alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মানুষ গড়ার কারিগর

সাঈদ চৌধুরী

: মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্রকে লেখা ৬০ বছর আগের এ অপ্রকাশিত চিঠিটি হতে পারে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের আদর্শিক অকাট্ট দলিল। একটি অপ্রকাশিত চিঠি আর সে চিঠিটি হয়ে উঠতে পারে এ প্রজন্মের শিক্ষকদের, শিক্ষার্থীদের বড় দিক নির্দেশনা! আমার বাবা তখন সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে আমার বাবা হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত সন্তোষ জাহ্নবী স্কুলের জেনারেল ক্যাপ্টিন, একজন সফল বিতার্কিক, ছাত্র মৌলভি এবং দক্ষ নেতা। সে সূত্রেই বাবাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে সবাই ‘খলিল’ নামে চিনতেন। স্কুলের দূরত্ব আমার দাদার বাড়ি থেকে দশ মাইল হওয়ায় জাইগীর থাকতেন স্কুল থেকে কম দূরুত্বের একটি বাড়িতে। তার দূরত্বও তখনকার সময় পাঁচ মাইল। পাঁচ মাইল পথ হেঁটে গিয়ে স্কুলে প্রতিদিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করায় খলিলুর রহমান হয়ে ওঠেন একজন আদর্শ ছাত্র! এই ছাত্রজীবনে খলিলুর রহমান যা যা অর্জন করেছেন তার অকাট্ট একটি দলিলই বলা যায় অপ্রকাশিত এই চিঠিটি।

১৯৬০ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করার পর বাবা যখন স্কুল থেকে চলে গিয়ে করটিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে গেলেন তখনই স্কুলের হেড মাস্টার সাহেব ভাবলেন তার প্রিয় ছাত্রটির ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি আবার তার ছাত্রকে মনে করলেন। তার ধারণা ছিল তার প্রিয় ছাত্র একদিন দেশকে নেতৃত্ব দেবে, মানুষের কথা বলবে আর তাই একটি দিকনির্দেশনামূলক চিঠি লিখলেন তাকে নিয়ে। চিঠিটি ইংরেজিতে লেখা ছিল। চিঠিটির বাংলা দাঁড়ায়Ñ খলিল, আল্লাহ তোমার সহায় হোন! গতকাল আমি তোমাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলাম। আমি এ ব্যাপারে চিন্তা করেছি যেমনি মুরগি তাপ দিয়ে ডিম ফুটায় ঠিক ততটা গভীরভাবে। আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি। তুমি কলা বিভাগে ভর্তি হও। সেখানে তুমি সাবজেক্ট হিসেবে নেবেÑ ইতিহাস, তর্কবিদ্যা, আরবি ভাষা উপরোক্ত বিষয় নেয়া সম্পর্কে তোমার বাবার মতামতও একই। একজন শিক্ষকের দায়িত্ব কতটুকু তা এ চিঠিটি ¯পষ্ট একটি দলিল বলা যায়। একজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে কতটা চিন্তা ছিল এই তৎকালীন শিক্ষকের। দিনের সমস্ত কার্যপরিকল্পনা মতো চালানোর পরও তার বিদায়ী ছাত্রের কথা তিনি মনে রেখেছেন। শুধু মনে রেখেই খান্ত হননি তিনি বলতে চেয়েছেন কোন কোন বিষয় নিলে তার এই গুণী ছাত্র জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। নেতৃত্ব গুণে গুণান্বিত তার শিক্ষার্থীকে মানব সেবায় থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কলা বিভাগে ভর্তি হওয়া নির্দেশনা দিয়েই চিঠি লিখেন এবং অন্য আরেকজন ছাত্রের মাধ্যমে তা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন প্রিয় ছাত্রের কাছে। বর্তমান সময়ে ছাত্র-শিক্ষক স¤পর্কেও ব্যবসায়িক চিন্তা বাদে অন্য কোন চিন্তার অবতারণা পাওয়া যায়না সে সময়ে ৬০ বছর আগের একটি চিঠি স্পষ্ট করে তুলছে অতীতে আমাদের দেশের ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক কেমন ছিল। তৎকালীন সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেমন চিন্তা করতেন তা-ও এ চিঠিটির মাধ্যমে ¯পষ্ট ।

শুধু তাই নয় ওই শিক্ষকের ছাত্রও কেমন বাধ্যগত ছিল তা-ও এই চিঠির মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যায়। আজও পর্যন্ত ব্যক্তিগত সবচেয়ে আপন ফাইলের মধ্যে তার প্রিয় ছাত্র চিঠিটি রেখে দিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে যখনই তার শিক্ষক সম্পর্কে কথা বলেন তখন তিনি কাঁদতে থাকেন আর বলতে থাকেন আমার জীবনে যত প্রতিষ্ঠা আর যত মানুষের ভালোবাসা অর্জন সবকিছুর পেছনে আমার এই শিক্ষকসহ সবার অবদান আছে। চিঠি হাতে নিয়েই প্রথম বলেন সে স্যারের উক্তিগুলো। অঝরে বলে যান নীতি বাক্যের ছড়াছড়ি শোনা সেই দিনগুলোর কাহিনী। ‘মাইনউদ্দীন স্যার ক্লাসে ঢুকেই নাকি বলতেন, তোরা মুখ গোমড়া করে বসে আছিস কেন, হাসতেও ভুলে গেছিস তোরা! দ্যাখ কীভাবে হাসতে হয় প্রাণখোলা হাসি ! তিনি হা-হা-হা করে হাসতে শুরু করলে দিঘির পাড়ের সন্তোষ জাহ্নবী হাইস্কুলের দেয়ালগুলো কেঁপে উঠতো আর শিক্ষার্থীদের মন ভরে উঠত আনন্দে! পাঠদান শুরু হতো আর প্রতিটি শিক্ষার্থী আনন্দ নিয়ে পড়ত জীবনের গানগুলো! শিক্ষকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো মানুষটিও একদিন শিক্ষক হয়ে উঠেছিলেন। তার শিক্ষার্থীদেরও দেখি কী অমায়িক আচরণ করতে আর তখন ভাবি একজন আদর্শ ছাত্রই কেবল আদর্শ শিক্ষক হতে পারে। আমার বাবার নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত স্কুল গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়। গাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র যারা রয়েছেন, যারা খলিল মাস্টারের শিক্ষায় দিক্ষীত তাদের অনুভূতি দেখলে বোঝা যায় আদর্শ ছাত্র যখন আদর্শ শিক্ষক হয়ে ওঠে তখন একটি সমাজে কী ধরনের প্রভাব পড়ে! সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক এখন আর নেই, আমার বাবার শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে কর্ম জীবন শেষ হয়ে অবসরে গিয়ে যা যতন করে রেখেছেন তা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে বর্তমান সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর। সন্তাষ জাহ্নবী স্কুলের সেই শিক্ষক এবং বর্তমানে আলো ছড়ানো ছাত্র আমার বাবার আদর্শিক এ বিস্তারণ স্কুলের দিঘির অসাধারণ শীতল জলের ঐকতান হয়ে ছড়িয়ে পড়–ক সারা দেশে আর ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হয়ে উঠুক স্নিগ্ধ এটাই প্রত্যাশা।

[লেখক : রসায়নবিদ]

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

এনসিপি চায় অবিনাশী জুলাই সনদ

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

আলুর প্রাচুর্যে কৃষকের সংকট

তাহলে কী ‘কোটা’ই জয়যুক্ত হবে!

ব্যাংকিং খাতে বিষফোঁড়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির ধমনী বিষাক্ত হয়ে উঠছে

ছবি

ঢাকার নদী ও খালের দখল-দূষণ: পুনরুদ্ধার কোন পথে

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মানুষ গড়ার কারিগর

সাঈদ চৌধুরী

মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্রকে লেখা ৬০ বছর আগের এ অপ্রকাশিত চিঠিটি হতে পারে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের আদর্শিক অকাট্ট দলিল। একটি অপ্রকাশিত চিঠি আর সে চিঠিটি হয়ে উঠতে পারে এ প্রজন্মের শিক্ষকদের, শিক্ষার্থীদের বড় দিক নির্দেশনা! আমার বাবা তখন সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে আমার বাবা হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত সন্তোষ জাহ্নবী স্কুলের জেনারেল ক্যাপ্টিন, একজন সফল বিতার্কিক, ছাত্র মৌলভি এবং দক্ষ নেতা। সে সূত্রেই বাবাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে সবাই ‘খলিল’ নামে চিনতেন। স্কুলের দূরত্ব আমার দাদার বাড়ি থেকে দশ মাইল হওয়ায় জাইগীর থাকতেন স্কুল থেকে কম দূরুত্বের একটি বাড়িতে। তার দূরত্বও তখনকার সময় পাঁচ মাইল। পাঁচ মাইল পথ হেঁটে গিয়ে স্কুলে প্রতিদিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করায় খলিলুর রহমান হয়ে ওঠেন একজন আদর্শ ছাত্র! এই ছাত্রজীবনে খলিলুর রহমান যা যা অর্জন করেছেন তার অকাট্ট একটি দলিলই বলা যায় অপ্রকাশিত এই চিঠিটি।

১৯৬০ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করার পর বাবা যখন স্কুল থেকে চলে গিয়ে করটিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে গেলেন তখনই স্কুলের হেড মাস্টার সাহেব ভাবলেন তার প্রিয় ছাত্রটির ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি আবার তার ছাত্রকে মনে করলেন। তার ধারণা ছিল তার প্রিয় ছাত্র একদিন দেশকে নেতৃত্ব দেবে, মানুষের কথা বলবে আর তাই একটি দিকনির্দেশনামূলক চিঠি লিখলেন তাকে নিয়ে। চিঠিটি ইংরেজিতে লেখা ছিল। চিঠিটির বাংলা দাঁড়ায়Ñ খলিল, আল্লাহ তোমার সহায় হোন! গতকাল আমি তোমাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলাম। আমি এ ব্যাপারে চিন্তা করেছি যেমনি মুরগি তাপ দিয়ে ডিম ফুটায় ঠিক ততটা গভীরভাবে। আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি। তুমি কলা বিভাগে ভর্তি হও। সেখানে তুমি সাবজেক্ট হিসেবে নেবেÑ ইতিহাস, তর্কবিদ্যা, আরবি ভাষা উপরোক্ত বিষয় নেয়া সম্পর্কে তোমার বাবার মতামতও একই। একজন শিক্ষকের দায়িত্ব কতটুকু তা এ চিঠিটি ¯পষ্ট একটি দলিল বলা যায়। একজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে কতটা চিন্তা ছিল এই তৎকালীন শিক্ষকের। দিনের সমস্ত কার্যপরিকল্পনা মতো চালানোর পরও তার বিদায়ী ছাত্রের কথা তিনি মনে রেখেছেন। শুধু মনে রেখেই খান্ত হননি তিনি বলতে চেয়েছেন কোন কোন বিষয় নিলে তার এই গুণী ছাত্র জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। নেতৃত্ব গুণে গুণান্বিত তার শিক্ষার্থীকে মানব সেবায় থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কলা বিভাগে ভর্তি হওয়া নির্দেশনা দিয়েই চিঠি লিখেন এবং অন্য আরেকজন ছাত্রের মাধ্যমে তা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন প্রিয় ছাত্রের কাছে। বর্তমান সময়ে ছাত্র-শিক্ষক স¤পর্কেও ব্যবসায়িক চিন্তা বাদে অন্য কোন চিন্তার অবতারণা পাওয়া যায়না সে সময়ে ৬০ বছর আগের একটি চিঠি স্পষ্ট করে তুলছে অতীতে আমাদের দেশের ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক কেমন ছিল। তৎকালীন সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেমন চিন্তা করতেন তা-ও এ চিঠিটির মাধ্যমে ¯পষ্ট ।

শুধু তাই নয় ওই শিক্ষকের ছাত্রও কেমন বাধ্যগত ছিল তা-ও এই চিঠির মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যায়। আজও পর্যন্ত ব্যক্তিগত সবচেয়ে আপন ফাইলের মধ্যে তার প্রিয় ছাত্র চিঠিটি রেখে দিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে যখনই তার শিক্ষক সম্পর্কে কথা বলেন তখন তিনি কাঁদতে থাকেন আর বলতে থাকেন আমার জীবনে যত প্রতিষ্ঠা আর যত মানুষের ভালোবাসা অর্জন সবকিছুর পেছনে আমার এই শিক্ষকসহ সবার অবদান আছে। চিঠি হাতে নিয়েই প্রথম বলেন সে স্যারের উক্তিগুলো। অঝরে বলে যান নীতি বাক্যের ছড়াছড়ি শোনা সেই দিনগুলোর কাহিনী। ‘মাইনউদ্দীন স্যার ক্লাসে ঢুকেই নাকি বলতেন, তোরা মুখ গোমড়া করে বসে আছিস কেন, হাসতেও ভুলে গেছিস তোরা! দ্যাখ কীভাবে হাসতে হয় প্রাণখোলা হাসি ! তিনি হা-হা-হা করে হাসতে শুরু করলে দিঘির পাড়ের সন্তোষ জাহ্নবী হাইস্কুলের দেয়ালগুলো কেঁপে উঠতো আর শিক্ষার্থীদের মন ভরে উঠত আনন্দে! পাঠদান শুরু হতো আর প্রতিটি শিক্ষার্থী আনন্দ নিয়ে পড়ত জীবনের গানগুলো! শিক্ষকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো মানুষটিও একদিন শিক্ষক হয়ে উঠেছিলেন। তার শিক্ষার্থীদেরও দেখি কী অমায়িক আচরণ করতে আর তখন ভাবি একজন আদর্শ ছাত্রই কেবল আদর্শ শিক্ষক হতে পারে। আমার বাবার নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত স্কুল গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়। গাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র যারা রয়েছেন, যারা খলিল মাস্টারের শিক্ষায় দিক্ষীত তাদের অনুভূতি দেখলে বোঝা যায় আদর্শ ছাত্র যখন আদর্শ শিক্ষক হয়ে ওঠে তখন একটি সমাজে কী ধরনের প্রভাব পড়ে! সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক এখন আর নেই, আমার বাবার শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে কর্ম জীবন শেষ হয়ে অবসরে গিয়ে যা যতন করে রেখেছেন তা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে বর্তমান সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর। সন্তাষ জাহ্নবী স্কুলের সেই শিক্ষক এবং বর্তমানে আলো ছড়ানো ছাত্র আমার বাবার আদর্শিক এ বিস্তারণ স্কুলের দিঘির অসাধারণ শীতল জলের ঐকতান হয়ে ছড়িয়ে পড়–ক সারা দেশে আর ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হয়ে উঠুক স্নিগ্ধ এটাই প্রত্যাশা।

[লেখক : রসায়নবিদ]

back to top