alt

উপ-সম্পাদকীয়

দিবস যায় দিবস আসে, নিরাপদ হয় না সড়ক

তরিকুল ইসলাম

: বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

প্রতি বছর ২২ অক্টোবর ঢাকঢোল পিটিয়ে নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করা হয়। অথচ সড়কে প্রাণহানি কমছে না। দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে মানুষ পরিবার ও রাষ্ট্রের বোঝায় পরিণত হচ্ছেন। এখন সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ। আতঙ্ক নিয়ে সড়কে নামতে হয়। পরিবার ও আপনজনদের কাছে ফিরতে পারব কিনা, শঙ্কা জাগে! এমন দুঃস্বপ্ন বহুদিন বহুকাল ধরে তাড়া করছে।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৪ এর প্রতিপদ্য ছিল- ‘ছাত্র-জনতার অঙ্গীকার, নিরাপদ সড়ক হোক সবার।’ সড়কে কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরলে কেবল সড়ক নিরাপদ করার আন্দোলন গতি পায়। চলে কর্তৃপক্ষের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস ও আশার ফুলঝুরি। তারপর স্তিমিত হয়ে যায় সব। দিবস এলেও তা পোশাকি পালনের মধ্যেই থাকে সীমাবদ্ধ। আদতে সড়ক থেকে যাচ্ছে সেই অনিরাপদ। তবে আশা করছি আগামীতে ছাত্র জনতার হাত ধরে আমাদের সকলের সচেতনতায় আমরা নিরাপদ সড়ক উপহার পাবো। তার জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন। আইনে কিছু বিষয় স্পষ্ট হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। সেটি বিধিমালাতে হয়তো হতে পারে। যেমন- গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো গাইডলাইন আমাদের নেই। ফলে যে যার মতো করে গতিসীমা বসিয়ে দিচ্ছি। গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য গাইডলাইন প্রয়োজন। এছাড়া হেলমেটের কথা বলা হলেও এর মানদন্ডের কোনো কথা বলা হয়নি। এছাড়া যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ও শিশুদের ক্ষেত্রে চাইল্ড রেস্ট্রেইন্ট বা শিশুদের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত আসন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আইনটিতে সংযোজন করা হয়নি।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থ্যা কর্তৃক ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি অনুযায়ী রোডক্র্যাশে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১০ লাখের অধিক মানুষ মারা যায়; যা প্রতি মিনিটে ২ জন ও প্রতিদিন ৩২০০ জনের বেশি। এদের বেশিরভাগই শিশু এবং উপার্জনক্ষম। রোডক্র্যাশে সারা বিশ্বে যত মানুষের মৃত্যু হয় তার প্রায় সবই (৯২ শতাংশ) বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে ২০২১ সালে প্রায় ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রতি লাখে রোডক্র্যাশে মৃত্যু ছিল ১৫.৩ এবং ২০২১ সালে এই মৃত্যু বেড়ে হয় প্রতি লাখে ১৯ জনের মতো। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার ধারা ৩.৬ এবং ১১.২ এবং জাতিসংঘের বৈশ্বিক পরিকল্পনায় রোডক্র্যাশে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; যা অর্জনে বাংলাদেশকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে; যা নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এবং প্রমাণভিত্তিক পন্থা সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ এবং গ্লোবাল প্ল্যানের আওতাভুক্ত বিষয়সমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন অতীব জরুরি।

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা কোনো বিশাল সমস্যা নয়-যদি আমরা প্রত্যেকে প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী মেনে চলি এবং সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে অধিক সচেতন ও সতর্ক হই তাহলে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বর্তমান আইন বা বিধিতে সড়ক অবকাঠামো, যানবাহনের নিরাপত্তা, সিটবেল্ট, শিশু নিরাপত্তার বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়নি। নেশাগ্রস্ত ও মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো সংক্রান্ত বিষয়ে স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ নেই। দুর্ঘটনা পরবর্তী আহত ব্যক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত্র কোনো বিধান উল্লেখ হয়নি। দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে সহযোগিতার বিষয়ে সেবা প্রদানকারীদের আইনি সুরক্ষার বিষয়টি নেই। তাই এই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার দাবি, সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সমন্বয়ে বর্তমান আইনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পাঁচটি পিলারের আলোকে পৃথক ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন করা হোক।

[লেখক : অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন), স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন]

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা সফল হবে?

নতুন বছরের প্রত্যাশা

ছবি

মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জেগে উঠি নতুন বছরে

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়

ছবি

বিপ্লবী রাজনীতির কাণ্ডারি : কমরেড মণি সিংহ

স্বাস্ব্য সংস্কার : কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি

জনশিক্ষা, গণশিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষা : রাষ্ট্রসংস্কারের মৌলিক ভিত্তি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও পরিবেশ বিপর্যয়

ছিন্নমূল মানুষের ‘শীত-জীবন’

বিভাজিত তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব

কোন পথে দেশ?

অহেতুক মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কি লাভ হচ্ছে?

রম্যগদ্য : ‘অন্ডুল নাস্তি...’

অনিরাপদ সড়ক, সমাধান কোথায়?

চাই দৃশ্যমান পরিবর্তন

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং পরিবেশ নিয়ে ভাবনা

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন

ধনিক শ্রেণীর চলমান সংকট

ছবি

বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং আমাদের প্রান্তিক মানুষ

বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে ওষুধের ব্যবহার

শুভ বড়দিন

উগান্ডায় নতুন ভাইরাস ডিঙ্গা ডিঙ্গা

পরিবেশবান্ধব ঢাকা চাই

বনভূমি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন

ছবি

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা : ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সৃষ্টির প্রথম ভ্রুণ

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভূমিকা

প্রগতিতে অগ্রগতি

পরিবারতন্ত্র ও পরিবারতত্ত্ব : উত্তরণের উপায়

উপেক্ষিত উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা

সরিষার তেল গবেষণায় সাফল্য

সিরিয়ায় রাজনৈতিক পালাবদল : কার লাভ, কার ক্ষতি?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

দিবস যায় দিবস আসে, নিরাপদ হয় না সড়ক

তরিকুল ইসলাম

বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

প্রতি বছর ২২ অক্টোবর ঢাকঢোল পিটিয়ে নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করা হয়। অথচ সড়কে প্রাণহানি কমছে না। দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে মানুষ পরিবার ও রাষ্ট্রের বোঝায় পরিণত হচ্ছেন। এখন সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ। আতঙ্ক নিয়ে সড়কে নামতে হয়। পরিবার ও আপনজনদের কাছে ফিরতে পারব কিনা, শঙ্কা জাগে! এমন দুঃস্বপ্ন বহুদিন বহুকাল ধরে তাড়া করছে।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৪ এর প্রতিপদ্য ছিল- ‘ছাত্র-জনতার অঙ্গীকার, নিরাপদ সড়ক হোক সবার।’ সড়কে কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরলে কেবল সড়ক নিরাপদ করার আন্দোলন গতি পায়। চলে কর্তৃপক্ষের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস ও আশার ফুলঝুরি। তারপর স্তিমিত হয়ে যায় সব। দিবস এলেও তা পোশাকি পালনের মধ্যেই থাকে সীমাবদ্ধ। আদতে সড়ক থেকে যাচ্ছে সেই অনিরাপদ। তবে আশা করছি আগামীতে ছাত্র জনতার হাত ধরে আমাদের সকলের সচেতনতায় আমরা নিরাপদ সড়ক উপহার পাবো। তার জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন। আইনে কিছু বিষয় স্পষ্ট হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। সেটি বিধিমালাতে হয়তো হতে পারে। যেমন- গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো গাইডলাইন আমাদের নেই। ফলে যে যার মতো করে গতিসীমা বসিয়ে দিচ্ছি। গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য গাইডলাইন প্রয়োজন। এছাড়া হেলমেটের কথা বলা হলেও এর মানদন্ডের কোনো কথা বলা হয়নি। এছাড়া যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ও শিশুদের ক্ষেত্রে চাইল্ড রেস্ট্রেইন্ট বা শিশুদের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত আসন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আইনটিতে সংযোজন করা হয়নি।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থ্যা কর্তৃক ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি অনুযায়ী রোডক্র্যাশে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১০ লাখের অধিক মানুষ মারা যায়; যা প্রতি মিনিটে ২ জন ও প্রতিদিন ৩২০০ জনের বেশি। এদের বেশিরভাগই শিশু এবং উপার্জনক্ষম। রোডক্র্যাশে সারা বিশ্বে যত মানুষের মৃত্যু হয় তার প্রায় সবই (৯২ শতাংশ) বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে ২০২১ সালে প্রায় ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রতি লাখে রোডক্র্যাশে মৃত্যু ছিল ১৫.৩ এবং ২০২১ সালে এই মৃত্যু বেড়ে হয় প্রতি লাখে ১৯ জনের মতো। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার ধারা ৩.৬ এবং ১১.২ এবং জাতিসংঘের বৈশ্বিক পরিকল্পনায় রোডক্র্যাশে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; যা অর্জনে বাংলাদেশকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে; যা নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এবং প্রমাণভিত্তিক পন্থা সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ এবং গ্লোবাল প্ল্যানের আওতাভুক্ত বিষয়সমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন অতীব জরুরি।

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা কোনো বিশাল সমস্যা নয়-যদি আমরা প্রত্যেকে প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী মেনে চলি এবং সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে অধিক সচেতন ও সতর্ক হই তাহলে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বর্তমান আইন বা বিধিতে সড়ক অবকাঠামো, যানবাহনের নিরাপত্তা, সিটবেল্ট, শিশু নিরাপত্তার বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়নি। নেশাগ্রস্ত ও মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো সংক্রান্ত বিষয়ে স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ নেই। দুর্ঘটনা পরবর্তী আহত ব্যক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত্র কোনো বিধান উল্লেখ হয়নি। দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে সহযোগিতার বিষয়ে সেবা প্রদানকারীদের আইনি সুরক্ষার বিষয়টি নেই। তাই এই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার দাবি, সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সমন্বয়ে বর্তমান আইনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পাঁচটি পিলারের আলোকে পৃথক ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন করা হোক।

[লেখক : অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন), স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন]

back to top