিকে থাকা এবং বেড়ে ওঠার মতো পরিবেশ না থাকলে মাছটি বিলুপ্ত মাছে পরিণত হতে পারে। এজন্য ইলিশকে তার চেনা রুটে চলতে দিতে হবে। তার জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের নদী,নালা,খাল-বিলকে। আর তা না হলে বেশি টাকা দিয়ে ও ইলিশ মাছ পাওয়া সম্ভব হবে না। সারা বছর না হোক ভরা মৌসুমে হলেও যেন গরিব মধ্যবিত্তÑ সবাই ইলিশের স্বাদ পেতে পারি সে দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

[লেখক : ব্যাংক কর্মকর্তা, জনতা ব্যাংক, পটুয়াখালী]

প্রযুক্তির মায়াজালে বন্দি মানুষ

ছবি

এসএম সুলতান : সংস্কৃতি সত্তার সত্যপাঠ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

তরুণ সমাজ ও প্রযুক্তি নির্ভরতা : সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তন ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

বগুড়ার তাঁতপল্লী

অটিজম কোনো রোগ নয়

জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কি আইনসম্মত

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে কতদিন সহায়তা দেয়া হবে?

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য বয়সবৈষম্য দূর করুন

আসন্ন বোরো উৎপাদন ও কিছু শঙ্কা

ছবি

আইন পেশার জানা-অজানা কথা

ছবি

ব্যাংক খাতের সংকট

একাকিত্ব ও মানসিক অশান্তি

বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষক সমাজ

ব্রি: কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর

ক্রেতা ঠকে গেলে তার আইনগত প্রতিকার

ঢাকার যানজট : কিছু প্রস্তাব

রম্যগদ্য : দারিদ্র্য যাবে জাদুঘরে

গার্মেন্টস খাতে সংকট

সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থাপনায় করুণ দশা

ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কী

শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার বাড়াতে

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির দুর্বলতা

ইরানের কেন কৌশলগত পরিবর্তন

শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক

রামু ট্র্যাজেডির এক যুগ

প্রত্যাশিত শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবিত রূপরেখা

ব্যাংক খাতের সংস্কার

শিক্ষার একটি স্থায়ী কমিশন সময়ের দাবি

ছবি

ক্ষমতা এখন ‘মব’-এর হাতে

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে বামপন্থির উত্থান

আমন ধানে আগাম ফুল আসার কারণ

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

কী হবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি

রম্যগদ্য : ‘বল করে দুর্বল...’

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বাঙালির ইলিশচর্চা

ফয়সাল বিন লতিফ

শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। অতন্ত্য সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি মাছ। সব বয়সী মানুষের কাছে মাছটি সমান জনপ্রিয়। ইলিশ নিয়ে বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, আদিখ্যেতা এবং বাড়াবাড়ি অন্য যে কোন মাছের তুলনায় বেশি। মৌসুমে জেলেদের জালে ইলিশ মাছ ধরা না পড়লেও সেটি যেমন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়, তেমনি ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও শিরোনাম হয়। যেখানে ২০ কেজি ওজনের বড় মাছ ধরা পড়লেও শিরোনাম হয় না। কিন্তু দুই কেজি ওজনের ইলিশ ধরা পড়লেই সেটি খবরে আসে। সর্বপরি রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে বাঙালির ইলিশচর্চা।

বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ও এ মাছটি ব্যাপক জনপ্রিয়। ইলিশের সবচেয়ে বড় আধার বাংলাদেশ। বৈশ্বিক ইলিশ আহরণের ৭০ শতাংশই হয় বাংলাদেশে। দেশের মোট মৎস উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। জিডিপিতে ও ইলিশের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। এরই ধারাবাহিকতায় ইলিশ মাছকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

১৫ বছর আগে যেখানে দেশের ২১টি উপজেলা থেকে ইলিশ পাওয়া যেত কিন্তু বর্তমানে দেশের ১২৫টি উপজেলা থেকে জেলেরা মাছ আহরণ করছে। একটি ইলিশের আয়ুষ্কাল ৫-৭ বছর হয়ে থাকে। ইলিশের শতকরা ৯০ ভাগই ৩০-৪০ সেন্টিমিটার আকারের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মোট ৩ প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২টি (চন্দনা ও গোর্তা) ইলিশ সারা জীবন উপকূল ও সাগরে কাটায় এবং অন্য ১টি মিঠাপানি ও লোনা পানিতে জীবন অতিবাহিত করে।

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় দেশের অধিকাংশ মানুষ কি ইলিশের স্বাদ পায়? সরবরাহ বাড়লে দাম কমবেÑ অর্থনীতির এই সহজ সূত্রটি ইলিশের বাজারে গিয়ে ব্যর্থ হয়। ভরা মৌসুমে বাজারে জোগান ভালো থাকলেও ইলিশ কখনোই গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়সীমার নাগালে থাকে না। নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের রান্না ঘরে ও ইলিশের সুবাস ছড়ায় না। ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় ইলিশ মাছ নিয়ে হা-হুতাশের শেষ নেই স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে।

ভরা মৌসুমে ও এক কেজির ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে অন্তত দেড় হাজার টাকা। ইলিশের দাম শুনে শ্রমজীবী মানুষের দামাদামি করার সাহসই হয় না। হতাশ হয়ে ফিরে আসছে বাজার থেকে এবং লজ্জায় এর প্রতিকার চাওয়ার সাহস ও পাচ্ছে না। অপর দিকে সচ্ছল মানুষরা ও ভরা মৌসুমে চাহিদার অতিরিক্ত কিনে মজুত করে রাখে, যাতে করে সারা বছর খেতে পারে। ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন ইলিশের চাহিদা থাকে তুঙ্গে, অন্যদিকে ইলিশ ব্যবসায়ীরা ও দাম হাঁকিয়ে থাকে আকাশচুম্বী। যার ফলে শ্রমজীবী মানুষদের পক্ষে ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।

স্বল্প আয়ের মানুষের সন্তানরা বইতে হয়তো পড়েছে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। কিন্তু তাদের কতজন বছরে অন্তত এক পিস ইলিশ মাছ খেতে পায়Ñ সেটি একটি বিরাট প্রশ্ন। সম্প্রতি মাদ্রাসাপড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ কী জিজ্ঞেস করা হলেÑ তার উত্তর ছিল পাঙ্গাশ। সেই অবুঝ বালকটি হয়তো মাছ বলতে পাঙ্গাশ মাছকেই চেনে। ইলিশ হয়তো দেখেইনি।

যে মাছকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ বলা হয়, সেই মাছ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ খেতে পারে নাÑ সেটি কি বাজার ব্যবস্থার ত্রুটি নয়? আড়তদাররা ইলিশ মাছের দাম সব সময়ই উঁচুতে তুলে রাখেন। মাছের সরবরাহ বেশি থাকলে ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সব সময় সংকট জিইয়ে রাখেন। অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা মাছ আহরণের খরচকে এর পেছনে দায়ী মনে করছেন। যেখানে আগে একটি ট্রলার প্রতি খরচ হতো ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা সেখানে এখন খরচ হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ও ক্ষেত্রবিশেষ আর ও অনেক বেশি। এছাড়া মা ইলিশ রক্ষায় বাংলাদেশে যখন ৬৫ দিনের অবরোধ চলে, তখন বাংলাদেশি জেলেরা মাছ ধরতে যেতে পারে না। ওই নিষিদ্ধ সময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিযে যায়। যাতে করে দেশীয় জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় ট্রলার আটকের খবরও গণমাধ্যমের শিরোনামে দেখা যায়। এর জন্য প্রয়োজন যৌথ দেশের কূটনৈতিক সমাধান, যেমনÑ দুই দেশের একই সময়ে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময় নির্ধারণ করা, ইলিশের প্রজনন ও যাতায়াতের সুরক্ষিত পথ নিশ্চিত করা, ইলিশ সুরক্ষায় যৌথ দেশের আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

কেন ইলিশ মাছ বছরের কোনও একটি সময় এসেও সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার নাগালে আসে না। এর জন্য ব্যাপক গবেষণা করা শুরু হওয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীরা। পুকুরে ইলিশ চাষ করা যায় কিনা; টিনজাত করে ইলিশ বিক্রি করা যায় কিনাÑ এ রকম গবেষণা ও চলছে। বিশিষ্ট মৎস বিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান মনে করেনÑ বাজারে ইলিশ মাছ কেটে পিস পিস করে বিক্রি করা যেতে পারে। অর্থাৎ যার একটি ইলিশ কেনার সামার্থ নেই, তিনি তার প্রয়োজন মতো পিস কিনে পরিবার নিয়ে খেতে পারেন।

মৎস্য উপদেষ্টা গত ১১ আগস্ট সচিবলায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে ইলিশ নিয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ যাতে ইলিশ মাছ পায় এবং দাম কমে, সেই উদ্যোগ নেয়া হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে সেটা হতে পারে না। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এর সঙ্গে সঙ্গে তাকে সরকারি বিপনন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের সাহায্যে সব ধরনের সিন্ডিকেটকে ধ্বংস করে মাছ বাজারের অস্থিরতাকে কমিয়ে আনতে হবে।

বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ইলিশ। এই মাছটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে, নদীর দূষণ ও দখল থেকে নদীকে রক্ষা করতে হবে। ইলিশ খুব সংবেদনশীল একটা মাছ। তার প্রজনন টিকে থাকা এবং বেড়ে ওঠার মতো পরিবেশ না থাকলে মাছটি বিলুপ্ত মাছে পরিণত হতে পারে। এজন্য ইলিশকে তার চেনা রুটে চলতে দিতে হবে। তার জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের নদী,নালা,খাল-বিলকে। আর তা না হলে বেশি টাকা দিয়ে ও ইলিশ মাছ পাওয়া সম্ভব হবে না। সারা বছর না হোক ভরা মৌসুমে হলেও যেন গরিব মধ্যবিত্তÑ সবাই ইলিশের স্বাদ পেতে পারি সে দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

[লেখক : ব্যাংক কর্মকর্তা, জনতা ব্যাংক, পটুয়াখালী]

back to top