শেখ শামীম ইকবাল
স্বাভাবিকভাবেই টাকার অবমূল্যায়ন অর্থশাস্ত্রে খুবই পরিচিত ধারণা। রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি হ্রাসের লক্ষ্যে একটি দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। ধরা যাক, এক ডলার= ৯০ টাকা থেকে যদি ১ ডলার= ১২০ টাকা নির্ধারিত হয়, তবে সে বিনিময় হার রপ্তানিকে উৎসাহিত এবং আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার কথা। বিদেশি ক্রেতা ১ ডলার দিয়ে পূর্বের ৯০ টাকার স্থলে বর্তমানে ১২০ টাকার জিনিস পাবেন। এতে রপ্তানি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। আবার অন্যদিকে, আমদানিকারককে আমদানির নিমিত্ত প্রতি ডলারের জন্য পূর্বের ৯০ টাকার স্থলে ১২০ টাকা দিতে হবে। অবশ্য মুদ্রার অবমূল্যায়ন রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি হ্রাসে কতটুকু সার্থকতা লাভ করবে তা নির্ভর করবে আমদানি ও রপ্তানির চাহিদা ও জোগানজনিত প্রভাবের ওপর। অর্থশাস্ত্র মতে, আমদানি ও রপ্তানির চাহিদার প্রভাবÑ গ্রাহকতা যদি একের বেশি হয় তবে মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রতিক্রিয়া হবে পজেটিভ। অতি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। পূর্বের চেয়ে বেশি টাকায় ডলার কিনতে হবে। সুতরাং, উল্লেখিত সূত্র মতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি হ্রাস পাওয়ার কথা। অনেকদিন আগে থেকেই মুদ্রার অবমূল্যায়ন নিয়ে কথা হচ্ছিল, কিন্তু বিগত সরকার অনেকদিন কৃত্তিমভাবে স্থির রেখেছিল। একটা সময় পরে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছিলÑ তবে সেটা খুব উল্লেখযোগ্য হারে না এবং হলেও আসলে সঠিক সময়ে সঠিক হার নয়। বিনিময় হারের সুবিধা ছাড়াও রপ্তানিকারক তথা রপ্তানি খাতকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আরও অনেক পদ্ধতি রয়েছে; যেমন ভর্তুকি, বিশেষ ঋণ সুবিধা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এককালে মুদ্রার অবমূল্যায়ন একপ্রকার অজনপ্রিয় ছিল নানা কারণে; গ্রহণযোগ্য ছিল অন্য ব্যবস্থাগুলো। তবে বর্তমানকালে এই যুক্তিটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে রপ্তানিকারককে যদি কোনো উৎসাহই দিতে হয় তবে তা বিনিময় হারের মাধ্যমেই দেয়াটাই অধিকতর শ্রেয়। এর পেছনে কয়েকটা যুক্তি হতে পারে নিম্নরূপ :
বিনিময় হারের মাধ্যমে দেয় সুবিধা প্রত্যেক রপ্তানি দ্রব্যের জন্য সমভাবে প্রযোজ্যÑ এতে কারো প্রতি কোনো বৈষম্য নেই। অন্যদিকে ভর্তুকি। বিশেষ ঋণ সুবিধা ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ খাতের জন্য প্রযোজ্য থাকে বিধায় তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণ করতে পারে। তবে এটাও সত্যি যে, বিনিময় হারের মাধ্যমে দেয় সুবিধা দক্ষ-অদক্ষ নির্বিচারে সব খাতই পেয়ে থাকে এবং এতে করে অদক্ষ খাত দক্ষতা অর্জনে চেষ্টা না-ও করতে পারে। সম্প্রতি যে অবমূল্যায়ন করা হলো তার সুফল গার্মেন্টস, হিমায়িত খাদ্য এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল রপ্তানি খাত যেমন ভোগ করবে, ঠিক তেমনি ভোগ করবে পাট খাতের মতো অদক্ষ খাতও। আর এমনিভাবে তাদের অদক্ষতার মাত্রাও বাড়তে থাকবে দিনে দিনে। যদি ভবিষ্যতে আরও অবমূল্যায়ন হতে পারে এমনতরো ভয় না থাকে, তবে অবমূল্যায়নের ফলে বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায়, বৃদ্ধি পায় বিদেশ থেকে সরাসরি পুঁজি আসা, যে সুবিধাটুকু অন্য কোনো ব্যবস্থাতে অসম্ভব।
ভর্তুকি দেয়ার ফলে সরকারের রাজস্ব বাজেটে চাপ বৃদ্ধি পায় এবং এই ধরনের প্রোগ্রাম বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, মুদ্রা অবমূল্যায়ন কতটুকু লাভজনক হবে তা নির্ভর করবে আমদানি ও রপ্তানি চাহিদার সামগ্রিক প্রভাব-গ্রাহকতার ওপর। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, অবমূল্যায়ন হলেও প্রকৃত অবমূল্যায়ন কত হলো। মজুরি বৃদ্ধি পেলেই যেমন সুখ বৃদ্ধি পায় নাÑ যদি সঙ্গে সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতিও বৃদ্ধি পায়, ঠিক তেমনি অবমূল্যায়নের হার আর মুদ্রাস্ফীতির হারের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। তাছাড়া কোনো দেশের মুদ্রা অবমূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে যদি তার প্রতিপক্ষ দেশেও যদি অবমূল্যায়ন করে, তবে ফলাফল আশানুরূপ না-ও হতে পারে। আবার যদি ১০ শতাংশ হারে অবমূল্যায়নের পাশাপাশি ১০ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক কমে যায় এবং ১০ শতাংশ হারে রপ্তানি ভর্তুকি কমে যায় তাহলে ফলাফল হবে শূন্য। তবে সাধারণত ক্ষণস্থায়ী এবং খুব কম মাত্রার অবমূল্যায়ন যথাযথ ফলাফল দেয় না বলেই অনেকের বিশ্বাস। সুতরাং, আশানুরূপ ফললাভ করতে হলে বড় ধরনের অবমূল্যায়নই কার্যকর। আবার যদি গুজব রটে যে আবার অবমূল্যায়ন হতে পারে শীঘ্রই, তবে অবমূল্যায়নের ফলে বাহির থেকে অর্থ জোগান বাড়তে পারে। আর তা না হলে দেশের ভেতর থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হতে পারে। সবশেষে, মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটতে পারে, তবে তার মাত্রা নির্ভর করবে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির ওপর।
এক্ষেত্রে অবমূল্যায়নের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি অধিকতর উপযোগী। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুদ্রার অবমূল্যায়ন রপ্তানিকে উৎসাহিত করে এবং আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে। তবে অবমূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাছাড়া আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানি পণ্যের চাহিদা খুব একটা বেশি দাম নির্ভর নয়। সেজন্যই, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ছাড়াও রপ্তানিতাড়িত উন্নয়নের জন্য আরও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ দরকার। যেমন বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের রপ্তানিতাড়িত উন্নয়নের কৌশলের উদ্দেশ্যে অনেক অবকাঠামো গড়ে উঠলেও তা তেমন পরিকল্পিত নয়, সেজন্য আমারা এই অবকাঠামোগত উন্নয়নের তেমন সুফল ভোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। তাছাড়া এ ধরনের কৌশল বাস্তবায়নে প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি যার জন্য আমাদের দেশে এখনো গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। মনে রাখা দরকার যে, স্বল্পকালীন নীতিগুলো দিয়ে রপ্তানি সাময়িক বৃদ্ধি পেতে পারে তবে তা দিয়ে রপ্তানি বিপ্লব সম্ভবপর নয়। সরকারের এই মুহূর্তে উচিত হবে সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনা এবং আইনশৃঙ্খলা অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। তাছাড়া যে সমস্ত পণ্যের আপেক্ষিক সুবিধা অনেক বেশি, সেসব পণ্যের রপ্তানি উন্নয়নে নির্ধারিত হারে বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। তাছাড়া টাকার অবমূল্যায়নজনিত মূল্যস্ফীতি নিরসনে কার্যকরী মুদ্রানীতি এবং রাজস্ব নীতি গ্রহণ করা। এই কথা স্মরণ রাখা জরুরি যে, লাগামহীন পণ্যমূল্যের কারণে জনজীবন এখন বিপর্যস্ত, তাই এই মুহূর্তে পরীক্ষা নিরীক্ষার থেকে কার্যকর পদক্ষেপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
[লেখক : ব্যাংকার]
শেখ শামীম ইকবাল
মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
স্বাভাবিকভাবেই টাকার অবমূল্যায়ন অর্থশাস্ত্রে খুবই পরিচিত ধারণা। রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি হ্রাসের লক্ষ্যে একটি দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। ধরা যাক, এক ডলার= ৯০ টাকা থেকে যদি ১ ডলার= ১২০ টাকা নির্ধারিত হয়, তবে সে বিনিময় হার রপ্তানিকে উৎসাহিত এবং আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার কথা। বিদেশি ক্রেতা ১ ডলার দিয়ে পূর্বের ৯০ টাকার স্থলে বর্তমানে ১২০ টাকার জিনিস পাবেন। এতে রপ্তানি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। আবার অন্যদিকে, আমদানিকারককে আমদানির নিমিত্ত প্রতি ডলারের জন্য পূর্বের ৯০ টাকার স্থলে ১২০ টাকা দিতে হবে। অবশ্য মুদ্রার অবমূল্যায়ন রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি হ্রাসে কতটুকু সার্থকতা লাভ করবে তা নির্ভর করবে আমদানি ও রপ্তানির চাহিদা ও জোগানজনিত প্রভাবের ওপর। অর্থশাস্ত্র মতে, আমদানি ও রপ্তানির চাহিদার প্রভাবÑ গ্রাহকতা যদি একের বেশি হয় তবে মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রতিক্রিয়া হবে পজেটিভ। অতি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। পূর্বের চেয়ে বেশি টাকায় ডলার কিনতে হবে। সুতরাং, উল্লেখিত সূত্র মতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি হ্রাস পাওয়ার কথা। অনেকদিন আগে থেকেই মুদ্রার অবমূল্যায়ন নিয়ে কথা হচ্ছিল, কিন্তু বিগত সরকার অনেকদিন কৃত্তিমভাবে স্থির রেখেছিল। একটা সময় পরে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছিলÑ তবে সেটা খুব উল্লেখযোগ্য হারে না এবং হলেও আসলে সঠিক সময়ে সঠিক হার নয়। বিনিময় হারের সুবিধা ছাড়াও রপ্তানিকারক তথা রপ্তানি খাতকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আরও অনেক পদ্ধতি রয়েছে; যেমন ভর্তুকি, বিশেষ ঋণ সুবিধা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এককালে মুদ্রার অবমূল্যায়ন একপ্রকার অজনপ্রিয় ছিল নানা কারণে; গ্রহণযোগ্য ছিল অন্য ব্যবস্থাগুলো। তবে বর্তমানকালে এই যুক্তিটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে রপ্তানিকারককে যদি কোনো উৎসাহই দিতে হয় তবে তা বিনিময় হারের মাধ্যমেই দেয়াটাই অধিকতর শ্রেয়। এর পেছনে কয়েকটা যুক্তি হতে পারে নিম্নরূপ :
বিনিময় হারের মাধ্যমে দেয় সুবিধা প্রত্যেক রপ্তানি দ্রব্যের জন্য সমভাবে প্রযোজ্যÑ এতে কারো প্রতি কোনো বৈষম্য নেই। অন্যদিকে ভর্তুকি। বিশেষ ঋণ সুবিধা ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ খাতের জন্য প্রযোজ্য থাকে বিধায় তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণ করতে পারে। তবে এটাও সত্যি যে, বিনিময় হারের মাধ্যমে দেয় সুবিধা দক্ষ-অদক্ষ নির্বিচারে সব খাতই পেয়ে থাকে এবং এতে করে অদক্ষ খাত দক্ষতা অর্জনে চেষ্টা না-ও করতে পারে। সম্প্রতি যে অবমূল্যায়ন করা হলো তার সুফল গার্মেন্টস, হিমায়িত খাদ্য এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল রপ্তানি খাত যেমন ভোগ করবে, ঠিক তেমনি ভোগ করবে পাট খাতের মতো অদক্ষ খাতও। আর এমনিভাবে তাদের অদক্ষতার মাত্রাও বাড়তে থাকবে দিনে দিনে। যদি ভবিষ্যতে আরও অবমূল্যায়ন হতে পারে এমনতরো ভয় না থাকে, তবে অবমূল্যায়নের ফলে বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায়, বৃদ্ধি পায় বিদেশ থেকে সরাসরি পুঁজি আসা, যে সুবিধাটুকু অন্য কোনো ব্যবস্থাতে অসম্ভব।
ভর্তুকি দেয়ার ফলে সরকারের রাজস্ব বাজেটে চাপ বৃদ্ধি পায় এবং এই ধরনের প্রোগ্রাম বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, মুদ্রা অবমূল্যায়ন কতটুকু লাভজনক হবে তা নির্ভর করবে আমদানি ও রপ্তানি চাহিদার সামগ্রিক প্রভাব-গ্রাহকতার ওপর। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, অবমূল্যায়ন হলেও প্রকৃত অবমূল্যায়ন কত হলো। মজুরি বৃদ্ধি পেলেই যেমন সুখ বৃদ্ধি পায় নাÑ যদি সঙ্গে সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতিও বৃদ্ধি পায়, ঠিক তেমনি অবমূল্যায়নের হার আর মুদ্রাস্ফীতির হারের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। তাছাড়া কোনো দেশের মুদ্রা অবমূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে যদি তার প্রতিপক্ষ দেশেও যদি অবমূল্যায়ন করে, তবে ফলাফল আশানুরূপ না-ও হতে পারে। আবার যদি ১০ শতাংশ হারে অবমূল্যায়নের পাশাপাশি ১০ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক কমে যায় এবং ১০ শতাংশ হারে রপ্তানি ভর্তুকি কমে যায় তাহলে ফলাফল হবে শূন্য। তবে সাধারণত ক্ষণস্থায়ী এবং খুব কম মাত্রার অবমূল্যায়ন যথাযথ ফলাফল দেয় না বলেই অনেকের বিশ্বাস। সুতরাং, আশানুরূপ ফললাভ করতে হলে বড় ধরনের অবমূল্যায়নই কার্যকর। আবার যদি গুজব রটে যে আবার অবমূল্যায়ন হতে পারে শীঘ্রই, তবে অবমূল্যায়নের ফলে বাহির থেকে অর্থ জোগান বাড়তে পারে। আর তা না হলে দেশের ভেতর থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হতে পারে। সবশেষে, মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটতে পারে, তবে তার মাত্রা নির্ভর করবে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির ওপর।
এক্ষেত্রে অবমূল্যায়নের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি অধিকতর উপযোগী। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুদ্রার অবমূল্যায়ন রপ্তানিকে উৎসাহিত করে এবং আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে। তবে অবমূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাছাড়া আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানি পণ্যের চাহিদা খুব একটা বেশি দাম নির্ভর নয়। সেজন্যই, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ছাড়াও রপ্তানিতাড়িত উন্নয়নের জন্য আরও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ দরকার। যেমন বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের রপ্তানিতাড়িত উন্নয়নের কৌশলের উদ্দেশ্যে অনেক অবকাঠামো গড়ে উঠলেও তা তেমন পরিকল্পিত নয়, সেজন্য আমারা এই অবকাঠামোগত উন্নয়নের তেমন সুফল ভোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। তাছাড়া এ ধরনের কৌশল বাস্তবায়নে প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি যার জন্য আমাদের দেশে এখনো গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। মনে রাখা দরকার যে, স্বল্পকালীন নীতিগুলো দিয়ে রপ্তানি সাময়িক বৃদ্ধি পেতে পারে তবে তা দিয়ে রপ্তানি বিপ্লব সম্ভবপর নয়। সরকারের এই মুহূর্তে উচিত হবে সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনা এবং আইনশৃঙ্খলা অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। তাছাড়া যে সমস্ত পণ্যের আপেক্ষিক সুবিধা অনেক বেশি, সেসব পণ্যের রপ্তানি উন্নয়নে নির্ধারিত হারে বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। তাছাড়া টাকার অবমূল্যায়নজনিত মূল্যস্ফীতি নিরসনে কার্যকরী মুদ্রানীতি এবং রাজস্ব নীতি গ্রহণ করা। এই কথা স্মরণ রাখা জরুরি যে, লাগামহীন পণ্যমূল্যের কারণে জনজীবন এখন বিপর্যস্ত, তাই এই মুহূর্তে পরীক্ষা নিরীক্ষার থেকে কার্যকর পদক্ষেপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
[লেখক : ব্যাংকার]