আনোয়ারুল হক
জুলাই আন্দোলনে শামিল ছাত্র-জনতাবৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণঅভ্যুথানের তিন মাস হতে চলল। প্রায় একই সময় পার করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ কথা ঠিক এ গণঅভ্যুত্থান মূলত মানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আর বেদনার বহিঃপ্রকাশ। তবে অনেকে বলার চেষ্টা করেন, এটা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফসল। তারা বলার চেষ্টা করেন, আন্দোলনকালীন সময়ে যে হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে তা-ও ষড়যন্ত্রমূলক। সরকার বা সরকারী বাহিনী এটা করে নাই। কিন্তু ভিডিও ফুটেজ বা ছবি কী বলে? সরকারের পুলিশ বাহিনী বা ওবায়দুল কাদেরের আহ্বানে জেগে ওঠা ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী কি আন্দোলনকারীদের ওপর পুষ্পবৃষ্টির অভ্যর্থনা করেছিলেন!
তর্কের খাতিরে যদি তাদের এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মেনেও নেই, তারা কি বলবেন, বিগত তিন-তিনটা নির্বাচন একতরফাভাবে করাও ষড়যন্ত্র ছিল! সালমান রহমান এবং এস আলম গংয়ের একের পর এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান জবরদখল ও সীমাহীন লুণ্ঠন, বিদেশে ঢালাও অর্থ পাচারও কি ষড়যন্ত্র ছিল? দেশ ছেড়ে পালানো বেনজীর আহমেদের অপরাধমূলক থ্রিলার উপন্যাসের কাহিনী, পতিত প্রধানমন্ত্রীর ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠা পিয়নের কাহিনীও কি ষড়যন্ত্র! প্রতিদিন পত্র-পত্রিকা পতিত সরকারের যে ‘সুগন্ধ স্প্রে’ করছে তার সবই ষড়যন্ত্র? এ গণঅভ্যুত্থানটা আসলে অনিবার্য ছিল। আজ না হয় কাল এটা হতোই।
কিন্তু বিরোধী শক্তির অনুপস্থিতি ও অভূতপূর্ব জনসমর্থন পাওয়ার পরেও দেশের বুকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়ে বরং অবনতি হওয়ায়, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে না আসায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারায়, শ্রমজীবী মানুষের রুটি, রুজি ও ন্যায্য পারিশ্রমিকের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত না হওয়ায় মানুষের মাঝে হতাশা দানা বাঁধছে।
ছাত্রসমাজসহ দেশবাসী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি যে অকণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলেন সেখানেও ভাটার টান পরিলক্ষিত হচ্ছে। নতুন ছাত্র নেতৃত্বের কোন কোন অংশের কতক পদক্ষেপে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন যে, স্বৈরতন্ত্রের বদলে সমন্বয়কতন্ত্র কায়েম হলো কিনা! সমন্বয়কদের সমন্বয়করাও বিবৃতি দিয়ে গণহারে বিতরণকৃত সমন্বয়ক পদ বাতিল করে মাত্র একজনকে সমন্বয়ক করে বলেছেন এ পদের অপব্যবহার চলছিল। তারপরেও বৈষম্যবিরোধী বা ফ্যাসিবাদবিরোধী নানা নাম বা সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিশেষ গোষ্ঠী বা উচ্চাভিলাষী নানা মহলের স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে অনেকেই ব্যবহৃত হয়ে চলেছেন। আশার কথা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা এ ধরনের কর্মকা-কে সমর্থন করছেন না। তারা ক্লাস রুমে ফিরে গেছেন। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাতারে একজোট হয়ে দাঁড়ানোর একটি প্রধান কারণ ছিল তারা মনে করেছিল এই আন্দোলনে কোন রাজনৈতিক দলের খবরদারি বা স্বার্থান্বেষী ইন্ধন নেই।
কিন্তু স্বৈরাচার পতনের পর রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের একাংশকে সামনে রেখে নাগরিক কমিটি গঠন এবং নাগরিক কমিটির সঙ্গে একত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণে এটা সুস্পষ্ট যে সরকার বা সরকারের একাংশের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি রাজনৈতিক দল ও তাদের ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলা হচ্ছে। রাজনীতি করার বা রাজনৈতিক দল গড়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সেটা যখন একটা নির্দলীয় সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে তোলার উদ্যোগ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে তখন আর অতীতের সঙ্গে পার্থক্য থাকল কই?
লক্ষ্যণীয় বিষয় কোটাবিরোধী আন্দোলন বা পরবর্তীতে স্বৈরাচার পতনের একদফা আন্দোলনে যে অকুতভয় সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা এবং ক্ষেত্র বিশেষে শ্রমজীবী তরুণরা বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো রাজপথে নেমে এসেছিল তারা কিন্তু আজ আর সমন্বয়কদের সঙ্গে নেই, বরং কিছু ব্যতিক্রম ছাডা উগ্রবাদী ও ধর্মান্ধদের ভিড়ই চোখে পড়ছে তাদের রাজনৈতিক ও ভিন্নমত দমনের মতো কর্মসূচিগুলোতে। পতিত সরকার মানুষ খুন করার কর্মসূচি নিয়েছিল, এরা রাজনৈতিক দল খুন করার কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। শিল্পকলা, নাটক, গান সংস্কৃতি এদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন মাসব্যাপী জুলাই আন্দোলনে শামিল ছাত্র-ছাত্রীদের রণসজ্জা ছিল কপালে বাঁধা ‘সবুজ জমিনে লাল সূর্যের পতাকা’। রণসংগীত ছিল কখনো ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ আবার কখনো ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা..’। এ রণসংগীত গেয়েই ওরা বিজয় অর্জন করেছে। তাই জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও দেশের সংবিধানের মর্মবস্তু পাল্টে দেয়ার অশুভ শক্তি যতই নানা কৌশলে ও ক্যামোফ্লেজে আসুক না কেন প্রতিরোধ হবে সর্বাত্মক।
দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়ানো গুলিবিদ্ধ আবু সাইদের কিংবা ‘পানিওয়ালা মুগ্ধের’ ছবি যখন মনে ভেসে ওঠে অথবা হেলিকাপ্টার থেকে গুলি করে শিশু হত্যার মতো নারকীয় ঘটনা যখন আমাদের কাঁদায়Ñ আবার তখনই যখন ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে বা জমায়তে ওদের কণ্ঠে শুনতাম ‘ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ..’ তখন আমার মনে হত দ্বীজেন্দ্র লাল এত বড় মিথ্যা কথা লিখে গেছেন! আবার যখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখতাম সবে কৈশোর উত্তীর্ণ তরুণী তারই মিছিলের সাথী অচেনা এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ভ্যানে ওঠানোর পর একা পুলিশ ভ্যানের সামনে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে বলছে আমার ভাইকে নিয়ে যেতে হলে আমার লাশের ওপর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তখন আবেগে চোখ ভিজে উঠলেও নিজেই গুন গুন করে গেয়ে উঠতাম ‘ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ..’। এবারের আন্দোলনের এই সুর, ছন্দ আর বীরত্বের রসায়ন নৈরাজ্যবাদী ও ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ করে দেবে।
[লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন]
আনোয়ারুল হক
বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪
জুলাই আন্দোলনে শামিল ছাত্র-জনতাবৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণঅভ্যুথানের তিন মাস হতে চলল। প্রায় একই সময় পার করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ কথা ঠিক এ গণঅভ্যুত্থান মূলত মানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আর বেদনার বহিঃপ্রকাশ। তবে অনেকে বলার চেষ্টা করেন, এটা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফসল। তারা বলার চেষ্টা করেন, আন্দোলনকালীন সময়ে যে হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে তা-ও ষড়যন্ত্রমূলক। সরকার বা সরকারী বাহিনী এটা করে নাই। কিন্তু ভিডিও ফুটেজ বা ছবি কী বলে? সরকারের পুলিশ বাহিনী বা ওবায়দুল কাদেরের আহ্বানে জেগে ওঠা ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী কি আন্দোলনকারীদের ওপর পুষ্পবৃষ্টির অভ্যর্থনা করেছিলেন!
তর্কের খাতিরে যদি তাদের এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মেনেও নেই, তারা কি বলবেন, বিগত তিন-তিনটা নির্বাচন একতরফাভাবে করাও ষড়যন্ত্র ছিল! সালমান রহমান এবং এস আলম গংয়ের একের পর এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান জবরদখল ও সীমাহীন লুণ্ঠন, বিদেশে ঢালাও অর্থ পাচারও কি ষড়যন্ত্র ছিল? দেশ ছেড়ে পালানো বেনজীর আহমেদের অপরাধমূলক থ্রিলার উপন্যাসের কাহিনী, পতিত প্রধানমন্ত্রীর ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠা পিয়নের কাহিনীও কি ষড়যন্ত্র! প্রতিদিন পত্র-পত্রিকা পতিত সরকারের যে ‘সুগন্ধ স্প্রে’ করছে তার সবই ষড়যন্ত্র? এ গণঅভ্যুত্থানটা আসলে অনিবার্য ছিল। আজ না হয় কাল এটা হতোই।
কিন্তু বিরোধী শক্তির অনুপস্থিতি ও অভূতপূর্ব জনসমর্থন পাওয়ার পরেও দেশের বুকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়ে বরং অবনতি হওয়ায়, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে না আসায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারায়, শ্রমজীবী মানুষের রুটি, রুজি ও ন্যায্য পারিশ্রমিকের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত না হওয়ায় মানুষের মাঝে হতাশা দানা বাঁধছে।
ছাত্রসমাজসহ দেশবাসী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি যে অকণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলেন সেখানেও ভাটার টান পরিলক্ষিত হচ্ছে। নতুন ছাত্র নেতৃত্বের কোন কোন অংশের কতক পদক্ষেপে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন যে, স্বৈরতন্ত্রের বদলে সমন্বয়কতন্ত্র কায়েম হলো কিনা! সমন্বয়কদের সমন্বয়করাও বিবৃতি দিয়ে গণহারে বিতরণকৃত সমন্বয়ক পদ বাতিল করে মাত্র একজনকে সমন্বয়ক করে বলেছেন এ পদের অপব্যবহার চলছিল। তারপরেও বৈষম্যবিরোধী বা ফ্যাসিবাদবিরোধী নানা নাম বা সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিশেষ গোষ্ঠী বা উচ্চাভিলাষী নানা মহলের স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে অনেকেই ব্যবহৃত হয়ে চলেছেন। আশার কথা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা এ ধরনের কর্মকা-কে সমর্থন করছেন না। তারা ক্লাস রুমে ফিরে গেছেন। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাতারে একজোট হয়ে দাঁড়ানোর একটি প্রধান কারণ ছিল তারা মনে করেছিল এই আন্দোলনে কোন রাজনৈতিক দলের খবরদারি বা স্বার্থান্বেষী ইন্ধন নেই।
কিন্তু স্বৈরাচার পতনের পর রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের একাংশকে সামনে রেখে নাগরিক কমিটি গঠন এবং নাগরিক কমিটির সঙ্গে একত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণে এটা সুস্পষ্ট যে সরকার বা সরকারের একাংশের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি রাজনৈতিক দল ও তাদের ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলা হচ্ছে। রাজনীতি করার বা রাজনৈতিক দল গড়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সেটা যখন একটা নির্দলীয় সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে তোলার উদ্যোগ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে তখন আর অতীতের সঙ্গে পার্থক্য থাকল কই?
লক্ষ্যণীয় বিষয় কোটাবিরোধী আন্দোলন বা পরবর্তীতে স্বৈরাচার পতনের একদফা আন্দোলনে যে অকুতভয় সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা এবং ক্ষেত্র বিশেষে শ্রমজীবী তরুণরা বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো রাজপথে নেমে এসেছিল তারা কিন্তু আজ আর সমন্বয়কদের সঙ্গে নেই, বরং কিছু ব্যতিক্রম ছাডা উগ্রবাদী ও ধর্মান্ধদের ভিড়ই চোখে পড়ছে তাদের রাজনৈতিক ও ভিন্নমত দমনের মতো কর্মসূচিগুলোতে। পতিত সরকার মানুষ খুন করার কর্মসূচি নিয়েছিল, এরা রাজনৈতিক দল খুন করার কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। শিল্পকলা, নাটক, গান সংস্কৃতি এদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন মাসব্যাপী জুলাই আন্দোলনে শামিল ছাত্র-ছাত্রীদের রণসজ্জা ছিল কপালে বাঁধা ‘সবুজ জমিনে লাল সূর্যের পতাকা’। রণসংগীত ছিল কখনো ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ আবার কখনো ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা..’। এ রণসংগীত গেয়েই ওরা বিজয় অর্জন করেছে। তাই জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও দেশের সংবিধানের মর্মবস্তু পাল্টে দেয়ার অশুভ শক্তি যতই নানা কৌশলে ও ক্যামোফ্লেজে আসুক না কেন প্রতিরোধ হবে সর্বাত্মক।
দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়ানো গুলিবিদ্ধ আবু সাইদের কিংবা ‘পানিওয়ালা মুগ্ধের’ ছবি যখন মনে ভেসে ওঠে অথবা হেলিকাপ্টার থেকে গুলি করে শিশু হত্যার মতো নারকীয় ঘটনা যখন আমাদের কাঁদায়Ñ আবার তখনই যখন ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে বা জমায়তে ওদের কণ্ঠে শুনতাম ‘ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ..’ তখন আমার মনে হত দ্বীজেন্দ্র লাল এত বড় মিথ্যা কথা লিখে গেছেন! আবার যখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখতাম সবে কৈশোর উত্তীর্ণ তরুণী তারই মিছিলের সাথী অচেনা এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ভ্যানে ওঠানোর পর একা পুলিশ ভ্যানের সামনে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে বলছে আমার ভাইকে নিয়ে যেতে হলে আমার লাশের ওপর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তখন আবেগে চোখ ভিজে উঠলেও নিজেই গুন গুন করে গেয়ে উঠতাম ‘ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ..’। এবারের আন্দোলনের এই সুর, ছন্দ আর বীরত্বের রসায়ন নৈরাজ্যবাদী ও ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ করে দেবে।
[লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন]