মোশাররফ হোসেন মুসা
বাদ, প্রতিবাদ ও সম্বাদ; যাকে ইংরেজিতে বলে থেসিস, এন্টিথেসিস ও সিনথেসিস। প্রতিটি বস্তুতে অভ্যন্ত রীন দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে এবং তিনটি নিয়মের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে থাকে। মানুষের জীবন প্রণালি নিয়ে যে বিজ্ঞান -তাকে সমাজ বিজ্ঞান বলে। কোনো কোনো মনীষী এটাকে বিজ্ঞান বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছেন মানুষের জীবনও তিনটি নিয়ম মেনে পরিবর্তিত হয়; তাই এটাও বিজ্ঞান। তবে সম্বাদ তথা সেনথিসিসে আপাতত মীমাংসা হয় (এজন্যই কার্ল মার্কসের বস্তুবাদ, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ও শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্বকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায় না)। উদাহরণস্বরূপ- মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগ সরকার, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনের ব্যর্থতার কারণে ১৫ আগস্ট মর্মান্তি ক হত্যাকা-। ১৫ আগস্টের ঘটনার প্রতিবাদে ৩ নভেম্বর সেনাবিদ্রোহ হয়। ৭ নভেম্বরে আরেকটি সেনাবিদ্রোহে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। আবার ৭ নভেম্বরের ঘটনার পর কয়েকটি সেনা বিদ্রোহ। ৩০ মে চট্টগ্রামে আরেকটি সেনা বিদ্রোহে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন।
এরশাদ, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা সরকারের আমলের আন্দোলনগুলো ও তার ফলাফলের মধ্যে তিনটি কারণের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। অন্যদিকে নেতির নেতিকরণের উদাহরণ রয়েছে। যেমন- বীজ থেকে গাছ হয়, গাছ থেকে বীজ হয়- এভাবে সৃষ্টির পৌনঃপুনিকতা রয়েছে। একটি ঘটনা আরেকটি নতুন ঘটনার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করে। কোনো ঘটনাই আগের ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। আদি যুগ থেকে দাস যুগ, দাস যুগ থেকে সামন্ত যুগ, শেষে সামন্ত যুগ থেকে আমরা বর্তমানে পুঁজিবাদী যুগে বসবাস করছি।
পুঁজিবাদও এক সময় পরিবর্তিত হয়ে আরেকটি যুগ নিয়ে আসবে। বর্তমানই শেষ- এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা। মানুষ যেহেতু বুদ্ধিজীবী প্রাণী তথা রাজনৈতিক জীব, সে কারণে তারা চেষ্টা করলে পরিবর্তনগুলো পৃথিবীর কল্যাণের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অতীব দুঃখের বিষয় রাজনীতিবিদরা সেদিকে মনোনিবেশ দেন না। উদাহরণস্বরূপ- ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরিবার, শেখ মনির পরিবার, আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারে মোট ২৬ জন খুন হন। এ তিন পরিবারের মধ্য থেকে ১৭ জন এমপি হয়েছিলেন এবং নিকটতম আত্মীয়ের মধ্য থেকে শতাধিক ব্যক্তি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাদের পরিবারের কেউ কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছেন?
সামরিক বাহিনীর অন্তর্দ্বন্দ্বে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। তারাও কি শিক্ষা নিয়েছেন? বস্তুজগত গতিশীল। এটা তারা স্বীকার করেন না। তারা পুরাতন ঘটনাতে আবর্তিত হতে থাকেন। হয়ত এটাই মনুষ্য জগতের বড় সীমাবদ্ধতা।
একই সূত্রে বলা যায়, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আরেকটি ঘটনা ঘটবে এবং সেটা সম্বাদে গিয়ে শেষ হবে। এটা ছাত্র-সমন্বয়কদের জানা আছে বলেই সেটা ঠেকানোর জন্য তারা যাবতীয় চেষ্টা করছেন; কিন্তু দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বলছে- ঠেকানো সম্ভব নয়।
[লেখক : গণতন্ত্রায়ণ ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক]
মোশাররফ হোসেন মুসা
সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
বাদ, প্রতিবাদ ও সম্বাদ; যাকে ইংরেজিতে বলে থেসিস, এন্টিথেসিস ও সিনথেসিস। প্রতিটি বস্তুতে অভ্যন্ত রীন দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে এবং তিনটি নিয়মের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে থাকে। মানুষের জীবন প্রণালি নিয়ে যে বিজ্ঞান -তাকে সমাজ বিজ্ঞান বলে। কোনো কোনো মনীষী এটাকে বিজ্ঞান বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছেন মানুষের জীবনও তিনটি নিয়ম মেনে পরিবর্তিত হয়; তাই এটাও বিজ্ঞান। তবে সম্বাদ তথা সেনথিসিসে আপাতত মীমাংসা হয় (এজন্যই কার্ল মার্কসের বস্তুবাদ, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ও শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্বকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায় না)। উদাহরণস্বরূপ- মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগ সরকার, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনের ব্যর্থতার কারণে ১৫ আগস্ট মর্মান্তি ক হত্যাকা-। ১৫ আগস্টের ঘটনার প্রতিবাদে ৩ নভেম্বর সেনাবিদ্রোহ হয়। ৭ নভেম্বরে আরেকটি সেনাবিদ্রোহে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। আবার ৭ নভেম্বরের ঘটনার পর কয়েকটি সেনা বিদ্রোহ। ৩০ মে চট্টগ্রামে আরেকটি সেনা বিদ্রোহে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন।
এরশাদ, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা সরকারের আমলের আন্দোলনগুলো ও তার ফলাফলের মধ্যে তিনটি কারণের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। অন্যদিকে নেতির নেতিকরণের উদাহরণ রয়েছে। যেমন- বীজ থেকে গাছ হয়, গাছ থেকে বীজ হয়- এভাবে সৃষ্টির পৌনঃপুনিকতা রয়েছে। একটি ঘটনা আরেকটি নতুন ঘটনার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করে। কোনো ঘটনাই আগের ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। আদি যুগ থেকে দাস যুগ, দাস যুগ থেকে সামন্ত যুগ, শেষে সামন্ত যুগ থেকে আমরা বর্তমানে পুঁজিবাদী যুগে বসবাস করছি।
পুঁজিবাদও এক সময় পরিবর্তিত হয়ে আরেকটি যুগ নিয়ে আসবে। বর্তমানই শেষ- এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা। মানুষ যেহেতু বুদ্ধিজীবী প্রাণী তথা রাজনৈতিক জীব, সে কারণে তারা চেষ্টা করলে পরিবর্তনগুলো পৃথিবীর কল্যাণের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অতীব দুঃখের বিষয় রাজনীতিবিদরা সেদিকে মনোনিবেশ দেন না। উদাহরণস্বরূপ- ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরিবার, শেখ মনির পরিবার, আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারে মোট ২৬ জন খুন হন। এ তিন পরিবারের মধ্য থেকে ১৭ জন এমপি হয়েছিলেন এবং নিকটতম আত্মীয়ের মধ্য থেকে শতাধিক ব্যক্তি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাদের পরিবারের কেউ কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছেন?
সামরিক বাহিনীর অন্তর্দ্বন্দ্বে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। তারাও কি শিক্ষা নিয়েছেন? বস্তুজগত গতিশীল। এটা তারা স্বীকার করেন না। তারা পুরাতন ঘটনাতে আবর্তিত হতে থাকেন। হয়ত এটাই মনুষ্য জগতের বড় সীমাবদ্ধতা।
একই সূত্রে বলা যায়, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আরেকটি ঘটনা ঘটবে এবং সেটা সম্বাদে গিয়ে শেষ হবে। এটা ছাত্র-সমন্বয়কদের জানা আছে বলেই সেটা ঠেকানোর জন্য তারা যাবতীয় চেষ্টা করছেন; কিন্তু দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বলছে- ঠেকানো সম্ভব নয়।
[লেখক : গণতন্ত্রায়ণ ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক]