alt

opinion » post-editorial

ক্রেতা ঠকে গেলে তার আইনগত প্রতিকার

সিরাজ প্রামাণিক

: শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

আপনি যদি কোন কিছু ক্রয় করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন কিংবা অনলাইন ক্রয়ে ঠকবাজের শিকার হন কিংবা কেউ মালের অতিরিক্ত দাম নিয়ে থাকে, তাহলে আপনি বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার নিতে পারবেন। আপনি কি জাতীয় প্রতারণার শিকার হয়েছেন-সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করুন। এরপর পণ্য কেনা বা হাতে পাওয়ার তারিখ হতে ত্রিশ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করুন। আবার ১৮৭২ সালের কনট্রাক্ট আইনেও আপনি প্রতিকার পেতে পারেন। অথবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়েও দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা করতে পারেন।

আবার ফৌজদারি আদালতে প্রতারণার মামলাও করতে পারেন। একটা পণ্য দেখিয়ে অন্য পণ্য দিলে সে ক্ষেত্রে সেল অব গুডস অ্যাক্ট আছে। সেখানে বলা আছে, কোনো পণ্য বিক্রির পর যদি তার সঙ্গে না মেলে তা অবশ্যই অপরাধ। কিন্তু ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করাটা সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। আপনি ভোক্তা অধিকারের কার্যালয়ে গিয়ে অথবা ওয়েবসাইটে দেয়া মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করতে পারবেন। সেই অভিযোগের পরে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর অনলাইন প্রতিষ্ঠান ও অভিযোগকারীর কাছে পোস্টাল রশিদের মাধ্যমে চিঠি পাঠাবেন।

দুই

পক্ষ থেকে শুনানি শেষে অধিদপ্তর ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা প্রদানের আদেশ দেবে। জরিমানা ছাড়াও ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল, ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িক বা স্থায়ীভাবে স্থগিতও করতে পারে অধিদপ্তর। যেসব জেলায় অধিদপ্তরের শাখা নেই, সেসব জেলায় এই আইনে মহাপরিচালককে যে ক্ষমতা দেয়া আছে, তা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর অর্থাৎ ডিসির উপর ন্যস্ত থাকবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বিষয়টি জানাতে পারেন।

ই-কমার্সের প্রতি মানুষের এ নির্ভরতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসৎ চক্র

গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। একজন ক্রেতা যখন কোনো পণ্য কেনেন, তখন তার জানার অধিকার রয়েছে পণ্যটি কবে উৎপাদিত হয়েছে, কোথায় উৎপাদিত হয়েছে এবং এর কাঁচামাল কী কী, মূল্য কত ইত্যাদি। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে একজন বিক্রেতা বাধ্য। যদি কোনো বিক্রেতা এসব প্রশ্নের উত্তর না দেন বা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন, তখন আইন অনুযায়ী তাতে ভোক্তা অধিকার ক্ষুণœ হয়।

জাতিসংঘ স্বীকৃত ভোক্তা অধিকার ৮টি। এগুলো হলো-মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার, তথ্য পাওয়ার অধিকার, নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার অধিকার, পছন্দের অধিকার, জানার অধিকার, অভিযোগ করা ও প্রতিকার পাওয়ার অধিকার, ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা লাভের অধিকার, সুস্থ পরিবেশের অধিকার। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী বিক্রেতার পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, সেবার তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা, পণ্য মজুত করা, ভেজাল পণ্য বিক্রয়, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রতারণা,

প্রতিশ্রুতি পণ্য সরবরাহ না করা, ওজনে ও পরিমাপে কারচুপি, দৈর্ঘ্য

পরিমাপের ক্ষেত্রে গজ ফিতায় কারচুপি, নকল পণ্য প্রস্তুত, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়, অবহেলা ইত্যাদি করলে এতে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদ- বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হতে পারেন। পণ্য কিনে প্রতারিত হলে অভিযোগ দায়ের করার পদ্ধতি খুবই সহজ। বর্তমানে প্রত্যেকের হাতে হাতে স্মার্টফোন। গুগল প্লে-স্টোরে সংরক্ষিত ‘ভোক্তা অধিকার ও অভিযোগ’ অ্যাপসের মাধ্যমে খুব সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অভিযোগ দায়ের করা যায়। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে সরাসরি ইমেইলের মাধ্যমেও অভিযোগ করা যায়। ই-মেইলে অভিযোগকারীর নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ঘটনার বিবরণ এবং প্রমাণস্বরূপ পণ্য ক্রয়ের রসিদের ছবি সংযুক্ত করতে হবে।

[ লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট ]

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

খেলনাশিল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে ফিরে আসা কালো মেঘ

গীর্জায় হামলার নেপথ্যে কী?

সংঘের শতবর্ষের রাজনৈতিক তাৎপর্য

দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি রাজনৈতিক-সংস্কৃতির অংশ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বাংলার সংস্কৃতি : উৎস, বিবর্তন ও বর্তমান সমাজ-মনন

রম্যগদ্য: শিক্ষা সহজ, বিদ্যা কঠিন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনগণের ভূমিকা উপেক্ষিত

শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বাস্তবতা

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের শেষ সুযোগ?

পাহাড় থেকে সমতল: আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা

সোশ্যাল মিডিয়ার ‘লাইক’ সংস্কৃতি: আসক্তি নাকি নতুন যোগাযোগ?

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু

মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পরিবর্তন: আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি

রম্যগদ্য: “কেশ ফ্যালায় ভাই, কেশ ফ্যালায়...”

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীর অধিকার: বিসিএস ও শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য

ন্যাশনাল গ্যালারি : রঙতুলির মহাসমুদ্রে একদিন

যুব শক্তি বনাম বেকারত্ব

প্রযুক্তি, আর্থিক পরিকল্পনা ও গণিতের ব্যবহার

ফরাসি বিপ্লব: বৈষম্য নিরসনে সামগ্রিক মুক্তির প্রেরণা

অন্তর্বর্তী সরকারের নিউইয়র্ক সফর

প্রবীণদের যত্ন: নৈতিক দায়িত্ব থেকে সামাজিক শক্তি নির্মাণ

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অপরিহার্যতা

জনমিতিক সুবিধা: স্বপ্নের দশক ও নীতিগত সংস্কারের অপরিহার্যতা

বিদ্যালয় ও মাঠ দখলের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সংগ্রাম

শিক্ষাসংস্কারে চাই সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

ভারতে এসআইআর বিতর্ক

tab

opinion » post-editorial

ক্রেতা ঠকে গেলে তার আইনগত প্রতিকার

সিরাজ প্রামাণিক

শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

আপনি যদি কোন কিছু ক্রয় করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন কিংবা অনলাইন ক্রয়ে ঠকবাজের শিকার হন কিংবা কেউ মালের অতিরিক্ত দাম নিয়ে থাকে, তাহলে আপনি বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার নিতে পারবেন। আপনি কি জাতীয় প্রতারণার শিকার হয়েছেন-সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করুন। এরপর পণ্য কেনা বা হাতে পাওয়ার তারিখ হতে ত্রিশ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করুন। আবার ১৮৭২ সালের কনট্রাক্ট আইনেও আপনি প্রতিকার পেতে পারেন। অথবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়েও দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা করতে পারেন।

আবার ফৌজদারি আদালতে প্রতারণার মামলাও করতে পারেন। একটা পণ্য দেখিয়ে অন্য পণ্য দিলে সে ক্ষেত্রে সেল অব গুডস অ্যাক্ট আছে। সেখানে বলা আছে, কোনো পণ্য বিক্রির পর যদি তার সঙ্গে না মেলে তা অবশ্যই অপরাধ। কিন্তু ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করাটা সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। আপনি ভোক্তা অধিকারের কার্যালয়ে গিয়ে অথবা ওয়েবসাইটে দেয়া মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করতে পারবেন। সেই অভিযোগের পরে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর অনলাইন প্রতিষ্ঠান ও অভিযোগকারীর কাছে পোস্টাল রশিদের মাধ্যমে চিঠি পাঠাবেন।

দুই

পক্ষ থেকে শুনানি শেষে অধিদপ্তর ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা প্রদানের আদেশ দেবে। জরিমানা ছাড়াও ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল, ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িক বা স্থায়ীভাবে স্থগিতও করতে পারে অধিদপ্তর। যেসব জেলায় অধিদপ্তরের শাখা নেই, সেসব জেলায় এই আইনে মহাপরিচালককে যে ক্ষমতা দেয়া আছে, তা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর অর্থাৎ ডিসির উপর ন্যস্ত থাকবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বিষয়টি জানাতে পারেন।

ই-কমার্সের প্রতি মানুষের এ নির্ভরতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসৎ চক্র

গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। একজন ক্রেতা যখন কোনো পণ্য কেনেন, তখন তার জানার অধিকার রয়েছে পণ্যটি কবে উৎপাদিত হয়েছে, কোথায় উৎপাদিত হয়েছে এবং এর কাঁচামাল কী কী, মূল্য কত ইত্যাদি। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে একজন বিক্রেতা বাধ্য। যদি কোনো বিক্রেতা এসব প্রশ্নের উত্তর না দেন বা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন, তখন আইন অনুযায়ী তাতে ভোক্তা অধিকার ক্ষুণœ হয়।

জাতিসংঘ স্বীকৃত ভোক্তা অধিকার ৮টি। এগুলো হলো-মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার, তথ্য পাওয়ার অধিকার, নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার অধিকার, পছন্দের অধিকার, জানার অধিকার, অভিযোগ করা ও প্রতিকার পাওয়ার অধিকার, ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা লাভের অধিকার, সুস্থ পরিবেশের অধিকার। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী বিক্রেতার পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, সেবার তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা, পণ্য মজুত করা, ভেজাল পণ্য বিক্রয়, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রতারণা,

প্রতিশ্রুতি পণ্য সরবরাহ না করা, ওজনে ও পরিমাপে কারচুপি, দৈর্ঘ্য

পরিমাপের ক্ষেত্রে গজ ফিতায় কারচুপি, নকল পণ্য প্রস্তুত, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়, অবহেলা ইত্যাদি করলে এতে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদ- বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হতে পারেন। পণ্য কিনে প্রতারিত হলে অভিযোগ দায়ের করার পদ্ধতি খুবই সহজ। বর্তমানে প্রত্যেকের হাতে হাতে স্মার্টফোন। গুগল প্লে-স্টোরে সংরক্ষিত ‘ভোক্তা অধিকার ও অভিযোগ’ অ্যাপসের মাধ্যমে খুব সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অভিযোগ দায়ের করা যায়। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে সরাসরি ইমেইলের মাধ্যমেও অভিযোগ করা যায়। ই-মেইলে অভিযোগকারীর নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ঘটনার বিবরণ এবং প্রমাণস্বরূপ পণ্য ক্রয়ের রসিদের ছবি সংযুক্ত করতে হবে।

[ লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট ]

back to top